আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১২৩১০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি অনেক মহিলাকে দেখি স্বামীর পকেট থেকে টাকা চুরি করে সংসার বা সন্তানদের জন্য কেনাকাটা করে বা নিজের জন্য খরচ করে।এখন আমার প্রশ্ন হলো ১.স্বামীকে যদি কখনোই না জানে তাহলে কি এভাবে টাকা নেয়া কি যায়েয?২.টাকা নিয়ে যদি সংসারের বা বাচ্চাদের জন্য খরচ করে তাহলে কি গুনাহ হবে? বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি।

৩ জানুয়ারী, ২০২২
ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم




অবশ্যই সেটা চুরি হবে। না জানিয়ে টাকা নেওয়া সর্বাবস্থায় চুরি। এটা জায়েজ নেই। এটা হারাম।
কিন্তু স্বামীর সঙ্গে যদি সমঝোতা থাকে যে, কিছু খুচরা খরচের জন্য আমি পকেট থেকে টাকা নিই এবং সে ক্ষেত্রে স্বামী তাঁকে অনুমতি দিয়ে থাকেন, তাহলে নিতে পারেন। কিন্তু তিনি এ কাজটি কেন করবেন। জানিয়ে নিতে পারেন।
সুতরাং, চুরি করার এ পদ্ধতি ইসলামের শরিয়তের মধ্যে কোনোভাবেই জায়েজ নেই।

ইসলাম এটাকে অনুমোদন দেয় না।
শুধু একটি প্রেক্ষাপট সামনে রেখে ইসলামের শরিয়তের মধ্যে এর বৈধতার বিষয়টি সামনে এসেছে।

সেটি হলো, প্রয়োজনীয় বিষয় যদি স্বামী তাঁর স্ত্রীকে না দিয়ে থাকেন, সেটি হকের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এই হকটুকু স্বামীর অজান্তে তাঁর স্ত্রী যদি নেন, তাহলে এটা তাঁর জন্য জায়েজ রয়েছে।

স্বামী যদি রাগ করে বা নিষেধ করে তাহলে তাহলে কম হোক বা বেশি হোক তার সম্পদ খরচ বা দান-সদকা করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
ﻻ ﺗُﻨْﻔِﻖُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻣِﻦْ ﺑَﻴْﺘِﻬَﺎ ﺇِﻻ ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺯَﻭْﺟِﻬَﺎ . ﻓَﻘِﻴﻞَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﻭَﻻ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡَ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺫَﺍﻙَ ﺃَﻓْﻀَﻞُ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟِﻨَﺎ ‏
মহিলা তার স্বামীর বাড়ির কোন অর্থ-সম্পদ তার অনুমতি ছাড়া খরচ করবে না। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, খাদ্যদ্রব্যও নয়? তিনি বললেন, এটি তো আমাদের সবচেয়ে উত্তম সম্পদ। (সুনান আবু দাউদ ৩৬৬৫)

স্বামী বদ-মেজাজী না হলে দান করলে সাওয়াব হবে।

سمعت أبا هريرة، يقول قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إذا أنفقت المرأة من كسب زوجها من غير أمره فلها نصف أجره ‏"‏ ‏.‏
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্ত্রী বিনা অনুমতিতে তার স্বামীর উপার্জিত সম্পদ হতে দান করলে অর্ধেক সওয়াব পাবে।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৬৮৭
তবে স্বামীর পকেট থেকে না দেওয়া চাই, এটা বেয়াদবিও হতে পারে। সে খারাপ ধারণা করতে পারে। তাই স্বামী স্ত্রীকে যা দিবে এবং ঘরে যা থাকবে তাই দান করবে।
عن أبي هريرة، في المرأة تصدق من بيت زوجها قال لا إلا من قوتها والأجر بينهما ولا يحل لها أن تصدق من مال زوجها إلا بإذنه ‏.‏ قال أبو داود هذا يضعف حديث همام ‏.‏
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে এমন নারী সম্পর্কে বর্ণিত, যিনি তার স্বামীর ঘর থেকে দান করে থাকেন। তিনি বলেছেন, (দান করা) বৈধ নয়, তবে স্বামী তাকে যা খোরাকী দিয়েছে, তা থেকে দান করতে পারবে, আর এতে উভয়ই সওয়াব পাবে। স্বামীর বিনা অনুমতিতে তার সম্পদ থেকে স্ত্রীর দান-খয়রাত করা বৈধ নয়। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৬৮৮
কিন্তু স্বামী যদি রাগ করে বা নিষেধ করে তাহলে তাহলে কম হোক বা বেশি হোক তার সম্পদ খরচ বা দান-সদকা করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
আবূ উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, আমি বিদায় হাজ্জের বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর বক্তৃতায় বলতে শুনেছিঃ স্বামীর ঘর হতে তার পূবার্নুমতি ছাড়া কোন স্ত্রীলোক যেন কিছু দান না করে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! খাবারও কি নয়? তিনি বললেনঃ খাবার তো আমাদের উত্তম সম্পদ।
(তিরমিজি, হাদিস নং ৬৭০)

والله اعلم بالصواب

মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস, শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন