মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

৪. ইলমের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৪
আন্তর্জাতিক নং: ১৮০৮৯
(২) পরিচ্ছেদঃ ইলমের অন্বেষায় সফর ও অন্বেষণকারীর মর্যাদা প্রসঙ্গে ।
(১৪) যির ইবন্ হুবাইশ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা প্রত্যুষে সাফওয়ান ইবন্ আসসাল (রা)-এর সমীপে উপস্থিত হই এবং তাঁকে পায়ের মোজার উপর মাসহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি (অর্থাৎ ওযূর সময় পা ধৌত না করে মোজার উপর মাসেহ করার মাসআলা জিজ্ঞেস করি)। তিনি আমাকে বললেন, তুমি কী উদ্দেশ্যে আগমন করেছ? আমি বললাম, ইলম অন্বেষণের উদ্দেশ্যে। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে সুসংবাদ প্রদান করবো না? অতঃপর তিনি রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস বর্ণনা করেন। রাসূল (ﷺ) বলেন, নিশ্চয় ফিরিশতাগণ তাঁদের পাখা বিস্তার করে রাখেন ইলম অন্বেষণকারীর জন্য তার ইলম অন্বেষণে সন্তুষ্ট হয়ে।
(2) باب في الرحلة في طلب العلم وفضل طالبه
(14) وعن زر بن حبيش قال غدوت الى صفران بن عسال المرادى رضى الله عنه أساله عن المسح على الخفين فقال ما جاء بك قلت ابتغاء العلم قال إلا أبشرك ورفع الحديث الى رسول الله صلى الله عليه وسلم قال أن الملائكة لتضع أجنحتها لطالب العلم رضاً بما يطلب

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে দুটি বিষয়ে আলোচনা এসেছে। নিচে তা উল্লেখ করা হল।
মোজার উপর মাসাহ করার বৈধতা। কেউ যদি ওযু করার পর চামড়া বা চামড়ার মত শক্ত কোনও জিনিসের তৈরি মোজা পরিধান করে, তবে পরবর্তী ওযুকালে তার জন্য এই সুযোগ রয়েছে যে, সে মোজা না খুলে মোজার উপর মাসাহ করে নেবে। কেউ সফর অবস্থায় থাকলে তার জন্য তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মাসাহ করা জায়েয। যে ব্যক্তি সফরে নেই, সে মাসাহ করতে পারে এক দিন এক রাত।
মাসাহ র এই বিধান কেবল ওযূর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যার উপর গোসল ফরয, তার জন্য মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয নয়। মোজার উপর মাসাহ সম্পর্কে আরও বহু মাসআলা আছে। সে ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের কাছে জিজ্ঞেস করে নেওয়া কর্তব্য।

তালিবে ইলমের ফযীলত। হাদীছটির বর্ণনাকারী যির ইবনে হুবাইশ রহ.-এর মনে মোজার উপর মাসাহ করা সম্পর্কে খটকা দেখা দিয়েছিল। তিনি এ সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্যে হযরত সাফওয়ান ইবন আসসাল রাযি.-এর কাছে আগমন করেছিলেন। সুতরাং তিনি তালিবে ইলম হলেন। হযরত সাফওয়ান রাযি. তাকে তার আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ কথাই বলেছিলেন যে, আমি ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে এসেছি। এতে খুশি হয়ে হযরত সাফওয়ান রাযি. তালিবে ইলমের ফযীলত সম্পর্কে তাকে হাদীছ শোনান। তাতে তিনি বলেন, তালিবে ইলম যেহেতু দীনী ইলম শেখার উদ্দেশ্যে বের হয়, তাই তার প্রতি সন্তুষ্টিতে ফিরিশতাগণ তাদের ডানা বিছিয়ে দেন। এভাবে তারা তালিবে ইলমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। সুবহানাল্লাহ! একজন তালিবে ইলমের কত বড় মর্যাদা। এ মর্যাদার কারণ সহীহ ইলম সহীহ আমলের ভিত্তি। বিশুদ্ধ ইলম ছাড়া শরী'আত মোতাবেক আমল করা সম্ভব হয় না। বরং বিশুদ্ধ ইলম ছাড়া সঠিক আকীদা-বিশ্বাসও পোষণ করা যায় না। আল্লাহ তা'আলার পরিচয় লাভ করা ও নবুওয়াত, আখিরাত প্রভৃতি বিষয় বোঝা বিশুদ্ধ ইলম ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়। এ কারণেই ইলমে দীন শিক্ষার এত গুরুত্ব ও ফযীলত এবং তালিবে ইলমের এত মর্যাদা।

ফিরিশতাগণের ডানা বিছানোর স্বরূপ কী, তাদের ডানাই বা কেমন, তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব না। হাদীছে যতটুকু বলা হয়েছে, আমরা ততটুকুতে বিশ্বাস রাখি। এর বেশি খোঁজ-খবরের পেছনে পড়ার কোনও প্রয়োজন আমাদের নেই। তা জানার উপর আমাদের দীনের কোনও বিষয় নির্ভরশীল নয়। না জানলে আমাদের কোনও ক্ষতি নেই। কাজেই ওসব বিষয়ে নীরবতা অবলম্বনই শ্রেয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও বিষয় জানা না থাকলে তা জানার জন্য জ্ঞানীজনের শরণাপন্ন হওয়া উচিত, যেমন হযরত যির বহ, তার অজানা বিষয় জানার জন্য একজন সাহাবীর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কোনও দীনী বিষয়ে অন্তরে খটকা দেখা দিলে তা নিরসনের জন্য অবশ্যই কোনও বিজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হতে হবে।

খ. ইলমে দীন শেখা অত্যন্ত ফযীলতের কাজ। এর জন্য কোনও বয়সের সীমারেখা নেই। যেকোনও বয়সেই তা শেখা যেতে পারে।

গ. ওযুতে পা ধোয়ার পরিবর্তে মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয। বহু হাদীছ দ্বারা এর বৈধতা প্রমাণিত। সুতরাং এর বৈধতায় সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ - হাদীস নং ১৪ | মুসলিম বাংলা