আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১৮৮৪০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করার হুকুম কি?

২৭ মে, ২০২২
ঘাটাইল

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم




ফরজ নামাযের পর মুনাজাতের বিষয় বুঝতে হলে তিনটি পয়েন্ট ভাল করে বুঝতে হবে। যথা-



ফরজ নামাযের পর মুনাজাত প্রমাণিত কি না?



সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণিত কি না?



ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতের হুকুম কী?

১ম বিষয়

ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করা একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন-

ক)

وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِذَا صَلَّيْتَ فَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الخَيْرَاتِ، وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ، وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ،

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে মুহাম্মদ! যখন তুমি নামায পড়ে ফেলবে, তখন এ দুআ করবে- হে আল্লাহ!আপনার নিকট ভাল কাজের তৌফিক চাই এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন তথা আল্লাহ ওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩২৩৩}

খ)

ইমাম বুখারী রহঃ স্বীয় কিতাব আততারীখুল কাবীরে এনেছেন-

عَنْ كاتب المغيرة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو في دبر صلاته

হযরত মুগিরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নামায শেষে দুআ করতেন। {আততারীখুল কাবীর, হাদীস নং-১৭৭২, ৬/৮০}

গ)

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَ مَقَامِي بَيْنَ كَتِفَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكَانَ إِذَا سَلَّمَ قَالَ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ عُمُرِي آخِرَهُ، اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَوَاتِيمَ عَمَلِي رِضْوَانَكَ، اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ أَيَّامِى يَوْمَ أَلْقَاكَ»

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ছিলাম রাসূল সাঃ এর কাঁধের পাশে। তখন রাসূল সাঃ সালাম ফিরিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ জীবনকে সবচে’ সুন্দর কর। হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ আমলকে তোমার সন্তুষ্টি অনুপাতে কর। হে আল্লাহ! তুমি তোমার সাথে আমার সাক্ষাতের দিনকে সর্বোত্তম দিন কর। {আলমুজামুল আওসাত লিততাবারানী, হাদীস নং-৯৪১১}

ঘ)

হযরত সাদ রাঃ বলেন,

وَيَقُولُ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَتَعَوَّذُ بِهِنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَعَذَابِ الْقَبْرِ»

রাসূল সাঃ প্রতি নামাযের পর এই শব্দে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কৃপণতা থেকে পানাহ চাই। এবং অভাব থেকে পানাহ চাই এবং অশীতিপর বৃদ্ধাবস্থা থেকে পানাহ চাই এবং দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে পানাহ চাই। {সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৫৪৭৯}

ঙ)

مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي يَحْيَى، قَالَ: رَأَيْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ وَرَأَى رَجُلًا رَافِعًا يَدَيْهِ بِدَعَوَاتٍ قَبْلَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهَا، قَالَ: «إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ

হযরত মুহাম্মদ বিন আবী ইয়াহইয়া বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ কে দেখলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে নামাযের ভিতরে হাত তুলে দুআ করছেন। যখন লোকটি নামায শেষ করল। তখন তিনি তাকে বললেন, নিশ্চয় রাসূল সাঃ নামায শেষ করার আগে হাত তুলে দুআ করতেন না। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৩২৪}

এছাড়া আরো অসংখ্য হাদীস রয়েছে যা প্রমাণ করে রাসূল সাঃ ফরজ নামাযের পর হাত তুলে দুআ করতেন।

২য় বিষয়

পূর্বের আলোচনা দ্বারা পরিস্কার হয়ে গেল যে, রাসূল সাঃ ফরজ নামায শেষে হাত তুলে দুআ করতেন। এখন প্রশ্ন হল, রাসূল সাঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে সম্মিলিতভাবে দুআ করা প্রমাণিত কি না?

নিচে কয়েকটি হাদীস দেয়া হল। যা পরিস্কারভাবে সম্মিলিত দুআ করা ও সম্মিলিত দুআর প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।



أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، قَالَ: أَتَى رَجُلٌ أَعْرَابِيٌّ مِنْ أَهْلِ البَدْوِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلَكَتِ المَاشِيَةُ، هَلَكَ العِيَالُ هَلَكَ النَّاسُ، «فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ، يَدْعُو، وَرَفَعَ النَّاسُ أَيْدِيَهُمْ مَعَهُ يَدْعُونَ»

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন গ্রাম্য সাহাবী রাসূল সাঃ এর কাছে আসলেন জুমআর দিন। এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জিনিস পত্র, পরিবার, মানুষ সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একথা শুনে রাসূল সাঃ তার উভয় হাত উত্তলোন করলেন দুআর উদ্দেশ্যে। উপস্থিত সবাই রাসূল সাঃ এর সাথে দুআর জন্য হাত উত্তোলন করলেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০২৯}

এ হাদীসে পরিস্কারভাবে রাসূল সাঃ থেকে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত প্রমানিত। লক্ষ্য করুন। রাসূল সাঃ দুআ করেছেন, আর উপস্থিত সাহাবীগণ আমীন আমীন বলে সম্মিলিত মুনাজাতে অংশ নিয়েছেন।



عَنْ حَبِيبِ بْنِ مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيِّ – وَكَانَ مُسْتَجَابًا -: أَنَّهُ أُمِّرَ عَلَى جَيْشٍ فَدَرِبَ الدُّرُوبِ، فَلَمَّا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَالَ لِلنَّاسِ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَقُولُ: ” «لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ، إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ» “.

ثُمَّ إِنَّهُ حَمِدَ اللَّهَ، وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَقَالَ: اللَّهُمَّ احْقِنْ دِمَاءَنَا، وَاجْعَلْ أُجُورَنَا أُجُورَ الشُّهَدَاءِ،

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ وَقَالَ: الْهَنْبَاطُ بِالرُّومِيَّةِ: صَاحِبُ الْجَيْشِ. وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ.

হযরত হাবীব বিন মাসলামা আলফিহরী রাঃ। যিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়া ছিলেন। তাকে একবার একটি বাহিনী প্রধান নিযুক্ত করা হয়। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের পর তিনি যখন শত্রুর সম্মুখিন হলেন। তখন লোকদের বললেন, আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন “যখনি কোন দল একত্র হয়, তারপর তাদের কথক দুআ করে, আর অপরদল আমীন বলে তখন আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন”।

এ হাদীস বলার তিনি [হাবীব বিন মাসলামা রাঃ] হামদ ও সানা পড়লেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রাণ রক্ষা কর। আর আমাদের শহীদের সওয়াব দান কর।

{মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪৭, মুস্তাতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৫৪৭৮, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩৫৩৬}

আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, উক্ত হাদীসের সূত্রের প্রতিটি রাবী সহীহের রাবী। ইবনে লাহিয়াহ ছাড়া। কিন্তু সেও হাসান পর্যায়ের রাবী। {মাযমাউয যাওয়ায়েদ-১৭৩৪৭}



আরো একটি হাদীস উদ্ধৃত করছি। যা আলবিদায়া ওয়াননিহায়া গ্রন্থে আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ সনদসহ বর্ণনা করেছেন।

যার সারমর্ম হল,আলা বিন হাযরামী রাঃ। মুস্তাজাবুদ দাওয়া সাহাবী ছিলেন। একদা বাহরাইনের জিহাদ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলে খাবার দাবার ও তাবুর রসদসহ উটগুলো পালিয়ে যায়। তখন গভীর রাত। সবাই পেরেশান। ফজরের সময় হয়ে গেলে আজান হল। সবাই নামায আদায় করলেন। নামায শেষে আলা বিন হাযরামী রাঃ সহ সবাই হাত তুলে সূর্য উদিত হওয়ার সূর্যের কিরণ গায়ে লাগা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দুআ করতে থাকেন। {আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৬/৩২৮-৩২৯}

উক্ত ঘটনাটির পূর্ণ বিবরণের আরবী পাঠ

وَقَدْ كَانَ الْعَلَاءُ مِنْ سَادَاتِ الصَّحابة الْعُلَمَاءِ العبَّاد مُجَابِي الدَّعوة، اتَّفق لَهُ فِي هَذِهِ الْغَزْوَةِ أنَّه نَزَلَ مَنْزِلًا فَلَمْ يَسْتَقِرَّ النَّاس عَلَى الْأَرْضِ حَتَّى نَفَرَتِ الْإِبِلُ بِمَا عَلَيْهَا مِنْ زَادِ الْجَيْشِ وَخِيَامِهِمْ وشرابهم، وبقوا على الأرض ليس معهم شئ سِوَى ثِيَابِهِمْ – وَذَلِكَ لَيْلًا – وَلَمْ يَقْدِرُوا مِنْهَا عَلَى بَعِيرٍ وَاحِدٍ، فَرَكِبَ النَّاس مِنَ الهمِّ والغمِّ مالا يُحَدُّ وَلَا يُوَصَفُ، وَجَعَلَ بَعْضُهُمْ يُوصِي إِلَى بَعْضٍ، فَنَادَى مُنَادِي الْعَلَاءِ فَاجْتَمَعَ النَّاس إِلَيْهِ، فَقَالَ: أيُّها النَّاس أَلَسْتُمُ الْمُسْلِمِينَ؟ أَلَسْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟

أَلَسْتُمْ أَنْصَارَ اللَّهِ؟ قَالُوا: بَلَى، قَالَ: فَأَبْشِرُوا فَوَاللَّهِ لَا يَخْذِلُ اللَّهُ مَنْ كَانَ فِي مِثْلِ حَالِكُمْ، وَنُودِيَ بِصَلَاةِ الصُّبح حِينَ طَلَعَ الْفَجْرُ فصلَّى بالنَّاس، فلمَّا قَضَى الصَّلاة جَثَا عَلَى رُكْبَتَيْهِ وَجَثَا النَّاس، وَنَصِبَ فِي الدُّعاء وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَفَعَلَ النَّاس مِثْلَهُ حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ، وَجَعَلَ النَّاسُ يَنْظُرُونَ إِلَى سَرَابِ الشَّمْسِ يَلْمَعُ مَرَّةً بَعْدَ أُخْرَى وَهُوَ يَجْتَهِدُ فِي الدُّعَاءِ



عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا رَفَعَ قَوْمٌ أَكُفَّهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُونَهُ شَيْئًا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَضَعَ فِي أَيْدِيهِمُ الَّذِي سَأَلُوا

হযরত সালমান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন কোন জামাআত তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার আশায় আল্লাহর দরবারে হাত উঠায়, তখন আল্লাহর উপর হক হল প্রার্থিত বিষয় উক্ত জামাতকে প্রদান করা। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৬১৪২, আততারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-১৪৪, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩১৪৫}

আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, এ হাদীসের সনদের সকল রাবীগণ সহীহের রাবী।{ মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১}

এরকম আরো অসংখ্য বর্ণনা প্রমাণ করে সম্মলিত মুনাজাত এটি দুআ কবুলের আলামত। সেই সাথে উত্তম আমল। যা কিছুতেই বিদআত হতে পারে না। যে সম্মলিত মুনাজাত রাসূল সাঃ নিজে করেছেন সাহাবীদের নিয়ে, সাহাবায়ে কেরাম সাথিবর্গকে নিয়ে যে সম্মলিত মুনাজাত করেছেন, তা কী করে বিদআত হতে পারে?

সুতরাং বুঝা গেল যে, সম্মিলিত মুনাজাত করাও রাসূল সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে প্রমাণিত। সেই সাথে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে রাসূল সাঃ পরিস্কার ভাষায় উৎসাহ প্রদান করেছেন।

৩য় বিষয়

আসলে পূর্বের দু’টি বিষয় পরিস্কার হবার পর আপনি নিজেই এর সমাধান বের করে নিতে পারেন। নামাযের পর দুআ রাসূল সাঃ নিজে করেছেন। আর সম্মিলিত দুআ কবুল হয় মর্মে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন। তিনি নিজেও সম্মিলিতভাবে দুআ করেছেন।

সুতরাং ফরজ নামাযের পর দুআ করলে সেটি বিদআত হবে কিভাবে?

তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। যথা-





ফরজ নামাযের পর দুআকে জরুরী মনে করা।



দুআকে নামাযের অংশ মনে করা।



এ ছাড়া নামায পূর্ণ হয় না আকিদা রাখা।



এ তিনটির কোন একটি পাওয়া গেলে উক্ত দুআ বিদআত হবে। কারণ এর কোন প্রমাণ নেই।

কিন্তু যদি উপরোক্ত কোন কারণ পাওয়া না যায়। বরং যেহেতু রাসূল সাঃ ফরজ নামাযের পর দুআ করেছেন, সেই সাথে সম্মিলিতভাবে দুআ করতে উৎসাহ প্রদান করেছেন, সেই সওয়াব পাবার আশায় যদি ইমাম সাহেব সম্মিলিতভাবে দুআ করেন, তাহলে উক্ত সম্মিলিত দুআকে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ বলে তাহলে সে হাদীসে নববী সম্পর্কে অজ্ঞ ছাড়া আর কিছু নয়।

والله اعلم بالصواب

#আহলে হক মিডিয়া

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন:

মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা মুনাওয়ারা ৷

রেফারেন্স উত্তর :

সম্মিলিত মুনাজাত কি বিদয়াত?

প্রশ্নঃ ৭১৫০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমাদের দেশে ইমাম বা খতিব সাহেবেরা প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে সম্মিলিত মোনাজাত করে,এটা ইসলামে কতটুকু যুক্তিসম্মত বা সহীহ?বিঃদ্রঃউত্তরটি দ্রুত জানালে উপকৃত হতাম মোঃইসরাইল হোসেন, জীবননগর, চুয়াডাঙ্গা।

৪ জুন, ২০২৪
S B K Union

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


নামাযের পর বা ফরজ নামাযের জামা‘আতের পর আমাদের দেশে যে ‍মুনাজাত প্রচলিত আছে তা মুস্তাহাব আমল; বিদ‘আত নয়। কারণ- বিদ‘আত বলা হয় ঐ আমলকে, শরী‘আতে যার কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ উক্ত ‘মুনাজাত’ নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমাণিত। তাই যারা মুনাজাতকে একেবারেই অস্বীকার করেন, তারা ভুলের মধ্যে রয়েছেন; আর যারা ইমাম মুক্তাদীর সম্মিলিত মুনাজাতকে সর্ব অবস্থায় বিদ‘আত বলেন, তাদের দাবীও ভিত্তিহীন এবং মুনাজাতকে যারা জরুরী মনে করে এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেন এবং কেউ না করলে তাকে কটাক্ষ করেন, গালি দেন, তারাও ভুলের মধ্যে আছেন।

বিশ্লেষণঃ নামাযের পরের মুনাজাতকে সর্বপ্রথম যিনি ভিত্তিহীন ও বিদ‘আত বলে দাবী তুলেছিলেন, তিনি হলেন-হাম্বলী মতাবলম্বী আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা রহ.। পরে তদীয় ছাত্র আল্লামা হাফিজ ইবনুল কাইয়্যিম তাঁর অনুসরণ করেন। আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা ও হাফিজ ইবনুল কায়্যিম রহ. দাবী করেন যে, নামাযের পর মুনাজাত করার কোন প্রমাণ কুরআন ও হাদীসে নেই। যে সব রেওয়ায়েতে নামাযের পর দু‘আ করার কথা আছে, এর অর্থ হচ্ছে-সালামের পূর্বের দু‘আয়ে মা’সূরা।

তাদের এ ভিত্তিহীন দাবীর খন্ডনে আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী শারেহে বুখারী রহ. বলেন, ‘ইবনুল কাইয়্যিম প্রমুখগণের দাবী সঠিক নয়’। কারণ- বহু সহীহ হাদীসে সালামের পর দু‘আ করার স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। আর হাদীসে যে নামাযের শেষে দু‘আ করার কথা আছে, তার অর্থ সালামের পূর্বের দু‘আয়ে মাসূরা নয়। বরং নিঃসন্দেহে তা সালামের পরের দু‘আ। (দেখুন ফাতহুল বারী, ২:৩৩৫ পৃ:, ফতহুল মুলহিম, ২:১৭৬ পৃ:)


এমনিভাবে ইবনুল কাইয়্যিম ও তাঁর উস্তাদের উক্ত দাবীর প্রতিবাদ করে আল্লামা যাফর আহমদ উসমানী রহ. ‘ইলাউস সুনান’ গ্রন্থে লিখেছেন- “ইবনুল কাইয়্যিম প্রমুখগণ নামাযের পরের দু‘আকে অস্বীকার করে তত্সম্পর্কিত হাদীস সমূহকে সালামের পূর্বের দু‘আয়ে মা‘সূরা বলে বুঝাতে চেয়েছেন বটে কিন্তু তাঁদের এ ব্যাখ্যা ঠিক নয়। কারণ- অনেক সুস্পষ্ট হাদীস তাদের এ ব্যাখ্যা বিরুদ্ধে বিদ্যমান। সুতরাং তাঁদের এ হাদীস বিরোধী ব্যাখ্যা গ্রহণীয় নয়।” (ইলাউস সুনান ৩:১৫৯ পৃ:)


যারা নামাযের পরের মুনাজাতকে একেবারেই অস্বীকার করেন, তাদের জবাবে উল্লেখিত উদ্ধৃতিদ্বয়ই যথেষ্ট।


আর যারা বলেন যে, ‘নামাযের পর একাকী মুনাজাত করা যায়; কিন্তু ইমাম ও মুক্তাদীগণের জন্য সম্মিলিত মুনাজাত করা বিদ‘আত; তাদের এ দাবীর স্বপক্ষে যেহেতু কোন মজবুত দলীল বিদ্যমান নেই, তাই তাদের এ দাবীও গ্রহণীয় নয়।


‘নামাযের পর মুনাজাত প্রসঙ্গে হাদীসসমূহ ব্যাপকতা সম্পন্ন। এ হাদীস সমূহে মুনাজাতের কোন ক্ষেত্র বিশেষের উল্লেখ নেই। অতএব হাদীস সমূহের ব্যাপকতার ভিত্তিতে নামাযের পর সর্বক্ষেত্রের মুনাজাতই মুস্তাহাব বলে বিবেচিত হবে। মূলভিত্তি সহীহ হাদীসে বিদ্যমান থাকার পর বিদ‘আতের প্রশ্নই উঠে না। (ফাইযুল বারী ২:৪৩১)


হাদীসে সম্মিলিত মুনাজাতের গুরুত্বের বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। ফিকহের কিতাবসমূহেও ইমাম-মুক্তাদীর সম্মিলিত প্রচলিত মুনাজাতকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে। অসংখ্য হাদীস বিশারদগণের রায়ও ইজতিমায়ী মুনাজাতের স্বপক্ষে স্পষ্ট বিদ্যমান। এমতাবস্থায় প্রচলিত মুনাজাতকে এ বিদ‘আত বলা ঠিক নয়। নিম্নে মুনাজাতের স্বপক্ষের হাদীস সমূহ ফিকহের কিতাব সমূহের বর্ণনা এবং হাদীস বিশারদগণের রায় সম্বলিত দলীল সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপন করা হলোঃ


মুনাজাতের স্বপক্ষে হাদীসের দলীল:


হাদীস-১: (ফরয নামাযের পর মুনাজাত)


হযরত আবূ উমামা রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হল-কোন সময়ে দু‘আ কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা? রাসূলে আকবার সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, ‘শেষ রাত্রে এবং ফরজ নামাযের পরে।’(জামি’য়ে তিরমিযী ২:১৮৭)


হাদীস-২: হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন তুমি ফরয নামায হতে অবসর হও, তখন দু‘আয় মশগুল হয়ে যাবে।’ (তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাযি., ৫১৪ পৃ:)


হাদীস-৩: হযরত কাতাদাহ্, যাহ্ হাক ও কালবী রহ. হতে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন- ‘ফরজ নামায সম্পাদন করার পর দু‘আয় লিপ্ত হবে।’ (তাফসীরে মাযহারী ১০:২৯ পৃ:)


হাদীস-৪: (নামাযের পর মুনাজাতে হাত উঠানো)


হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নামায দুই দুই রাকা‘আত; প্রত্যেক দুই রাকা‘আতে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতে হয়। ভয়-ভক্তি সহকারে কাতরতার সহিত বিনীতভাবে নামায আদায় করতে হয়। আর (নামায শেষে) দু’হাত তুলবে এভাবে যে, উভয় হাত প্রভু পানে উঠিয়ে চেহারা কিবলামুখী করবে। অতঃপর বলবে হে প্রভু ! হে প্রভু ! (এভাবে দু‘আ করবে। যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, সে অসম্পূর্ণ নামাযী তাঁর নামায অঙ্গহীন সাব্যস্ত হবে)।(জামি’য়ে তিরমিযী ১৮৭)


হাদীস-৫: (নামাযের পর মুনাজাতে হাত উঠানো)


হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে কোন বান্দা প্রত্যেক নামাযের পর দু’হাত তুলে এ দু‘আ পড়বে- আল্লাহুম্মা ওয়া ইলাহা ……………, আল্লাহ তা‘আলা নিজের উপর নির্ধারিত করে নিবেন যে, তার হস্তদ্বয়কে বঞ্চিত রূপে ফেরত দিবেন না। (হাদীসে বর্ণিত পূর্ণ দু‘আটি এবং মুনাজাত সম্পর্কিত তত্ত্ববহুল বিস্তারিত তথ্য শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক সাহেব রহ. সংকলিত মুসলিম শরীফ ও অন্যান্য হাদীসের ছয় কিতাব- ৫ম খন্ডে দ্রষ্টব্য।) এছাড়া মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড ১৯৫/১৯৬ পৃষ্ঠায় অনেকগুলো হাদীস বিদ্যমান আছে- সেগুলোর সার সংক্ষেপ হচ্ছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাজাত ও দু‘আ করার সময় হাত উঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং এটাই দু‘আর আদব।


হাদীস-৬: (মুনাজাত সালাম ফিরানোর পর)


হযরত ইবনে ইয়াহইয়া রহ. বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযি.-কে দেখেছি, তিনি এক ব্যক্তিকে সালাম ফিরানোর পূর্বেই হাত তুলে মুনাজাত করতে দেখে তার নামায শেষ হওয়ার পর তাকে ডেকে বললেন, ‘রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল নামায শেষ করার পরই হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন, আগে নয়।’ (ইলাউস সুনান ৩:১৬১)


হাদীস-৭: (সম্মিলিত মুনাজাত)


হযরত হাবীব ইবনে সালাম রাযি. বর্ণনা করেন- রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘যদি কিছু সংখ্যক লোক একত্রিত হয়ে এভাবে দু‘আ করে যে, তাদের একজন দু‘আ করতে থাকে, আর অন্য লোকেরা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে থাকে, তবে আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ অবশ্যই কবুল করে থাকেন। (কানযুল উম্মাল ১:১৭৭ পৃঃ # তালখীসুয যাহাবী ৩:৩৪৭ পৃ:)


হাদীস-৮: (ইমাম-মুক্তাদীর সম্মিলিত মুনাজাত)


হযরত সাওবান রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ‘কোন ব্যক্তি লোকদের ইমাম হয়ে এমন হবে না যে, ‍সে তাদেরকে বাদ দিয়ে দু‘আতে কেবল নিজেকেই নির্দিষ্ট করে। যদি এরূপ করে, তবে সে তাদের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করল।’ (তিরমিযী শরীফ ১:৮২)


উল্লেখিত হাদীস সমূহ দ্বারা বুঝা যায়:


(ক) ফরয নামাযের পর দু‘আ কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা। তাই ফরজ নামাযের পর দু‘আয় মশগুল হওয়া বাঞ্ছনীয়।


(খ) নামাযের পর হাত তুলে দু‘আ করা বিশেষ গুরুত্বসম্পন্ন আমল। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নামাযের পর দু‘আয় হাত উঠাতেন এবং অন্যদেরকে এর প্রতি উত্সাহিত করতেন। সুতরাং এটাই দু‘আর আদব।


(গ) একজন দু‘আ করবে; আর বাকীরা সবাই আমীন বলবে; এভাবে সকলের দু‘আ বা সম্মিলিত মুনাজাত কবুল হওয়া অবশ্যম্ভাবী। আর ইমাম সাহেব শুধু নিজের জন্য দু‘আ করবেন না। দু‘আতে মুসল্লীদেরকেও শামিল করবেন।


উল্লেখিত হাদীস সমূহের সমষ্টিদ্বারা নামাযের পর একাকী মুনাজাতের পাশাপাশি ফরজ নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলের সম্মিলিত মুনাজাতের প্রমাণ দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। অতএব, তা মুস্তাহাব হওয়াই হাদীস সমূহের মর্ম ও সমষ্টিগত সারকথা। (বিস্তারিত দেখুনঃ কিফায়াতুল মুফতী ৩:৩০০ পৃঃ, ইলাউস সুনান, ৩:১৬১ পৃ:)


উল্লেখ্য যে, বর্ণিত হাদীসসমূহ সম্পর্কে কেউ কেউ আপত্তি তুলেন যে, ‘এ হাদীসসমূহের কোনটিতে ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত করার কথা একসঙ্গে উল্লেখ নেই। কেননা, এগুলোর কোনটিতে শুধু দু‘আর কথা আছে, কিন্তু হাত তোলার কথা নেই। আবার কোনটিতে শুধু হাত তুলে মুনাজাতের কথা আছে। কিন্তু তা একাকীভাবে, সম্মিলিত ভাবে নয়। আবার কোনটিতে সম্মিলিত মুনাজাতের কথা আছে সত্য, কিন্তু ফরজ নামাযের পরে হওয়ার কথা উল্লেখ নেই। অতএব, এ হাদীস সমূহের দ্বারা প্রচলিত মুনাজাত প্রমাণিত হয় না।’ তাঁদের এ আপত্তির জবাবে হযরত মাওলানা মুফতী কিফায়াতুল্লাহ্ রহ. কিফায়াতুল মুফতী গ্রন্থে বলেন- “বিষয়গুলো যেমন কোন এক হাদীসে একত্রিতভাবে উল্লেখ হয়নি, তেমনি কোন হাদীসে তা নিষিদ্ধও হয়নি। কোন জিনিসের উল্লেখ না থাকার দ্বারা তা নিষিদ্ধ হওয়া কখনোও বুঝায় না। উপরন্তু উল্লেখিত হাদীসসমূহের বর্ণনা ভাব এমন ব্যপকতা সম্পন্ন, যা সম্ভাব্য সকল অবস্থাকেই শামিল করে। তাছাড়া বিভিন্ন রেওয়ায়েতে এ অবস্থাগুলোর পৃথক পৃথক উল্লেখ রয়েছে। যার সমষ্টিগত সামগ্রিক দৃষ্টিকোণে ফরজ নামাযের পর হস্ত উত্তোলন পূর্বক সম্মিলিত মুনাজাত অনায়াসে প্রমাণিত হয়। এটা তেমনি, যেমন নামাযের বিস্তারিত নিয়ম, আযানের সুন্নাত নিয়ম ইত্যাদি একত্রে কোন হাদীসে বর্ণিত নেই। বিভিন্ন হাদীসের সমষ্টিতে তা প্রমাণিত হয়।” (দেখুন: কিফায়াতুল মুফতী ৩:৩০০০ পৃ:)


মুনাজাত অস্বীকারকারীগণের আরো কতিপয় অভিযোগ ও তার জওয়াব:


অভিযোগ- ১


নামাযের পর মুনাজাতের স্বপক্ষের হাদীসসমূহ কেবল নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অতএব, এর দ্বারা ফরজ নামাযের পর মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়া প্রমাণিত হয় না।


জবাবঃ হযরত আল্লামা আনওয়ার শাহ্ কাশ্মীরী রহ. বলেন, ‘নামাযের পর মুনাজাত করার পক্ষের হাদীসগুলোর ব্যাপারে ফিকহবিদগণ নফল এবং ফরয উভয় নামাযকেই শামিল করেছেন।” (ফায়যুল বারীঃ ৪:৪৭ পৃঃ)


মাওলানা যাফর আহমদ উসমানী রহ. বলেন, “ফরয নামাযের পর মুনাজাত নফল নামাযের পর মুনাজাত অপেক্ষা উত্তম।” (ইলাউস সুনান, ৩:১৬৭ পৃঃ)


অভিযোগ- ২


মুনাজাত মুস্তাহাব হয়ে থাকলে প্রচুর হাদীসে এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আমল প্রমাণিত থাকতো। অথচ এ ব্যাপারে একটি রেওয়ায়েতও প্রমাণিত নেই।


জবাবঃ প্রথমতঃ মুনাজাতের ব্যাপারে ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর আমল সম্পর্কিত একটি রেওয়ায়েতও প্রমাণিত নেই’- একথাটি ঠিক নয়। কারণ- এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট রিওয়ায়াত আমরা হাদীস অধ্যায়ে বর্ণনা করেছি। দ্বিতীয়তঃ মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল প্রমাণিত হওয়া মোটেও জরুরী নয়। কারণ বহু মুস্তাহাব আমল রয়েছে, যা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ মাসলিহাতের কারণে নিজে করতেন না, কিন্তু সে সবের প্রতি মৌখিকভাবে উম্মতদেরকে উত্সাহিত করতেন। যাতে উম্মত তার উপর আমল করে নিতে পারে। যেমন- চাশতের নামায, আযান (যাকে আফযালুল আ’মাল বলা হয়ে থাকে) ইত্যাদি। এগুলো রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মা’মূল হিসেবে প্রমাণিত নেই। অথচ তিনি এ নেক কাজ সমূহের প্রতি উম্মতদেরকে মৌখিকভাবে যথেষ্ট উত্সাহিত করে গিয়েছেন। তদ্রুপ মুনাজাতের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আমলী রেওয়ায়াত স্বল্প বর্ণিত হলেও মৌখিক রিওয়ায়াত প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। আর মুস্তাহাব প্রমাণ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট। পরন্তু নিয়ম হল, মৌখিক রেওয়ায়েতের সাথে যদি আমলী রেওয়ায়েতের বিরোধ পাওয়া যায়, তবে যারা বলেন, মুস্তাহাব প্রমাণ হওয়ার জন্য রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৌখিক বর্ণনার পাশাপাশি আমলও থাকতে হবে, তারা সঠিক সরল পথ থেকে দূরে সরে পড়েছেন এবং একটি ফাসিদ জিনিসের উপর ভিত্তি করে কথা বলছেন। (দ্রষ্টব্য: ফায়যুল বারী ২:৪১৩ পৃ:)


অভিযোগ- ৩


মুনাজাতের স্বপক্ষে যেসকল হাদীসের উদ্ধৃতি দেয়া হয়, সেগুলো অনেকটা যঈফ। অতএব, তা নির্ভরযোগ্য নয়।


জবাবঃ এ অধ্যায়ের কিছু হাদীস যঈফ থাকলেও যেহেতু তার সমর্থনে অন্য সহীহ রিওয়ায়াত বিদ্যমান রয়েছে। অতএব, তা নির্ভরযোগ্যই বিবেচিত হবে। দ্বিতীয়ত: সেই হাদীসসমূহ ফযীলত সম্পর্কিত। আর ফযীলতের ব্যাপারে যঈফ হাদীসও গ্রহণযোগ্য।(নূখবাতুল ফিকার দ্রষ্টব্য)


অভিযোগ- ৪


হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন ফরজ নামাযের সালাম ফিরাতেন, তখন এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়তেন যে, মনে হত- তিনি যেন উত্তপ্ত পাথরের উপর উপবিষ্ট আছেন। (উমদাতুল কারী ৬:১৩৯ পৃ:)


এতে বুঝা যায়, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. সালাম ফিরিয়ে মুনাজাত না করেই দাঁড়িয়ে যেতেন।


জবাবঃ হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি.-এর উল্লেখিত আমলের এ অর্থ নয় যে, তিনি সালাম ফিরানোর পর মাসনূন দু‘আ যিকর না করেই দাঁড়িয়ে যেতেন। কেননা- তিনি রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর বিরুদ্ধাচরণ কখনও করতে পারেন না। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সালাম ফিরানোর পর বিভিন্ন দু‘আ ও যিকর হাদীসে বর্ণিত আছে। সুতরাং রেওয়ায়াতটির মর্ম হল- হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. সালাম ফিরানোর পর সংক্ষিপ্ত দু‘আ ও যিকির পাঠের অধিক সময় বসে থাকতেন না।


অতএব, উল্লেখিত রেওয়ায়াত দ্বারা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি.-এর মুনাজাত করা ব্যতীত উঠে পড়া প্রমাণিত হয় না।(আল-আবওয়াব ওয়াত-তারাজিম: ৯৭ পৃ:)


স্মর্তব্য যারা ইজতিমায়ী মুনাজাতের বিরোধী, তারা হযরত আবু বকর রাযি.-এর আমলের অজুহাত দেখিয়ে সালাম ফিরানোর পর দেরী না করেই সুন্নাত ইত্যাদির জন্য উঠে পড়েন। অথচ এর দ্বারা নামাযের পর যে মাসনূন দু‘আ ইত্যাদি রয়েছে, তা তরক করা হয়। দ্বিতীয়ত: ফরজ ও সুন্নাতের মাঝখানে কিছু সময়ের ব্যবধান করার যে হুকুম হাদীস শরীফে পাওয়া যায়, তা লঙ্ঘন করা হয়।


মুনাজাতের স্বপক্ষে ফিকহের কিতাবসমূহের দলীল:


ফিকহের কিতাব সমূহে মুনাজাতের স্বপক্ষে বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। নিম্নে তার কিয়দাংশ উদ্ধৃত হল:


১. ফিকহে হানাফীর অন্যতম মূল কিতাব ‘মাবসূত’- এর বর্ণনা: “যখন তুমি নামায থেকে ফারিগ হবে, তখন আল্লাহর নিকট দু‘আয় মশগুল হয়ে যাবে। কেননা, এ সময় দু‘আ কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা।”


২. প্রসিদ্ধ ফিকহের কিতাব ‘মিনহাজুল উম্মাহ্ ও আকায়িদুসসুন্নিয়্যাহ্’- এর বর্ণনা: “ফরজ নামাযের পর দু‘আ করা সুন্নাত। এরূপভাবে দু‘আর সময় হাত উঠানো এবং পরে হাত চেহারায় মুছে নেয়া সুন্নাত।”


৩. তাহযীবুল আযকার’- এর বর্ণনা: “এ কথার উপর উলামায়ে কিরামের ইজমা হয়েছে যে, নামাযের পর যিকর ও দু‘আ করা মুস্তাহাব।”


৪. শির’আতুল ইসলাম’- এর বর্ণানা: “ফরয নামাযের পর মুসল্লীরা দু‘আ করাকে গণীমত মনে করবে।”


৫. ‘তুহফাতুল মারগুবা’ ও ‘সি’আয়া- এর বর্ণনা: “নামায শেষে ইমাম ও মুসল্লীগণ নিজের জন্য এবং মুসলমানদের জন্য হাত উঠিয়ে দু‘আ করবেন। অতঃপর মুনাজাত শেষে হাত চেহারায় মুছবেন।”


৬. ‘ফাতাওয়া বাযযাযিয়া’- এর বর্ণনাঃ নামায শেষে ইমাম প্রকাশ্যভাবে হাদীসে বর্ণিত দু‘আ পড়বেন এবং মুসল্লীগণও প্রকাশ্য আওয়াজে দু‘আ পড়বেন। এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে মুসল্লীদের দু‘আ ইয়াদ হয়ে যাওয়ার পর সকলে বড় আওয়াযে দু‘আ করা বিদ‘আত হবে। তখন মুসলীগণ দু‘আ আস্তে পড়বেন।


৭. ‘ফাতাওয়া সূফিয়া’ ও ‘নূরুল ঈযাহ্’- এর বর্ণনা: “নামাযের পরে জরুরী মনে না করে হাত উঠিয়ে সম্মিলিত ভাবে আল্লাহর নিকট দু‘আ করা মুস্তাহাব।”


উল্লেখিত বর্ণনাসমূহ দ্বারা স্পষ্টতঃ প্রমাণিত হলো যে, নামাযের পর দু‘আ করা মুস্তাহাব। আর তা হাত উঠিয়ে করা বাঞ্ছনীয়। আরো প্রমাণিত হল যে, মুনাজাত করা ইমাম-মুক্তাদী সবার জন্যই পালনীয় মুস্তাহাব আমল।


মুনাজাতের স্বপক্ষে হাদীস বিশারদগণের দৃষ্টিভঙ্গিঃ


হাদীস বিশারদগণের রায় পর্যবেক্ষণ করলেও আমরা মুনাজাতের স্বপক্ষে অসংখ্য প্রমাণ পাই। নিম্নে কয়েকজনের দৃষ্টিভঙ্গি প্রদত্ত হল:


১. সুপ্রসিদ্ধ হাদীস বিশারদ আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, “যে সকল ফরজ নামাযের পর সুন্নাত নামায নেই, সে সকল ফরজ নামাযের পর ইমাম ও মুক্তাদীগণ আল্লাহর যিকরে মশগুল হবেন। অতঃপর ইমাম কাতারের ডান দিকে মুখ করে দু‘আ করবেন। তবে সংক্ষিপ্তভাবে মুনাজাত করতে চাইলে কিবলার দিকে মুখ করেও করতে পারেন।” (ফাতহুল বারী ২:৩৩৫ পৃ:)


২. প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. বলেন, “এ হাদীস দ্বারা নামাযের পরে মুনাজাত করা মুস্তাহাব বুঝা যায়। কারণ সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐ সময়ে দু‘আ কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা।” (উমদাতুল কারী ৬:১৩৯)


৩. আল্লামা আনোয়ার শাহ্ কাশ্মীরী রহ. বলেন, ‘নামাযের পরে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা বিদ‘আত নয়। কারণ- এ ব্যাপারে প্রচুর কাওলী রিওয়ায়াত বিদ্যমান। ফি’লী রিওয়ায়াতের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মধ্যে এ মুনাজাত করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। আর এটাই সকল ‍মুস্তাহাবের নিয়ম। তিনি নিজে সঙ্গত আমল বেছে নিতেন। আর অবশিষ্ট মুস্তাহাব সমূহের ব্যাপারে উম্মতকে উত্সাহ দিতেন। সুতরাং এখন যদি আমাদের কেউ নামাযের পরে হাত উঠিয়ে দায়িমী ভাবে মুনাজাত করতে থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি এমন একটা বিষয়ের ‍উপর আমল করল, যে ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্সাহ দিয়ে গেছেন। যদিও তিনি নিজে সর্বদা আমল করেননি।” (ফায়যুল বারী: ২:১৬৭ পৃ ও ৪৩১ পৃ: ৪:১৭ পৃ)


৪. শাইখুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রহ. বলেন, “ফরজ নামাযের পরে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাকে কেউ কেউ অস্বীকার করে থাকেন। কিন্তু তা ঠিক নয়। কারণ, এ ব্যাপারে প্রচুর হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। এ সকল হাদীস দ্বারা নামাযের পর মুনাজাত করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।” (আল-আবওয়াব ওয়াত-তারাজিম: ৯৭ পৃ:)


৫. হযরত মাওলানা ইউসুফ বিন্নোরী রহ. মুনাজাত সম্পর্কিত হাদীস সমূহ উল্লেখ পূর্বক বলেন, “মুনাজাত অধ্যায়ে যে সকল হাদীস পেশ করা হল, ওগুলোই যথেষ্ট প্রমাণ যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলত মুনাজাত জায়িয। এ হাদীস সমূহের ভিত্তিতেই আমাদের ফুকাহায়ে কিরাম উক্ত মুনাজাতকে মুস্তাহাব বলেন।” (মা‘আরিফুস সুনান ৩:১২৩ পৃ)


৬. মুসলিম শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার আল্লামা নববী রহ. বলেন, সকল ফরজ নামাযের পরে ইমাম, মুক্তাদী ও মুনফারিদের জন্য দু‘আ করা মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।” -(শরহে মুসলিম লিন- নববী)


৭. হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহ. বলেন: “আমার নিকট এটাই সঠিক যে, ফরজ নামায়ের পর সুন্নাতের পূর্বে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু যিকর ও হাদীসে বর্ণিত দু‘আ পড়ে নেয়া চাই।” (ফাতহুল মুলহিম ২:১৭৮ পৃ:)


৮. হযরত মাওলানা যাফর আহমাদ উসমানী রহ. বলেন: “আমাদের দেশে যে সম্মিলিত মুনাজাতের প্রথা চালু আছে যে, ইমাম কোন কোন নামাযের পর কিবলামুখী বসে দু‘আ করে থাকেন। এটা কোন বিদ‘আত কাজ নয়। বরং হাদীসে এর প্রমাণ রয়েছে। তবে ইমামের জন্য উত্তম হল- ডানদিকে বা বামদিকে ফিরে মুনাজাত করা।” (ই’লাউস সুনান ৩:১৬৩ পৃ:)


তিনি আরো বলেন, “হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হল যে, প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। যেমন-আমাদের দেশে এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে প্রচলিত আছে। (ঐ ৩:১৬৭ পৃ:)


মুনাজাতের স্বপক্ষে মুহাদ্দিসীনে কেরামের রায়সমূহ


মুহাদ্দিসীনে কেরামের বর্ণিত এ রায়সমূহ দ্বারা বুঝা গেল


(১) নামাযের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। এ সময় দু‘আ কবুল হওয়ার খুবই সম্ভাবনা।


(২) মুনাজাত ইমাম, মুক্তাদী ও মুনফারিদ সকলের জন্যই মুস্তাহাব আমল।


(৩) ফরজ নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলের ইজতেমায়ী মুনাজাত করা মুস্তাহাব।


(৪) ফরজ নামাযের পর দায়িমীভাবে মুনাজাত করলেও কোন ক্ষতি নেই।


(৫) নামাযের পর ‍মুনাজাত বি‘দআত নয়। বহু কাওলী হাদিস দ্বারা এ মুনাজাত সাবেত আছে। মুস্তাহাব আমল যেহেতু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে যদিও তা মাঝে মধ্যে করেছেন। কিন্তু সকলকে তিনি এর প্রতি মৌখিকভাবে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছেন।


(৬) প্রচলিত মুনাজাতকে ‍বিদ‘আত বলা এবং এর বিরোধিতা করা ঠিক নয়।


প্রচলিত মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে এমনি আরো বহু প্রমাণাদি বিদ্যমান। কেবল আমাদের মাযহাবেই নয়, ববং অন্যান্য সকল মাযহাবেও এ মুনাজাত মুস্তাহাব সাব্যস্ত হয়েছে। (প্রমাণের জন্য ইমদাদুল ফাতওয়া দ্রষ্টব্য)


এ সকল বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, নামাযের পর ইমাম, ‍মুক্তাদী সকলের জন্য সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাও মুস্তাহাব। এ মুনাজাতকে বিদ‘আত বলার কোন যুক্তিই নেই। কারণ বিদ‘আত বলা হয় সে আমলকে, শরী‘আতে যার কোনই অস্তিত্ব নেই। মুনাজাত সেই ধরনের মূল্যহীন কোন আমল নয়। তবে যেহেতু মুনাজাত ‘মুস্তাহাব আমল’ তাই এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা অনুচিত। মুস্তাহাব নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ। অতএব, কেউ মুনাজাতের ব্যাপারে যদি এমন জোর দেয় যে, মুনাজাত তরককারীকে কটাক্ষ বা সমালোচনা করতে থাকে, বা মুনাজাত না করলে তার সাথে ঝগড়া-ফাসাদ করতে থাকে, তাদের জন্য বা সেরূপ পরিবেশের জন্য মুনাজাত করা নিঃসন্দেহে মাকরূহ ও ‍বিদ‘আত হবে। মুনাজাত বিদ‘আত হওয়ার এই একটি মাত্র দিক আছে। আর এটা কেবল মুনাজাতের বেলায় নয়, বরং সমস্ত মুস্তাহাবেরই এ হুকুম। অতএব, মুনাজাতও পালন করতে পারবে এবং বিদ‘আত থেকেও বাঁচতে হবে। আর এর জন্য সুষ্ঠু নিয়ম আমাদের খেয়াল মতে এই যে, মসজিদের ইমাম সাহেবান মুনাজাতের আমল জারী রেখে জনগণকে মুনাজাতের দর্জা সম্পর্কে মুসল্লীগণকে ওয়াজ-নসীহতের মাধ্যমে বুঝাবেন এবং ফরয-ওয়াজিব ও সুন্নাত-মুস্তাহাবের দর্জা-ব্যবধান বুঝিয়ে দিয়ে বলবেন- ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করা যেহেতু মুস্তাহাব সুতরাং যার সুযোগ আছে সে মুস্তাহাবের উপর আমল করে নিবে। আর যার সুযোগ নেই তার জন্য মুস্তাহাব তরক করার অবকাশ আছে। এমন কি কেউ যদি ইমামের সাথে মুনাজাত শুরু করে, তাহলে ইমামের সাথে শেষ করাও জরুরী নয়। কারণ, সালাম ফিরানোর পর ইকতিদা শেষ হয়ে যায়। সুতরাং কেউ চাইলে ইমামের আগেই তার মুনাজাত শেষ করে দিতে পারে। আবার কেউ চাইলে ইমামের মুনাজাত শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘক্ষণ একা একা মুনাজাত করতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা শরী‘আতে নিষেধ। এভাবে বুঝিয়ে দেয়ার পর ইমাম সাহেবান প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর দায়িমীভাবে মুনাজাত করলেও তাতে কোন ক্ষতি নেই। অনেকের ধারণা- ‘মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য মাঝে মাঝে তরক করত হবে।’ কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়। মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য তরক করার কোনই আবশ্যকীয়তা নেই। যেমন- সকল ইমাম টুপি পরে নামায পড়ান। কেউ একথা বলেন না যে, মাঝে মাঝে টুপি ছাড়া নামায পড়ানো উচিত- যাতে মুসল্লীগণ বুঝতে পারেন যে, টুপি পরা ফরজ ওয়াজিব নয়। অতএব, মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য মুনাজাতকে কেন ছাড়তে হবে?


অনুরূপ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়িশা সিদ্দিকা রাযি. দায়িমীভাবে চাশতের নামায পড়তেন। কখনও পরিত্যাগ করতেন না। উপরন্তু তিনি বলতেন, “চাশতের নামাযের মুহুর্তে আমার পিতা-মাতা জীবিত হয়ে এলেও আমি তাদের খাতিরে এ নামায পরিত্যাগ করব না। (মিশকাত শরীফ ১:১১৬) অথচ চাশতের নামায মুস্তাহাব পর্যায়ের। অতএব মাঝে মধ্যে তরক করে নয়, বরং ওয়ায নসীহতের মাধ্যমেই মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারটি বুঝিয়ে দেয়া যুক্তিযুক্ত। এটাই উদ্ভূত পরিস্থিতির উত্তম সমাধান।
(ইসলামী যিন্দেগী থেকে সংগৃহীত)
ويترجح تقديم الذكر المأثور بتقييده في الأخبار الصحيحة بدبر الصلاة وزعم بعض الحنابلة أن المراد بدبر الصلاة ما قبل السلام وتعقب بحديث ذهب أهل الدثور فإن فيه تسبحون دبر كل صلاة وهو بعد السلام جزما فكذلك ما شابهه وأما الصلاة التي لا يتطوع بعدها فيتشاغل الإمام ومن معه بالذكر المأثور ولا يتعين له مكان بل إن شاءوا انصرفوا وذكروا....الخ. (فتح الباري: 2 / 390)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন:

ইসলামী যিন্দেগী থেকে সংগৃহীত

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন