দেবর ভাসুর ননদজামাইর সাথেও পর্দা জরুরী
প্রশ্নঃ ২৩৬৩৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার শশুর বাড়িতে আমার বাসুর,দেবর থাকে। আমি তাদেরকে দেখলে আড়াল হইলেও তারা হয় না। এবং আমার শাশুড়ি বলে যে (দেবর ভাবি এক সাথে ভাই বোনের মতো থাকবে, ভাবি দেবরের সামনে যায় না) আমি জেনারেল লাইনের ছিলাম আমার হাসবেন্ড মসজিদের মুয়াজ্জিন সে আমাকে বলেছে যে আমি যেন তাদের সামনে না যাই। কিন্তু আমার শশুর শাশুড়ী এটা তেমন মন থেকে চায় না। আমার মনে হয় আমার পর্দা ঠিক মতো হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমি কী করবো। বা আমার হাসবেন্ডকে যদি বলি আমাকে আলাদা পর্দা করতে পারবো এমন জায়গায় রাখতে। শশুর শাশুড়ীকে তাদের খরচ দিযে দিতে তাহলে কি কোনো গুনাহ হবে কিনা। বা আমার হাসবেন্ডের কি করা উচিৎ?
।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সম্মানিত প্রশ্নকারী বোন!
আল্লাহ তায়ালা আপনার হিম্মত, সাহস ও হিকমাহ আরো বাড়িয়ে দিন। এগুলো প্রয়োগ করে আপনি নিজেও দীনের পথে এগিয়ে যান এবং পরিবারস্ত সকলের জন্য একজন আদর্শ ও দীনদার স্ত্রী, বধু এবং নারী, হিসেবে নিজেকে পরিচালিত করুন। আপনি এখানে আপনার শ্বশুর-শাশুড়ীর কথা উল্লেখ করেছেন। তারা যেগুলো বলেছেন শরীয়তের দৃষ্টিতে সেগুলোই গুনাহের কাজ। হাদিস শরীফে রাসুলুল্লাহ সা দেবীকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করে নারীদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় দেবর-ভাবির মিশ্রণের ফলে পরকীয়াসহ নানাবিধ সমস্যা ও পাপাচার সৃষ্টি হচ্ছে। কাজেই আপনিও কিছুতেই দেবর-ভাসুরের সাথে দেখা সাক্ষাত করবেন না। তাদের আপনার চেহারা প্রদর্শন করা কিংবা আপনি তার চেহারা দেখা কোনটাই জায়েজ হবে না। তবে কখনো যদি অনন্যোপায় অবস্থার সম্মুখীন হোন তাহলে পর্দর আড়াল থেকে কোমলতা পরিহার করে সংক্ষিপ্তাকারে প্রয়োজনীয় কথাগুলো বলতে পারবেন।
আপনার জন্য আমাদের দৃষ্টিতে করণীয় হলো,
১. আপনি পূর্ণ পর্দার সাথে চলুন। এই ব্যাপারে নো কম্প্রোমাইজ!!
১. ঘরে তালিমের ব্যবস্থা করুন। তার জন্য আকামে জিন্দেগী , আহকামুন নিসা এবং তালিমুন নিসা ইত্যাদী উত্তম বই হতে পারে। নিজেও ইমানিয়াত ও ইসলামিয়াত সম্পর্কে পড়া-শোনা করুন। সেগুলো বিশেষত শাশুড়ীর সাথে শেয়ার করুন।
২. শ্বশুর-শাশুড়ীকে সম্ভব হলে ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মাসতুরাতের জামাতে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।
৩. ঘরে পরিবেশ কায়েমের জন্য নিয়মিত দোয়া ও সদকা করুন।
৪. উপরোক্ত বিষয়গুলো অবলম্বনের পরও যদি কোনো ফল না হয় তবে আপনার স্বামীকে বলুন তার সাধ্যের মধ্যে যেন তিনি পর্দার সাথে আপনার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। তবে আগে উপরের বিষয়গুলো দিয়ে চেষ্টা করুন। এর জন্য হয়তো কিছুটা সময় লাগবে তবে সেটার ফলাফল চিরস্থায়ী হবে ইনশাআল্লাহ।
পর্দা -হিজাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের রেফারেন্স উত্তরটি দেখুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ১২০৭৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সামীর বড় ভাই এর সামনে কি ধরনি পর্দা করার বিধান আছে। নাকি দেবর এর মত ভাসুর এর সামনে যাওয়া ও ঠিক না?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
স্বামীর বড় ভাইয়ের সাথে পর্দা করা ফরজ,,,,
আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দা ফরজ করেছেন। কিন্তু নারী-পুরুষদের অনেকেই না জানার কারণে পর্দার বিধান লঙ্ঘন করেন। তবে একজন পুরুষ ও একজন নারী ১৪ জনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন। এদের পরিচয় জানা থাকলে পর্দা পালন করা হবে সহজ।
যাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করা যাবে; বোঝার সুবিধার্থে তাদের বিবরণ নারী-পুরুষ আলাদা আলাদা ক্যাটাগরি করে তা তুলে ধরা হয়েছে। পুরুষের জন্য- মা, বোন ও মেয়ে এবং নারীর জন্য- বাবা, ভাই ও ছেলে ক্যাটাগরি নির্ধারণ করে তা দেখানো হয়েছে।
একজন পুরুষ যে ১৪ জন (মা, বোন ও মেয়ে সম্পর্কিত) নারীর সঙ্গে দেখা করা বৈধ। তারা হলেন-> ‘মা’ সম্পর্কিত যাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে, তারা হলেন ৫ জন-- নিজের মা : গর্ভধারিনী মা ও সৎ মা।- দুধ মা : শিশুকালে যদি কোনো নারীর বুকের দুধ পান করে বড় হয় সন্তান।- খালা : গর্ভধারিনী মায়ের আপন বোন।- ফুফু : বাবার আপন বোন।- শাশুড়ি : স্ত্রীর আপন মা।
> ‘বোন’ সম্পর্কিত যাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে, তারা জন-- আপন বোন। এক বাবার ঔরসের সহদোর বোন।- দুধ বোন : যে নারীর বুকের দুধ পান করে বড় হয়েছে, তার কন্যা সন্তান।- দাদী : বাপের মা।- নানী। মায়ের মা।- নাতনী। আপন ছেলে ও মেয়ের ঘরের নাতনি।
> ‘মেয়ে’ সম্পর্কিত যাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে, তারা ৪ জন-- নিজের মেয়ে।- ভাতিজী : আপন ভাইয়ের মেয়ে।- ভাগ্নী : আপন, সৎ ও দুধ বোনের মেয়ে।- পুত্রবধু : ছেলের বউ।
আবার একজন নারী যে ১৪ জন (বাবা, ভাই ও ছেলে সম্পর্কিত) পুরুষের সঙ্গে দেখা করা বৈধ। তারা হলেন-> ‘বাবা’ সম্পর্কিত যাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে, তারা হলেন ৫ জন-- বাবা: নিজের জন্মদাতা বাবা।- দুধ বাবা : দুধ মার স্বামী।- চাচা : বাবার আপন ভাই।- মামা : মায়ের আপন ভাই।- শ্বশুর : স্বামীর আপন বাবা।
> ‘ভাই’ সম্পর্কিত যাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে, তারা হলেন ৫ জন-- আপন ভাই : একই বাবার সন্তান।- দুধ ভাই : দুগ্ধদানকারী মায়ের সন্তান।- দাদা ভাই : আপন বাবার বাবা।- নানা ভাই : নিজ মায়ের বাবা।- নাতী : আপন ভাই-বোনের ছেলে-মেয়ের ঘরের সন্তান।
> ‘ছেলে’ সম্পর্কিত যাদের সঙ্গে দেখা করা যাবে, তারা ৪ জন-- ছেলে : নিজের ছেলে।- ভাতিজা : আপন ভাইয়ের ছেলে।- ভাগিনা : আপন বোনের ছেলে।- জামাতা : নিজ মেয়ের স্বামী।
একজন নারী ও একজন পুরুষের জন্য উল্লেখিত ব্যক্তিদের ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা যাবে না। এমনকি অন্যদের সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া অযথা কথাবার্তা বলাও গোনাহের কাজ। তা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা এদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট আয়াত ঘোষণা করে তা জানিয়ে দিয়েছেন-حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالاَتُكُمْ وَبَنَاتُ الأَخِ وَبَنَاتُ الأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللاَّتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللاَّتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَآئِكُمُ اللاَّتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُواْ دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلاَئِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلاَبِكُمْ وَأَن تَجْمَعُواْ بَيْنَ الأُخْتَيْنِ إَلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا‘তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভাইয়ের মে; বোনের মেয়ে; তোমাদের সে মা, যারা তোমাদের (বুকের) দুধ পান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের মেয়ে, যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোনো গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত ছেলেদের স্ত্রী। (সুরা নিসা : আয়াত ২৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে পর্দা পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন