আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৯- আযান-ইকামতের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬৬২
৪২৯। সকাল-বিকেল মসজিদে যাওয়ার ফযীলত।
৬২৯। আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি সকাল বা বিকালে যতবার মসজিদে যায়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য ততবার জান্নাতে মেহমানদারীর আয়োজন করবেন।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছ দ্বারা মসজিদে যাওয়ার ফযীলত জানা গেল। এতে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কী উদ্দেশ্যে গেলে এ ফযীলত পাওয়া যাবে। বিষয়টা সাধারণ রেখে দেওয়া হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায়, মসজিদে সাধারণত যে সকল কাজ করা হয়ে থাকে তার যে কোনওটির উদ্দেশ্যে গেলেই এ ফযীলত লাভ হবে। যেমন নামায পড়া, ই'তিকাফ করা ও 'ইলমে দীন শেখা।
হযরত আবূ উমামা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে আছে, যে ব্যক্তি সকাল বেলা মসজিদে যায় কেবল এ উদ্দেশ্যে যে, “সে কোনও কল্যাণকর বিষয় শিখবে অথবা মানুষকে শেখাবে, তার জন্য রয়েছে একটি পরিপূর্ণ উমরার ছাওয়াব। আর যে ব্যক্তি বিকাল বেলা কেবল এ উদ্দেশ্যে মসজিদে যায় যে, কোনও কল্যাণকর বিষয় নিজে শিখবে অথবা অন্যকে শেখাবে, তার জন্য রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ হজ্জের ছাওয়াব”। এর দ্বারা বোঝা যায় দীন শিক্ষার বিষয়টিও মসজিদের একটি কাজ। সুতরাং এ উদ্দেশ্যে মসজিদে যাতায়াত করাও নেক কাজরূপে গণ্য হবে এবং তা দ্বারা আলোচ্য হাদীছে বর্ণিত ফযীলত লাভ করা যাবে।
উল্লেখ্য, এককালে মসজিদই ছিল 'ইবাদত-বন্দেগী ও তা'লীম-তরবিয়াতের প্রাণকেন্দ্র। তখন বহুবিধ দীনী কার্যক্রমে মসজিদ সদা সরগরম থাকত। কালক্রমে মুসলিম জাতি তার আরও অনেক ঐতিহ্যের পাশাপাশি মসজিদের সে অবস্থানটিও হারিয়ে ফেলেছে। তাদের সমাজ-জীবন এখন আর মসজিদ দ্বারা পরিচালিত হয় না। যেদিন থেকে তারা মসজিদকে তাদের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করেছে, সেদিন থেকেই তাদের অধঃপতনও শুরু হয়ে গেছে। আজ সারাবিশ্বে মুসলিম জাতির দৈনন্দিন জীবনের যে দীনবিমুখতা লক্ষ করা যায় এবং অপরাপর জাতির সামনে তাদের যে নতজানু অবস্থা পরিদৃষ্ট হয়, এর কারণ কি এ ছাড়া আর কিছু যে, তারা তাদের জীবনকে মসজিদ থেকে আলাদা করে ফেলেছে? এককালে যে মুসলিম জাতি শৌর্যবীর্য ও উন্নতির চরম শিখরে ছিল, তার রহস্য এরই মধ্যে নিহিত যে, তখন এ জাতির জীবন মসজিদের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িত ছিল। অতঃপর অধঃপতিত হতে হতে যে আজকের এ পর্যায়ে নেমে এসেছে, তারও রহস্য নিহিত মসজিদের সঙ্গে তাদের সামগ্রিক জীবনের বিচ্ছিন্নতার মধ্যে।
এ হাদীছটি অতি সংক্ষিপ্ত। কিন্তু এর মধ্যে এ জাতির মুক্তি ও উন্নতির মাইলফলক রেখে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে গেলে জান্নাতের আতিথেয়তা লাভ করবে। জান্নাতকামী মু'মিনদের সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যাতায়াতে উৎসাহিত করা হয়েছে কেবল এমনি এমনিই? এ তো বৈরাগ্যের ধর্ম নয়। এ দীনের মত জীবনঘনিষ্ঠতা দুনিয়ার আর কোনও দীনে নেই। এ দীনে হিদায়াত আছে ইহলৌকিক জীবনযাপনের প্রতিটি বিষয়ে। জীবন ও জীবনের চাহিদা সংক্রান্ত কোনও কিছুই ইসলাম ত্যাগ করতে বলেনি। বরং সবই করতে বলেছে এবং করতে উৎসাহিত করেছে। শুধু এতটুকু কথা যে, ইসলাম যে হিদায়াত দিয়েছে, যে নীতিমালা শিক্ষা দিয়েছে সে অনুযায়ীই সব করবে। তাতে দুনিয়ার জীবনও সাফল্যমণ্ডিত হবে, আখিরাতেও নাজাত পাবে। সাফল্য ও নাজাতের সে শিক্ষা তো মসজিদেই পাওয়া যায়। তাই সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যাতায়াতের এ উৎসাহ।
এ হাদীছ দ্বারা মসজিদ কর্তৃপক্ষের দায়-দায়িত্বের প্রতিও ইশারা হয়। মানুষ সকাল সন্ধ্যা মসজিদে এসে যাতে তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে, যা শেখার জন্য আসে তা শিখতে পারে এবং যা পাওয়ার তা পেতে পারে, তার ব্যবস্থা মসজিদ কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। তাদের কর্তব্য মসজিদকে কর্মমুখর করে তোলা। দীনের আলোকে সুষ্ঠু সমাজ গড়া ও সমাজ পরিচালনার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম যাতে মসজিদ চালাতে পারে, মসজিদ কর্তৃপক্ষকে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মসজিদ এখন যেমনটা আছে তেমনি মৃত অবস্থায়ই পড়ে থাকবে এবং জাতি তার দ্বারা কাঙ্ক্ষিত উপকার লাভ থেকে বঞ্চিত থাকবে। সে ক্ষেত্রে মসজিদের মত মহান প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ হওয়ার কোনও মহিমা তাদের থাকে না। সে মহিমা তাদের তখনই অর্জিত হবে, যখন তারা মৃতপ্রায় মসজিদকে জীবন্ত মসজিদে পরিণত করতে সক্ষম হবে। আমাদের মসজিদসমূহের পরিচালনা পর্ষদ সে উদ্যোগ নেবে কি?
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা সকাল-সন্ধ্যায় মসজিদে যাওয়ার উৎসাহ পাওয়া যায়। আমাদের কর্তব্য আপন অন্তরে সে উৎসাহ সঞ্চার করে সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যাতায়াত অব্যাহত রাখা।
খ. সর্বস্তরের মুসলিম যাতে মসজিদ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারে, সে লক্ষ্যে আমাদের কর্তব্য মসজিদসমূহকে কর্মমুখর ও জীবন্ত মসজিদরূপে গড়ে তোলা।
হযরত আবূ উমামা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে আছে, যে ব্যক্তি সকাল বেলা মসজিদে যায় কেবল এ উদ্দেশ্যে যে, “সে কোনও কল্যাণকর বিষয় শিখবে অথবা মানুষকে শেখাবে, তার জন্য রয়েছে একটি পরিপূর্ণ উমরার ছাওয়াব। আর যে ব্যক্তি বিকাল বেলা কেবল এ উদ্দেশ্যে মসজিদে যায় যে, কোনও কল্যাণকর বিষয় নিজে শিখবে অথবা অন্যকে শেখাবে, তার জন্য রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ হজ্জের ছাওয়াব”। এর দ্বারা বোঝা যায় দীন শিক্ষার বিষয়টিও মসজিদের একটি কাজ। সুতরাং এ উদ্দেশ্যে মসজিদে যাতায়াত করাও নেক কাজরূপে গণ্য হবে এবং তা দ্বারা আলোচ্য হাদীছে বর্ণিত ফযীলত লাভ করা যাবে।
উল্লেখ্য, এককালে মসজিদই ছিল 'ইবাদত-বন্দেগী ও তা'লীম-তরবিয়াতের প্রাণকেন্দ্র। তখন বহুবিধ দীনী কার্যক্রমে মসজিদ সদা সরগরম থাকত। কালক্রমে মুসলিম জাতি তার আরও অনেক ঐতিহ্যের পাশাপাশি মসজিদের সে অবস্থানটিও হারিয়ে ফেলেছে। তাদের সমাজ-জীবন এখন আর মসজিদ দ্বারা পরিচালিত হয় না। যেদিন থেকে তারা মসজিদকে তাদের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করেছে, সেদিন থেকেই তাদের অধঃপতনও শুরু হয়ে গেছে। আজ সারাবিশ্বে মুসলিম জাতির দৈনন্দিন জীবনের যে দীনবিমুখতা লক্ষ করা যায় এবং অপরাপর জাতির সামনে তাদের যে নতজানু অবস্থা পরিদৃষ্ট হয়, এর কারণ কি এ ছাড়া আর কিছু যে, তারা তাদের জীবনকে মসজিদ থেকে আলাদা করে ফেলেছে? এককালে যে মুসলিম জাতি শৌর্যবীর্য ও উন্নতির চরম শিখরে ছিল, তার রহস্য এরই মধ্যে নিহিত যে, তখন এ জাতির জীবন মসজিদের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িত ছিল। অতঃপর অধঃপতিত হতে হতে যে আজকের এ পর্যায়ে নেমে এসেছে, তারও রহস্য নিহিত মসজিদের সঙ্গে তাদের সামগ্রিক জীবনের বিচ্ছিন্নতার মধ্যে।
এ হাদীছটি অতি সংক্ষিপ্ত। কিন্তু এর মধ্যে এ জাতির মুক্তি ও উন্নতির মাইলফলক রেখে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে গেলে জান্নাতের আতিথেয়তা লাভ করবে। জান্নাতকামী মু'মিনদের সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যাতায়াতে উৎসাহিত করা হয়েছে কেবল এমনি এমনিই? এ তো বৈরাগ্যের ধর্ম নয়। এ দীনের মত জীবনঘনিষ্ঠতা দুনিয়ার আর কোনও দীনে নেই। এ দীনে হিদায়াত আছে ইহলৌকিক জীবনযাপনের প্রতিটি বিষয়ে। জীবন ও জীবনের চাহিদা সংক্রান্ত কোনও কিছুই ইসলাম ত্যাগ করতে বলেনি। বরং সবই করতে বলেছে এবং করতে উৎসাহিত করেছে। শুধু এতটুকু কথা যে, ইসলাম যে হিদায়াত দিয়েছে, যে নীতিমালা শিক্ষা দিয়েছে সে অনুযায়ীই সব করবে। তাতে দুনিয়ার জীবনও সাফল্যমণ্ডিত হবে, আখিরাতেও নাজাত পাবে। সাফল্য ও নাজাতের সে শিক্ষা তো মসজিদেই পাওয়া যায়। তাই সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যাতায়াতের এ উৎসাহ।
এ হাদীছ দ্বারা মসজিদ কর্তৃপক্ষের দায়-দায়িত্বের প্রতিও ইশারা হয়। মানুষ সকাল সন্ধ্যা মসজিদে এসে যাতে তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে, যা শেখার জন্য আসে তা শিখতে পারে এবং যা পাওয়ার তা পেতে পারে, তার ব্যবস্থা মসজিদ কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। তাদের কর্তব্য মসজিদকে কর্মমুখর করে তোলা। দীনের আলোকে সুষ্ঠু সমাজ গড়া ও সমাজ পরিচালনার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম যাতে মসজিদ চালাতে পারে, মসজিদ কর্তৃপক্ষকে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মসজিদ এখন যেমনটা আছে তেমনি মৃত অবস্থায়ই পড়ে থাকবে এবং জাতি তার দ্বারা কাঙ্ক্ষিত উপকার লাভ থেকে বঞ্চিত থাকবে। সে ক্ষেত্রে মসজিদের মত মহান প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ হওয়ার কোনও মহিমা তাদের থাকে না। সে মহিমা তাদের তখনই অর্জিত হবে, যখন তারা মৃতপ্রায় মসজিদকে জীবন্ত মসজিদে পরিণত করতে সক্ষম হবে। আমাদের মসজিদসমূহের পরিচালনা পর্ষদ সে উদ্যোগ নেবে কি?
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা সকাল-সন্ধ্যায় মসজিদে যাওয়ার উৎসাহ পাওয়া যায়। আমাদের কর্তব্য আপন অন্তরে সে উৎসাহ সঞ্চার করে সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যাতায়াত অব্যাহত রাখা।
খ. সর্বস্তরের মুসলিম যাতে মসজিদ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারে, সে লক্ষ্যে আমাদের কর্তব্য মসজিদসমূহকে কর্মমুখর ও জীবন্ত মসজিদরূপে গড়ে তোলা।
