ইমামতির শর্ত কি কি?
প্রশ্নঃ ১৯৩২১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ভাই ইমামতি করার উপযোগী ব্যাক্তি সম্পর্কে হাদিস ও কুরআনের আলোকে বিস্তারিত জানতে চাইছি?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইমামতীর জন্য কয়েকটি সিফাত বা গুণ থাকতে হয় যথা- (১) মুসলমান হওয়া, (২) বালিগ হওয়া, (৩)জ্ঞানী হওয়া, (৪) পুরুষ হওয়া, (৫) কারী ও আলেম হওয়া। অর্থাৎ শুদ্ধভাবে কিরাআত পাঠে সক্ষম এবং নামাযের জরুরী মাসাইল সম্পর্কে অভিজ্ঞ। (৬) মুত্তাকী হওয়া অর্থাৎ সকল প্রকার হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী ও বিদ'আতী কাজ থেকে বেচে থাকা (৭) শরণই উযর থেকে মুক্ত হওয়া, যেমন- বোবা, তোতলামী ইত্যাদি না হওয়া । মোদ্দাকথা শরী'আতের পূর্ণ অনুসরণ করা এবং তার উপর সর্বদাই অটল থাকা । [প্রমাণঃ ফাতাওয়া শামী ১ : ৫৫০, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৭ : ৬২]
উল্লেখিত শর্তসমূহ না পাওয়া গেলে তাকে ইমাম পদে নিয়োগ দান করা জায়িয হবে না । বিশেষ করে কোন ফাসিক ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ করা বা বহাল রাখা জায়িয নয়। তেমনি ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী। এ ধরনের ব্যক্তির জন্য ইমামতী করাও নাজায়িয ।
ফাসিক বলা হয় যারা গুনাহে কবীরায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যেমন দাঁড়ি কেটে ছেটে এক মুষ্টির কম করে রাখা । মিথ্যা কথা বলা বা খেয়ানত করা । পর্দা না মানা, সিনেমা- টেলিভিশন প্রভৃতি দেখা । গান-বাদ্য শুনা, ঘরে জীবজন্তুর ছবি বা মূর্তি স্থাপন করা । বেপর্দা মহিলাদের ঝাড় ফুঁক করা । [প্রমাণ: ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ২ : ৭৭, # মারাকিল ফালাহ, ১৬৩, # ফাতাওয়ায়ে শামী ১ : ৫৫৯, # ইমদাদুল মুফতীন ৩১৯]
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ مِسْعَرِ بْنِ حَبِيبٍ الْجَرْمِيِّ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ سَلِمَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُمْ وَفَدُوا إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا أَرَادُوا أَنْ يَنْصَرِفُوا قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ يَؤُمُّنَا قَالَ " أَكْثَرُكُمْ جَمْعًا لِلْقُرْآنِ " . أَوْ " أَخْذًا لِلْقُرْآنِ " . قَالَ فَلَمْ يَكُنْ أَحَدٌ مِنَ الْقَوْمِ جَمَعَ مَا جَمَعْتُهُ - قَالَ - فَقَدَّمُونِي وَأَنَا غُلاَمٌ وَعَلَىَّ شَمْلَةٌ لِي فَمَا شَهِدْتُ مَجْمَعًا مِنْ جَرْمٍ إِلاَّ كُنْتُ إِمَامَهُمْ وَكُنْتُ أُصَلِّي عَلَى جَنَائِزِهِمْ إِلَى يَوْمِي هَذَا . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَاهُ يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ عَنْ مِسْعَرِ بْنِ حَبِيبٍ الْجَرْمِيِّ عَنْ عَمْرِو بْنِ سَلِمَةَ قَالَ لَمَّا وَفَدَ قَوْمِي إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَمْ يَقُلْ عَنْ أَبِيهِ .
৫৮৭. কুতায়বা ..... আমর ইবনে সালামা (রাযিঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তাঁরা প্রতিনিধি হিসাবে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর খিদমতে উপস্থিত হন। তাঁরা সেখান হতে প্রত্যাবর্তনের সময় বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাদের নামাযে কে ইমামতি করবে? তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরআন সম্পর্কে অধিক অভিজ্ঞ বা অধিক জ্ঞানী- সে ইমামতি করবে।
রাবী বলেন, এ সময় আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে কুরআন সম্পর্কে আমিই অধিক অভিজ্ঞ ছিলাম। তাই তারা আমাকে ইমাম নিযুক্ত করেন, কিন্তু তখন আমার বয়স ছিল খুবই কম। তখন আমার পরনে একটি ছোট চাঁদর থাকত এবং বয়সের স্বল্পতা হেতু আমি তাদের সাথে উঠাবসা না করলেও আমি তাদের জামাআতে ইমামতি করতাম এবং জানাযার নামাযও পড়াতাম।
—সুনানে আবু দাউদ, ইফা নং ৫৮৭
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، أَخْبَرَنَا أَيُّوبُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ سَلِمَةَ، قَالَ كُنَّا بِحَاضِرٍ يَمُرُّ بِنَا النَّاسُ إِذَا أَتَوُا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَكَانُوا إِذَا رَجَعُوا مَرُّوا بِنَا فَأَخْبَرُونَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ كَذَا وَكَذَا وَكُنْتُ غُلاَمًا حَافِظًا فَحَفِظْتُ مِنْ ذَلِكَ قُرْآنًا كَثِيرًا فَانْطَلَقَ أَبِي وَافِدًا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي نَفَرٍ مِنْ قَوْمِهِ فَعَلَّمَهُمُ الصَّلاَةَ فَقَالَ " يَؤُمُّكُمْ أَقْرَؤُكُمْ " . وَكُنْتُ أَقْرَأَهُمْ لِمَا كُنْتُ أَحْفَظُ فَقَدَّمُونِي فَكُنْتُ أَؤُمُّهُمْ وَعَلَىَّ بُرْدَةٌ لِي صَغِيرَةٌ صَفْرَاءُ فَكُنْتُ إِذَا سَجَدْتُ تَكَشَّفَتْ عَنِّي فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنَ النِّسَاءِ وَارُوا عَنَّا عَوْرَةَ قَارِئِكُمْ . فَاشْتَرَوْا لِي قَمِيصًا عُمَانِيًّا فَمَا فَرِحْتُ بِشَىْءٍ بَعْدَ الإِسْلاَمِ فَرَحِي بِهِ فَكُنْتُ أَؤُمُّهُمْ وَأَنَا ابْنُ سَبْعِ سِنِينَ أَوْ ثَمَانِ سِنِينَ .
৫৮৫. মূসা ইবনে ইসমাঈল ...... আমর ইবনে সালামা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা লোকজনের সমবেত কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক প্রতিনিধি দল নবী (ﷺ)-এর নিকট আগমন করে। তাঁরা প্রত্যাবর্তনের সময় আমাদের পাশ দিয়ে গমনকালে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এইরূপ বলেছেন। রাবী বলেন, এ সময় আমার বয়স কম ছিল এবং স্মরণশক্তি ছিল প্রখর। ফলে এ সময়ে আমি কুরআনের অনেকাংশ কন্ঠস্থ করে ফেলি।
রাবী বলেন, একদা আমার পিতা তাঁর গোত্রের প্রতিনিধি হিসেবে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নিকট যান। তখন তিনি তাদেরকে নামাযের নিয়ম-কানুন শিক্ষা দেন এবং এ কথাও বলেন যে, তোমাদের মধ্যে যার অধিক কুরআন মুখস্ত আছে- সে যেন ইমামতি করে। আমি অধিক কুরআন মুখস্থকারী ও বিশুদ্ধরূপে পাঠকারী হিসেবে তারা আমাকেই ইমামতির দায়িত্ব প্রদান করেন।
অতঃপর আমি তাদের ইমামতি করতে থাকি। এ সময় আমার গায়ে হলুদ বর্ণের একটি ছোট চাঁদর ছিল। নামাযের সময় যখন আমি সিজদায় যেতাম তখন তা খুলে যেত। মহিলাদের মধ্যে একজন বলেন, তোমরা তোমাদের ইমামের সতর ঢাকার ব্যবস্থা কর। অতঃপর তারা আমার জন্য একটি ইয়ামান দেশীয় জামা খরিদ করেন; যার ফলে ইসলাম গ্রহণের পর আমি এর চাইতে অধিক খুশী আর হই নাই। আমি এমন সময় হতে তাদের ইমামতি করতে আরম্ভ করি যখন আমার বয়স ছিল মাত্র ৭ বা ৮ বছর।*
* ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ)-এর মতানুযায়ী ফরয নামাযের জন্য নাবালকের ইমামতি জায়েয নয়। এটা ইসলামের প্রারম্ভিক যুগের ঘটনা, যখন শরীআতের হুকুম-আহকাম পরিপূর্ণভাবে নাযিল হয়নি। - (অনুবাদক)
—সুনানে আবু দাউদ, ইফা নং ৫৮৫
حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ الطَّيَالِسِيُّ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، أَخْبَرَنِي إِسْمَاعِيلُ بْنُ رَجَاءٍ، سَمِعْتُ أَوْسَ بْنَ ضَمْعَجٍ، يُحَدِّثُ عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الْبَدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ وَأَقْدَمُهُمْ قِرَاءَةً فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً فَلْيَؤُمَّهُمْ أَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَلْيَؤُمَّهُمْ أَكْبَرُهُمْ سِنًّا وَلاَ يُؤَمُّ الرَّجُلُ فِي بَيْتِهِ وَلاَ فِي سُلْطَانِهِ وَلاَ يُجْلَسُ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ " . قَالَ شُعْبَةُ فَقُلْتُ لإِسْمَاعِيلَ مَا تَكْرِمَتُهُ قَالَ فِرَاشُهُ .
৫৮২. আবুল ওয়ালীদ ...... আবু মাসউদ আল-বদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ উপস্থিত লোকদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব (তার কিরাআত) সম্পর্কে সর্বাধিক অভিজ্ঞ ব্যক্তি তাদের ইমামতি করবে। যদি এ বিষয়ে সকলে সমান যোগ্যতার অধিকারী হয়, তবে যিনি প্রথম হিজরতকারী ব্যক্তি তিনি ইমাম হবেন। যদি তাতেও সকলে সমান হয়, তবে যিনি অধিক বয়স্ক হবেন তিনিই ইমামতি করবেন। কোন ব্যক্তি যেন অন্য কোন স্থানে অথবা অন্যের আধিপত্যের স্থানে ইমামতি না করে। কারো জন্য নির্ধারিত আসনে তার অনুমতি ব্যতিরেকে যেন আসন গ্রহণ না করে। অর্থাৎ ইমাম বা অন্য কারো জন্য নির্ধারিত বিছানায় যেন না বসে।
—সুনানে আবু দাউদ, ইফা নং ৫৮২
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন