আখেরাতে কি ভাই-বোনের আর দেখা হবে না? এটা কি সহীহ্ হাদিস? এটার প্রমাণ কি?
প্রশ্নঃ ১০০৪৮০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, দুনিয়ার পর আখিরাতে কি ভাই-বোনের আর দেখা হবে না? এটা কি সহীহ্ হাদিস? এটার প্রমাণ কি?
২৩ এপ্রিল, ২০২৫
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই! আখিরাতে “ভাই-বোনের দেখা হবে না” এ মর্মে সরাসরি কোনো সহীহ হাদীস নেই। বরং কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে বোঝা যায়, ঈমান ও নেক আমলই মিলনের একমাত্র উপায় হবে।
কুরআনে আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেন:
لِكُلِّ امْرِئٍۭ مِّنْهُمْ يَوْمَئِذٍۢ شَأْنٌ يُغْنِيهِ
“সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে অন্যদের ব্যাপারে উদাসীন করে তুলবে।”
(সূরা আবাসা: ৩৭)
তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন:
কিয়ামতের কঠিন পরিস্থিতি, নিজের জবাবদিহি ও বিচারের ভয় মানুষকে এতটাই ব্যস্ত রাখবে যে, সে নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে ভাবার সময়ই পাবে না।
এমনকি নবী-রাসূলগণও সেদিনের ভয়ে বলবেন:
“نَفْسِي نَفْسِي”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৯৪)
https://muslimbangla.com/hadith/7429
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা বলেন:
وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَـٰنٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَآ أَلَتْنَـٰهُم مِّنْ عَمَلِهِم مِّن شَىْءٍ ۚ كُلُّ ٱمْرِئٍۢ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ
“যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের সন্তান-সন্ততিরা ঈমানে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সন্তানদেরকে তাদের সঙ্গে মিলিয়ে দেব এবং তাদের আমল হতে কিছুই কমাব না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়বদ্ধ।”
(সূরা আত্-তূর: ২১)
১. রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন:
"يَجْمَعُ ٱللَّهُ ٱلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ فَيَقُولُ: أَيْنَ ٱلَّذِينَ كَانُوا۟ يُحِبُّونَ بِي وَجْلِي؟ ٱلْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي، يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّي."
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআ’লা মুমিনদের একত্রিত করবেন এবং বলবেন, ‘কোথায় তারা, যারা আমার সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসত? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় আশ্রয় দেব, যেদিন আমার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না।’”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৫৬৬)
https://muslimbangla.com/hadith/13364
২. অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
"ٱلْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ"
“মানুষ সেই ব্যক্তির সাথেই থাকবে, যাকে সে ভালোবাসত।”
(সহীহ বুখারী: ৬১৭১)
https://muslimbangla.com/hadith/5740
তাছাড়া কেয়ামতের বিভীষিকাময় এমন হবে যে, প্রত্যেকেই থাকবে নিজের জবাবদিহি নিয়ে ব্যস্ত। তখন ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের চিন্তা থাকবে না।
যদি উভয়েই ঈমানদার হন এবং নেক আমল দ্বারা আল্লাহ তাআ’লা সন্তুষ্ট হন, তবে জান্নাতে পরিবার-পরিজন ও প্রিয়জনদের সঙ্গে পুনর্মিলন হবে।
সুতরাং উপরোক্ত কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে বলা যায়, যারা দুনিয়ায় একে অপরকে ঈমান ও নেক আমলের ওপর ভালোবাসত, আখিরাতে তারা একসাথে হবেন, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআ’লা আমাদের সবাইকে ঈমান ও নেক আমলে জীবন কাটানোর তাওফিক দান করুন এবং জান্নাতে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ দান করুন। আমীন।
والله اعلم بالصواب
শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
লেখক ও গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১