আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মাহরাম ছাড়া কোনো নারীকে হজ্বে নেওয়া

প্রশ্নঃ ১০১৬১০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কোনো গ্রুপে যদি মাহরাম ছাড়া কোনো মহিলা হজ্বে আসে তাহলে এর দায়ভার কার উপর বর্তাবে? মাহরাম ছাড়া মহিলা আনা কি কোনো টিম লিডারের জন্য জায়েয হবে ? কোনো পুরুষ যদি গায়রে মাহরাম কোনো মহিলাকে নিয়ে আসে আর সেটা যদি টিম লিডার জানে তাহলে এই ক্ষেত্রে টিম লিডারের করণীয় কি?

১ মে, ২০২৫
ঢাকা ১২০৭

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


প্রথমত যে নারী মাহরাম ছাড়া হজ্বে এসেছেন তিনি এবং যারা গায়রে মাহরাম নারীকে নিয়ে এসেছেন তারা সকলেই বড় ধরণের অন্যায় করেছেন। হজ্বের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের ক্ষেত্রেও তারা স্বেচ্ছাচারিতামূলক কাজ করেছেন এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আল্লাহ তাআলার কাছে কায়মনোবাক্যে তাদের তাওবা এবং ইস্তিগফার করা আবশ্যক। না হলে আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধের সম্মুখীন হওয়ার অশঙ্কা রয়েছে। এবং এর কারণে আল্লাহ তা‘আলার কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে। তারপর যারা জেনেশুনে মাহরাম ছাড়া নারীদের কাগজপত্র প্রসেসিং করে দিয়েছে তারাও অন্যায় করেছে। আল্লাহর দরবারে তাদেরও ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত মাহরাম ছাড়া নারীদের হজ্বে যাওয়ার বিষয়: নারী হজ্ব পালন করা ফরয হওয়ার জন্য অতিরিক্ত শর্ত রয়েছে। আর তাহলো- মাহরাম থাকা। মাহরাম ছাড়া নারীর জন্য হজ্ব পালনে বাধ্যবাধকতা নেই। চাই সে যত সম্পদশালীই হোক । তবে নারীদের হজ্ব পালন প্রসঙ্গে ইমামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
নারীদের জন্য মাহরাম কারা? নারীর জন্য প্রথম মাহরাম হলো- স্বামী। অতঃপর যাদের সঙ্গে ইসলামি বিধান মোতাবেক দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়েয এবং যাদের সঙ্গে আজীবন বিবাহ হওয়া হারাম। ইসলামের পরিভাষায় তারাই নারীর জন্য মাহরাম। এ সব লোকদের সঙ্গে সামর্থবান নারীরা হজ্বে গমন করতে পারবে।
হজ্ব পালনে স্বামীর অনুমতি- কোনো নারীর ওপর যদি হজ্ব ফরয হয় এবং স্বামী ছাড়াও তাকে নিয়ে হজ্বের যাওয়ার মতো মাহরাম থাকে; আর স্বামী যদি তার স্ত্রীকে হজ্বে যাওয়ার অনুমতি না দেয়; সেক্ষেত্রে নারীর করণীয় সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-হযরত আলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কোনো মানুষের আনুগত্য চলবে না। আনুগত্য তো কেবল ভালো কাজের জন্য।
সুতরাং মাহরাম থাকলে নারীর হজ্বে যাওয়ার জন্য স্বামী অনুমতি না দিলেও হজ্ব আদায় করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে স্বামী অনুমতি ছাড়াই নারী হজ্বে যেতে পারবে।
নারীদের হজ্ব পালনে ইমামদের বক্তব্য- ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, নারীর হজ্ব ফরয হওয়ার জন্য শর্ত হলো ‘মাহরাম’। মাহরাম না থাকলে সম্পদ যতই থাকুক না কেন, নারীর ওপর হজ্ব ফরয হবে না।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মাহরাম ছাড়া কোনো নারী কোনো পুরুষের সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ব্যতিত সফর করবে না।
এক সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার স্ত্রী হজ্ব করতে যাচ্ছে আর আমি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্বে যাও।
ইলমে ফিকহের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হেদায়া’য় এসেছে, ‘কোনো নারী যদি মাহরাম ছাড়া হজ্ব করে তবে ওই নারীর হজ্ব আদায় হয়ে যাবে কিন্তু মাহরাম ব্যতিত হজ্বের দীর্ঘ সফর করার কারণে ওই নারী গোনাহগার হবে।
আবার কেউ কেউ বলেন, ‘নারীর উচিত মাহরাম পাওয়ার জন্য জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা। যদি কোনো মাহরাম না পান তবে তিনি নিজে না গিয়ে অন্যের মাধ্যমে বদলি হজ্বের ব্যবস্থা করা। আর এটাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত।
উল্লেখ্য যে, নারীদের হজ্বের এ শর্তাদি উমরার বেলায়ও প্রযোজ্য।
পরিশেষে...সার্বিক নিরাপত্তার বিবেচনায় বর্তমান সময়ে হজ্ব আদায়ে নারীর জন্য মাহরাম একান্ত আবশ্যক। মাহরাম ছাড়া কোনো নারীর পক্ষে পর্দা মেনে হজ্ব সম্পাদন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বরং এটা অসম্ভব নয় যে মাহরাম না থাকায় নারীরা হজ্বের সফরে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হবেন। এমনকি কোনো নারী সেচ্ছায় গুনাহ জড়িয়ে পড়াও অসম্ভব নয় । তাই মাহরাম ব্যতিত কোনো নারীর জন্যই হজ্বে যাওয়া উচিত নয়। হজ্বের সফর দীর্ঘ দিনের হয়। এ সফর মাহরাম ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণও বটে। কথিত আধুনিকতা বা গ্লোবালাইজেশনে ঠুনকো যুক্তি দেখিয়ে নারীদের মাহরাম ছাড়া হজ্বে যাওয়া উচিত নয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে মাহরামের সঙ্গে হজ্ব সম্পাদনের তাওফিক দান করুন। হজ্বের সময় পর্দার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সহীহ বুখারী হাদীস নং: ৭২৫৭, সহীহ মুসলিম হাদীস নং: ১৩৪১, সহীহ বুখারী হাদীস নং: ৩৫৯৫, বাদায়েউস সানায়ে: ২/১২৪

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া খতীব, নবোদয় সি ব্লক জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর ইমাম, বায়তুল ওয়াহহাব জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন