আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৮৩- তাওহীদ অধ্যায় ও জাহমিয়্যাসহ ভ্রান্ত দলগুলোর অপনোদন
হাদীস নং: ৭০০৪
আন্তর্জাতিক নং: ৭৫১২
৩১৩৮. কিয়ামত দিবসে নবীগন ও অন্যান্যদের সাথে মহান আল্লাহর কথাবার্তা।
৭০০৪। আলী ইবনে হুজর (রাহঃ) ......... আদী ইবনে হাতিম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার প্রতিপালক অতিসত্বর বাক্যালাপ করবেন। তার ও আল্লাহর মাঝখানে কোন দোভাষী থাকবে না। এরপর সে তাকাবে ডান দিকে, তখন তার অতীত আমল ছাড়া সে আর কিছু দেখবে না। আবার তাকাবে বাম দিকে, তখনো অতীত আমল ছাড়া আর কিছু সে দেখবে না। আর সামনে তাকাবে তখন সে জাহান্নামের অবস্থান ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। সুতরাং জাহান্নামকে ভয় কর, এক টুকরো খেজুরের বিনিময়ে হলেও।
বর্ণনাকারী আ'মাশ (রাহঃ) ......... খায়সামা (রাহঃ) থেকে অনুরূপই বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি যদি وَلَوْ بِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ পবিত্র কালেমার বিনিময়েও হলেও-কথাটুকু সংযোগ করেছেন।
বর্ণনাকারী আ'মাশ (রাহঃ) ......... খায়সামা (রাহঃ) থেকে অনুরূপই বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি যদি وَلَوْ بِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ পবিত্র কালেমার বিনিময়েও হলেও-কথাটুকু সংযোগ করেছেন।
باب كَلاَمِ الرَّبِّ عَزَّ وَجَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الأَنْبِيَاءِ وَغَيْرِهِمْ
7512 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ خَيْثَمَةَ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْكُمْ أَحَدٌ إِلَّا سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تُرْجُمَانٌ، فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلَّا مَا قَدَّمَ مِنْ عَمَلِهِ، وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلَّا مَا قَدَّمَ، وَيَنْظُرُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلاَ يَرَى إِلَّا النَّارَ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ، فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ "، قَالَ الأَعْمَشُ: وَحَدَّثَنِي عَمْرُو بْنُ مُرَّةَ، عَنْ خَيْثَمَةَ، مِثْلَهُ، وَزَادَ فِيهِ: «وَلَوْ بِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছের মূল বিষয় দু'টি ক. আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন এবং খ. জাহান্নাম পাপী ব্যক্তির খুব কাছে চলে আসবে, তা থেকে সে পালানোর কোনও পথ পাবে না।
হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বান্দার সঙ্গে কথা বলবেন। নেককারের সঙ্গেও, পাপীর সঙ্গেও। আল্লাহ তাআলার ও বান্দার মাঝখানে কোনও দোভাষী থাকবে না। দোভাষীর প্রয়োজনও হবে না। আল্লাহ তাআলাই সমস্ত ভাষার স্রষ্টা। তিনি সব ভাষাই বোঝেন। আল্লাহ তাআলা বান্দার সঙ্গে কী কথা বলবেন, বিভিন্ন হাদীছে তার কিছু কিছু উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন কাউকে জিজ্ঞেস করবেন সে দুনিয়ায় কোনও সৎকর্ম করেছিল কি না। কারও কাছ থেকে কৈফিয়ত নেবেন সে ক্ষুধার্তকে কেন খাবার দেয়নি। জিজ্ঞেস করবেন আয়ু কী কাজে শেষ করেছে। এরকম বিভিন্ন প্রশ্ন হাশরের ময়দানে তিনি বান্দাকে করবেন। এ কথা জানানোর উদ্দেশ্য উম্মতকে সতর্ক করা, যেন তারা সেদিনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। আর সে প্রস্তুতি হলো পরিপূর্ণরূপে দীনের অনুসরণ করা।
দ্বিতীয় বিষয় হলো জাহান্নামকে হাশরের ময়দানের খুব কাছে নিয়ে আসা হবে। পাপী ব্যক্তি যেদিকেই তাকাবে সেদিকেই জাহান্নাম দেখতে পাবে। সে ডানে, বামে, সামনে ফিরে ফিরে তাকাবে।
ইবন হুবায়রা রহ. বলেন, মানুষ যখন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়, তখন সে সাহায্যের আশায় ডানে-বামে তাকিয়ে থাকে। সম্ভবত এ তাকানোটাও সেরকমই হবে। ইমাম ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, এদিক-ওদিক তাকানোর উদ্দেশ্য এটাও হতে পারে যে, কোনওভাবে পালানো যায় কিনা সেই পথ খুঁজবে। কিন্তু এমন কোনও পথ পাবে না। যে পথ তার নজরে আসবে তা জাহান্নামের দিকেরই পথ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তা থেকে হেফাজত করুন।
তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় বলে দেন যে فاتقوا النار، ولو بشق تمرة (সুতরাং তোমরা জাহান্নাম থেকে আতরক্ষা কর খেজুরের একটি অংশ দিয়ে হলেও)। অর্থাৎ তোমরা সৎকর্মে লিপ্ত হও। সৎকর্মকে জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষার অবলম্বন বানাও। তার মধ্যে বিশেষ একটা সৎকর্ম হলো দান-সদাকা করা। দান-সদাকা দ্বারা আল্লাহ তাআলার ক্রোধ প্রশমিত হয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন إن الصدقة لتطفئ غضب الرب، وتدفع ميتة السوء “নিশ্চয়ই দান-খয়রাত আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে এবং অপমৃত্যু রোধ করে।৩৭২
তাই সাধ্যমত আল্লাহর পথে দান-খয়রাত করা চাই, তা যতটুকুই হোক। এমনকি যদি একটি খেজুরের অর্ধেকও হয়, তাও আল্লাহর পথে খরচ করা উচিত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আমাদের প্রত্যেককেই হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়াতে হবে। সেদিন তিনি আমাদের ইহজগতের কাজকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। অন্তরে সে জিজ্ঞাসাবাদের ভয় রেখে আমাদেরকে ন্যায়ের পথে চলতে হবে।
খ. জাহান্নাম থেকে বাঁচার একটি উপায় হলো আল্লাহর পথে দান-খয়রাত করা। জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য যার যেমন সামর্থ্য দান-খয়রাত করা চাই।
৩৭২. জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৬৬৪; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩৩০৯; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩১৮; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৮০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬৩৪
হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বান্দার সঙ্গে কথা বলবেন। নেককারের সঙ্গেও, পাপীর সঙ্গেও। আল্লাহ তাআলার ও বান্দার মাঝখানে কোনও দোভাষী থাকবে না। দোভাষীর প্রয়োজনও হবে না। আল্লাহ তাআলাই সমস্ত ভাষার স্রষ্টা। তিনি সব ভাষাই বোঝেন। আল্লাহ তাআলা বান্দার সঙ্গে কী কথা বলবেন, বিভিন্ন হাদীছে তার কিছু কিছু উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন কাউকে জিজ্ঞেস করবেন সে দুনিয়ায় কোনও সৎকর্ম করেছিল কি না। কারও কাছ থেকে কৈফিয়ত নেবেন সে ক্ষুধার্তকে কেন খাবার দেয়নি। জিজ্ঞেস করবেন আয়ু কী কাজে শেষ করেছে। এরকম বিভিন্ন প্রশ্ন হাশরের ময়দানে তিনি বান্দাকে করবেন। এ কথা জানানোর উদ্দেশ্য উম্মতকে সতর্ক করা, যেন তারা সেদিনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। আর সে প্রস্তুতি হলো পরিপূর্ণরূপে দীনের অনুসরণ করা।
দ্বিতীয় বিষয় হলো জাহান্নামকে হাশরের ময়দানের খুব কাছে নিয়ে আসা হবে। পাপী ব্যক্তি যেদিকেই তাকাবে সেদিকেই জাহান্নাম দেখতে পাবে। সে ডানে, বামে, সামনে ফিরে ফিরে তাকাবে।
ইবন হুবায়রা রহ. বলেন, মানুষ যখন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়, তখন সে সাহায্যের আশায় ডানে-বামে তাকিয়ে থাকে। সম্ভবত এ তাকানোটাও সেরকমই হবে। ইমাম ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, এদিক-ওদিক তাকানোর উদ্দেশ্য এটাও হতে পারে যে, কোনওভাবে পালানো যায় কিনা সেই পথ খুঁজবে। কিন্তু এমন কোনও পথ পাবে না। যে পথ তার নজরে আসবে তা জাহান্নামের দিকেরই পথ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তা থেকে হেফাজত করুন।
তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় বলে দেন যে فاتقوا النار، ولو بشق تمرة (সুতরাং তোমরা জাহান্নাম থেকে আতরক্ষা কর খেজুরের একটি অংশ দিয়ে হলেও)। অর্থাৎ তোমরা সৎকর্মে লিপ্ত হও। সৎকর্মকে জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষার অবলম্বন বানাও। তার মধ্যে বিশেষ একটা সৎকর্ম হলো দান-সদাকা করা। দান-সদাকা দ্বারা আল্লাহ তাআলার ক্রোধ প্রশমিত হয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন إن الصدقة لتطفئ غضب الرب، وتدفع ميتة السوء “নিশ্চয়ই দান-খয়রাত আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে এবং অপমৃত্যু রোধ করে।৩৭২
তাই সাধ্যমত আল্লাহর পথে দান-খয়রাত করা চাই, তা যতটুকুই হোক। এমনকি যদি একটি খেজুরের অর্ধেকও হয়, তাও আল্লাহর পথে খরচ করা উচিত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আমাদের প্রত্যেককেই হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়াতে হবে। সেদিন তিনি আমাদের ইহজগতের কাজকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। অন্তরে সে জিজ্ঞাসাবাদের ভয় রেখে আমাদেরকে ন্যায়ের পথে চলতে হবে।
খ. জাহান্নাম থেকে বাঁচার একটি উপায় হলো আল্লাহর পথে দান-খয়রাত করা। জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য যার যেমন সামর্থ্য দান-খয়রাত করা চাই।
৩৭২. জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৬৬৪; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩৩০৯; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩১৮; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৮০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬৩৪
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: