সৎসঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎসঙ্গে সর্বনাশ
প্রশ্নঃ ২১২৪৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি নিজেকে দ্বীনদার বলব না।আমি ধুমপান ও নেশা করি না। আমি জেনারেল লাইনের ছাত্র তাই আমার চিন্তা-ভাবনা আর আমার সহপাঠীদের চিন্তা ভাবনা আকাশ পাতাল। আমি তাদের সাথে
প্রয়োজন বা কাজ ছাড়া কথা বলি না। কারন তারা ধুমপান তো দুরের কথা সবাই কেউ আছে ১ বার না বার
গাজা বা নেশা করেছে। তাই তারা যতি পাওয়ারফুল হক
আমি তাদের সাথে মিশি না। কেউ কেউ ভাবে যে
পাওয়ারফুল বন্ধু থাকলে মনে হয় বিপদ আপদে কাজে লাগবে তাই কিছু মানুষ আছে তাদের চামচামি করে।
আমি খালি বিশ্বাস করি বিপদ যত বড়ই হক না কেন
আল্লাহ ই আমাকে সাহায্য করবে যদি তার ইবাদত ঠিক করে করি। তাই আমার বাসার মানুষ বলে কি সারাদিন বাসাই মেয়েদের মত বসে থাকস, তোর কি কোনো
বন্ধু নাই নাকি তোর সাথে কেউ মিশে না। এইভাবে আমাকে যখন বলে আমার খুব লজ্জা লাগে। আবার মাঝে মাঝে মন ও ভেঙ্গে যাই।
* আমি যে, তাদের সাথে মিশি না আমার তা কোরআন
হাদিস কি বলে?
* আর যে ব্যক্তি মানুষকে খোজা বা লজ্জা দিয়ে কথা বলে বা মন ভেঙ্গে দেয়, তখন কি আমি তাদের সাথে ঝগড়া করব বা তর্ক করব নাকি কিছুই করব না?
* কিছু আমল শিখিয়ে দিন জাতে এই পরিস্থিতি জেন না আসে।
[ দয়া করে এই প্রশ্নের জবাব দিলে নিজেকে এই পরীক্ষা থেকে বাঁচিয়ে রাখব ]
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সম্মানিত প্রশ্নকারী!
আল্লাহ তায়ালা আপনার ধৈর্য ও হিম্মত বাড়িয়ে দিন। খারাপ বন্ধুদের এড়িয়ে চলছেন এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কারণে কথায় আছে সৎসঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎসঙ্গে সর্বনাশ। শুধু বাগধারাই নয় বরং এটাই কুরআনের নির্দেশ। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَکُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِیۡنَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।
—আত তাওবাহ্ - ১১৯
"হে ইমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো"।
সুতরাং যারা এব্যাপারে আপনাকে নিন্দা করছে, মনে আঘাত দিচ্ছে আপনি তাদের কথায় কর্ণপাত করবেন না। তবে এটা নিয়ে তাদের সাথে কথা কাটাকাটি কিংবা বিবাদেও লিপ্ত হবেন না। সম্ভব হলে তাদের উত্তম পন্থায় বুঝিয়ে দিন। আপনার মন-মানসিকতার স্বাতন্ত্র্যবোধ তাদের জানিয়ে দিন। আপনাকে আবারো মোবারকবাদ।
দীনের ওপর অটল অবিচল থাকতে পারলে আজকে যারা সমালোচনা করছে আগামীকাল ইনশাআল্লাহ তারাই আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকবে। কাজেই এটা নিয়ে বেশী ভাববেন না।
দ্বিতীয়ত যেসকল খারাপ বন্ধু বিভিন্ন নেশায় মত্ত— খোঁজ নিয়ে দেখবেন তাদের মাঝে দু-চারজন ভালো মনের বন্ধুও আছে যারা আসলে দীনের ব্যাপারে অত্যন্ত পজিটিভ কিন্তু তারা দুষিত পরিবেশের শিকার। আপনি লক্ষ করে তাদের মধ্যে দাওয়াতী কাজ করতে পারেন। দাওয়াতের সবথেকে বড় ক্রিয়া হলে দাওয়াত কখনও বৃথা যায় না। কারো না কারোর ওপর তা প্রভাব পড়ে। তবে এক্ষেত্রে দায়ীকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে আপনি কোনো আলেম, তাবলীগের সিনিয়র সাথী/ভাইয়ের সহযোগিতা নিন। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই অবস্থার উন্নতি ঘটবে।
বিষন্নতা কাটাতে করণীয় সম্পর্কে জানতে আমাদের মাসায়েল সেকশনে সার্চ করে দেখুন। সেখানে অসংখ্য আমলের কথা উল্লেখ আছে। এসংক্রান্ত দিকনির্দেশনা পেতে উদাহরণস্বরূপ নিচের রেফারেন্স উত্তরটি দেখুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৮৬৯৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সম্মানিত হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন টি হলবিষন্নতা থেকে বাঁচার উপায় কি? মাঝে মাঝে এমন মনে হয় যেন আত্মহত্যা করতে মন চায়। মন দিয়ে ইবাদাত করতে পারিনা এই সমস্যার কারণে। ইসলামিক কোন কিতাব থাকলেও বলতে পারেন।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
এই ধরনের সমস্যায় এক সাহাবী নিপতিত হয়েছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দোয়া শিখিয়েছেন।
ফজর ও মাগরিবের পর তিনবার তিনবার পড়ুন-
চিন্তা, পেরেশানি, ঋণ, অলসতা ও কাপুরুষতার দূরীকরন
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحُزْنِ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَ الْكَسَلِ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَ الْبُخْلِ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَ قَهْرِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজাজি ওয়াল কাসালি ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবুনি ওয়াল বুখুলি ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিত দিনি ওয়া কাহরির রিজাল।
অনুবাদ:
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই চিন্তা পেরেশানি থেকে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই অপারগতা ও অলসতা থেকে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কাপুরুষতার ও কৃপণতা থেকে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের ক্ষোভ থেকে।
—সুনানু আবী দাঊদ ১৫৫৫
উদ্ধৃতি:
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রাসুল তাকে বললেন, আবু উমামা! ব্যাপার কী, নামাজের সময় ছাড়াও তোমাকে মসজিদে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে? আবু উমামা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অনেক ঋণ এবং দুনিয়ার চিন্তা আমাকে গ্রাস করে রেখেছে। তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালেমা শিখিয়ে দেব, যেগুলো বললে আল্লাহ তোমার চিন্তাকে দূর করে দেবেন এবং তোমার ঋণগুলো আদায় করে দেবেন। তিনি বলেন, জি হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন, তখন রাসুল (সা.) তাকে উপর্যুক্ত দোয়াটি শিখিয়ে দেন এবং তা সকাল-সন্ধ্যায় পড়তে বলেন। আবু উমামা বলেন, আমি রাসুল (সা.) এর এ দোয়াটি পড়তে লাগলাম। ফলে আল্লাহ আমার চিন্তা দূর করে দিলেন এবং আমার ঋণগুলোও আদায় করে দিলেন।
—সুনানু আবী দাঊদ ১৫৫৫
বিশ্বে বহুল সমাদৃত একটি কিতাব "লা তাহযান" "হতাশ হবেন না" বাংলা ভাষায় বইটি অনূদিত হয়েছে। রকমারি ডট কম থেকে অথবা বাংলাবাজার ইসলামী টাওয়ারে গিয়ে বইটি কিনতে পাবেন।
বইটি পড়ুন, ইনশাআল্লাহ উপকার হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন