আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৭০- উত্তরাধিকার সংক্রান্ত

হাদীস নং: ৬২৭২
আন্তর্জাতিক নং: ৬৭২৮
২৭৯২. নবী (ﷺ) এর বাণীঃ আমাদের কোন উত্তরাধিকার হবে না, আর যা কিছু আমরা রেখে যাই তার সবই হবে সাদ্‌কা স্বরূপ।
৬২৭২। ইয়াহয়া ইবনে বুকায়র (রাহঃ) ......... মালিক ইবনে আউস ইবনে হাদাছান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, – যুহরী বলেন, মুহাম্মাদ ইবনে জুবাইর ইবনে মুতঈম আমাকে মালিক ইবনে আউস ইবনে হাদাছানের পক্ষ থেকে একটি ঘটনা বর্ণনা করলেন। অতঃপর আমি মালিক ইবনে আউস (রাযিঃ) এর কাছে চলে গেলাম এবং ঘটনাটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম– তখন তিনি বললেন যে, আমি উমর (রাযিঃ) এর নিকট গিয়েছিলাম। এমন সময় তাঁর দারোয়ান ইয়ারফা সেখানে উপাস্থিত হয়ে বলল, আপনি উসমান, আব্দুর রহমান, যুবাইর ও সা’দ (রাযিঃ) কে ভিতরে আসার অনুমতি দিবেন কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি তাঁদেরকে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দিলেন। এরপর সে উমর (রাযিঃ) এর নিকট এসে বলল, আপনি আলী ও আব্বাস (রাযিঃ) কে ভিতরে আসার অনুমতি দিবেন কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আব্বাস (রাযিঃ) বলেনঃ হে আমীরুল মু'মিনীন! আমার এবং এর মাঝে মীমাংসা করে দিন। উমর (রাযিঃ) বললেনঃ আপনাদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলি যার হুকুমে আকাশ ও যমীন প্রতিষ্ঠিত আছে; আপনারা কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছিলেন, আমাদের কোন উত্তরাধিকারী থাকবে না, আমরা যা কিছু রেখে যাব সবই হবে সাদ্‌কা স্বরূপ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ দ্বারা নিজেকেই উদ্দেশ্য করেছিলেন। দলের লোকেরা বলল, অবশ্যই তিনি তা বলেছেন। এরপর তিনি আলী ও আব্বাস (রাযিঃ)-এর দিকে মুখ করে বললেনঃ আপনারা কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ কথা বলেছিলেন? তারা উভয়ে জবাব দিলেন, অবশ্যই তিনি তা বলেছেন।
উমর (রাযিঃ) বললেনঃ এখন আমি এ ব্যাপারে আপনাদের কাছে বর্ণনা করছি যে, আল্লাহ তা'আলা এ ফায় (বিনা যুদ্ধে প্রাপ্ত ধনসম্পদ) এর ব্যাপারে তার রাসূলকে বিশেষত্ব প্রদান করেছেন, যা আর অন্য কাউকে প্রদান করেননি। তিনি (আল্লাহ তাআলা) বলেনঃ مَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ থেকে قَدِيرٌ পর্যন্ত তিলাওয়াত করে শোনালেন এবং বললেনঃ এটা তো ছিল বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্য। আল্লাহ তাআলার কসম! তিনি আপনাদের ব্যতীত অন্য কারও জন্য এ মাল সংরক্ষণ করেননি। আর আপনাদের ব্যতীত অন্য কাউকে এতে প্রাধান্য দেননি। এ মাল তো আপনাদেরই তিনি দিয়ে গিয়েছেন এবং আপনাদের মাঝেই বণ্টন করেছেন। পরিশেষে এ মালটুকু অবশিষ্ট ছিল। তখন তিনি তার পরিবার-পরিজনের বছরের ভরণ-পোষণের জন্য এ থেকে খরচ করতেন। এরপর যা অবশিষ্ট থাকত তা আল্লাহর মাল হিসেবে (তার রাস্তায়) খরচ করতেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার গোটা জীবদ্দশায়ই এরূপ করে গিয়েছেন। আমি আপনাদের আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, এ কথাগুলো কি আপনারা জানেন? তারা বললেনঃ হ্যাঁ। এরপর তিনি আলী (রাযিঃ) ও আব্বাস (রাযিঃ) এর দিকে লক্ষ্য করে বললেনঃ আমি আপনাদের দু’জনকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনারা কি এ কথাগুলো জানেন? তাঁরা উভয়ে বললেনঃ হ্যাঁ। এরপর আল্লাহ তাআলা তার নবীকে ওফাত দান করলেন, তখন আবু বকর (রাযিঃ) বললেনঃ আমি আল্লাহর রাসূলের ওলী। এরপর উক্ত মাল হস্তগত করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যেভাবে তা ব্যবহার করেছিলেন তিনিও তা সেভাবে ব্যবহার করেছেন। এরপর আল্লাহ তা'আলা আবু বকর (রাযিঃ)-কে ওফাত দান করলেন। তখন আমি বললাম, আমি আল্লাহর রাসূলের ওলীর ওলী। আমি এ মাল হস্তগত করলাম এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) এ মালের ব্যাপারে যে নীতি অবলম্বন করেছিলেন, দু’বছর যাবত আমি এ মালের ব্যাপারে সেই নীতি অবলম্বন করে আসছি।
এরপর আপনারা আমার কাছে আসলেন আর আপনাদের উভয়ের বক্তব্যও এক এবং ব্যাপারটিও অনুরূপ। [হে আব্বাস (রাযিঃ)] আপনি তো আপনার ভাতিজার থেকে প্রাপ্য অংশ আমার কাছে চাইছেন। আর আলী (রাযিঃ) আমার কাছে তার স্ত্রীর অংশ যা তার পিতা থেকে প্রাপ্য, আমার কাছে তলব করছেন। সুতরাং আমি বলছি, আপনারা যদি এটা চান, তাহলে আমি আপনাদেরকে তা দিয়ে দিতে পারি। এরপর কি আপনারা অন্য কোন ফায়সালা আমার কাছে চাইবেন? ঐ আল্লাহর কসম! যার হুকুমে আকাশ ও যমীন প্রতিষ্ঠিত আছে, আমি যে ফায়সালা প্রদান করলাম, কিয়ামত পর্যন্ত এ ছাড়া আর অন্য কোন ফায়সালা দিতে পারব না। আপনারা যদি এ ধনসম্পদের শৃংখলা বিধানে অক্ষম হন তবে তা আমার কাছে ফিরিয়ে দিবেন, আমি তার শৃংখলা বিধান করব।
باب قَوْلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " لاَ نُورَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ "
6728 - حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي مَالِكُ بْنُ أَوْسِ بْنِ الحَدَثَانِ، وَكَانَ مُحَمَّدُ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، ذَكَرَ لِي مِنْ حَدِيثِهِ ذَلِكَ، فَانْطَلَقْتُ حَتَّى دَخَلْتُ عَلَيْهِ فَسَأَلْتُهُ فَقَالَ: انْطَلَقْتُ حَتَّى أَدْخُلَ عَلَى عُمَرَ، فَأَتَاهُ حَاجِبُهُ يَرْفَأُ فَقَالَ: هَلْ لَكَ فِي عُثْمَانَ، وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَالزُّبَيْرِ، وَسَعْدٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَأَذِنَ لَهُمْ، ثُمَّ قَالَ: هَلْ لَكَ فِي عَلِيٍّ، وَعَبَّاسٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ عَبَّاسٌ: يَا أَمِيرَ المُؤْمِنِينَ اقْضِ بَيْنِي وَبَيْنَ هَذَا، قَالَ أَنْشُدُكُمْ بِاللَّهِ الَّذِي بِإِذْنِهِ تَقُومُ السَّمَاءُ وَالأَرْضُ، هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لاَ نُورَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ» يُرِيدُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَفْسَهُ، فَقَالَ الرَّهْطُ: قَدْ قَالَ ذَلِكَ، فَأَقْبَلَ عَلَى عَلِيٍّ وَعَبَّاسٍ، فَقَالَ: هَلْ تَعْلَمَانِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ذَلِكَ؟ قَالاَ: قَدْ قَالَ ذَلِكَ. قَالَ عُمَرُ: فَإِنِّي أُحَدِّثُكُمْ عَنْ هَذَا الأَمْرِ، إِنَّ اللَّهَ قَدْ كَانَ خَصَّ رَسُولَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي هَذَا الفَيْءِ بِشَيْءٍ لَمْ يُعْطِهِ أَحَدًا غَيْرَهُ، فَقَالَ عَزَّ وَجَلَّ: {مَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ} [الحشر: 7]- إِلَى قَوْلِهِ - {قَدِيرٌ} [الحشر: 6] فَكَانَتْ خَالِصَةً لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَاللَّهِ مَا احْتَازَهَا دُونَكُمْ وَلاَ اسْتَأْثَرَ بِهَا عَلَيْكُمْ، لَقَدْ أَعْطَاكُمُوهَا وَبَثَّهَا فِيكُمْ حَتَّى بَقِيَ مِنْهَا هَذَا المَالُ، فَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُنْفِقُ عَلَى أَهْلِهِ مِنْ هَذَا المَالِ نَفَقَةَ سَنَتِهِ، ثُمَّ يَأْخُذُ مَا بَقِيَ فَيَجْعَلُهُ مَجْعَلَ مَالِ اللَّهِ، فَعَمِلَ بِذَاكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيَاتَهُ، أَنْشُدُكُمْ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمُونَ ذَلِكَ؟ قَالُوا: نَعَمْ، ثُمَّ قَالَ [ص:150] لِعَلِيٍّ وَعَبَّاسٍ: أَنْشُدُكُمَا بِاللَّهِ، هَلْ تَعْلَمَانِ ذَلِكَ؟ قَالاَ: نَعَمْ، فَتَوَفَّى اللَّهُ نَبِيَّهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: أَنَا وَلِيُّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَبَضَهَا فَعَمِلَ بِمَا عَمِلَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ تَوَفَّى اللَّهُ أَبَا بَكْرٍ فَقُلْتُ: أَنَا وَلِيُّ وَلِيِّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَبَضْتُهَا سَنَتَيْنِ أَعْمَلُ فِيهَا مَا عَمِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ، ثُمَّ جِئْتُمَانِي وَكَلِمَتُكُمَا وَاحِدَةٌ وَأَمْرُكُمَا جَمِيعٌ، جِئْتَنِي تَسْأَلُنِي نَصِيبَكَ مِنَ ابْنِ أَخِيكَ. وَأَتَانِي هَذَا يَسْأَلُنِي نَصِيبَ امْرَأَتِهِ مِنْ أَبِيهَا، فَقُلْتُ: إِنْ شِئْتُمَا دَفَعْتُهَا إِلَيْكُمَا بِذَلِكَ، فَتَلْتَمِسَانِ مِنِّي قَضَاءً غَيْرَ ذَلِكَ؟ فَوَاللَّهِ الَّذِي بِإِذْنِهِ تَقُومُ السَّمَاءُ وَالأَرْضُ، لاَ أَقْضِي فِيهَا قَضَاءً غَيْرَ ذَلِكَ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ، فَإِنْ عَجَزْتُمَا فَادْفَعَاهَا إِلَيَّ فَأَنَا أَكْفِيكُمَاهَا "
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৬২৭২ | মুসলিম বাংলা