কুড়িয়ে পাওয়া সম্পদের বিধান
প্রশ্নঃ ১২৭৫৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কোনো মুসলমান ব্যাক্তি যদি রাস্তায় কোনো টাকা পয়সা বা সোনা গয়না পরে পায় সেটা কী তার নেয়া জায়েজ হবে? এবং যদি নিয়ে ফেলে সেক্ষেত্রে করণীয় কি ?
২৪ জুন, ২০২৫
Dhaka
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামের দৃষ্টিতে সাধারণ মানুষের জানমালের সংরক্ষণ সরকারের পাশাপাশি নাগরিকেরও দায়িত্ব। রাস্তাঘাটের যেকোনো প্রতিবন্ধকতা দূর করে পথিককে সহযোগিতা করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, নাগরিক হিসেবে এটি সবার নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। পথে-ঘাটে মানুষকে বাধা দেওয়া, কোনো কিছু ফেলে পথিকদের চলার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করার বিরুদ্ধে হাদিস শরিফে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
এ নীতির আলোকে ইসলামের বিধান হলো, কারো হারানো অর্থ-সম্পদ পাওয়া গেলে তা যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করে মালিককে খুঁজে বের করতে হবে। সন্ধান পাওয়া গেলে মালিককে যাচাই-বাছাই শেষে তার মাল ফেরত দিতে হবে। সন্তোষজনক খোঁজাখুঁজির পর মালিকের সন্ধান না মিললে প্রাপক নিঃস্ব ও দরিদ্র মানুষ হলে নিজেই ভোগ করতে পারবে। অন্যথায় ফকির-মিসকিনদের মধ্যে তা দান করে দিতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই প্রকৃত মালিকের পক্ষে তা দান বলে গণ্য হবে। মালিকই এর সওয়াব পাবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু তুলে নেয়, সে যেন এ বিষয়ে দুজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী রাখে। সে যেন বিষয়টি গোপন না রাখে, পরিবর্তন-পরিবর্ধন না করে। এরপর যদি মালিক এসে যায়, তাহলে সে-ই সেটার অধিকারী। আর যদি মালিক না আসে, তাহলে সেটা আল্লাহর সম্পদ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৮৯৪)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো পথহারা প্রাণীকে আশ্রয় দেয়, সে যদি বিষয়টি গোপন রাখে (প্রাণীটির মালিক বনে যায়), তাহলে সে নিজেই ভ্রষ্ট লোক বলে বিবেচিত হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৭২৫)
কোনো কিছু কুড়িয়ে পেলে করণীয়
কোনো কিছু কুড়িয়ে পেলে উদ্ধারকারীর দায়িত্ব হচ্ছে প্রকৃত মালিকের কাছে কুড়ানো বস্তু পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। পাওয়া বস্তুর যথাযথ যত্ন করা। যথাযথ যত্ন নেওয়ার পরও ওই বস্তুর কোনো ক্ষতি হলে এ জন্য তাকে দায়ী করা যাবে না। আর প্রাপ্ত বস্তু তার কাছে আমানত হিসেবে থাকবে। ওই বস্তু তুলে নেওয়ার সময় দুজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে রাখবে। ওই বস্তুর মূল্য যদি ১০ দিরহামের কম হয়, তাহলে কিছুদিন বিভিন্ন স্থানে এর ঘোষণা দেবে। পক্ষান্তরে যদি ১০ দিরহামের বেশি হয়, তাহলে এক বছর বিভিন্ন স্থানে ঘোষণা দেবে। মালিককে খুঁজে পাওয়া না গেলে তা সদকা করে দেবে। প্রাপ্ত বস্তুর উদ্ধারকারীর কখনোই উচিত নয় ওই বস্তু নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করা। উদ্ধারকারী যদি আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোনো বস্তু বা প্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ ব্যয় করে, তাহলে সে স্বেচ্ছাদানকারী বলে গণ্য হবে। কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের যদি কোনো বৃদ্ধি বা লাভ হয়, তাহলে তা-ও প্রকৃত মালিককে দিয়ে দিতে হবে। আর আদালত বা সালিসের নির্দেশনা মোতাবেক কুড়ানো বস্তু বা প্রাণীর পেছনে অর্থ ব্যয় করলে, বিক্রি করার পর নিজ পাওনা বাদে অবশিষ্ট অর্থ প্রকৃত মালিককে দিয়ে দেবে। (হেদায়া : ২/৪১৭; কানযুদ দাকায়েক : পৃষ্ঠা-৩৯৩)
(সংগৃহিত)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন:
মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১