প্রশ্নঃ ১৩০৮৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
হুজুর আমার বিয়ের বয়স 10 বছর 2 মাস, আমাদের কোন সন্তান নেই, ডাক্তার দেখাতে চাইলে উনি দেখাতে চায় না,
বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে উনাকে বিভিন্ন মেয়েদের সাথে ফোনালাপ করতে আমি দেখতে পেয়েছি॥এই নিয়ে প্রায়ই উনার সাথে কোলাহল হয়ে থাকে ॥ উনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরেন, সুন্নতি ভাবে দাড়ি রেখেছেন, নিজের ছোট ভাই কে আলেমী লাইনে পড়াশোনার খরচ দেন, নিজের ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর হাফেজী পড়ার খরচো দিচ্ছেন.
তারপর ও উনার এই মহিলাদের সাথে কথা বলা, ছবি আদান প্রদান করা এমনকি ফোনে শারিরীক সম্পর্ক করা বন্ধ হচ্ছে না ॥ আমার প্রতিটা দিন রাত শুধু কান্না করে যাচ্ছে
উনার এই সব দেখে আমার ইসলামের প্রতি আস্থা চলে যাচ্ছে (আস্তাগফিরুল্লাহ), আমার নামাজ পড়তে ইচ্ছে করে না, কুরআন পড়তে ইচ্ছে করে না, ইদানিং মনে হয় আল্লাহ আমার দিলে সিল মেরে দিয়েছেন এই জন্য আমি এমন হয়ে যাচ্ছি আমি ইসলামের পথ থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি, আমার জন্য একটু দোয়া করবেন আমি ইমানহারা হয়ে মারা যেতে চাই না
মনে হয় আল্লাহ আমার সাথে এমন কেন করছে, আমি ছোট থেকে একা, বাবার আদর ভালোবাসা পাই নাই(৬বছর বয়সে মারা গেছেন জীবিত থাকতেও আমাদের সাথে ছিলেন না) , ভাই ছিলেন উ্নিও ছোট বেলায় মারা গেছেন(আমার ৮ বছর বয়সে) ॥
মা জীবিকার তাগিদে উপার্জন করতে যেয়ে সময় দিতে পারেন নাই, আর স্বামী হিসেবে এমন একজন কে পেয়েছি, উনাকে ছাড়তে পারছি না কারন আমি খুবই দরিদ্র পরিবারের মেয়ে
আমার জন্য একটু দোয়া করবেন আমি যেনো ইসলামের পথে ফেরত আসতে পারি
আসসালামুয়ালাইকুম
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয়বোন! আল্লাহ তায়ালা আপনার সকল পেরেশানী দূর করুন। দাম্পত্য জীবন সুন্দর ও সুখময় করুন। আল্লাহ তায়ালা আপনার স্বামীকে সহীহ বুঝ দান করুন। আপনি তার জন্য দোয়া করুন। বিশেষত শেষ রাতে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে রোনাজারি করুন। কান্নাকাটি করুন। তার হেদায়াতের উদ্দেশ্যে সাধ্যমতো দান সদকা করুন। আপনি চেষ্টা ও দোয়া চালিয়ে যান। হতাশ হবেন না। হতাশা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। ইনশাআল্লাহ আশা করা যায় অচিরেই তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারবেন। ফিরে আসবেন দ্বীনের সুশীতল ছায়ায়।
দ্বিতীয়ত, বিষয়গুলো নিয়ে পারিবারিকভাবেও আলোচনা করুন। কেননা আলোচনার মাধ্যমে অনেক কঠিন বিষয়ও সহজ হয়ে যায়। আবার আলাপ-আলোচনার পথ পরিহার করে মান-অভিমান ধরে রাখলে অনেক মজবুত সর্ম্পকও নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই এই দিকেও সতর্কদৃষ্টি দিবেন আশা করছি।
আপনি বলেছেন আপনার স্বামী তার ছোট ভাইয়ের এবং ভাইয়ের স্ত্রীর আলেম ও হাফেজী পড়ার খরচ দিচ্ছেন। আমাদের দৃষ্টিতে আপনার জন্য এই বিষয়টিও অনেক বড় সহায়কের ভূমিকা রাখতে পারে। পর্দা রক্ষা করে আপনি তাদের সাথেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন।
প্রিয়বোন! আশা করি ভুল বুঝবেন না। কোনো স্বামীর গুনাহ দেখা সত্ত্বেও যদি কোনো স্ত্রী নিজে গুনাহে লিপ্ত না হয় তাহলে ওই স্ত্রীর জন্য মহা পুরস্কার রয়েছে। অচিরেই দেখবেন স্বামী স্ত্রীর কাছে ফিরে আসবে কাজেই আপনি আপনার দ্বিন-ইমান পূর্ণ হেফাজত করুন। হাশরের ময়দানে আপনার আমলের ব্যাপারে আপনাকেই জিজ্ঞাসা করা হবে। কাজেই স্বামীর বদআমলীর কারণে আপনি নিজের ধ্বংস ডেকে আনবেন না।
আপনার কাছ থেকে স্বামীর মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পেছনে আপানার কোনো ত্রুটি আছে কি না সেটাও চিহিৃত করতে চেষ্ট করুন। অনেক সময় নারী নিজেও জানে না যে তারই কোনো অন্যায়ের কারণে স্বামী তার সাথে খারাপ আচরণ করছে। কাজেই ঠান্ডা মাথায়, বিষয়টিও ভেবে দেখুন। হৃদ্যতা, মুহাব্বত, ভালোবাসা দিয়ে স্বামীকে বুঝার চেষ্ট করুন। আপনার কাছে তার চাওয়াগুলো যদি শরিয়তের সীমার মধ্যে থাকে তাহলে তাও পুরণে সহায়তা করুন।
মুমিন কখানো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না। হতাশা ও পেরেশানী দূর করতে এই নম্বরগুলো আমাদের মাসায়েলের সার্চবক্সে লিখে উত্তরগুলো দেখে নিন। 8209/ /10676/12095
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কবুল করুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৮৬৯৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সম্মানিত হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন টি হলবিষন্নতা থেকে বাঁচার উপায় কি? মাঝে মাঝে এমন মনে হয় যেন আত্মহত্যা করতে মন চায়। মন দিয়ে ইবাদাত করতে পারিনা এই সমস্যার কারণে। ইসলামিক কোন কিতাব থাকলেও বলতে পারেন।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
এই ধরনের সমস্যায় এক সাহাবী নিপতিত হয়েছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দোয়া শিখিয়েছেন।
ফজর ও মাগরিবের পর তিনবার তিনবার পড়ুন-
চিন্তা, পেরেশানি, ঋণ, অলসতা ও কাপুরুষতার দূরীকরন
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحُزْنِ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَ الْكَسَلِ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَ الْبُخْلِ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَ قَهْرِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজাজি ওয়াল কাসালি ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবুনি ওয়াল বুখুলি ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিত দিনি ওয়া কাহরির রিজাল।
অনুবাদ:
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই চিন্তা পেরেশানি থেকে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই অপারগতা ও অলসতা থেকে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কাপুরুষতার ও কৃপণতা থেকে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের ক্ষোভ থেকে।
—সুনানু আবী দাঊদ ১৫৫৫
উদ্ধৃতি:
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রাসুল তাকে বললেন, আবু উমামা! ব্যাপার কী, নামাজের সময় ছাড়াও তোমাকে মসজিদে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে? আবু উমামা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অনেক ঋণ এবং দুনিয়ার চিন্তা আমাকে গ্রাস করে রেখেছে। তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালেমা শিখিয়ে দেব, যেগুলো বললে আল্লাহ তোমার চিন্তাকে দূর করে দেবেন এবং তোমার ঋণগুলো আদায় করে দেবেন। তিনি বলেন, জি হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন, তখন রাসুল (সা.) তাকে উপর্যুক্ত দোয়াটি শিখিয়ে দেন এবং তা সকাল-সন্ধ্যায় পড়তে বলেন। আবু উমামা বলেন, আমি রাসুল (সা.) এর এ দোয়াটি পড়তে লাগলাম। ফলে আল্লাহ আমার চিন্তা দূর করে দিলেন এবং আমার ঋণগুলোও আদায় করে দিলেন।
—সুনানু আবী দাঊদ ১৫৫৫
বিশ্বে বহুল সমাদৃত একটি কিতাব "লা তাহযান" "হতাশ হবেন না" বাংলা ভাষায় বইটি অনূদিত হয়েছে। রকমারি ডট কম থেকে অথবা বাংলাবাজার ইসলামী টাওয়ারে গিয়ে বইটি কিনতে পাবেন।
বইটি পড়ুন, ইনশাআল্লাহ উপকার হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন