আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
১- ঈমানের অধ্যায়
হাদীস নং: ২২৯
আন্তর্জাতিক নং: ১২৫
৫৭. মনের কল্পনা বা খটকা আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেন; যদি সে তাতে স্থির না হয়; মানুষের সামর্থ্যানুযায়ীই আল্লাহ তাকে দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং ভালো বা মন্দ কর্মের অভিপ্রায় প্রসঙ্গ
২২৯। মুহাম্মাদ ইবনে মিনহাল আয যারীর ও উমাইয়া ইবনে বিসতাম আল আয়শী (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, (মহান আল্লাহর বাণী) “আসমান ও যমীনে যত কিছু আছে, সমস্ত আল্লাহরই। তোমাদের মনের অভ্যন্তরে যা আছে তা প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব গ্রহণ করবেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। ” (২ঃ ২৮৪) এ আয়াত নাযিল হলে বিষয়টি সাহাবীদের কাছে খুবই কঠিন মনে হল। তাই সবাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কাছে আসলেন এবং হাটু গেড়ে বসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! নামায, রোযা, জিহাদ, সাদ্কা প্রভৃতি যে সমস্ত আমল আমাদের সামর্থ্যানুযায়ী ছিল এ যাবত আমাদেরকে সেগুলোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। এ বিষয়টি তো আমাদের ক্ষমতার বাইরে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আহলে কিতাব- ইহুদি ও খৃষ্টানের মত তোমরাও কি এমন কথা বলবে যে, শুনলাম কিন্তু মানলাম না! বরং তোমরা বলো; শুনলাম ও মানলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর তুমিই আমাদের শেষ প্রত্যাবর্তন স্থল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর এ নির্দেশ শুনে সাহাবা কিরাম বললেন, আমরা শুনেছি ও মেনেছি, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তুমিই আমাদের শেষ প্রত্যাবর্তন স্থল।
রাবী বলেন, সাহাবীদের সকলে এ আয়াত পাঠ করলেন এবং বিনয়াপূত হয়ে মনেপ্রাণে তা গ্রহণ করে নিলেন। অনন্তর আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ রাসুল, তাঁর প্রতি তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তিনি ঈমান আনয়ন করেছেন এবং মুমিনগণও। তাদের সকলে আল্লাহতে, তার ফিরিশতাগণে, তাঁর কিতাবসমুহে এবং তাঁর রাসুলগণে ঈমান আনয়ন করেছেন তারা বলে, আমরা তাঁর রাসুলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর তাঁরা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম! হে আমাদের রব! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা চাই আর তোমারই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল। (২ঃ ২৮৪)
যখন তাঁরা সর্বতোভাবে আনুগত্য জ্ঞাপন করলেন তখন আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতের হুকুম রহিত করে নাযিল করলেনঃ “আল্লাহ কারো উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়-দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার জন্য সাধ্যাতীত। সে ভাল যা উপার্জন করে তা তারই এবং মন্দ যা উপার্জন করে তাও তারই। হে আমাদের রব! যদি আমরা বিম্মৃত হই কিংবা ভুল করে ফেলি তবে তুমি আমাদেরকে পাকড়াও করো না।” আল্লাহ বললেনঃ হ্যাঁ তাই হবে।
″হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেমন গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না।” আল্লাহ বললেনঃ হ্যাঁ, তাই হবে।
″হে আমাদের রব! এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আল্লাহ বললেনঃ হ্যাঁ, তাই হবে।
“আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদেরকে মাফ কর, রহম কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদিগকে জয়যুক্ত কর।” আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, মঞ্জুর করা হল।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আহলে কিতাব- ইহুদি ও খৃষ্টানের মত তোমরাও কি এমন কথা বলবে যে, শুনলাম কিন্তু মানলাম না! বরং তোমরা বলো; শুনলাম ও মানলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর তুমিই আমাদের শেষ প্রত্যাবর্তন স্থল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর এ নির্দেশ শুনে সাহাবা কিরাম বললেন, আমরা শুনেছি ও মেনেছি, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তুমিই আমাদের শেষ প্রত্যাবর্তন স্থল।
রাবী বলেন, সাহাবীদের সকলে এ আয়াত পাঠ করলেন এবং বিনয়াপূত হয়ে মনেপ্রাণে তা গ্রহণ করে নিলেন। অনন্তর আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ রাসুল, তাঁর প্রতি তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তিনি ঈমান আনয়ন করেছেন এবং মুমিনগণও। তাদের সকলে আল্লাহতে, তার ফিরিশতাগণে, তাঁর কিতাবসমুহে এবং তাঁর রাসুলগণে ঈমান আনয়ন করেছেন তারা বলে, আমরা তাঁর রাসুলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর তাঁরা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম! হে আমাদের রব! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা চাই আর তোমারই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল। (২ঃ ২৮৪)
যখন তাঁরা সর্বতোভাবে আনুগত্য জ্ঞাপন করলেন তখন আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতের হুকুম রহিত করে নাযিল করলেনঃ “আল্লাহ কারো উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়-দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার জন্য সাধ্যাতীত। সে ভাল যা উপার্জন করে তা তারই এবং মন্দ যা উপার্জন করে তাও তারই। হে আমাদের রব! যদি আমরা বিম্মৃত হই কিংবা ভুল করে ফেলি তবে তুমি আমাদেরকে পাকড়াও করো না।” আল্লাহ বললেনঃ হ্যাঁ তাই হবে।
″হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেমন গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না।” আল্লাহ বললেনঃ হ্যাঁ, তাই হবে।
″হে আমাদের রব! এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আল্লাহ বললেনঃ হ্যাঁ, তাই হবে।
“আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদেরকে মাফ কর, রহম কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদিগকে জয়যুক্ত কর।” আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, মঞ্জুর করা হল।
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ مِنْهَالٍ الضَّرِيرُ، وَأُمَيَّةُ بْنُ بِسْطَامَ الْعَيْشِيُّ، - وَاللَّفْظُ لأُمَيَّةَ - قَالاَ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا رَوْحٌ، - وَهُوَ ابْنُ الْقَاسِمِ - عَنِ الْعَلاَءِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ( لِلَّهِ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُمْ بِهِ اللَّهُ فَيَغْفِرُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ) قَالَ فَاشْتَدَّ ذَلِكَ عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَتَوْا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ بَرَكُوا عَلَى الرُّكَبِ فَقَالُوا أَىْ رَسُولَ اللَّهِ كُلِّفْنَا مِنَ الأَعْمَالِ مَا نُطِيقُ الصَّلاَةُ وَالصِّيَامُ وَالْجِهَادُ وَالصَّدَقَةُ وَقَدْ أُنْزِلَتْ عَلَيْكَ هَذِهِ الآيَةُ وَلاَ نُطِيقُهَا . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَتُرِيدُونَ أَنْ تَقُولُوا كَمَا قَالَ أَهْلُ الْكِتَابَيْنِ مِنْ قَبْلِكُمْ سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا بَلْ قُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ " . قَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ . فَلَمَّا اقْتَرَأَهَا الْقَوْمُ ذَلَّتْ بِهَا أَلْسِنَتُهُمْ فَأَنْزَلَ اللَّهُ فِي إِثْرِهَا ( آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ) فَلَمَّا فَعَلُوا ذَلِكَ نَسَخَهَا اللَّهُ تَعَالَى فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ ( لاَ يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا) قَالَ نَعَمْ ( رَبَّنَا وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا) قَالَ نَعَمْ ( رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ) قَالَ نَعَمْ ( وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلاَنَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ) قَالَ نَعَمْ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছ দ্বারা আমরা জানতে পারি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী যত্নের সঙ্গে সাহাবায়ে কিরামকে ঈমান ও আমলের ওপর গড়ে তুলেছিলেন এবং সাহাবায়ে কিরামও কতটা আগ্রহ-উদ্দীপনার সঙ্গে তাঁর হুকুম মেনে চলতেন। সূরা বাকারার ২৮৪ নং আয়াতে যখন জানানো হল যে, তোমরা তোমাদের মনের যেসব বিষয় প্রকাশ কর এবং যা মনের মধ্যে গোপন রাখ সকল বিষয়ই আল্লাহ তা'আলা তোমাদের কাছ থেকে হিসাব নেবেন এবং তার বদলা দেবেন, তখন তাদের কাছে বিষয়টা একটু কঠিন মনে হল। কেননা তারা মনে করেছিলেন যে, মনের মধ্যে অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত এমন এমন চিন্তাভাবনা এসে পড়ে, যা রোধ করা সম্ভব হয় না। এখন সেজন্যও যদি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তবে তার অর্থ দাঁড়ায়- এ জাতীয় চিন্তাভাবনা কিছুতেই করা যাবে না। সে হিসেবে এটা এমন হুকুম হয়ে যায়, যা বান্দার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। আর তা সম্ভব নয় বলে জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বাঁচা ও এর শান্তি হতে আত্মরক্ষা করাও তো সম্ভব হবে না। তাহলে উপায় কী?
তারা এ সমস্যার নিরসনকল্পে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন এবং অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে আরয করলেন যে, আমাদেরকে যে নামায, জিহাদ, রোযা ইত্যাদি বিধানগুলো পালন করতে আদেশ করা হয়েছে, তা পালন করতে তো আমরা সক্ষম। কিন্তু এ আয়াতে যে হুকুম করা হয়েছে তা পালনের ক্ষমতা আমাদের নেই। অর্থাৎ এখন আমাদের উপায় কী?
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বলে তাদেরকে মৃদু তিরস্কার করলেন যে, এটা তো ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের খাসলাত যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনও হুকুম আসলে তারা বলত, আমরা শুনলাম কিন্তু মানলাম না। তোমরাও কি সেরকম বলতে চাও নাকি? বরং তোমরা বল আমরা আপনার আদেশ শুনলাম এবং তা মেনে নিলাম। আর পালন করতে না পারার কারণে বল- আমরা আপনার কাছে ক্ষমা চাই। আমরা বিশ্বাস করি একদিন আপনার কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে। আমরা আশা করি সেদিন এ অক্ষমতার দরুন আপনি আমাদের নিষ্কৃতি দান করবেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে সাহাবীগণকে শিক্ষা দিলেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনও হুকুম আসলে বান্দা হিসেবে আমাদের কর্তব্য সঙ্গে সঙ্গে তা মেনে নেওয়া। তা পালন করার ক্ষমতা আছে কি নেই বা তা পালন করার কী লাভ-লোকসান, সেদিকে ফিরে তাকানো বান্দার কাজ নয়। আল্লাহ যখন হুকুম দিয়েছেন তখন আমার একটাই কাজ সঙ্গে সঙ্গে সে হুকুম পালনে প্রস্তুত হয়ে যাওয়া। সাহাবীগণ তা-ই করলেন। তারা সঙ্গে সঙ্গে তাঁর এ হুকুম পালন করলেন এবং আন্তরিকভাবে এ কথাগুলো উচ্চারণ করলেন।
আল্লাহ তা'আলা তাঁর হুকুম পালনে তাদের এ তৎপরতা ও অকুন্ঠ আনুগত্য প্রকাশের কারণে তাদের প্রতি রাজিখুশি হয়ে গেলেন। সুতরাং তাদের প্রশংসা করে আয়াত নাযিল করলেন-
آمَنَ الرَّسُولُ...
[রাসূল (অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, যা তার ওপর তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে নাযিল করা হয়েছে এবং (তার সাথে) মু'মিনগণও। তারা সকলে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে। (তারা বলে,) আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনও পার্থক্য করি না (যে, কারও প্রতি ঈমান আনব এবং কারও প্রতি আনব না)। এবং তাঁরা বলে, আমরা (আল্লাহ ও রাসূলের বিধানসমূহ মনোযোগ সহকারে) শুনেছি এবং তা (খুশিমনে) পালন করছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার মাগফিরাতের ভিখারী, আর আপনারই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন]।
মনের অনিচ্ছাকৃত ভাবনা ধর্তব্য না হওয়া
সাহাবীগণ যখন এরকম নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রকাশ করলেন, তখন তার পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ তা'আলা তাদের ভার লাঘব করে দিলেন। হাদীছে বলা হয়েছে যে, আগের বিধান রহিত করে দিলেন। অর্থাৎ আগের আয়াতে যে বলা হয়েছিল আল্লাহ তা'আলা মনের গোপন বিষয়েরও হিসাব নেবেন, যা দ্বারা বোঝা যাচ্ছিল- নিজের পক্ষে রোধ করা সম্ভব হয় না—এ জাতীয় যে ওয়াসওয়াসা ও মন্দ চিন্তাভাবনা কখনও কখনও মনের মধ্যে দেখা দেয়, সেজন্যও আল্লাহর দরবারে ধরপাকড় করা হবে, পরের আয়াত দ্বারা তা রহিত করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ সেজন্য ধরপাকড় করা হবে না।
ইরশাদ হয়েছে-
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
আল্লাহ কারও ওপর তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব অর্পণ করেন না।' সুতরাং অনিচ্ছাকৃতভাবে মনের মধ্যে যে ওয়াসওয়াসা ও মন্দ চিন্তাভাবনা এসে পড়ে, তা যেহেতু বান্দার সাধ্যের অতীত, তাই তা থেকে বিরত থাকার হুকুম বান্দাকে দেওয়া হয়নি। হাঁ, বান্দা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অনুচিত চিন্তাভাবনা করে, তবে সেজন্য তাকে অবশ্যই ধরা হবে, যেমনটা এ আয়াতেই এর পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে। কাজেই তা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
বলা যেতে পারে- এ আয়াত দ্বারা আগের আয়াতের ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মনের যে গোপন বিষয় সম্পর্কে হিসাব নেওয়া হবে বলে ওই আয়াতে জানানো হয়েছে, তার মানে ওইসকল অনিচ্ছাকৃত চিন্তাভাবনা নয়, যা ঠেকানোর কোনও ক্ষমতা বান্দার নেই, যেমনটা সাহাবায়ে কিরাম বুঝেছিলেন; বরং এমনসব চিন্তা, যা মানুষ ইচ্ছাকৃত করে থাকে এবং যা ঠেকানোর ক্ষমতাও তাদের আছে। অর্থাৎ মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে ভালো-মন্দ যা-কিছু চিন্তা করতে পারে কিংবা কোনও কাজ করা বা না করার সংকল্প করে, তা যেহেতু বান্দার সাধ্যের ভেতর, তাই এ ব্যাপারে শরী'আতের বিধানও আছে। সে চিন্তা ও সংকল্প শরী'আতসম্মত হলে ছাওয়াব পাবে আর শরী'আতসম্মত না হলে সেজন্য তাকে ধরা হবে।
তো মনের কোন্ গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে ধরা হবে এবং কোনটা ধরা হবে না, তা ব্যাখ্যা করে দেওয়াকেই 'রহিত করা' বলা হয়েছে, যেহেতু এর দ্বারা অনিচ্ছাকৃত চিন্তা শর'ঈ বিধানের আওতা থেকে খারিজ হয়ে গেছে।
এ হাদীছে সাহাবায়ে কিরামের যে দু'আ বর্ণিত হয়েছে তার প্রত্যেকটি বিষয়ের জবাবে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে কবুল করার ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি বিষয় হচ্ছে-
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
[হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দ্বারা যদি কোনও ভুল-ত্রুটি হয়ে যায় তবে সেজন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করো না।]
আল্লাহ তা'আলা এ দু'আও কবুল করেছেন। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأ وَالنِّسْيَان
"নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ও বিস্মৃতিজনিত ভুল ক্ষমা করে দিয়েছেন।" (সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৭২১৯; আত-তাবারানী, আল-মু'জামুস সগীর, হাদীছ নং ৭৬৫: সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২০৪৪; মুসতাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ২৮০১) অর্থাৎ এ জাতীয় ভুল-ত্রুটির কারণে কোনও পাপ হয় না। যেমন ইচ্ছাকৃত নামায কাযা করা কঠিন পাপ। কিন্তু কারও যদি কোনও কারণে নামাযের কথা মনেই না থাকে, ফলে নামায কাযা হয়ে যায়, তবে এজন্য তার কোনও গুনাহ হয় না, যদিও তা পড়ে নিতে হয়। এমনিভাবে কুলি করতে গিয়ে যদি কারও গলার ভেতর পানি চলে যায় কিংবা কোনও শিকারকে গুলি করতে গিয়ে তা কোনও মানুষের গায়ে লেগে যায়, তবে এটা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি। এজন্য তার গুনাহ হবে না, যদিও তার রোযা কাযা করতে হবে এবং গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির বিপরীতে অর্থদণ্ড আদায় করতে হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছটি আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশের শিক্ষাদান করে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে কোনও হুকুম এসে যাওয়ার পর বান্দার কর্তব্য বিনাবাক্যে তা মেনে নেওয়া।
খ. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় সাহাবায়ে কিরাম আখিরাতের জবাবদিহিতার ব্যাপারে কতটা সচেতন ছিলেন। আখিরাতে যাতে জবাবদিহিতা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়, সেজন্য তারা সর্বোচ্চ পর্যায়ে সচেষ্ট থাকতেন। আখিরাতে মুক্তিলাভের আশায় আমাদেরও কর্তব্য অন্তরে সে সচেতনতা জাগ্রত রাখা।
গ. দীন ও শরী'আতের কোনও বিষয়ে অন্তরে খটকা জাগলে কোনও বিজ্ঞ আলেমের কাছে গিয়ে তা নিরসনের চেষ্টা করা উচিত, যেমন সাহাবায়ে কিরাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে তা করেছিলেন।
ঘ. সাহাবীগণ সন্দেহ নিরসনের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে গিয়ে নতজানু হয়ে বসেছেন। এর দ্বারা বোঝা যায় আলেমের কাছে কোনওকিছু জিজ্ঞাসা করার সময় আদব বজায় রাখা উচিত।
ঙ. আল্লাহর হুকুম অকুণ্ঠচিত্তে মেনে নিলে কেবল আখিরাতেই নয়, দুনিয়ায়ও নগদ পুরস্কার পাওয়া যায়। যেমন সাহাবায়ে কিরাম যখন আল্লাহর হুকুম শিরোধার্য করে নিলেন, তখন তাদের প্রশংসায় আয়াত নাযিল হয় এবং তাদের মনের ভার লাঘব করে স্বস্তি ও প্রশান্তি দিয়ে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে তাদের পরকালীন পুরস্কার তো রয়েছেই।
চ. অন্তরে অনিচ্ছাকৃত যে ওয়াসওয়াসা দেখা দেয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে নেই, কারণ তা মাফ। হাঁ, ইচ্ছাকৃত চিন্তাভাবনা ও জল্পনাকল্পনা যাতে কিছুতেই শরী'আতবিরোধী না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। কেননা সে ব্যাপারে ধরা হবে।
তারা এ সমস্যার নিরসনকল্পে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন এবং অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে আরয করলেন যে, আমাদেরকে যে নামায, জিহাদ, রোযা ইত্যাদি বিধানগুলো পালন করতে আদেশ করা হয়েছে, তা পালন করতে তো আমরা সক্ষম। কিন্তু এ আয়াতে যে হুকুম করা হয়েছে তা পালনের ক্ষমতা আমাদের নেই। অর্থাৎ এখন আমাদের উপায় কী?
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বলে তাদেরকে মৃদু তিরস্কার করলেন যে, এটা তো ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের খাসলাত যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনও হুকুম আসলে তারা বলত, আমরা শুনলাম কিন্তু মানলাম না। তোমরাও কি সেরকম বলতে চাও নাকি? বরং তোমরা বল আমরা আপনার আদেশ শুনলাম এবং তা মেনে নিলাম। আর পালন করতে না পারার কারণে বল- আমরা আপনার কাছে ক্ষমা চাই। আমরা বিশ্বাস করি একদিন আপনার কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে। আমরা আশা করি সেদিন এ অক্ষমতার দরুন আপনি আমাদের নিষ্কৃতি দান করবেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে সাহাবীগণকে শিক্ষা দিলেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনও হুকুম আসলে বান্দা হিসেবে আমাদের কর্তব্য সঙ্গে সঙ্গে তা মেনে নেওয়া। তা পালন করার ক্ষমতা আছে কি নেই বা তা পালন করার কী লাভ-লোকসান, সেদিকে ফিরে তাকানো বান্দার কাজ নয়। আল্লাহ যখন হুকুম দিয়েছেন তখন আমার একটাই কাজ সঙ্গে সঙ্গে সে হুকুম পালনে প্রস্তুত হয়ে যাওয়া। সাহাবীগণ তা-ই করলেন। তারা সঙ্গে সঙ্গে তাঁর এ হুকুম পালন করলেন এবং আন্তরিকভাবে এ কথাগুলো উচ্চারণ করলেন।
আল্লাহ তা'আলা তাঁর হুকুম পালনে তাদের এ তৎপরতা ও অকুন্ঠ আনুগত্য প্রকাশের কারণে তাদের প্রতি রাজিখুশি হয়ে গেলেন। সুতরাং তাদের প্রশংসা করে আয়াত নাযিল করলেন-
آمَنَ الرَّسُولُ...
[রাসূল (অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, যা তার ওপর তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে নাযিল করা হয়েছে এবং (তার সাথে) মু'মিনগণও। তারা সকলে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে। (তারা বলে,) আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনও পার্থক্য করি না (যে, কারও প্রতি ঈমান আনব এবং কারও প্রতি আনব না)। এবং তাঁরা বলে, আমরা (আল্লাহ ও রাসূলের বিধানসমূহ মনোযোগ সহকারে) শুনেছি এবং তা (খুশিমনে) পালন করছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার মাগফিরাতের ভিখারী, আর আপনারই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন]।
মনের অনিচ্ছাকৃত ভাবনা ধর্তব্য না হওয়া
সাহাবীগণ যখন এরকম নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রকাশ করলেন, তখন তার পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ তা'আলা তাদের ভার লাঘব করে দিলেন। হাদীছে বলা হয়েছে যে, আগের বিধান রহিত করে দিলেন। অর্থাৎ আগের আয়াতে যে বলা হয়েছিল আল্লাহ তা'আলা মনের গোপন বিষয়েরও হিসাব নেবেন, যা দ্বারা বোঝা যাচ্ছিল- নিজের পক্ষে রোধ করা সম্ভব হয় না—এ জাতীয় যে ওয়াসওয়াসা ও মন্দ চিন্তাভাবনা কখনও কখনও মনের মধ্যে দেখা দেয়, সেজন্যও আল্লাহর দরবারে ধরপাকড় করা হবে, পরের আয়াত দ্বারা তা রহিত করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ সেজন্য ধরপাকড় করা হবে না।
ইরশাদ হয়েছে-
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
আল্লাহ কারও ওপর তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব অর্পণ করেন না।' সুতরাং অনিচ্ছাকৃতভাবে মনের মধ্যে যে ওয়াসওয়াসা ও মন্দ চিন্তাভাবনা এসে পড়ে, তা যেহেতু বান্দার সাধ্যের অতীত, তাই তা থেকে বিরত থাকার হুকুম বান্দাকে দেওয়া হয়নি। হাঁ, বান্দা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অনুচিত চিন্তাভাবনা করে, তবে সেজন্য তাকে অবশ্যই ধরা হবে, যেমনটা এ আয়াতেই এর পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে। কাজেই তা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
বলা যেতে পারে- এ আয়াত দ্বারা আগের আয়াতের ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মনের যে গোপন বিষয় সম্পর্কে হিসাব নেওয়া হবে বলে ওই আয়াতে জানানো হয়েছে, তার মানে ওইসকল অনিচ্ছাকৃত চিন্তাভাবনা নয়, যা ঠেকানোর কোনও ক্ষমতা বান্দার নেই, যেমনটা সাহাবায়ে কিরাম বুঝেছিলেন; বরং এমনসব চিন্তা, যা মানুষ ইচ্ছাকৃত করে থাকে এবং যা ঠেকানোর ক্ষমতাও তাদের আছে। অর্থাৎ মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে ভালো-মন্দ যা-কিছু চিন্তা করতে পারে কিংবা কোনও কাজ করা বা না করার সংকল্প করে, তা যেহেতু বান্দার সাধ্যের ভেতর, তাই এ ব্যাপারে শরী'আতের বিধানও আছে। সে চিন্তা ও সংকল্প শরী'আতসম্মত হলে ছাওয়াব পাবে আর শরী'আতসম্মত না হলে সেজন্য তাকে ধরা হবে।
তো মনের কোন্ গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে ধরা হবে এবং কোনটা ধরা হবে না, তা ব্যাখ্যা করে দেওয়াকেই 'রহিত করা' বলা হয়েছে, যেহেতু এর দ্বারা অনিচ্ছাকৃত চিন্তা শর'ঈ বিধানের আওতা থেকে খারিজ হয়ে গেছে।
এ হাদীছে সাহাবায়ে কিরামের যে দু'আ বর্ণিত হয়েছে তার প্রত্যেকটি বিষয়ের জবাবে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে কবুল করার ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি বিষয় হচ্ছে-
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
[হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দ্বারা যদি কোনও ভুল-ত্রুটি হয়ে যায় তবে সেজন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করো না।]
আল্লাহ তা'আলা এ দু'আও কবুল করেছেন। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأ وَالنِّسْيَان
"নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ও বিস্মৃতিজনিত ভুল ক্ষমা করে দিয়েছেন।" (সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৭২১৯; আত-তাবারানী, আল-মু'জামুস সগীর, হাদীছ নং ৭৬৫: সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২০৪৪; মুসতাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ২৮০১) অর্থাৎ এ জাতীয় ভুল-ত্রুটির কারণে কোনও পাপ হয় না। যেমন ইচ্ছাকৃত নামায কাযা করা কঠিন পাপ। কিন্তু কারও যদি কোনও কারণে নামাযের কথা মনেই না থাকে, ফলে নামায কাযা হয়ে যায়, তবে এজন্য তার কোনও গুনাহ হয় না, যদিও তা পড়ে নিতে হয়। এমনিভাবে কুলি করতে গিয়ে যদি কারও গলার ভেতর পানি চলে যায় কিংবা কোনও শিকারকে গুলি করতে গিয়ে তা কোনও মানুষের গায়ে লেগে যায়, তবে এটা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি। এজন্য তার গুনাহ হবে না, যদিও তার রোযা কাযা করতে হবে এবং গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির বিপরীতে অর্থদণ্ড আদায় করতে হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছটি আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশের শিক্ষাদান করে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে কোনও হুকুম এসে যাওয়ার পর বান্দার কর্তব্য বিনাবাক্যে তা মেনে নেওয়া।
খ. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় সাহাবায়ে কিরাম আখিরাতের জবাবদিহিতার ব্যাপারে কতটা সচেতন ছিলেন। আখিরাতে যাতে জবাবদিহিতা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়, সেজন্য তারা সর্বোচ্চ পর্যায়ে সচেষ্ট থাকতেন। আখিরাতে মুক্তিলাভের আশায় আমাদেরও কর্তব্য অন্তরে সে সচেতনতা জাগ্রত রাখা।
গ. দীন ও শরী'আতের কোনও বিষয়ে অন্তরে খটকা জাগলে কোনও বিজ্ঞ আলেমের কাছে গিয়ে তা নিরসনের চেষ্টা করা উচিত, যেমন সাহাবায়ে কিরাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে তা করেছিলেন।
ঘ. সাহাবীগণ সন্দেহ নিরসনের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে গিয়ে নতজানু হয়ে বসেছেন। এর দ্বারা বোঝা যায় আলেমের কাছে কোনওকিছু জিজ্ঞাসা করার সময় আদব বজায় রাখা উচিত।
ঙ. আল্লাহর হুকুম অকুণ্ঠচিত্তে মেনে নিলে কেবল আখিরাতেই নয়, দুনিয়ায়ও নগদ পুরস্কার পাওয়া যায়। যেমন সাহাবায়ে কিরাম যখন আল্লাহর হুকুম শিরোধার্য করে নিলেন, তখন তাদের প্রশংসায় আয়াত নাযিল হয় এবং তাদের মনের ভার লাঘব করে স্বস্তি ও প্রশান্তি দিয়ে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে তাদের পরকালীন পুরস্কার তো রয়েছেই।
চ. অন্তরে অনিচ্ছাকৃত যে ওয়াসওয়াসা দেখা দেয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে নেই, কারণ তা মাফ। হাঁ, ইচ্ছাকৃত চিন্তাভাবনা ও জল্পনাকল্পনা যাতে কিছুতেই শরী'আতবিরোধী না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। কেননা সে ব্যাপারে ধরা হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
