মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

১. একত্ববাদ ও দীনের মূল ভিত্তিসমূহের আলোচনা

হাদীস নং: ২১
আন্তর্জাতিক নং: ২২৬৭৫
একত্ববাদ ও দীনের মূল ভিত্তিসমূহের আলোচনা
(৪) পরিচ্ছেদঃ একত্ববাদী মু’মিনগণের প্রাপ্য নিয়ামতরাজি ও পুরষ্কার এবং মুশরিকদের জন্য নির্ধারিত ভয়াবহ তিরষ্কার ও শাস্তি প্রসঙ্গে
(২১) উবাদা বিন আস-সামিত (রা) থেকে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি এই মর্মে সাহ্ম্য প্রদান করবে যে, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ বা উপাস্য নেই, তার কোন শরীক বা অংশীদার নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল; আর ঈসা (আ) আল্লাহর বান্দা, রাসূল ও কালিমাহ যা তিনি মরিয়ম (আ)-এর কাছে প্ররণ করেছিলেন এবং তিনি (ঈসা আ) আল্লাহরই রূহ (বা পুণ্যাত্মা পুরুষ) এবং জান্নাত সত্য, নরক সত্য, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা তাকে তার আমল অনুসারে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।(অন্য বর্ণনায়) আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে আটটি তোরণের যেটি তার পছন্দ, সেই তোরণের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য)
كتاب التوحيد
(4) باب فيما جاء في نعيم الموحدين وثوابهم ووعيد المشركين وعقابهم
(21) عن عبادة بن الصامت رضي الله عنه عن رسول الله صلي الله عليه وآله وسلم
قال من شهد أن لا اله الا الله وحده لا شريك له وان محمدا عبده ورسوله وان عيسى عبد الله ورسوله وكلمته (1) القاها الي مريم وروح (2) منه وان الجنه حق والنار حق ادخله الله تبارك وتعالى الجنة على ما كان من عمل (3) وفي رواية ادخلة الله تبارك وتعالى الجنه من ابوابها الثمانية من ايها شاء دخل

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে ইসলামের বিশেষ কয়েকটি আকীদা উল্লেখ করে জানানো হয়েছে যে, এগুলো সত্য বলে যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাত দান করবেন। তার মধ্যে সর্বপ্রথম আকীদা হল আল্লাহ তা'আলার তাওহীদ ও একত্ববাদ।

তাওহীদ ও একত্ববাদে বিশ্বাসের সারকথা
আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছ আমাদেরকে যে শিক্ষাদান করেছে তার সারকথা হল, তিনি তাঁর সত্তা ও গুণাবলীতে এক ও অদ্বিতীয়। সমস্ত কায়েনাত ও মহাবিশ্বের তিনিই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। তিনি যাবতীয় ভালোর সৃষ্টিকর্তা ও মন্দেরও সৃষ্টিকর্তা। তাঁর কোনও শুরু নেই, কোনও শেষও নেই। তিনি কারও জনক নন, জাতকও নন। তিনি কোনও বিষয়ে কারও মুখাপেক্ষী নন, কিন্তু সকলেই সকল বিষয়ে তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি অনন্য, অনুপম, অতুলনীয়।

তিনি সকলের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও রক্ষাকর্তা। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা ও সর্বশক্তিমান। তিনি সার্বভৌম, নিরঙ্কুশ ইচ্ছাধিকারী এবং তিনি হায়াত, মাওত ও রিযিকের মালিক। সকল সৃষ্টির যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণ তাঁরই এখতিয়ারে। তিনি যার কল্যাণ করেন, কেউ তার অকল্যাণ করতে পারে না এবং তিনি কারও অকল্যাণের ইচ্ছা করলে কেউ তা রোধ করার ক্ষমতা রাখে না। এসকল গুণে তাঁর কোনও শরীক নেই।

যেহেতু যাবতীয় ইষ্ট ও অনিষ্টের তিনিই মালিক, তাই ইবাদতেরও একমাত্র হকদার তিনিই। তিনিই একমাত্র মা'বূদ। সুতরাং ইবাদত-বন্দেগীতে তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক করার কোনও অবকাশ নেই। তিনি তাঁর সত্তায়ও এক, গুণাবলীতেও এক এবং ইবাদত-বন্দেগীর অধিকারেও এক। এর কোনওটিতে তাঁর কোনও শরীক ও অংশীদার নেই। এটাই তাওহীদের সারকথা। কারও মুমিন ও মুসলিম হওয়ার জন্য এটাই সকল বিশ্বাসের মূল। এটা ইসলামের সর্বপ্রধান আকীদা।

হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের সাক্ষ্যদান
এ হাদীছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে বলা হয়েছে যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। কারও মুমিন হওয়ার জন্য এ সাক্ষ্য দেওয়া জরুরি যে, আল্লাহ তা'আলা মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠানোর যে রত্ন-শৃঙ্খল চালু করেছিলেন, তার সর্বশেষ রত্ন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্তা। তাঁর প্রতি সর্বশেষ আসমানী কিতাব কুরআন মাজীদ নাযিল করা হয়েছে। তাঁকে সর্বশেষ দীন 'ইসলাম' দিয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে মানুষকে যা-কিছু জানিয়েছেন তা সবই সত্য।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যা-কিছু জানিয়েছেন তার মধ্যে বিশেষভাবে এ কথাটিও রয়েছে যে, তিনিই সর্বশেষ নবী, তাঁর পরে আর কোনও নবী ও রাসূল আসবে না এবং নতুন কোনও কিতাবও অবতীর্ণ হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের দোজাহানের মুক্তি ও সফলতা তাঁর নিয়ে আসা দীনের অনুসরণ করার উপরই নির্ভর করে।

হাদীছটিতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত ও রিসালাতের সাক্ষ্যদানের পাশাপাশি তিনি যে আল্লাহ তা'আলার একজন 'আবদ ও বান্দা, সে সাক্ষ্যেরও শর্ত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ‍ জান্নাত লাভ করতে হলে এ সাক্ষ্য দেওয়াও জরুরি যে, তিনি আল্লাহ তা'আলার বান্দাও বটে। সমস্ত নবী-রাসূলই আল্লাহ তা'আলার বান্দা ছিলেন এবং তাঁদের প্রত্যেকেই মানুষ ছিলেন।

কালেমায়ে তায়্যিবার সাক্ষ্যদানের মধ্যে বিশেষভাবে বান্দা হওয়ার বিষয়টিকে শামিল রাখার দ্বারা তাওহীদী আকীদার হেফাজতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভক্তি-শ্রদ্ধার বাড়াবাড়ি অনেক সময় মানুষকে তাওহীদের গণ্ডি থেকে খারিজ করে শিরকের সীমারেখার মধ্যে পৌছিয়ে দেয়।

খৃষ্টান সম্প্রদায় হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ক্ষেত্রে এরকম বাড়াবাড়ির শিকার হয়েছে। তারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে স্বয়ং আল্লাহ বা তাদের কথিত ঈশ্বরের ত্রি-সত্তার একজন সাব্যস্ত করেছে, অথচ তিনিও একজন মানুষ ছিলেন। এমনকি মুসলিম জাতির মধ্যেও এক শ্রেণীর লোক রয়েছে, যারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি এমন এমন গুণ আরোপ করে, যা আল্লাহ তা'আলার জন্যই খাস কোনও মানুষের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না।

প্রকৃত মুমিনগণ যাতে এরূপ বাড়াবাড়ির শিকার না হয়, তাই কুরআন মাজীদে বারবার স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, তিনি যেমন একজন রাসূল ছিলেন, তেমনি একজন মানুষ এবং আল্লাহ তা'আলার একজন বিশিষ্ট বান্দাও ছিলেন।

প্রকৃতপক্ষে আবদিয়্যাত ও বন্দেগীর মধ্যেই মানুষের সত্যিকারের মর্যাদা নিহিত। আবদিয়্যাতের ধারা পরিক্রমায় যে যত পরিপূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়, মানুষ হিসেবে তার মর্যাদাও তত উন্নীত হয়। এ ধারায় নবী-রাসূলগণের অধিষ্ঠান ছিল সর্বোচ্চ ধাপে। সুতরাং তাঁরা একইসঙ্গে যেমন নবী-রাসূল, তেমনি সর্বোচ্চ স্তরের বান্দা ও সর্বাপেক্ষা পরিপূর্ণ মানুষও বটে।

কাজেই মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, তেমনি তিনি আল্লাহ তা'আলার সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দা এবং সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম মানুষ। তাঁর সম্পর্কে আমাদের এরকমই বিশ্বাস রাখতে হবে। তাঁকে তাঁর এ অবস্থান থেকে আরও ঊর্ধ্বে উঠিয়ে ঐশ্বরিক মর্যাদায় আসীন করা যাবে না। সেটা শির্ক এবং তাঁর রেখে যাওয়া শিক্ষার পরিপন্থী। তিনি ইরশাদ করেন
لا تطروني، كما أطرت النصارى ابن مريم، فإنّما أنا عبده، فقولوا: عبد الله ورسوله
“তোমরা আমার প্রশংসায় অতিরঞ্জন করো না, যেমন নাসারা সম্প্রদায় ঈসা ইবন মারয়ামের প্রশংসায় অতিরঞ্জন করেছে। আমি তো আল্লাহর বান্দা। সুতরাং তোমরা বলবে- আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।

হযরত ‘ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বিশ্বাস
এ হাদীছে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের চারটি বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে।
ক. তিনি আল্লাহর বান্দা;
খ. তিনি আল্লাহর রাসূল;
গ. তিনি আল্লাহর কালেমা, যাকে হযরত মারয়াম আলাইহাস সালামের প্রতি পাঠানো হয়েছে এবং
ঘ. তিনি আল্লাহর নিকট থেকে আগত রূহ।
কুরআন মাজীদেও ইরশাদ হয়েছে-
{إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَلَا تَقُولُوا ثَلَاثَةٌ انْتَهُوا خَيْرًا لَكُمْ إِنَّمَا اللَّهُ إِلَهٌ وَاحِدٌ سُبْحَانَهُ أَنْ يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَكَفَى بِاللَّهِ وَكِيلًا (171)} [النساء: 171]
‘মারয়ামের পুত্র ঈসা মাসীহ তো আল্লাহর রাসূল মাত্র এবং আল্লাহর এক কালিমা, যা তিনি মারয়ামের কাছে পাঠিয়েছিলেন। আর ছিলেন এক রূহ, যা তাঁরই পক্ষ হতে (সৃষ্টি হয়ে) ছিল। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনো এবং বলো না (আল্লাহ) ‘তিন'। এর থেকে নিবৃত্ত হও। এরই মধ্যে তোমাদের কল্যাণ। আল্লাহ তো একই মাবুদ। তাঁর কোনও পুত্র থাকবে, এর থেকে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে, তা তাঁরই। (সকলের) তত্ত্বাবধানের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।- নিসাঃ ১১১

হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম একজন মানুষ ছিলেন
হাদীছটিতে সর্বপ্রথম বলা হয়েছে তিনি আল্লাহর বান্দা, যেমন অন্যান্য নবী রাসূলগণও আল্লাহ তা'আলার বান্দা ছিলেন। এর দ্বারা খৃষ্টসম্প্রদায়ের বিশ্বাস খণ্ডন হয়ে যায়। তারা তাঁকে আল্লাহর বান্দা মানে না। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি স্বয়ং ঈশ্বর বা ঈশ্বরের ত্রি-সত্তার একজন। অথচ কুরআন মাজীদে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের নিজের দাবি বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন- إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ (আমি আল্লাহর বান্দা)”।
কুরআন মাজীদে অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে
{لَنْ يَسْتَنْكِفَ الْمَسِيحُ أَنْ يَكُونَ عَبْدًا لِلَّهِ وَلَا الْمَلَائِكَةُ الْمُقَرَّبُونَ وَمَنْ يَسْتَنْكِفْ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيَسْتَكْبِرْ فَسَيَحْشُرُهُمْ إِلَيْهِ جَمِيعًا } [النساء: 172]
"মাসীহ কখনও আল্লাহর বান্দা হওয়াকে লজ্জার বিষয় মনে করে না এবং নিকটতম ফিরিশতাগণও (এতে লজ্জাবোধ করে) না। যে-কেউ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে লজ্জাবোধ করবে ও অহমিকা প্রদর্শন করবে (সে ভালো করে জেনে রাখুক), আল্লাহ তাদের সকলকে অবশ্যই তাঁর নিকট একত্র করবেন।” - নিসাঃ ১১২
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম নিজেও নিজেকে আল্লাহ তা'আলার একজন নবী ও তাঁর গোলামই বলতেন। যেমন ইন্‌জীলে আছে, 'তিনি আল্লাহর গোলাম হিসেবে তাঁরই ইবাদতকারী' (ইওহোন্না ৪ : ১২)।
আরও আছে, 'তিনি নিজের থেকে কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না; বরং তিনি আল্লাহর আজ্ঞাবহ ও তাঁর ইচ্ছা পালনকারী মাত্র' (ইওহোন্না ৫ : ১৯, ৩০, ৩৬; ৭: ১৬, ১৭)।
ইন্‌জীলে হাজারও বিকৃতি সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত এরকম অনেক উক্তি পাওয়া যায়, যা দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণ হয় যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম নিজেকে আল্লাহ তা'আলার একজন বান্দাই মনে করতেন। ঈসা আলাইহিস সালামের শিষ্যদের বিশ্বাসও এরকমই ছিল। যেমন তাঁর প্রধান শিষ্য পিতর তার এক ভাষণে বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষদের আল্লাহ এই কাজের দ্বারা নিজের গোলাম ঈসার মহিমা প্রকাশ করেছেন (প্রেরিত ৩ : ১৩)।
পিতর তার আরেক ভাষণে বলেন, আপনাদের প্রত্যেককে খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই আল্লাহ তাঁর গোলাম ঈসাকে ঠিক করে প্রথমে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন (প্রেরিত ৩ : ২৬)।
মূলত এটাই ছিল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর শিষ্যবর্গের শিক্ষা। পরবর্তীকালে সেন্ট পৌল নামক খৃষ্টবিরোধী এক ইহুদী খৃষ্টধর্মের ছদ্মাবরণে এ আকীদাটি বিকৃত করে ফেলেছে। সেই খৃষ্টধর্মের লেবাসধারী হয়ে খৃষ্টসম্প্রদায়কে এই সঠিক আকীদা থেকে সরিয়ে ত্রিত্ববাদের শিরকী আকীদার মধ্যে নিমজ্জিত করেছে। বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার জন্য দেখুন- খৃষ্টধর্মের স্বরূপ, খৃষ্টধর্ম না পৌলবাদ"। খৃষ্টবাদ বিকৃতি : তথ্য ও প্রমাণ প্রভৃতি রচনাবলী।

হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম একজন রাসূল ছিলেন
দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে তিনি আল্লাহর রাসূল। এর দ্বারা ইহুদীদের ধারণা খণ্ডন করা হয়েছে। তারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে নবী বলে তো স্বীকার করেই না; বরং তাঁর ও তাঁর মহিয়সী মায়ের সম্পর্কে ন্যাক্কারজনক অপবাদ দিয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ছিলেন বনী ইসরাঈলের প্রতি প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁকে নির্দিষ্টভাবে এ সম্প্রদায়ের কাছেই পাঠানো হয়েছিল। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
{وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَابَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ فَلَمَّا جَاءَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَذَا سِحْرٌ مُبِينٌ} [الصف: 6]
এবং স্মরণ কর সেই সময়কে, যখন ঈসা ইবন মারয়াম বলেছিল, হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল হয়ে এসেছি, আমার পূর্বে যে তাওরাত (নাযিল হয়ে-) ছিল, তার সমর্থনকারীরূপে এবং সেই রাসূলের সুসংবাদদাতারূপে, যিনি আমার পরে আসবেন এবং যার নাম হবে আহমাদ।- সাফঃ ০৬
যেহেতু কুরআন মাজীদের বর্ণনা দ্বারা আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে জানতে পেরেছি যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম একজন রাসূল ছিলেন এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাঁর রাসূল হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কারভাবে আমাদের জানিয়েছেন, তখন তাঁকে রাসূল বলে বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্যকর্তব্য। তাঁকে রাসূল না মানলে প্রকারান্তরে কুরআন মাজীদের বক্তব্য অস্বীকার করা হয়। তাছাড়া এমনিতেও নবী-রাসূলগণের মধ্যে কাউকে সত্য বলে স্বীকার করা ঈমানের দাবী এবং কাউকে অস্বীকার করা ঈমানের পরিপন্থী। আল্লাহ তা'আলা যাদেরকে নবী বলে আমাদের জানিয়েছেন তাদের সকলকেই নবী বলে স্বীকার করা ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ।

'ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কালেমা ছিলেন' এ কথার অর্থ
তৃতীয়ত বলা হয়েছে- وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ , (তাঁর কালেমা, যা তিনি মারয়ামের প্রতি পাঠিয়েছিলেন)। 'কালেমা'-এর আভিধানিক অর্থ শব্দ। এখানে কালেমা দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে, সে সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। কারও মতে এর দ্বারা كن শব্দের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বোঝানো হচ্ছে যে, সাধারণভাবে মানবশিশু যেমন পিতা-মাতার মাধ্যমে অস্তিত্বলাভ করে থাকে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম ঠিক সেভাবে হয়নি; তাঁর জন্ম হয়েছিল আল্লাহ তা'আলার كن (হয়ে যাও) আদেশের দ্বারা। তাই তাঁকে আল্লাহর কালেমা (অর্থাৎ আল্লাহর 'হয়ে যাও' আদেশ দ্বারা জন্মলাভকারী) বলা হয়েছে।
কেউ বলেন, এখানে কালেমা দ্বারা নিদর্শন বোঝানো উদ্দেশ্য। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম ছিল আল্লাহ তা'আলার কুদরতের এক বিশেষ নিদর্শন। আল্লাহ তা'আলা তাঁর মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, মানবশিশুর অস্তিত্বদানের জন্য তিনি কোনওকিছুরই মুখাপেক্ষী নন। তিনি পিতা-মাতা ছাড়াও মানুষের অস্তিত্ব দান করতে পারেন, যেমন আদম আলাইহিস সালামকে পিতা-মাতা ছাড়াই সৃষ্টি করেছিলেন। আবার পিতা ছাড়া কেবল মায়ের দ্বারাও করতে পারেন, যেমন হযরত মারয়াম আলাইহিস সালামের গর্ভে ঈসা মাসীহের অস্তিত্বদান করেছেন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
إِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِنْدَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ ‘আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মত। আল্লাহ তাঁকে মাটি হতে সৃষ্টি করেন, তারপর তাকে বলেন, ‘হয়ে যাও'। ফলে সে হয়ে যায়।
সারকথা, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা'আলার সৃজনক্ষমতার বিশেষ নিদর্শন হওয়ায় তাঁকে আল্লাহর কালেমা বা নিদর্শন নামে অভিহিত করা হয়েছে।
এমনিভাবে আল্লাহ তা'আলা তাঁকে দোলনায় থাকা অবস্থায় কথা বলার শক্তি দিয়েছিলেন, তাঁর হাতে মৃতদের জীবিত করতেন, তিনি হাত বুলিয়ে দিলে জন্মান্ধ ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তি লাভ করত। এসবই আল্লাহ তা'আলার কুদরতের নিদর্শন। তাই তিনি কালিমাতুল্লাহ বা আল্লাহর নিদর্শন।

চতুর্থত হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর রূহ বলা হয়েছে। এর ব্যাখ্যা সম্পর্কেও উলামায়ে কেরামের বিভিন্ন অভিমত আছে। কারও মতে তাঁর জন্মগ্রহণ যেহেতু অন্যান্য মানবশিশুর মত স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি; বরং আল্লাহ তা'আলা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের রূহ সরাসরি তাঁর মাতৃগর্ভে ফুঁকে দিয়েছিলেন, তাই বিশেষ সম্মানার্থে তাঁকে আল্লাহর রূহ নামে অভিহিত করা হয়েছে, যেমন সম্মানার্থে বিভিন্ন বস্তুকে আল্লাহ তা'আলার নামের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়ে থাকে- মসজিদকে বলা হয় আল্লাহর ঘর। এমনিভাবে হযরত খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ রাযি.-কে আল্লাহর তরবারি এবং হযরত আলী রাযি.-কে আল্লাহর সিংহ বলা হয়েছে এ অর্থেই।
কারও মতে ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর রূহ সাব্যস্ত করা হয়েছে এ হিসেবে যে, তিনি আসমানী শিক্ষা দ্বারা মানুষের মৃত আত্মায় জীবন সঞ্চার করতেন। যেন তিনি ছিলেন তাঁর জাতির আধ্যাত্মিক জীবনের রূহ। এ বিবেচনায় কুরআন মাজীদকেও রূহ বলা হয়ে থাকে, যেহেতু তার মাধ্যমে মানুষের মৃত আত্মায় জীবন সঞ্চার হয়।
কেউ বলেন, আল্লাহ তা'আলা তাঁকে যেহেতু এই ক্ষমতা দিয়েছিলেন যে, তিনি যখন কোনও মৃতকে বলতেন আল্লাহর ইচ্ছায় জীবিত হও, তখন সে জীবিত হয়ে যেত, তাই তাঁকে আল্লাহর রূহ বলা হয়েছে।

জান্নাত ও জাহান্নামের সত্যতা
জান্নাত ও জাহান্নামের সত্যতায় বিশ্বাস রাখা ইসলামের মূল আকীদা-বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। জান্নাত অফুরন্ত সুখ-শান্তির স্থায়ী নিবাস। জাহান্নাম অশেষ দুঃখ-কষ্টের স্থায়ী ঠিকানা। নেককার মুমিনগণ আখিরাতে তাদের সৎকর্মের পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতে প্রবেশ করবে। কাফের-মুশরিকদেরকে তাদের পাপের শাস্তিস্বরূপ জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এ উভয় শ্রেণী আপন আপন ঠিকানায় থাকবে অনন্তকাল। যেসকল মুমিন পাপকর্ম করে থাকে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে যদি ক্ষমা না করেন, তবে তাদেরকেও পাপের মাত্রা অনুযায়ী কিছুকাল জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। তারপর ঈমানের বদৌলতে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে তারা স্থায়ীভাবে জান্নাত লাভ করবে।
জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ই সৃষ্টি হয়ে আছে। তবে নেককারদের নেক আমলের বিনিময়ে আল্লাহ তা'আলা জান্নাতে নতুন নতুন আরাম-আয়েশের উপকরণ সৃষ্টি করে থাকেন। কুরআন ও হাদীছে জান্নাতের নানা নি'আমতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তা দ্বারা উদ্দেশ্য মানুষকে সৎকর্মে উৎসাহ দান করা, যাতে তারা সে নি'আমত লাভের উদ্দেশ্যে বেশি বেশি সৎকর্মে যত্নবান থাকে। পাশাপাশি জাহান্নামের বিভিন্ন শাস্তির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে মানুষ সে শাস্তির ভয়ে পাপকর্ম হতে বিরত থাকে। আল্লাহ তা'আলা আপন দয়ায় আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত রেখে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।

জান্নাতলাভের সুসংবাদদান
হাদীছটিতে উপরে বর্ণিত তিনটি বিশ্বাস পোষণের ভিত্তিতে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। যারা এ তিনটি বিষয়ে আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে সাক্ষ্যদান করবে, তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে- أدخله الله الجنة على ما كان من العمل (আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন সে যে আমলের উপরই থাকুক না কেন)। অর্থাৎ ভালো আমল করুক বা মন্দ আমল করুক, সর্বাবস্থায় সে জান্নাতে যাবে। বোঝানো উদ্দেশ্য, যে ব্যক্তি এসব বিষয়ে ঈমান এনেছে, তারপর এমন কোনও পাপ করেনি যা ঈমান বাতিল করে দেয়, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তার যদি কোনও কবীরা গুনাহ না থাকে, তবে তো শুরুতেই জান্নাত লাভ করবে। আর যদি কবীরা গুনাহ থাকে, তবে তার বিষয়টি আল্লাহ তা'আলার এখতিয়ারাধীন থাকবে। আল্লাহ তা'আলা চাইলে তাকে ক্ষমাও করতে পারেন। ক্ষমা না করলে প্রথমে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে, তারপর জান্নাত লাভ করবে।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে, এ হাদীছে তো কেবল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি ঈমানের উল্লেখ করা হয়েছে, তবে কি অন্যসব নবীদেরকে অস্বীকার করলেও সে জান্নাত পাবে?

প্রকৃতপক্ষে এ প্রশ্নের সুযোগ নেই। কেননা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনার দাবি অন্যসকল নবীর প্রতিও ঈমান আনা। কেননা তাঁর প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে তিনি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যা-কিছু আমাদের জানিয়েছেন সে সবকিছুতেই বিশ্বাস রাখা। সমগ্র কুরআন মাজীদে বিশ্বাস রাখাও এর অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মাজীদের যে-কোনও একটি কথা অস্বীকার করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান পূর্ণতা পায় না। সুতরাং কুরআন মাজীদে যত নবী রাসূল এবং যত আসমানী কিতাবের কথা বলা হয়েছে, সে সবগুলোতেই বিশ্বাস রাখা জরুরি।
{وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُمْ مِنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُمْ مِنَ الشَّاهِدِينَ} [آل عمران: 81]
এমনিভাবে ফিরিশতাসমূহের প্রতি বিশ্বাস, তাকদীরে বিশ্বাস, কিয়ামত ও পুনরুত্থান দিবসে বিশ্বাস ইত্যাদি সবই এর মধ্যে এসে গেছে।
প্রকাশ থাকে যে, على ما كان من العمل (সে যে আমলের উপরই থাকুক না কেন) কথাটি দ্বারা আমলের গুরুত্বকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। কেননা বাক্যটি দ্বারা কেবল এতটুকু বোঝানো উদ্দেশ্য যে, আমল ভালো হোক বা মন্দ সর্বাবস্থায়ই যদি ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু হয় তবে সে একবার না একবার জান্নাতে যাবেই। ভালো হলে তো শুরুতেই যাবে, আর মন্দ হলে এবং আল্লাহ তা'আলা তা মাফ না করলে শাস্তিভোগের পর জান্নাতে যাবে, যেমনটা পূর্বে বলা হয়েছে।

أدخله الله الجنة على ما كان من العمل এ বাক্যটির আরেক অর্থ হল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে তার আমলের মান অনুযায়ী। অর্থাৎ ঈমানের ভিত্তিতে জান্নাতে যাবে এবং সৎকর্মের ভিত্তিতে তার জান্নাতের স্তর নির্ণিত হবে। আমল যত ভালো হবে, স্তরও তত উন্নত হবে।

হাদীছটির দ্বিতীয় বর্ণনায় বলা হয়েছে- حرم الله عليه النار (আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন)। অর্থাৎ নেককার মুমিন হলে তো সম্পূর্ণরূপেই তার জন্য জাহান্নাম হারাম, সে আদৌ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আর পাপী মুমিন হলে জাহান্নামের স্থায়ী শাস্তি তার জন্য হারাম। কিছুকাল শাস্তিভোগের পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

প্রকাশ থাকে যে, গাফেল লোকদের এ হাদীছটিকে অজুহাতরূপে গ্রহণের সুযোগ আছে। তাই এটি বর্ণনায় সতর্কতা প্রয়োজন। যেসব হাদীছে আমলের গুরুত্ব দেখানো হয়েছে এবং নেক আমলের ফযীলত ও বদ আমলের অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে, সেগুলোও এর পাশাপাশি উল্লেখ করা চাই। হযরত উবাদা ইবনুস সামিত রাযি. এ হাদীছটির বর্ণনায় খুব সচেতন ছিলেন। তিনি সারা জীবন এটি বর্ণনাই করেননি। যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, আর সময় নেই বলে প্রবল ধারণা হয়েছে, কেবল তখনই এটি বর্ণনা করেছেন। তাঁর থেকে বর্ণনাকারী সালিহী রহ. বলেন, হযরত উবাদা ইবনুস সামিত রাযি. যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, তখন আমি তাঁকে দেখতে গেলাম। তাঁকে দেখেই আমি কেঁদে ফেললাম। তিনি বললেন, শান্ত হও। কাঁদছ কেন? আল্লাহর কসম, যদি আমার কাছে সাক্ষ্য চাওয়া হয়, আমি তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দেব। যদি আমার সুপারিশ গৃহীত হয়, আমি তোমার পক্ষে সুপারিশ করব। আমার পক্ষে সম্ভব হলে আমি অবশ্যই তোমার সাহায্য করব। তারপর বললেন, আল্লাহর কসম, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যত হাদীছ শুনেছি সবই তোমাদের কাছে বর্ণনা করেছি কেবল একটি হাদীছ ছাড়া। আজ আমি সেটি তোমাদের কাছে বর্ণনা করব। আমার তো এখন মুমূর্ষু অবস্থা। এই বলে তিনি এ হাদীছটি বর্ণনা করলেন। তাঁর এ সতর্কতা দ্বারা বোঝা যায়, হাদীছটি যত্রতত্র বর্ণনা করতে নেই। সতর্ক থাকা উচিত যাতে গাফেল প্রকৃতির লোক এটিকে অজুহাতরূপে গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসে তাওহীদ ও আল্লাহ তা'আলার একত্বে বিশ্বাস সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

খ. হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে যেমন এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তিনি আল্লাহ তা'আলার রাসূল, তেমনিভাবে এ বিশ্বাসও রাখতে হবে যে, তিনি একজন মানুষ ও আল্লাহ তা'আলার বান্দা।

গ. হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা'আলার বান্দা ও তাঁর রাসূল ছিলেন। সুতরাং খৃষ্টানদের এ বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভ্রান্ত; বরং সুস্পষ্ট শিরক যে, তিনি আল্লাহর অবতার ও ত্রিসত্তার একজন। এমনিভাবে ইহুদী সম্প্রদায় যে তাঁকে মিথ্যাবাদী মনে করে, এটাও তাদের বিভ্রান্তি ও সুস্পষ্ট কুফর।

ঘ. হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা'আলার শক্তি ও ক্ষমতার এক বিশেষ নিদর্শন।

ঙ. জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য ও বাস্তব অস্তিত্বসম্পন্ন। এতে বিশ্বাস রাখা ঈমানের অঙ্গ।

চ. জান্নাতলাভের জন্য ঈমান শর্ত। ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে যাবে, তা শুরুতে হোক বা (পাপী হলে) শাস্তিভোগের পর।

ছ. জান্নাতে প্রবেশ হবে ঈমানের ভিত্তিতে আর স্তর নির্ণিত হবে নেক আমলের ভিত্তিতে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ - হাদীস নং ২১ | মুসলিম বাংলা