আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৬- মুসাফিরের নামায - কসর নামায
হাদীস নং: ১৫২৪
আন্তর্জাতিক নং: ৭১২
৯. মুয়াযযিন ইকামত দেওয়া শুরু করলে নফল নামায আরম্ভ করা মাকরূহ
১৫২৪। আবু কামিল জাহদারী (রাহঃ), হামিদ ইবনে উমর বাকারাবী (রাহঃ), ইবনে নুমাইর ও যুহাইর ইবনে হারব (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে সারজিস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফজরের নামায আদায় করছিলেন। লোকটি মসজিদের কোনায় দু রাকআত নামায আদায় করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে শামিল হল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সালাম ফিরিয়ে বললেন, হে ওমুক! তুমি এ দু’ নামাযের মধ্যে কোনটিকে (আসল) গণ্য করেছ? যা তুমি একাকী পড়লে তা, না যা আমাদের সাথে পড়লে তা?
باب كَرَاهَةِ الشُّرُوعِ فِي نَافِلَةٍ بَعْدَ شُرُوعِ الْمُؤَذِّنِ
حَدَّثَنَا أَبُو كَامِلٍ الْجَحْدَرِيُّ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ يَعْنِي ابْنَ زَيْدٍ، ح وَحَدَّثَنِي حَامِدُ بْنُ عُمَرَ الْبَكْرَاوِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ يَعْنِي ابْنَ زِيَادٍ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، كُلُّهُمْ عَنْ عَاصِمٍ، ح وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، - وَاللَّفْظُ لَهُ - حَدَّثَنَا مَرْوَانُ بْنُ مُعَاوِيَةَ الْفَزَارِيُّ، عَنْ عَاصِمٍ الأَحْوَلِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَرْجِسَ، قَالَ دَخَلَ رَجُلٌ الْمَسْجِدَ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي صَلاَةِ الْغَدَاةِ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ فِي جَانِبِ الْمَسْجِدِ ثُمَّ دَخَلَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا سَلَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَا فُلاَنُ بِأَىِّ الصَّلاَتَيْنِ اعْتَدَدْتَ أَبِصَلاَتِكَ وَحْدَكَ أَمْ بِصَلاَتِكَ مَعَنَا " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীসের প্রকাশ্য অর্থ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ফজরের নামাযের ইকামাত শুরু হলে আর ছুন্নাত পড়া যাবে না। এমনকি মাসজিদের কোণেও নয়। আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন: قَوْلُه (فِىْ جَانِبِ الْمَسْجِدِ) إلخ: ظَاهِرُه يَرُدُّ عَلى مَنْ أجَازَ رَكْعَتَى الْفَجْرِ فِىْ زَاوِيَةٍ مِنْ زَوَايَا الْمَسْجِدِ فَالْأحْوَطُ الإجْتِنَابُ مِنْه “এ হাদীসটি বাহ্যিকভাবে তাদের মতামত প্রত্যাখ্যান করে যারা মাসজিদের কোণে দাঁড়িয়ে দু’রাকাত পড়ে নেয়ার অনুমতি দেয়। সুতরাং এর থেকে বেঁচে থাকাই সতর্কতার দাবী”। (ফাতহুল মুলহিম: ৪/৪৫২) হযরত মালেক বিন বুহাইনা রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, ফজরের জামাত দাঁড়িয়ে গেলো। মুআজ্জিন ইকামাত দেয়া অবস্থায় রসূলুল্লাহ স. এক ব্যক্তিকে নামায পড়তে দেখে ইরশাদ করলেন: أَتُصَلِّي الصُّبْحَ أَرْبَعًا তুমি কি ফজরের নামায ৪ রাকাত পড়বে? (মুসলিম: ১৫২৩) হযরত আবু মুসা আশআরী রা. থেকে অপর একটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, মুআজ্জিন যখন ইকামাত দিচ্ছেন তখন রসূলুল্লাহ স. এক ব্যক্তিকে ফজরের ছুন্নাত পড়তে দেখে তার কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন: এটা আরো আগে পড়তে পারতে না? (আল মু’জামুছ ছগীর লিততবারানী-১৪৬) আল্লামা হাইসামী বলেন, এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ২৩৯৪) হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে অপর একটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ স. বলেন: নামাযের জামাত দাঁড়িয়ে গেলে ফরয ব্যতীত কোন নামায নেই। (মুসলিম: ১৫১৭, ১৫১৮ ও ১৫১৯) উল্লিখিত ৪টি হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, ফজরের জামাত দাঁড়িয়ে গেলে আর ছুন্নাত পড়া যাবে না। বরং ছুটে যাওয়া ছুন্নাত সূর্য ওঠার পরে আদায় করতে হবে বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (তিরমিযী: ৪২৩)
এর বিপরীতে কোন কোন সাহাবায়ে কিরামের আমল এরূপ পাওয়া যায় যে, তাঁরা জামাত দাঁড়ানোর পরে এলে মাসজিদের কোণে দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে দু’রাকাত নামায আদায় করে জামাতে শরিক হতেন। এ মর্মে কিছু বর্ণনা নিম্নে পেশ করছি।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خُزَيْمَةَ، وَفَهْدٌ قَالَا: ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ صَالِحٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي اللَّيْثُ، قَالَ: حَدَّثَنِي ابْنُ الْهَادِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ، قَالَ: خَرَجَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا مِنْ بَيْتِهِ فَأُقِيمَتْ صَلَاةُ الصُّبْحِ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَدْخُلَ الْمَسْجِدَ وَهُوَ فِي الطَّرِيقِ ثُمَّ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَصَلَّى الصُّبْحَ مَعَ النَّاسِ.
অনুবাদ : হযরত মুহাম্মাদ বিন কাআ’ব বলেন: হযরত ইবনে উমার রা. ঘর থেকে বের হলেন। ততক্ষণে ফজরের জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। তিনি মাসজিদে প্রবেশের পূর্বে রাসত্মায় দু’রাকাত নামায পড়ে নিলেন। অতঃপর মাসজিদে প্রবেশ করে মানুষের সাথে ফজরের নামায পড়লেন। (ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৫৬, হাদীস নং-২২০২)
হাদীসটির স্তর : হাসান। আল্লামা বদরম্নদ্দীন আইনী রহ, এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: পৃষ্ঠা-৮১, খ--৬)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলে হযরত ইবনে উমার রা. ছুন্নাত পড়েছেন। যদিও সেটা মাসজিদের ভেতরে নয়। এ থেকে আরো একটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, “ফরযের জামাত শুরু হয়ে গেলে ফরয ব্যতীত কোন নামায নেই” রসূল স.-এর এ বাণীটি হয়তো মাসজিদের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট। মাসজিদের বাইরে কেউ কোন নামায পড়লে এ হাদীসে তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়নি।
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بن إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَبْدِ الرَّزَّاقِ، عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَبْدِ الله بن أَبِي مُوسَى، قَالَ: جَاءَ ابْنُ مَسْعُودٍ، وَالإِمَامُ يُصَلِّي الصُّبْحَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ إِلَى سَارِيَةٍ، وَلَمْ يَكُنْ صَلَّى رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ.
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন আবু মুসা থেকে বর্ণিত: হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এমন সময় মাসজিদে আসলেন যখন ইমাম ফজরের নামায পড়ছিলেন। তখন তিনি একটি খুঁটির পাশে গিয়ে দু’রাকাত ছুন্নাত নামায পড়লেন। এর আগে তিনি ছুন্নাত পড়েননি। (আল্ মু’জামুল কাবীর লিত্ তবারানী: ৯২৭৯, ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৫৫, হাদীস নং-২১৯৯)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। আলস্নামা বদরম্নদ্দীন আইনী রহ, এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: পৃষ্ঠা-৭৬, খ--৬)
এ হাদীস থেকে বুঝে আসে যে, ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও খুঁটির আড়ালে বা কোন কোণায় সংক্ষিপ্ত দু’রাকাত নামায পড়ে নেয়া যেতে পারে। তবে জামাতের কাতারের মধ্যে বা কাতারের নিকটে পড়া মাকরূহে তাহরিমী। অবশ্য এ আমলটি বহ্যিকভাবে পূর্ববর্ণিত মারফু’ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। হযরত ইবনে উমার, ইবনে আব্বাস, আবু দারদা রা. এবং হযরত আবু উসমান নাহদী রহ. থেকেও সহীহ সনদে ত্বহাবী শরীফে বর্ণিত আছে যে, ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও তাঁরা সংক্ষেপে দু’রাকাত ছুন্নাত আদায় করে জামাতে শরিক হতেন। হতে পারে যে, ফজরের ছুন্নাত অধিক গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার কারণে اذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة (ফরয নামায শুরু হলে অন্য কোন নামায নেই) রসূল স.-এর এ হাদীসের বিধান থেকে তাঁরা ফজরের ছুন্নাতকে ভিন্ন ও ব্যতিক্রম মনে করতেন। অবশ্য এ মর্মে একটি হাদীসও বায়হাকী শরীফে বর্ণিত আছে। উক্ত হাদীসে রসূল স. ইরশাদ করেন اذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة إلا ركعتى الصبح ফরয নামায শুরু হলে অন্য কোন নামায নেই, তবে ফজরের দু’রাকাতের বিষয় এ থেকে ব্যতিক্রম। (সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী-৪২২৬) এ হাদীসটি যদিও সনদের বিবেচনায় জঈফ, এতদ্বসত্ত্বেও সহীহ সনদে বর্ণিত সাহাবায়ে কিরামের আমল এর পক্ষে থাকায় মনে হয় তাঁরা এ হাদীসকে আমলে নিয়েছেন; যদিও আমাদের পর্যন্ত হাদীসটি সহীহ সনদে পোঁছায়নি। সনদের বিবেচনায় জঈফ কোন হাদীসের পড়্গে সাহাবায়ে কিরামের আমল বিদ্যমান থাকলে উক্ত হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
এ ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের আমল হিদায়া কিতাবে এভাবে বর্ণিত আছে-
وَمَنْ انْتَهَى إلَى الْإِمَامِ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَهُوَ لَمْ يُصَلِّ رَكْعَتَيْ الْفَجْرِ : إنْ خَشَى أَنْ تَفُوتَهُ رَكْعَةٌ وَيُدْرِكَ الْأُخْرَى يُصَلِّي رَكْعَتَيْ الْفَجْرِ عِنْدَ بَابِ الْمَسْجِدِ ثُمَّ يَدْخُلُ لِأَنَّهُ أَمْكَنَهُ الْجَمْعُ بَيْنَ الْفَضِيلَتَيْنِ (وَإِنْ خَشى فَوْتَهُمَا دَخَلَ مَعَ الْإِمَامِ) لِأَنَّ ثَوَابَ الْجَمَاعَةِ أَعْظَمُ وَالْوَعِيدَ بِالتَّرْكِ أَلْزَمُ
অনুবাদ : যে ব্যক্তি ফজরের নামাযে এমন অবস্থায় উপস্থিত হলো যে, সে ফজরের ছুন্নাত পড়েনি। যদি সে আশঙ্কা করে যে, ছুন্নাত পড়লে তার এক রাকাত ছুটে যাবে আর এক রাকাত পাবে, তাহলে মাসজিদের দরজার নিকট দাঁড়িয়ে ছুন্নাত পড়ে নিবে। এরপর জামাতে অংশগ্রহণ করবে। কেননা সে এভাবে উভয় ফযীলতকে একত্রে গ্রহণের সুযোগ পেলো। আর যদি শেষ রাকাতও ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে ইমামের সাথে জামাতে শরিক হয়ে যাবে। কেননা জামাতের সওয়াব বেশী এবং জামাত তরকের ধমকিও গুরম্নতর। (হিদায়া: ১/১৫২)
একটি বিশেস্নষণ :
ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও আগে ছুন্নাত পড়ে জামাতে শরিক হওয়ার ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের পক্ষে সাহাবায়ে কিরামের যে আমল পেশ করা হয়েছে, তার কোনটির মধ্যেও এ কথা উল্লেখ নেই যে, তাঁরা এক রাকাত ছুটে গেলেও আগে ছুন্নাত পড়তেন। তখনকার ফজরের নামাযে যে ধরণের লম্বা কিরাত পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায় তা থেকে বরং এটিই অনুমিত হয় যে, জামাত শুরু হওয়ার সাথে সাথে কেউ মাসজিদে এলে প্রথম রাকাতের রুকুর পূর্বে কয়েকবার ছুন্নাত পড়তে পারবে। এ কারণে তার রাকাত ছুটবে না। ‘যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকাত পেলো সে নামায পেলো’ হাদীস দ্বারা দলীল দেয়া হয়ে থাকে যে, জামাতের এক রাকাত ছুটে গেলেও আগে ছুন্নাত পড়ে নিবে। অথচ উপরোউল্লিখত ৪টি সহীহ মারফু’ হাদীসের বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, জামাত শুরু হয়ে গেলে কেউ নতুন করে ছুন্নাত পড়তে দাঁড়াবে না। ছুন্নাত পড়ার কারণে ইচ্ছে করে রাকাত ছাড়ার কোন সুযোগ উক্ত হাদীসগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং ‘এক রাকাত পেলে নামায পাবে’ হাদীসের উদ্দেশ্য হলো: কেউ পূর্ণ জামাত ধরার চেষ্টা করে যদি মাসজিদে এসে পূর্ণ জামাত ধরতে না পারে তবুও তিনি জামাতের সওয়াব পেয়ে যাবেন।
আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহ. ফাতহুল মুলহিমে এ সংক্রানত্ম আলোচনায় বলেন:وليعلم أن أداء ركعتى الفجر بشرط وجدان الركعة من المكتوبة فى زاوية من المسجد ليس هو أصل مذهبنا بل هو من تخريجات الأصحاب “জেনে রাখা উচিত, ফজরের ফরয নামায এক রাকাত পাওয়ার শর্তে মাসজিদের কোণে দাঁড়িয়ে দু’রাকাত ছুন্নাত পড়ে নেয়ার যে মত হানাফী মাযহাবে রয়েছে, এটা আমাদের মূল মাযহাব নয়; বরং মাযহাবের পরবর্তী ইমামদের ইজতিহাদ”। (ফাতহুল মুলহিম: ৪/৪৪৮) অতএব, উপরোউল্লিখত মারফু’ হাদীস ও সাহাবায়ে কিরামের আমলের সমন্বয় এভাবে হতে পারে যে, হযরত আবু মুসা থেকে বর্ণিত হাদীসের উদ্দেশ্য হলো: যদি কেউ ঘর থেকে ছুন্নাত পড়ে না আসে তাহলে জামাত শুরু হওয়ার আগে এসে ছুন্নাত পড়া। ইবনে উমার রা.-এর হাদীসের উদ্দেশ্য হলো: যদি জামাত দাঁড়িয়ে গিয়ে থাকে তাহলে মাসজিদের বাইরে বা বারান্দা যদি মাসজিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না হয়ে থাকে তাহলে সেখানে দাঁড়িয়ে ছুন্নাত পড়ে নেয়া। আব্দুল্লাহ বিন সারজিস এবং মালেক বিন বুহাইনা রা.-এর হাদীসের উদ্দেশ্য হলো: যদি জামাত শুরু হয়ে যায় আর মাসজিদের বাইরে ছুন্নাত পড়ার কোন ব্যবস্থা না থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবে ছুন্নাত পড়বে না। যেহেতু ফরযের জামাত শুরু হয়ে গেলে ছুন্নাত পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। (মুসলিম: ১৫১৭, ১৫১৮ ও ১৫১৯) বরং সূর্য ওঠার পরে ছুন্নাত পড়ে নিবে। (তিরমিযী: ৪২৩) হযরত ইবনে মাসউদ রা. হাদীসের উদ্দেশ্য হলো: ফজরের জামাত শুরু হয়ে যাওয়ার পরে যদি মাসজিদের বাইরে ছুন্নাত পড়ার ভালো ব্যবস্থা না থাকে, আর সে ছুন্নাত ছাড়তেও না চায় তাহলে খুঁটির আড়ালে বা মাসজিদের কোণায় সংক্ষিপ্তভাবে পড়তে পারে। অবশ্য এ কারণে জামাতের নামাযের কোন রাকাত ছাড়তে পারবে না। এ মর্মে হযরত আতা বিন আবী রবাহ রহ. থেকে একটি ফতওয়া সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে,
عَبْدُ الرَّزَّاقِ عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ قُلْتُ لِعَطَاءٍ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ وَالْإِمَامُ فِي الصَّلَاةِ وَلَمْ أَكُنْ رَكَعْتُهُمَا قَالَ فَارْكَعْهُمَا فِي الْمَسْجِدِ إِلَّا أَنْ تَخْشَى أَنْ تَفُوتَكَ الرَّكْعَةُ الَّتِي الْإِمَامُ فِيهَا.
অনুবাদ : হযরত ইবনে জুরাইয বলেন: আমি হযরত আতাকে জিজ্ঞেস করলাম: আমি এমন সময় মাসজিদে এলাম যখন ইমাম নামাযরত; অথচ আমি ছুন্নাত দু’রাকাত পড়িনি। (এমতাবস্থায় আমি কী করব?) তিনি বললেন: ইমাম যে রাকাতে আছে উক্ত রাকাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলে পড়ে নাও। (আব্দুর রাযযাক: ৪০০৯)। অনুরূপ মনত্মব্য ইমাম মালেক রহ. থেকেও বর্ণিত আছে; অবশ্য তিনি এটাও মসজিদের বাইরে পড়তে বলেন। (নাইলুল আওতার, খ-:৩, পৃষ্ঠা: ১০২) হাদীসের ক্ষেত্র চিহ্নিত করার ব্যাপারে পূর্বোক্ত নিয়ম অনুসরণ করা হলে মারফু’ হাদীস ও সাহাবায়ে কিরামের আমলের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হবে। সাথে সাথে মুসল্লীদের সচেতনতা আরো বৃদ্ধি পাবে। মুফতি সাঈদ আহমাদ পালনপুরী দামাত বারাকাতুহুম অনেক ব্যাখ্যা-বিশেস্নষণের পর এ মত পোষণ করেছেন যে, জামাত শুরু হয়ে যাওয়ার পর মসজিদের চত্বর, বারান্দা বা জামাতের স্থানের বাইরে ছুন্নাত পড়ার মত কোন জায়গা না পাওয়া গেলে ছুন্নাত না পড়েই জামাতে শরীক হবে। (তুহফাতুর কারী, খ-: ২, পৃষ্ঠা: ৫২৪)
এর বিপরীতে কোন কোন সাহাবায়ে কিরামের আমল এরূপ পাওয়া যায় যে, তাঁরা জামাত দাঁড়ানোর পরে এলে মাসজিদের কোণে দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে দু’রাকাত নামায আদায় করে জামাতে শরিক হতেন। এ মর্মে কিছু বর্ণনা নিম্নে পেশ করছি।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خُزَيْمَةَ، وَفَهْدٌ قَالَا: ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ صَالِحٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي اللَّيْثُ، قَالَ: حَدَّثَنِي ابْنُ الْهَادِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ، قَالَ: خَرَجَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا مِنْ بَيْتِهِ فَأُقِيمَتْ صَلَاةُ الصُّبْحِ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَدْخُلَ الْمَسْجِدَ وَهُوَ فِي الطَّرِيقِ ثُمَّ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَصَلَّى الصُّبْحَ مَعَ النَّاسِ.
অনুবাদ : হযরত মুহাম্মাদ বিন কাআ’ব বলেন: হযরত ইবনে উমার রা. ঘর থেকে বের হলেন। ততক্ষণে ফজরের জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। তিনি মাসজিদে প্রবেশের পূর্বে রাসত্মায় দু’রাকাত নামায পড়ে নিলেন। অতঃপর মাসজিদে প্রবেশ করে মানুষের সাথে ফজরের নামায পড়লেন। (ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৫৬, হাদীস নং-২২০২)
হাদীসটির স্তর : হাসান। আল্লামা বদরম্নদ্দীন আইনী রহ, এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: পৃষ্ঠা-৮১, খ--৬)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলে হযরত ইবনে উমার রা. ছুন্নাত পড়েছেন। যদিও সেটা মাসজিদের ভেতরে নয়। এ থেকে আরো একটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, “ফরযের জামাত শুরু হয়ে গেলে ফরয ব্যতীত কোন নামায নেই” রসূল স.-এর এ বাণীটি হয়তো মাসজিদের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট। মাসজিদের বাইরে কেউ কোন নামায পড়লে এ হাদীসে তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়নি।
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بن إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَبْدِ الرَّزَّاقِ، عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَبْدِ الله بن أَبِي مُوسَى، قَالَ: جَاءَ ابْنُ مَسْعُودٍ، وَالإِمَامُ يُصَلِّي الصُّبْحَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ إِلَى سَارِيَةٍ، وَلَمْ يَكُنْ صَلَّى رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ.
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন আবু মুসা থেকে বর্ণিত: হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এমন সময় মাসজিদে আসলেন যখন ইমাম ফজরের নামায পড়ছিলেন। তখন তিনি একটি খুঁটির পাশে গিয়ে দু’রাকাত ছুন্নাত নামায পড়লেন। এর আগে তিনি ছুন্নাত পড়েননি। (আল্ মু’জামুল কাবীর লিত্ তবারানী: ৯২৭৯, ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৫৫, হাদীস নং-২১৯৯)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। আলস্নামা বদরম্নদ্দীন আইনী রহ, এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: পৃষ্ঠা-৭৬, খ--৬)
এ হাদীস থেকে বুঝে আসে যে, ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও খুঁটির আড়ালে বা কোন কোণায় সংক্ষিপ্ত দু’রাকাত নামায পড়ে নেয়া যেতে পারে। তবে জামাতের কাতারের মধ্যে বা কাতারের নিকটে পড়া মাকরূহে তাহরিমী। অবশ্য এ আমলটি বহ্যিকভাবে পূর্ববর্ণিত মারফু’ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। হযরত ইবনে উমার, ইবনে আব্বাস, আবু দারদা রা. এবং হযরত আবু উসমান নাহদী রহ. থেকেও সহীহ সনদে ত্বহাবী শরীফে বর্ণিত আছে যে, ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও তাঁরা সংক্ষেপে দু’রাকাত ছুন্নাত আদায় করে জামাতে শরিক হতেন। হতে পারে যে, ফজরের ছুন্নাত অধিক গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার কারণে اذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة (ফরয নামায শুরু হলে অন্য কোন নামায নেই) রসূল স.-এর এ হাদীসের বিধান থেকে তাঁরা ফজরের ছুন্নাতকে ভিন্ন ও ব্যতিক্রম মনে করতেন। অবশ্য এ মর্মে একটি হাদীসও বায়হাকী শরীফে বর্ণিত আছে। উক্ত হাদীসে রসূল স. ইরশাদ করেন اذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة إلا ركعتى الصبح ফরয নামায শুরু হলে অন্য কোন নামায নেই, তবে ফজরের দু’রাকাতের বিষয় এ থেকে ব্যতিক্রম। (সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী-৪২২৬) এ হাদীসটি যদিও সনদের বিবেচনায় জঈফ, এতদ্বসত্ত্বেও সহীহ সনদে বর্ণিত সাহাবায়ে কিরামের আমল এর পক্ষে থাকায় মনে হয় তাঁরা এ হাদীসকে আমলে নিয়েছেন; যদিও আমাদের পর্যন্ত হাদীসটি সহীহ সনদে পোঁছায়নি। সনদের বিবেচনায় জঈফ কোন হাদীসের পড়্গে সাহাবায়ে কিরামের আমল বিদ্যমান থাকলে উক্ত হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
এ ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের আমল হিদায়া কিতাবে এভাবে বর্ণিত আছে-
وَمَنْ انْتَهَى إلَى الْإِمَامِ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَهُوَ لَمْ يُصَلِّ رَكْعَتَيْ الْفَجْرِ : إنْ خَشَى أَنْ تَفُوتَهُ رَكْعَةٌ وَيُدْرِكَ الْأُخْرَى يُصَلِّي رَكْعَتَيْ الْفَجْرِ عِنْدَ بَابِ الْمَسْجِدِ ثُمَّ يَدْخُلُ لِأَنَّهُ أَمْكَنَهُ الْجَمْعُ بَيْنَ الْفَضِيلَتَيْنِ (وَإِنْ خَشى فَوْتَهُمَا دَخَلَ مَعَ الْإِمَامِ) لِأَنَّ ثَوَابَ الْجَمَاعَةِ أَعْظَمُ وَالْوَعِيدَ بِالتَّرْكِ أَلْزَمُ
অনুবাদ : যে ব্যক্তি ফজরের নামাযে এমন অবস্থায় উপস্থিত হলো যে, সে ফজরের ছুন্নাত পড়েনি। যদি সে আশঙ্কা করে যে, ছুন্নাত পড়লে তার এক রাকাত ছুটে যাবে আর এক রাকাত পাবে, তাহলে মাসজিদের দরজার নিকট দাঁড়িয়ে ছুন্নাত পড়ে নিবে। এরপর জামাতে অংশগ্রহণ করবে। কেননা সে এভাবে উভয় ফযীলতকে একত্রে গ্রহণের সুযোগ পেলো। আর যদি শেষ রাকাতও ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে ইমামের সাথে জামাতে শরিক হয়ে যাবে। কেননা জামাতের সওয়াব বেশী এবং জামাত তরকের ধমকিও গুরম্নতর। (হিদায়া: ১/১৫২)
একটি বিশেস্নষণ :
ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও আগে ছুন্নাত পড়ে জামাতে শরিক হওয়ার ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের পক্ষে সাহাবায়ে কিরামের যে আমল পেশ করা হয়েছে, তার কোনটির মধ্যেও এ কথা উল্লেখ নেই যে, তাঁরা এক রাকাত ছুটে গেলেও আগে ছুন্নাত পড়তেন। তখনকার ফজরের নামাযে যে ধরণের লম্বা কিরাত পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায় তা থেকে বরং এটিই অনুমিত হয় যে, জামাত শুরু হওয়ার সাথে সাথে কেউ মাসজিদে এলে প্রথম রাকাতের রুকুর পূর্বে কয়েকবার ছুন্নাত পড়তে পারবে। এ কারণে তার রাকাত ছুটবে না। ‘যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকাত পেলো সে নামায পেলো’ হাদীস দ্বারা দলীল দেয়া হয়ে থাকে যে, জামাতের এক রাকাত ছুটে গেলেও আগে ছুন্নাত পড়ে নিবে। অথচ উপরোউল্লিখত ৪টি সহীহ মারফু’ হাদীসের বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, জামাত শুরু হয়ে গেলে কেউ নতুন করে ছুন্নাত পড়তে দাঁড়াবে না। ছুন্নাত পড়ার কারণে ইচ্ছে করে রাকাত ছাড়ার কোন সুযোগ উক্ত হাদীসগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং ‘এক রাকাত পেলে নামায পাবে’ হাদীসের উদ্দেশ্য হলো: কেউ পূর্ণ জামাত ধরার চেষ্টা করে যদি মাসজিদে এসে পূর্ণ জামাত ধরতে না পারে তবুও তিনি জামাতের সওয়াব পেয়ে যাবেন।
আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহ. ফাতহুল মুলহিমে এ সংক্রানত্ম আলোচনায় বলেন:وليعلم أن أداء ركعتى الفجر بشرط وجدان الركعة من المكتوبة فى زاوية من المسجد ليس هو أصل مذهبنا بل هو من تخريجات الأصحاب “জেনে রাখা উচিত, ফজরের ফরয নামায এক রাকাত পাওয়ার শর্তে মাসজিদের কোণে দাঁড়িয়ে দু’রাকাত ছুন্নাত পড়ে নেয়ার যে মত হানাফী মাযহাবে রয়েছে, এটা আমাদের মূল মাযহাব নয়; বরং মাযহাবের পরবর্তী ইমামদের ইজতিহাদ”। (ফাতহুল মুলহিম: ৪/৪৪৮) অতএব, উপরোউল্লিখত মারফু’ হাদীস ও সাহাবায়ে কিরামের আমলের সমন্বয় এভাবে হতে পারে যে, হযরত আবু মুসা থেকে বর্ণিত হাদীসের উদ্দেশ্য হলো: যদি কেউ ঘর থেকে ছুন্নাত পড়ে না আসে তাহলে জামাত শুরু হওয়ার আগে এসে ছুন্নাত পড়া। ইবনে উমার রা.-এর হাদীসের উদ্দেশ্য হলো: যদি জামাত দাঁড়িয়ে গিয়ে থাকে তাহলে মাসজিদের বাইরে বা বারান্দা যদি মাসজিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না হয়ে থাকে তাহলে সেখানে দাঁড়িয়ে ছুন্নাত পড়ে নেয়া। আব্দুল্লাহ বিন সারজিস এবং মালেক বিন বুহাইনা রা.-এর হাদীসের উদ্দেশ্য হলো: যদি জামাত শুরু হয়ে যায় আর মাসজিদের বাইরে ছুন্নাত পড়ার কোন ব্যবস্থা না থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবে ছুন্নাত পড়বে না। যেহেতু ফরযের জামাত শুরু হয়ে গেলে ছুন্নাত পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। (মুসলিম: ১৫১৭, ১৫১৮ ও ১৫১৯) বরং সূর্য ওঠার পরে ছুন্নাত পড়ে নিবে। (তিরমিযী: ৪২৩) হযরত ইবনে মাসউদ রা. হাদীসের উদ্দেশ্য হলো: ফজরের জামাত শুরু হয়ে যাওয়ার পরে যদি মাসজিদের বাইরে ছুন্নাত পড়ার ভালো ব্যবস্থা না থাকে, আর সে ছুন্নাত ছাড়তেও না চায় তাহলে খুঁটির আড়ালে বা মাসজিদের কোণায় সংক্ষিপ্তভাবে পড়তে পারে। অবশ্য এ কারণে জামাতের নামাযের কোন রাকাত ছাড়তে পারবে না। এ মর্মে হযরত আতা বিন আবী রবাহ রহ. থেকে একটি ফতওয়া সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে,
عَبْدُ الرَّزَّاقِ عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ قُلْتُ لِعَطَاءٍ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ وَالْإِمَامُ فِي الصَّلَاةِ وَلَمْ أَكُنْ رَكَعْتُهُمَا قَالَ فَارْكَعْهُمَا فِي الْمَسْجِدِ إِلَّا أَنْ تَخْشَى أَنْ تَفُوتَكَ الرَّكْعَةُ الَّتِي الْإِمَامُ فِيهَا.
অনুবাদ : হযরত ইবনে জুরাইয বলেন: আমি হযরত আতাকে জিজ্ঞেস করলাম: আমি এমন সময় মাসজিদে এলাম যখন ইমাম নামাযরত; অথচ আমি ছুন্নাত দু’রাকাত পড়িনি। (এমতাবস্থায় আমি কী করব?) তিনি বললেন: ইমাম যে রাকাতে আছে উক্ত রাকাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলে পড়ে নাও। (আব্দুর রাযযাক: ৪০০৯)। অনুরূপ মনত্মব্য ইমাম মালেক রহ. থেকেও বর্ণিত আছে; অবশ্য তিনি এটাও মসজিদের বাইরে পড়তে বলেন। (নাইলুল আওতার, খ-:৩, পৃষ্ঠা: ১০২) হাদীসের ক্ষেত্র চিহ্নিত করার ব্যাপারে পূর্বোক্ত নিয়ম অনুসরণ করা হলে মারফু’ হাদীস ও সাহাবায়ে কিরামের আমলের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হবে। সাথে সাথে মুসল্লীদের সচেতনতা আরো বৃদ্ধি পাবে। মুফতি সাঈদ আহমাদ পালনপুরী দামাত বারাকাতুহুম অনেক ব্যাখ্যা-বিশেস্নষণের পর এ মত পোষণ করেছেন যে, জামাত শুরু হয়ে যাওয়ার পর মসজিদের চত্বর, বারান্দা বা জামাতের স্থানের বাইরে ছুন্নাত পড়ার মত কোন জায়গা না পাওয়া গেলে ছুন্নাত না পড়েই জামাতে শরীক হবে। (তুহফাতুর কারী, খ-: ২, পৃষ্ঠা: ৫২৪)
