রাগ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি
প্রশ্নঃ ৩৩৮৮০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হচ্চে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার দোয়া আছে কি থাকলে আমারে বল্লে ভালো হয়?
২১ জুলাই, ২০২৫
ফেনী
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
রাগ মানুষের একটি স্বভাবজাত বিষয়। অপ্রত্যাশিত কোনো কিছু দেখলে নিজের অজান্তেই রাগ চলে আসে। অনেকে সামান্য কিছুতেই রেগে যায়। এই রাগ তার শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতি, তেমনি তা অনেক পাপের দুয়ার খুলে দেয়। ক্রোধ অগ্নিস্ফুলিঙ্গসাদৃশ, যা ঝগড়া-বিবাদের সূত্রপাত ঘটায়। এটা মানব মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বেলে দেয়, যা অনেক সময় খুন-খারাবি পর্যন্ত নিয়ে যায়। বুদ্ধিমান মানুষ কখনো রাগকে লালন করে না। বরং রাগ আসলেও তা দূর করার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে। কারণ এ রাগই তার জীবনের অপুরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে। পরবর্তী সময়ে হাজারো চেষ্টা করেও তা পুষিয়ে নিতে পারে না। শুধু আফসোস করে বাকি জীবন কাটাতে হয়।
রাগ সামলানোর পদ্ধতি
রাগ যেহেতু স্বভাবজাত। তাই রাসুল (সা.) আমাদেরকে রাগ নিয়ন্ত্রন করার পদ্ধতি বলে দিয়েছেন।
নবী করিম (সা.) আমাদের উপদেশ হিসেবে আরো বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায় অজু করতে, যা রাগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার একটি উত্তম পদ্ধতি।
হাদীসে এসেছে,
حَدَّثَنَا أَبُو وَائِلٍ الْقَاصُّ، قَالَ دَخَلْنَا عَلَى عُرْوَةَ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ السَّعْدِيِّ فَكَلَّمَهُ رَجُلٌ فَأَغْضَبَهُ فَقَامَ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ رَجَعَ وَقَدْ تَوَضَّأَ فَقَالَ حَدَّثَنِي أَبِي عَنْ جَدِّي عَطِيَّةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ الْغَضَبَ مِنَ الشَّيْطَانِ وَإِنَّ الشَّيْطَانَ خُلِقَ مِنَ النَّارِ وَإِنَّمَا تُطْفَأُ النَّارُ بِالْمَاءِ فَإِذَا غَضِبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَتَوَضَّأْ " .
আবু ওয়ায়েল কাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমরা উরওয়া ইবনে মুহাম্মাদ সা’দী (রাযিঃ)-এর নিকট যাই। সে সময় তাঁর সাথে কোন এক ব্যক্তি এরূপ কথা বলে, যাতে তিনি রাগান্বিত হন। তখন তিনি উঠে যান এবং উযু করেন এবং বলেনঃ আমার পিতা, আমার দাদা আতীয়া (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ শয়তানের কারণে রাগের সৃষ্টি হয়, আর শয়তানকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পানি দ্বারাই আগুন নির্বাপিত হয়। কাজেই তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয়, তখন সে যেন উযু করে।
কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ (সুনানে আবু দাউদ)
হাদীস নং: ৪৭০৯ আন্তর্জাতিক নং: ৪৭৮৪
হাদীসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/19056
এ ছাড়া নবীজি (সা.) শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগের কথাও বলেছেন।
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صُرَدٍ، قَالَ اسْتَبَّ رَجُلاَنِ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَجَعَلَ أَحَدُهُمَا تَحْمَرُّ عَيْنَاهُ وَتَنْتَفِخُ أَوْدَاجُهُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنِّي لأَعْرِفُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عَنْهُ الَّذِي يَجِدُ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ " . فَقَالَ الرَّجُلُ وَهَلْ تَرَى بِي مِنْ جُنُونٍ قَالَ ابْنُ الْعَلاَءِ فَقَالَ وَهَلْ تَرَى . وَلَمْ يَذْكُرِ الرَّجُلَ
সুলাইমান ইবনে সূরাদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) এর কাছে এসে দু’ব্যক্তি ঝগড়া-ঝাটিতে প্রবৃত্ত হল। তখন তাদের একজনের দু’চক্ষু (রাগে) লাল হয়ে গেল এবং তার শিরা-উপশিরা ফুলে উঠল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আমি এমন একটি কালেমা জানি, যা পাঠ করলে ক্রোধ দুর হয়ে যায়। আর তা হচ্ছে أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ (আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই)। (এ কথা শুনে) সে ব্যক্তি বলল, আপনি কি আমাকে পাগল দেখতে পাচ্ছেন? ইবনুল আ’লা (রাহঃ) বলেন, সে বলল, অর্থাৎ তিনি الرَّجُل শব্দটি বলেননি।
আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ (সহীহ মুসলিম)
হাদীস নং: ৬৪০৮
হাদীসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/13457
তাছাড়া যখন বুঝে যাচ্ছেন আপনি রেগে যাচ্ছেন, তখন একেবারে প্রাথমিক অবস্থাতেই সেই পরিস্থিতি বা জায়গা দ্রুত ত্যাগ করুন বা কারো সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাগ হতে থাকলে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে ফেলুন অথবা তার সঙ্গে সেই মুহূর্তে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এ সময় কিছু মজার কিছু ভাবা, মনে মনে নিজেকে শান্ত হতে বলা ইত্যাদি আপনার অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করবে।
والله اعلم بالصواب
মুফতি জাওয়াদ তাহের
মুহাদ্দিস, জামিয়া বাবুস সালাম, বিমানবন্দর ঢাকা
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১