আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৯- আযান-ইকামতের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬৫২
৪২৪। আউয়াল ওয়াক্তে যোহরের নামাযে যাওয়ার ফযীলত।
৬২২। কুতাইবা (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় একটি কাটাযুক্ত ডাল দেখে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তাআলা তার এ কাজ সাদরে কবুল করে তার গুনাহ মাফ করে দিলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ শহীদ পাঁচ প্রকার —

১. প্লেগে মৃত ব্যক্তি

২. কলেরায় মৃত ব্যক্তি

৩. নিমজ্জিত ব্যক্তি

৪. চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি

৫. আল্লাহর পথে (জিহাদে) শহীদ।

তিনি আরো বলেছেনঃ মানুষ যদি আযান দেওয়া, প্রথম কাতারে নামায আদায় করার কী ফযীলত তা জানত এবং লটারীর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ছাড়া সে সুযোগ না পেত, তাহলে লটারীর মাধ্যমে হলেও তারা সে সুযোগ গ্রহণ করত। আর আউয়াল ওয়াক্তে (যোহরের নামাযে যাওয়ার) কী ফযীলত তা যদি মানুষ জানত, তাহলে এর জন্য তারা অবশ্যই সর্বাগ্রে যেত। আর ইশা ও ফজরের নামায (জামাআতে) আদায়ে কী ফযীলত, তা যদি তারা জানত তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা (জামাআতে) উপস্থিত হতো।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, এক ব্যক্তি রাস্তা থেকে একটি ডাল সরিয়ে দেওয়ার অছিলায় জান্নাত লাভ করেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জান্নাতে সানন্দে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন। তিনি তা কখন দেখেছেন তা এ হাদীছে উল্লেখ করা হয়নি। হতে পারে মি'রাজের সফরকালে দেখেছেন। এমনও হতে পারে যে, স্বপ্নে দেখেছেন। নবীদের স্বপ্ন ওহী হয়ে থাকে। সুতরাং এর সত্যতায় কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। এ লোকটি কোন কালের তাও বলা হয়নি। ধারণা করা যায় সে ছিল অতীতকালের কোনও নবীর উম্মত। সব কালের নবীদের ধর্মই ছিল ইসলাম এবং তার অনুসারীদেরও মুসলিমই বলা হত। কাজেই এ হাদীছে মুসলিম বলা হয়েছে দেখে এই উম্মতের লোক হওয়া অনিবার্য নয়।
এই লোকটির অন্তরে ছিল মানুষের প্রতি মমতা। রাস্তার উপর একটা গাছের ডাল ঝুলে আছে কিংবা কোনও কাঁটাদার ডাল পড়ে আছে। এ ডালে কারও মাথায় আঘাত লাগতে পারে কিংবা এর কাঁটা কারও পায়ে ফুটতে পারে। এভাবে আল্লাহর বান্দাগণ কষ্ট পাবে এ চিন্তা করে সে ডালটি কেটে ফেলেছিল কিংবা পড়ে থাকা কাঁটাদার ডালটি সরিয়ে ফেলেছিল। মানুষের প্রতি তার এ দরদী কাজটি আল্লাহ তা'আলা পসন্দ করলেন এবং এর অছিলায় তাকে জান্নাত দান করলেন। সুবহানাল্লাহ! মানুষের কষ্ট দূর করে দেওয়ার যে-কোনও পদক্ষেপ কতই না ফযীলতের কাজ!
এমনিতে কাজটি তো অতি সাধারণ। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা তার বদলা দিলেন কত বিরাট! এর দ্বারা বোঝা যায় মানুষের কষ্টনিবারণ আল্লাহর কাছে কী মূল্য রাখে এবং মুসলিম সাধারণের উপকার হয় এমন কাজ আল্লাহ তা'আলার কত পসন্দ। তাই তো এরূপ কাজকে ঈমানের শাখা বলা হয়েছে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারাও শিক্ষা পাওয়া যায় যে, কোনও নেক আমলকেই তুচ্ছ মনে করতে নেই।

খ. এর দ্বারা রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলার ফযীলত জানা যায়।

গ. আরও জানা যায় মুসলিম সাধারণের কোনও উপকার করা এবং তাদের কোনও ক্ষতি লাঘব করার কাজ আল্লাহ তা'আলার কত প্রিয়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে এ জাতীয় কাজ বেশি বেশি করার তাওফীক দান করুন, আমীন।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন