সূরা ইয়াসিন ৪১ বার খতম করে আমল করা জায়েজ আছে কিনা?
প্রশ্নঃ ৩৪৮৯২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বিবাহযোগ্য মেয়ে বিয়ে হচ্ছে না এমতাবস্থায় সূরা ইয়াসিন ৪১ বার খতম করে আমল করা জায়েজ আছে কিনা? ছেলে পছন্দ হয় কিন্তু ছেলেদের পছন্দ হয় না যে ছেলে কথা হয় ঘুরে যায়, সেই ছেলে ফিরে আসা নিয়ত করে আমল করা ঠিক হবে কিনা? অথবা কোন আমল থাকলে জানাবেন।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
এক.
হাদিসে এসেছে, আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ قَلْبًا، وَقَلْبُ القُرْآنِ يس ، وَمَنْ قَرَأَ يس كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِقِرَاءَتِهَا قِرَاءَةَ القُرْآنِ عَشْرَ مَرَّاتٍ
প্রত্যেক বস্তুর হৃদয় থাকে, কোরআনের হৃদয় হল সূরা ইয়াসিন। যে ব্যক্তি একবার সূরা ইয়াসিন পড়বে, মহান আল্লাহ তাকে দশবার সমগ্র কুরআন পড়ার সওয়াব দান করবেন। (তিরমিযী ২৮৮৭ বাইহাকী শুআবুল ঈমান ২২৩৮)
তবে নির্দিষ্ট খতম একটি পরীক্ষিত আমল বিশেষ। এটি সুন্নত বা করতে হবে এমন বিষয় নয়। কেউ যদি এ ধরণের আমল করেন, এতেও কোনো অসুবিধা নেই।
দুই.
আর দ্রুত বিয়ে হওয়ার কতিপয় আমল ও দোয়া জানার জন্য নিম্নের রেফারেন্স উত্তরটি পড়ে নিন--
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ২৬৫০০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার বয়স ২৫ বছর কিন্তু আমি এখনো অবিবাহিতা। অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছে না। আমি সাত সালাম, ইসমে আযম, সূরা ফুরকানের ৭৪ নং আয়াত পাঠ করি। আমার আশেপাশের মানুষরা বলে, আমাকে কেউ বান মারছে অথবা কেউ বিয়ে বেধে রাখছে। বান কাটালে বিয়ে হবে নতুবা হবে না। এখন আমার প্রশ্ন কথাটি কী শরীয়ত সম্মত নাকি কুসংস্কার? উত্তর দিলে অনেক উপকৃত হব।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
এক. আমাদের সমাজের একটি বড় বিচ্যুতি হল, ক্যারিয়ার গঠনের ধোঁয়াশায় পড়ে যথাসময়ে বিয়ে না করা। পরবর্তীতে যা হয়, তাহল, পাত্র/পাত্রীর বয়স বেড়ে যায় এবং বিবাহ কঠিন হয়ে যায়। আর নিজেদের এই বিচ্যুতি থেকে জন্ম নেয় জাদু-টোনা-নির্ভর নানা ধরণের অন্ধ-বিশ্বাস। মনে রাখবেন, বিয়ে-শাদি অবশ্যই আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর জাদু আমাদের জীবনের ভাল-মন্দের আসল কার্যকারণ নয়, বরং আমাদের জীবনে সেটাই ঘটে যা আল্লাহ তাআলা আমাদের ভাগ্যে নির্ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহ বলেন,
قُلْ لَنْ يُصِيْبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا
তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। (তওবা ৫১)
সুতরাং আপনার বিয়ে কেউ বন্ধ করে রেখেছে-প্রথমে এই অমূলক ধারণা পরিহার করুন। দুরাবস্থা, দুর্ভাগ্যের নাগাল ও মন্দভাগ্য থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত। (তিরমিযী ২১৩৯)
দুই. প্রিয় দীনি বোন, পাশাপাশি আপনাকে কিছু আমল বলে দিচ্ছি, ইনশা-আল্লাহ এর উসিলায়ও আপনার এই দুরাবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে।
~ নিম্নের দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ুন,
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنْ جَهْدِالْبَلَاءِ وَدَرْكِ الشَّقَاءِ وَسُوْءِ الْقَضَاءِ و شَمَاتَةِ الْاَعْدَاءِ
অর্থাৎ, হে আল্লাহ, অবশ্যই আমি তোমার নিকট কঠিন দুরাবস্থা, দুর্ভাগ্যের নাগাল, মন্দভাগ্য এবং দুশমনের হাসি থেকে রক্ষা কামনা করছি। (বুখারি ৬৩৪৭)
اَللّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখী করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।
যেহেতু আপনি আপনার সাথে কারো শত্রুতার আশঙ্কা করছেন, তাই উক্ত দোয়াটি বেশি করে পড়ুন। আবু মুসা আল-আশআরী রাযি.থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ যখন কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করতেন তখন দোয়াটি বলতেন। (আবূদাউদ ১৫৩৭)
~ যথাসম্ভব সার্বক্ষণিক ইস্তেগফার করুন। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِب
যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবূদাউদ ১৫২০)
~ কোনো কোনো আলেম বলেন, যেসব যুবক-যুবতীদের বিবাহের বয়স অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না, তাদের মধ্যে যুবকেরা ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি চেপে ধরে এবং যুবতীরা বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি চেপে ধরে প্রত্যহ ফজরের নামাজের পর সূর্যোদয়ের আগে ৪০ বার হিসাবে ৪০ দিন পর্যন্ত আল্লাহর গুণবাচক নাম ‘ইয়া ফাত্তাহু’ (يا فتّاح) -অর্থ হে উন্মুক্তকারী বা প্রস্তুতকারী-পড়লে দ্রত বিয়ে হয়।
~ কোনো কোনো আলেম বলেন, চল্লিশ দিন সূরা মুমতাহিনা তেলাওয়াত করলে দ্রত বিয়ে হয়।
তিন. প্রিয় দীনি বোন, আমলের পাশাপাশি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে বৈধ পন্থায় পাত্রের সন্ধান ও চেষ্টা করুন। وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ‘‘আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।” (সূরা তালাক ৩)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﺣَﻖٌّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻮْﻧُﻬُﻢْ : ﺍﻟﻤُﺠَﺎﻫِﺪُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﻤُﻜَﺎﺗَﺐُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻷَﺩَﺍﺀَ، ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﻛِﺢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻌَﻔَﺎﻑَ
অর্থাৎ, তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্ তায়ালার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। আল্লাহ্ তায়ালার রাস্তায় জিহাদকারী, চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায় এবং ওই বিবাহিত ব্যক্তি যে (বিবাহ করার মাধ্যমে) পবিত্র থাকতে চায়। (তিরমিযী ১৬৫৫, নাসায়ী ৩২১৮)
এরপর দীনদার ও চরিত্রবান পাত্র পেলে তার প্রস্তাব নাকচ করা উচিত হবে না। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ ، إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ
তোমরা যে ছেলের দ্বীনাদারি ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পার সে যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে তার কাছে বিয়ে দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে মহা ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। (তিরমিযী ১০৮৪)
পরিশেষে দোয়া করি, আল্লাহ আপনার সকল পেরেশানি দূর করে দিন। আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
সিনয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন