আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

কবর জিয়ারত করার সময় বুকের মধ্যে হাত রাখার শরয়ী ভিত্তি আছে কি ?

প্রশ্নঃ ৩১৮১০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কবর জিয়ারত করার সময় বুকের মধ্যে হাত রাখা জায়েজ নাকি হারাম?

৪ এপ্রিল, ২০২৩
নামবিহীন রাস্তা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


কবর জিয়ারত করার সময় বুকের মধ্যে হাত রাখার কোন বাধ্যবাধকতা শরীয়তে নেই। এটা ব্যক্তির অভ্যাসের উপর নির্ভরশীল বিষয়। হাদীসে কোথাও কবর জিয়ারত করার সময় বুকের মধ্যে হাত রাখার উল্লেখ আসেনি। এটা কেউ ইবাদত মনে করে করলে বিদআত হবে।

আরো পড়ুনঃ

কবর-যিয়ারতের পদ্ধতি

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতের এই তরীকা বলেছেন যে, কেউ যখন কবরস্থানে যায়, তো কবরবাসীদের যেন এ বলে সালাম দেয়-

السلام عليكم دار قوم مؤمنين، أنتم لنا فرط ونحن لكم تبع، وإنا إن شاء الله بكم لاحقون، نسأل الله لنا ولكم العافية.

অর্থ : হে মুমিনদের বসতি! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা আমাদের পূর্বসূরী আর আমরা তোমাদের উত্তরসূরী। আর ইনশাআল্লাহ আমরা তোমাদের সাথে যুক্ত হব। আমরা আল্লাহর কাছে আফিয়াত চাই। আমাদেরও জন্য এবং তোমাদেরও জন্য। -মুসলিম ১/৩১৩,৩১৪; সুনানে নাসায়ী ১/২২২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৯৮৫

এরপর কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দুআ করবে এবং কিছু পড়ে ঈসালে ছওয়াব করবে। হাদীসে কিছু কিছু সূরার কিছু বিশেষ ফযীলতও উল্লেখিত হয়েছে। তেমনি দরূদ শরীফেরও ফযীলত এসেছে। তো দরূদ শরীফ, সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাস এবং আরো যেসব সূরা ইচ্ছা পড়ে ঈসালে ছওয়াব করবে। ওখানের দুআ হয়তো হাত না উঠিয়ে করবে অথবা কবরের দিকে পিঠ দিয়ে কিবলামুখী হয়ে করবে। -ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী খ. ৫ পৃ. ৩৫০ কিতাবুল কারাহিয়্যা

কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য

কবর-যিয়ারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য, যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন তা এই যে, কবরের দৃশ্য দেখে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়িত্বের বিশ্বাস তাজা করা, নিজের মৃত্যু ও কবর-জীবনকে স্মরণ করা এবং আখিরাতের প্রস্তুতির সংকল্প গ্রহণ করা।

দ্বিতীয় উদ্দেশ্য, আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করা এবং মাগফিরাতের দুআ ও ঈসালে ছওযাবের মাধ্যমে তাদের উপকৃত করা। আর আল্লাহওয়ালাদের কবর যিয়ারতের দ্বারা যে পথে চলে তারা আল্লাহর দরবারে মাকবূল হয়েছেন ঐ পথে চলার পাক্কা এরাদা করা।

কবর বিষয়ে প্রান্তিকতা

কবরের বিষয়ে শরীয়ত ইফরাত-তাফরীত (কোনো প্রকারের প্রান্তিকতা) অনুমোদন করে না। সুতরাং কবরের অসম্মানও যেমন নিষেধ তেমনি সম্মানে সীমা অতিক্রম করাও। হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করতে, এর উপর গম্বুজ নির্মাণ করতে আর কবরের উপর বসতে নিষেধ করেছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭০; মিশকাতুল মাসাবীহ পৃ. ১৪৮

এক হাদীসে আছে, ‘কবরের উপর বসবে না, কবরের দিকে ফিরে নামাযও পড়বে না’। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭২

আরেক হাদীসে আছে, ‘তোমাদের কেউ যেন কবরের উপর না বসে। সে জ্বলন্ত

কয়লার উপর বসুক, যার কারণে তার পরিধেয় কাপড় পুড়ে তার শরীরও পুড়ে যায়- এ-ও তার জন্য ভালো।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭১

এক হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করতে, তার উপর কিছু লিখতে এবং তা পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১০৫২

অন্য হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী আমর ইবনে হায্ম রা.-কে কবরে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে বলেছেন, ‘কবরের অধিবাসীকে কষ্ট দিও না।’ -(মুসনাদে আহমাদ) মিশকাতুল মাসাবীহ পৃ. ১৪৯

এ সকল হাদীস থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, কবরের অসম্মানও কাম্য নয়, সীমাতিরিক্ত সম্মানও কাম্য নয়। তবে কবরের উপর খেলাফে শরা কর্মকাণ্ড হলে তা সংশোধন করা জরুরি। হযরত আলী রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ কাজে পাঠিয়েছিলেন যে, যে ছবি বা মূর্তিই দেখি তা যেন বিলুপ্ত করি আর যে কবরই উঁচু দেখি তা যেন সমান করি। -(সহীহ মুসলিম) মিশকাত শরীফ পৃ. ১৪৮

এই হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয়, পাকা কবর বানানো বা কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ জায়েয নয়। স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর দুই সাহাবী (হযরত আবু বকর ও ওমর রা.)-এর কবরও পাকা নয়, কাঁচা। -(সুনানে আবু দাউদ) মিশকাতুল মাসাবীহ পৃ. ১৪৯

এখন ঐসব কার্যকলাপ সম্পর্কে চিন্তা করুন, যা আমাদের অজ্ঞ আওয়াম ওলী-বুযুর্গদের কবরে করে থাকে। যেমন কবরে গেলাফ চড়ানো, বাতি জ্বালানো, কবরে সিজদা করা, তাওয়াফ করা, কবরে চুমু খাওয়া, কপাল ঘষা, কবরের সামনে হাত বেধে এমনভাবে দাঁড়ানো যেভাবে নামাযী আল্লাহর সামনে হাত বেধে দাঁড়ায়, কবরের সামনে রুকুর মতো ঝোঁকা, কবরের উদ্দেশ্যে মান্নত মানা, নিয়ায চড়ানো ইত্যাদি।

আপনি যদি কখনো কোনো বুযুর্গের মাযারে গিয়ে থাকেন তাহলে এই সকল কার্যকলাপ স্বচক্ষেই দেখেছেন। অথচ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত ও ফিকহে হানাফীর কিতাবাদিতে এই সকল বিষয়কে না-জায়েয লেখা হয়েছে। (আল কাউসার)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন:

মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন