আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
১- ঈমানের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৭৬
আন্তর্জাতিক নং: ৯৫-১
৪১. যে কাফির ব্যক্তি ’لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ’ বলল, তাকে হত্যা করা হারাম
১৭৬। কুতায়বা ইবনে সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনে রুমহ (রাহঃ) ......... মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন, যদি আমি কোন কাফিরের সম্মুখীন হই এবং সে আমার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়, তার তলোয়ার দ্বারা আমার একটি হাত উড়িয়ে দেয়, এরপর কোন গাছের আড়ালে গিয়ে বলে আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসলাম গ্রহণ করলাম। তা হলে ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ কথা বলার পরও আমি কি তাকে কতল করতে পারি? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তাকে হত্যা করো না। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে আমার একটি হাত কেটে ফেলে এ কথা বলেছে, তবুও কি আমি তাকে হত্যা করব না? তিনি বললেনঃ না, হত্যা করতে পারবে না। যদি তুমি তাকে হত্যা কর (তবে) এ হত্যার পূর্বে তোমার যে অবস্থান ছিল সে ব্যক্তি সে স্থানে পৌছবে এবং কালিমা পড়ার আগে সে ব্যক্তি যে অবস্থানে ছিল তুমি সে স্থানে পৌছবে।
باب تَحْرِيمِ قَتْلِ الْكَافِرِ بَعْدَ أَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رُمْحٍ، - وَاللَّفْظُ مُتَقَارِبٌ - أَخْبَرَنَا اللَّيْثُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ الْخِيَارِ، عَنِ الْمِقْدَادِ بْنِ الأَسْوَدِ، أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ لَقِيتُ رَجُلاً مِنَ الْكُفَّارِ فَقَاتَلَنِي فَضَرَبَ إِحْدَى يَدَىَّ بِالسَّيْفِ فَقَطَعَهَا . ثُمَّ لاَذَ مِنِّي بِشَجَرَةٍ فَقَالَ أَسْلَمْتُ لِلَّهِ . أَفَأَقْتُلُهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بَعْدَ أَنْ قَالَهَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَقْتُلْهُ " . قَالَ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ قَدْ قَطَعَ يَدِي ثُمَّ قَالَ ذَلِكَ بَعْدَ أَنْ قَطَعَهَا أَفَأَقْتُلُهُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَقْتُلْهُ فَإِنْ قَتَلْتَهُ فَإِنَّهُ بِمَنْزِلَتِكَ قَبْلَ أَنْ تَقْتُلَهُ وَإِنَّكَ بِمَنْزِلَتِهِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ كَلِمَتَهُ الَّتِي قَالَ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক হাদীছ। কালেমা পাঠ করার দ্বারা আল্লাহ তাআলার কাছে মানুষ কত মর্যাদাবান হয়ে যায়, হাদীছটি দ্বারা তা অনুভব করা যায়। এমনিভাবে কোনও কালেমা পাঠকারী ব্যক্তিকে হত্যা করা কত গুরুতর অপরাধ, তাও স্পষ্ট বোঝা যায়, যদিও সে কালেমা পাঠ করে কুফরের পথে যুদ্ধরত অবস্থায় এবং বাহ্যত মুসলিম যোদ্ধার হাতে প্রাণ হারানোর আশঙ্কায়। এ হাদীছের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত মিকদাদ রাযি. এমন কোনও ব্যক্তিকে হত্যা করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, যে নিজ তরবারির আঘাতে কোনও মুসলিম যোদ্ধার হাত ছিন্ন করে ফেলল, তারপর পাল্টা আঘাতের ভয়ে সে কোনও গাছের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে বলে উঠল, আমি আল্লাহর জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছি। এ অবস্থায় সেই মুসলিম যোদ্ধা ওই ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারবে কি না।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কার নিষেধ করে দিলেন যে, তাকে হত্যা করবে না। ওই ব্যক্তি যে তার একটি হাত কেটে ফেলেছে, এই অজুহাত দেখানোর পরও তিনি তাকে হত্যার বৈধতা দিলেন না। বরং সতর্কবাণী শোনালেন-
فإن قتلته فإنه بمنزلتك قبل أن تقتله، وإنك بمنزلته قبل أن يقول كلمته التي قال
কেননা তুমি যদি তাকে হত্যা কর, তবে সে তো (ইসলাম ঘোষণা দ্বারা) তোমার ওই স্তরে চলে এসেছিল, যে স্তরে তুমি তাকে হত্যা করার আগে ছিলে। আর তুমি চলে যাবে তার স্তরে, যেখানে সে এ কথা বলার আগে ছিল'। ইমাম নববী রহ. বলেন, فإنه بمنزلتك (তোমার ওই স্তরে চলে এসেছিল)- এর অর্থ ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেওয়ার পর সে প্রাণের নিরাপত্তা লাভ করেছিল, সে মুসলিমরূপেই বিবেচ্য ছিল। إنك بمنزلته (তুমি চলে যাবে তার স্তরে)- এর অর্থ তার ওয়ারিশদের জন্য কিসাসস্বরূপ তোমাকে হত্যা করা বৈধ হয়ে যাবে। এর অর্থ এমন নয় যে, তুমি তার পূর্ববর্তী কুফরের পর্যায়ে চলে যাবে।
কেউ বলেন, এর অর্থ সে ওইসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যারা কাফেরদের মধ্যে নিজেদের ঈমান গোপন রেখেছিল এবং তাকে তাদের সঙ্গে যুদ্ধে আসতে তারা বাধ্য করেছিল, যেমন তুমি মক্কায় থাকাকালে তোমার ঈমান কাফেরদের কাছে গোপন রাখতে।
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, বুখারী শরীফে এ হাদীছটিতে অতিরিক্ত যে অংশ আছে,তা দ্বারা এ ব্যাখ্যার সমর্থন পাওয়া যায়। তাতে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মিকদাদ রাযি.-কে বলেছিলেন-
إذا كان رجل مؤمن يخفي إيمانه مع قوم كفار، فأظهر إيمانه فقتلته؟ فكذلك كنت أنت تخفي إيمانك بمكة من قبل
“কোনও মুমিন যদি কাফেরদের সঙ্গে থাকা অবস্থায় নিজ ঈমানের কথা গোপন রাখে, তারপর সে তা প্রকাশ করে, তবে কি তুমি তাকে হত্যা করবে? তুমিও তো মক্কায় থাকা অবস্থায় এরকমই ছিলে।'
মোটকথা কারও সম্পর্কে বাহ্যদৃষ্টিতে যদি এরকমও বোঝা যায় যে, সে ঈমানের কথা প্রকাশ করছে প্রাণের ভয়ে, তবুও তাকে হত্যা করা যাবে না। হত্যা করলে তা মহাপাপ বলে গণ্য হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ইসলামগ্রহণ দ্বারা মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। সুতরাং শরীআতসম্মত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা যাবে না।
খ. কাফের অবস্থায় কেউ যদি কোনও মুসলিমের উপর আক্রমণ করে তাকে জখম করে ফেলে আর এ অবস্থায় সে নিজেকে মুমিন বলে ঘোষণা করে, তবে প্রাণভয়ে ঈমান আনার অজুহাতে তাকে হত্যা করা জায়েয হয় না।
গ. বিনা কারণে মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করা মহাপাপ। এরূপ ক্ষেত্রে শরীআতের বিধান হলো কিসাস অর্থাৎ নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশগণ প্রতিশোধস্বরূপ হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড দাবি করতে পারে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কার নিষেধ করে দিলেন যে, তাকে হত্যা করবে না। ওই ব্যক্তি যে তার একটি হাত কেটে ফেলেছে, এই অজুহাত দেখানোর পরও তিনি তাকে হত্যার বৈধতা দিলেন না। বরং সতর্কবাণী শোনালেন-
فإن قتلته فإنه بمنزلتك قبل أن تقتله، وإنك بمنزلته قبل أن يقول كلمته التي قال
কেননা তুমি যদি তাকে হত্যা কর, তবে সে তো (ইসলাম ঘোষণা দ্বারা) তোমার ওই স্তরে চলে এসেছিল, যে স্তরে তুমি তাকে হত্যা করার আগে ছিলে। আর তুমি চলে যাবে তার স্তরে, যেখানে সে এ কথা বলার আগে ছিল'। ইমাম নববী রহ. বলেন, فإنه بمنزلتك (তোমার ওই স্তরে চলে এসেছিল)- এর অর্থ ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেওয়ার পর সে প্রাণের নিরাপত্তা লাভ করেছিল, সে মুসলিমরূপেই বিবেচ্য ছিল। إنك بمنزلته (তুমি চলে যাবে তার স্তরে)- এর অর্থ তার ওয়ারিশদের জন্য কিসাসস্বরূপ তোমাকে হত্যা করা বৈধ হয়ে যাবে। এর অর্থ এমন নয় যে, তুমি তার পূর্ববর্তী কুফরের পর্যায়ে চলে যাবে।
কেউ বলেন, এর অর্থ সে ওইসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যারা কাফেরদের মধ্যে নিজেদের ঈমান গোপন রেখেছিল এবং তাকে তাদের সঙ্গে যুদ্ধে আসতে তারা বাধ্য করেছিল, যেমন তুমি মক্কায় থাকাকালে তোমার ঈমান কাফেরদের কাছে গোপন রাখতে।
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, বুখারী শরীফে এ হাদীছটিতে অতিরিক্ত যে অংশ আছে,তা দ্বারা এ ব্যাখ্যার সমর্থন পাওয়া যায়। তাতে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মিকদাদ রাযি.-কে বলেছিলেন-
إذا كان رجل مؤمن يخفي إيمانه مع قوم كفار، فأظهر إيمانه فقتلته؟ فكذلك كنت أنت تخفي إيمانك بمكة من قبل
“কোনও মুমিন যদি কাফেরদের সঙ্গে থাকা অবস্থায় নিজ ঈমানের কথা গোপন রাখে, তারপর সে তা প্রকাশ করে, তবে কি তুমি তাকে হত্যা করবে? তুমিও তো মক্কায় থাকা অবস্থায় এরকমই ছিলে।'
মোটকথা কারও সম্পর্কে বাহ্যদৃষ্টিতে যদি এরকমও বোঝা যায় যে, সে ঈমানের কথা প্রকাশ করছে প্রাণের ভয়ে, তবুও তাকে হত্যা করা যাবে না। হত্যা করলে তা মহাপাপ বলে গণ্য হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ইসলামগ্রহণ দ্বারা মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। সুতরাং শরীআতসম্মত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা যাবে না।
খ. কাফের অবস্থায় কেউ যদি কোনও মুসলিমের উপর আক্রমণ করে তাকে জখম করে ফেলে আর এ অবস্থায় সে নিজেকে মুমিন বলে ঘোষণা করে, তবে প্রাণভয়ে ঈমান আনার অজুহাতে তাকে হত্যা করা জায়েয হয় না।
গ. বিনা কারণে মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করা মহাপাপ। এরূপ ক্ষেত্রে শরীআতের বিধান হলো কিসাস অর্থাৎ নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশগণ প্রতিশোধস্বরূপ হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড দাবি করতে পারে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: