মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

৩. তাক্বদীরের অধ্যায়

হাদীস নং: ৪২
আন্তর্জাতিক নং: ৬৬৬৮
তাক্বদীরের অধ্যায়
(৫) পরিচ্ছেদঃ তাকদীর অস্বীকারকারীদের পরিত্যাগ করা এবং তাদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করা সংক্রান্ত পরিচ্ছেদ
(৪২) আমর ইবন শু'আইব তাঁর পিতা থেকে, এবং তাঁর পিতা তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। একদা রাসূল (ﷺ) জনসমক্ষে উপস্থিত হন। ঐ সময় লোকজন তাকদীর বিষয়ে কথাবার্তা (বা তর্ক-বিতর্ক) করছিল। বর্ণনাকারী বলেন, (লোকজনের কথাবার্তা শুনে) রাসূল (ﷺ)-এর চেহারা মুবারকে ক্রোধের চিহ্ন ফুটে ওঠে। যেন তাঁর চেহারায় আনারের দানার ন্যায় বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে। (এমতাবস্থায়) তিনি ইরশাদ করলেন, তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর কিতাবের এক অংশকে অন্য অংশের দ্বারা ঘায়েল করার চেষ্টা করছো! তোমাদের পূর্ববর্তীগণ এই (কাজ) করেই ধ্বংস হয়েছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রাসূল কোন মজলিসে উপস্থিত আছেন, অথচ আমি সেখানে উপস্থিত হতে পারি নি এমন মজলিসের জন্য সর্বদা আমার আক্ষেপ হত, কিন্তু এই মজলিসের জন্য আক্ষেপ হয় নি। (ইবন্ মাজাহ্ ও তিরমিযী। বুসরী বলেন, ইবন্ মাজাহর সনদ সহীহ।)
كتاب القدر
(5) باب في هجر المكذبين بالقدر والتغليظ عليهم
(42) وعن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده قال خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم والناس يتكلمون في القدر وكأنما تفقأ 1 في وجهه حب الرمان من الغضب، قال فقال لهم مالكم تضربون كتاب الله بعضه ببعض، بهذا هلك من كان قبلكم، قال فما غَبَطْتُ 2 نفسي بمجلس فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم لم أشهده بما غبطت نفسي بذلك المجلس أني لم أشهده

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ভাগ্যলিপি ও কদরের সমস্যা নিঃসন্দেহে কঠিন ও নাজুক ধরনের। তাই যদি কোন মুমিন ব্যক্তি এ সমস্যার গুঢ় রহস্য অনুধাবন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি যেন কোনরূপ তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত না হন। বরং তিনি যেন তার মনকে এভাবে প্রবোধ প্রদান করেন যে, আল্লাহর সত্যবাদী নবী এ সমস্যা সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছেন তার উপর ঈমান আনা কর্তব্য।

তাকদিরের মসলা আল্লাহর সিফাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধায় তা খুব কঠিন ও নাজুক হওয়া খুবই স্বাভাবিক। দুনিয়ার অনেক জিনিস এবং রহস্য সম্পর্কে আমাদের অনেকের জ্ঞান সীমিত। তাই নবী করীম (ﷺ) যা বর্ণনা করেছে তা অনুধাবন করতে যদি কেহ ব্যর্থ হন, তাহলে তার জন্য সঠিক পন্থা হল, নিজের অক্ষমতার স্বীকৃতি প্রদান করে রাসূলের বক্তব্যের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

যেহেতু তাকদীর সম্পর্কে আলোচনাকারীগণ আল্লাহর রাসূলের নিকট থেকে প্রত্যক্ষভাবে তালিম ও তরবিয়াত হাসিল করতেন তাই তাদেরকে এ ধরনের ভুল করতে দেখে তাদের উপর সম্ভবতঃ রাগান্বিত হয়েছিলেন।

তোমাদের পূর্বের উম্মতগণ যখন এ সম্পর্কে তর্কবিতর্ক করেছে তখন তারা হালাক হয়েছে বলে আল্লাহর রাসূল যে ইরশাদ করেছেন তার অর্থ হল, তারা গোমরাহীতে লিপ্ত হয়েছে। কুরআন ও হাদীসে বিভিন্নস্থানে গোমরাহী অর্থে 'হালাকাত' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আল্লাহর রাসূলের ইরশাদের অর্থ হল, পূর্ববর্তী উম্মতগণ যখন তকদীর সম্পর্কে তর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে তখন তাদের গোমরাহী শুরু হয়েছে। ইতিহাস এ সাক্ষ্য দান করে যে, এ সমস্যা থেকেই উম্মতে মোহাম্মদীর এতেকাদী গুমরাহী শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, যদি কেহ মুমিন ব্যক্তির ন্যায় তকদিরের উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করার পর শুধু অন্তরের প্রশান্তির জন্য তাকদীর সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তাহলে তাতে কোন দোষ নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান