আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৬৭- নম্রতা ও যুহদের অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৯৯৭
আন্তর্জাতিক নং: ৬৪৪১
৩৪২৩. নবী (ﷺ) এর বাণীঃ এ সম্পদ শ্যামল ও মনোমুগ্ধকর।
মহান আল্লাহর বাণীঃ মানুষের জন্য (দুনিয়াতে) মনোহর করে দেওয়া হয়েছে কাঙ্ক্ষিত জিনিসগুলোর মায়া মহব্বতকে অর্থাৎ নারীকুল ও সন্তান-সন্ততি ....... এসব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু (৩ঃ ১৪)। উমর (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য যেসব জিনিস মনোহর করে দিয়েছেন, তজ্জন্য খুশি না হয়ে পারি না। হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, যেন আমি এগুলোকে যথাযথ খরচ করতে পারি।
মহান আল্লাহর বাণীঃ মানুষের জন্য (দুনিয়াতে) মনোহর করে দেওয়া হয়েছে কাঙ্ক্ষিত জিনিসগুলোর মায়া মহব্বতকে অর্থাৎ নারীকুল ও সন্তান-সন্ততি ....... এসব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু (৩ঃ ১৪)। উমর (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য যেসব জিনিস মনোহর করে দিয়েছেন, তজ্জন্য খুশি না হয়ে পারি না। হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, যেন আমি এগুলোকে যথাযথ খরচ করতে পারি।
৫৯৯৭। আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... হাকীম ইবনে হিযাম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নবী (ﷺ) এর কাছে মাল চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। এরপর আমি আবার চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। এরপর আমি আবারও চাইলাম। তিনি দিলেন। এরপর বললেনঃ এই ধন-সম্পদ সুফিয়ানের বর্ণনামতে নবী (ﷺ) বললেনঃ হে হাকীম! অবশ্যই এই মাল শ্যামল-সবুজ ও সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করবে, তার জন্য এটাকে বরকতময় করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি তা লোভ সহকারে নেবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না। বরং সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে খায়, কিন্তু তার পেট ভরে না। আর (জেনে রেখো) উপরের (দাতার) হাত নীচের (গ্রহীতার) হাত থেকে শ্রেষ্ঠ।
بَابُ قَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا المَالُ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ»وَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى: {زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ، وَالبَنِينَ وَالقَنَاطِيرِ المُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ، وَالخَيْلِ المُسَوَّمَةِ، وَالأَنْعَامِ وَالحَرْثِ، ذَلِكَ مَتَاعُ الحَيَاةِ الدُّنْيَا} [آل عمران: 14] قَالَ عُمَرُ: «اللَّهُمَّ إِنَّا لاَ نَسْتَطِيعُ إِلَّا أَنْ نَفْرَحَ بِمَا زَيَّنْتَهُ لَنَا، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنْ أُنْفِقَهُ فِي حَقِّهِ»
6441 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ: سَمِعْتُ الزُّهْرِيَّ، يَقُولُ: أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ، وَسَعِيدُ بْنُ المُسَيِّبِ، عَنْ حَكِيمِ بْنِ حِزَامٍ، قَالَ: سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَعْطَانِي، ثُمَّ سَأَلْتُهُ فَأَعْطَانِي، ثُمَّ سَأَلْتُهُ فَأَعْطَانِي، ثُمَّ قَالَ: «هَذَا المَالُ» - وَرُبَّمَا قَالَ سُفْيَانُ: قَالَ لِي - «يَا حَكِيمُ، إِنَّ هَذَا المَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ، فَمَنْ أَخَذَهُ بِطِيبِ نَفْسٍ بُورِكَ لَهُ فِيهِ، وَمَنْ أَخَذَهُ بِإِشْرَافِ نَفْسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ، وَكَانَ كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ، وَاليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
নিচের হাত অপেক্ষা উপরের হাত শ্রেষ্ঠ হওয়া
হাদীছটিতে বলা হচ্ছে- اليد العليا خير من اليد السفلى (উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম)। নিচের হাত দ্বারা গ্রহণকারীর হাত এবং উপরের হাত দ্বারা দাতার হাত বোঝানো উদ্দেশ্য। দান করা না করা এবং গ্রহণ করা না করা হিসেবে মানুষের হাত চার প্রকার। দাতার হাত, সওয়ালকারীর হাত, দান গ্রহণ করা হতে বিরত ব্যক্তির হাত এবং বিনা সওয়ালে গ্রহণকারীর হাত।
এই চার প্রকারের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল দাতার হাত। উপরের হাত বলতে এ হাতই বোঝানো হয়েছে। কেননা বাহ্যত দাতার হাত গ্রহীতার হাতের উপরেই থাকে। আর যেহেতু সে দেয়, তাই মর্যাদায়ও তা শ্রেষ্ঠ বৈকি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, উপরের হাত কোন হাত? তিনি বলেন, যে হাত দান করে, গ্রহণ করে না।
দাতার হাত শ্রেষ্ঠ এ কারণে যে, দান করাটা আল্লাহ তাআলার গুণ। সৃষ্টির সূচনা থেকে এ যাবতকাল তিনি শুধু দিয়েই যাচ্ছেন। কারও কাছ থেকে কিছু নেন না। বলাবাহুল্য আল্লাহর গুণই সর্বশ্রেষ্ঠ। বান্দাকে তাঁর গুণে গুণান্বিত হতে বলা হয়েছে। কাজেই যে হাত কারও কাছ থেকে কিছু নেয় না; বরং দেয়, অন্যসব হাত থেকে তা শ্রেষ্ঠ হবে তাতে সন্দেহ কী?
দ্বিতীয় স্তরের হল ওই ব্যক্তির হাত, যে কারও কাছে কিছু চাওয়া হতে বিরত থাকে। এমনকি বিনা চাওয়াতে দেওয়া হলেও গ্রহণ করে না। একে ইস্তিগনা বলে। হাদীছে এর মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও যে কোনও মাখলূকের কাছে কিছু চায় না এবং মাখলূকের কাছ থেকে কিছু নেয়ও না, সে উচ্চস্তরের যাহিদ। সাহাবায়ে কেরামের শ্রেষ্ঠত্বের একটা কারণ তাঁরা শ্রেষ্ঠতম যাহিদ ছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক সাহাবীকে এই বলে উপদেশ দেন যে ازهد في الدنيا يحبك الله، وازهد فيما في أيدي الناس يحبك الناس "দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত থাক, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। মানুষের হাতে যা আছে তা থেকে বিমুখ থাক, মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'ঊদ রাযি. বলেন, তোমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের তুলনায় অনেক বেশি সাধনা-মুজাহাদা করে থাক এবং তাদের তুলনায় নামাযও অনেক দীর্ঘ ও বেশি পড়। তা সত্ত্বেও তোমাদের তুলনায় তারা শ্রেষ্ঠ ছিলেন। জিজ্ঞাসা করা হল, তার কারণ? তিনি বললেন, তোমাদের তুলনায় তারা বেশি দুনিয়াবিমুখ ও বেশি আখেরাতমুখী ছিলেন।
সাহাবায়ে কেরামের পরও এ উম্মতের আকাবির-আসলাফের মধ্যে অনেকেই এমন ছিলেন, যারা নিজ উপার্জনেই সন্তুষ্ট থাকতেন। যত কষ্ট-ক্লেশই হোক না কেন, তারা মানুষের কাছে হাত তো পাততেনই না; বিনা চাওয়াতে দিলেও কিছু গ্রহণ করতেন না। একবার দাউদ তাঈ রহ.-এর অনাহারক্লিষ্ট অবস্থায় ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর পুত্র হাম্মাদ রহ. তাঁর কাছে দু'শ দিরহাম পেশ করে বললেন, এটা এমন এক ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে আনা হয়েছে, তাকওয়া-পরহেযগারী ও দুনিয়াবিমুখতায় আমি যারচে' উত্তম কাউকে পাইনি, এমনকি হালাল উপার্জনেও নয়। আপনি এটা গ্রহণ করুন। তিনি বললেন, আমি কোনও মানুষের কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করলে এটা অবশ্যই গ্রহণ করতাম। এক তো মহান মৃত ব্যক্তি (ইমাম আবূ হানীফা) এর মর্যাদায়, দ্বিতীয়ত তাঁর জীবিত এ উত্তরাধিকারীর সম্মানে। কিন্তু আমি নিজের যা আছে তাতে পরিতুষ্টির মর্যাদা নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই।
আমাদের মহান আকাবিরে দেওবন্দের প্রাণপুরুষ ইমাম কাসিম নানুতবী রহ. তো বটেই, তাঁর পরবর্তী অনুসারীদের মধ্যেও অনেকেই এ পর্যায়ের যাহিদ ছিলেন।
তৃতীয় স্তরের হাত সেই ব্যক্তির হাত, যে কারও কাছে চায় না বটে, তবে তাকে দেওয়া হলে সে তা গ্রহণ করে। বিনা চাওয়ায় কিছু দেওয়া হলে তা গ্রহণ করতে দোষ নেই। বরং এরূপ দান গ্রহণের জন্য উৎসাহই দেওয়া হয়েছে। যেমন হযরত উমর রাযি. থেকে বর্ণিত আছে كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يعطيني العطاء، فأقول: أعطه من هو أفقر إليه مني، فقال: خذه إذا جاءك من هذا المال شيء وأنت غير مشرف ولا سائل، فخذه ومالا فلا تتبعه نفسك 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে কিছু দান করতে চাইলে আমি বলতাম, এটা আমার চেয়ে যার বেশি প্রয়োজন তাকে দিন। এর উত্তরে তিনি বলেন, তুমি এটা নাও। তোমার কাছে যদি কোনও সম্পদ আসে আর তুমি তার প্রতি আগ্রহী না থাক এবং যাচনাকারীও না হও, তবে তা গ্রহণ কর। এরকম না হলে তুমি নিজেকে তার অনুগামী করো না।
চতুর্থ ও সর্বনিম্ন হল ওই ব্যক্তির হাত, যে মানুষের কাছে চায়ও এবং নিজে কিছু দেয়ও না। বিনা প্রয়োজনে মানুষের কাছে হাত পাতা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এরচে' বরং যে-কোনও হালাল কাজ করা ভালো, তা মানুষের চোখে যতই নিম্নস্তরের কাজ হোক। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন والذي نفسي بيده لأن يأخذ أحدكم حبله، فيحتطب على ظهره خير له من أن يأتي رجلا، فيسأله أعطاه أو منعه 'যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম! তোমাদের কেউ রশি নিয়ে বের হয়ে যাবে, তারপর (তা দ্বারা) লাকড়ির বোঝা (বেঁধে) নিজ পিঠে করে নিয়ে আসবে, সেটাই এরচেয়ে ভালো যে, কারও কাছে গিয়ে সওয়াল করবে, যে তাকে দিতেও পারে, নাও দিতে পারে।
অন্যের কাছে সওয়াল করা চরম অমর্যাদাকর কাজ। এর দ্বারা নিজের আত্মসম্মান ধূলিসাৎ করা হয়। এরূপ ব্যক্তিকে হাশরের ময়দানেও চরম লাঞ্ছনাকর অবস্থায় উঠানো হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক হাদীছে আছে ما يزال الرجل يسأل الناس حتى يأتي يوم القيامة ليس في وجهه مزعة لحم কোনও ব্যক্তি মানুষের কাছে সওয়াল করতে থাকে। পরিশেষে কিয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় আসবে যে, তার চেহারায় গোশত বলতে কিছু থাকবে না।
চেহারা গোশতশূন্য হওয়াটা হীনতা ও লাঞ্ছনার নিদর্শন। কাজেই চরম ঠ্যাকা অবস্থা না হলে কারও কাছে হাত পাতা উচিত নয়। এর দ্বারা আত্মসম্মান নষ্ট হয় ও আখলাক-চরিত্র ধ্বংস হয়। প্রত্যেক ঈমানদারের এর থেকে বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা দান করার শ্রেষ্ঠত্ব ও দান গ্রহণের হেয়ত্ব জানা যাচ্ছে। তাই আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য দানশীলতার গুণ অর্জন করা।
খ. বিনা প্রয়োজনে অন্যের কাছে চাওয়া নেহাৎ মন্দ। সুতরাং নিজের যা-ই আছে তাতে সন্তুষ্ট থেকে অন্যের কাছে চাওয়া হতে বিরত থাকা চাই।
হাদীছটিতে বলা হচ্ছে- اليد العليا خير من اليد السفلى (উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম)। নিচের হাত দ্বারা গ্রহণকারীর হাত এবং উপরের হাত দ্বারা দাতার হাত বোঝানো উদ্দেশ্য। দান করা না করা এবং গ্রহণ করা না করা হিসেবে মানুষের হাত চার প্রকার। দাতার হাত, সওয়ালকারীর হাত, দান গ্রহণ করা হতে বিরত ব্যক্তির হাত এবং বিনা সওয়ালে গ্রহণকারীর হাত।
এই চার প্রকারের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল দাতার হাত। উপরের হাত বলতে এ হাতই বোঝানো হয়েছে। কেননা বাহ্যত দাতার হাত গ্রহীতার হাতের উপরেই থাকে। আর যেহেতু সে দেয়, তাই মর্যাদায়ও তা শ্রেষ্ঠ বৈকি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, উপরের হাত কোন হাত? তিনি বলেন, যে হাত দান করে, গ্রহণ করে না।
দাতার হাত শ্রেষ্ঠ এ কারণে যে, দান করাটা আল্লাহ তাআলার গুণ। সৃষ্টির সূচনা থেকে এ যাবতকাল তিনি শুধু দিয়েই যাচ্ছেন। কারও কাছ থেকে কিছু নেন না। বলাবাহুল্য আল্লাহর গুণই সর্বশ্রেষ্ঠ। বান্দাকে তাঁর গুণে গুণান্বিত হতে বলা হয়েছে। কাজেই যে হাত কারও কাছ থেকে কিছু নেয় না; বরং দেয়, অন্যসব হাত থেকে তা শ্রেষ্ঠ হবে তাতে সন্দেহ কী?
দ্বিতীয় স্তরের হল ওই ব্যক্তির হাত, যে কারও কাছে কিছু চাওয়া হতে বিরত থাকে। এমনকি বিনা চাওয়াতে দেওয়া হলেও গ্রহণ করে না। একে ইস্তিগনা বলে। হাদীছে এর মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও যে কোনও মাখলূকের কাছে কিছু চায় না এবং মাখলূকের কাছ থেকে কিছু নেয়ও না, সে উচ্চস্তরের যাহিদ। সাহাবায়ে কেরামের শ্রেষ্ঠত্বের একটা কারণ তাঁরা শ্রেষ্ঠতম যাহিদ ছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক সাহাবীকে এই বলে উপদেশ দেন যে ازهد في الدنيا يحبك الله، وازهد فيما في أيدي الناس يحبك الناس "দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত থাক, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। মানুষের হাতে যা আছে তা থেকে বিমুখ থাক, মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'ঊদ রাযি. বলেন, তোমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের তুলনায় অনেক বেশি সাধনা-মুজাহাদা করে থাক এবং তাদের তুলনায় নামাযও অনেক দীর্ঘ ও বেশি পড়। তা সত্ত্বেও তোমাদের তুলনায় তারা শ্রেষ্ঠ ছিলেন। জিজ্ঞাসা করা হল, তার কারণ? তিনি বললেন, তোমাদের তুলনায় তারা বেশি দুনিয়াবিমুখ ও বেশি আখেরাতমুখী ছিলেন।
সাহাবায়ে কেরামের পরও এ উম্মতের আকাবির-আসলাফের মধ্যে অনেকেই এমন ছিলেন, যারা নিজ উপার্জনেই সন্তুষ্ট থাকতেন। যত কষ্ট-ক্লেশই হোক না কেন, তারা মানুষের কাছে হাত তো পাততেনই না; বিনা চাওয়াতে দিলেও কিছু গ্রহণ করতেন না। একবার দাউদ তাঈ রহ.-এর অনাহারক্লিষ্ট অবস্থায় ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর পুত্র হাম্মাদ রহ. তাঁর কাছে দু'শ দিরহাম পেশ করে বললেন, এটা এমন এক ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে আনা হয়েছে, তাকওয়া-পরহেযগারী ও দুনিয়াবিমুখতায় আমি যারচে' উত্তম কাউকে পাইনি, এমনকি হালাল উপার্জনেও নয়। আপনি এটা গ্রহণ করুন। তিনি বললেন, আমি কোনও মানুষের কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করলে এটা অবশ্যই গ্রহণ করতাম। এক তো মহান মৃত ব্যক্তি (ইমাম আবূ হানীফা) এর মর্যাদায়, দ্বিতীয়ত তাঁর জীবিত এ উত্তরাধিকারীর সম্মানে। কিন্তু আমি নিজের যা আছে তাতে পরিতুষ্টির মর্যাদা নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই।
আমাদের মহান আকাবিরে দেওবন্দের প্রাণপুরুষ ইমাম কাসিম নানুতবী রহ. তো বটেই, তাঁর পরবর্তী অনুসারীদের মধ্যেও অনেকেই এ পর্যায়ের যাহিদ ছিলেন।
তৃতীয় স্তরের হাত সেই ব্যক্তির হাত, যে কারও কাছে চায় না বটে, তবে তাকে দেওয়া হলে সে তা গ্রহণ করে। বিনা চাওয়ায় কিছু দেওয়া হলে তা গ্রহণ করতে দোষ নেই। বরং এরূপ দান গ্রহণের জন্য উৎসাহই দেওয়া হয়েছে। যেমন হযরত উমর রাযি. থেকে বর্ণিত আছে كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يعطيني العطاء، فأقول: أعطه من هو أفقر إليه مني، فقال: خذه إذا جاءك من هذا المال شيء وأنت غير مشرف ولا سائل، فخذه ومالا فلا تتبعه نفسك 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে কিছু দান করতে চাইলে আমি বলতাম, এটা আমার চেয়ে যার বেশি প্রয়োজন তাকে দিন। এর উত্তরে তিনি বলেন, তুমি এটা নাও। তোমার কাছে যদি কোনও সম্পদ আসে আর তুমি তার প্রতি আগ্রহী না থাক এবং যাচনাকারীও না হও, তবে তা গ্রহণ কর। এরকম না হলে তুমি নিজেকে তার অনুগামী করো না।
চতুর্থ ও সর্বনিম্ন হল ওই ব্যক্তির হাত, যে মানুষের কাছে চায়ও এবং নিজে কিছু দেয়ও না। বিনা প্রয়োজনে মানুষের কাছে হাত পাতা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এরচে' বরং যে-কোনও হালাল কাজ করা ভালো, তা মানুষের চোখে যতই নিম্নস্তরের কাজ হোক। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন والذي نفسي بيده لأن يأخذ أحدكم حبله، فيحتطب على ظهره خير له من أن يأتي رجلا، فيسأله أعطاه أو منعه 'যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম! তোমাদের কেউ রশি নিয়ে বের হয়ে যাবে, তারপর (তা দ্বারা) লাকড়ির বোঝা (বেঁধে) নিজ পিঠে করে নিয়ে আসবে, সেটাই এরচেয়ে ভালো যে, কারও কাছে গিয়ে সওয়াল করবে, যে তাকে দিতেও পারে, নাও দিতে পারে।
অন্যের কাছে সওয়াল করা চরম অমর্যাদাকর কাজ। এর দ্বারা নিজের আত্মসম্মান ধূলিসাৎ করা হয়। এরূপ ব্যক্তিকে হাশরের ময়দানেও চরম লাঞ্ছনাকর অবস্থায় উঠানো হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক হাদীছে আছে ما يزال الرجل يسأل الناس حتى يأتي يوم القيامة ليس في وجهه مزعة لحم কোনও ব্যক্তি মানুষের কাছে সওয়াল করতে থাকে। পরিশেষে কিয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় আসবে যে, তার চেহারায় গোশত বলতে কিছু থাকবে না।
চেহারা গোশতশূন্য হওয়াটা হীনতা ও লাঞ্ছনার নিদর্শন। কাজেই চরম ঠ্যাকা অবস্থা না হলে কারও কাছে হাত পাতা উচিত নয়। এর দ্বারা আত্মসম্মান নষ্ট হয় ও আখলাক-চরিত্র ধ্বংস হয়। প্রত্যেক ঈমানদারের এর থেকে বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা দান করার শ্রেষ্ঠত্ব ও দান গ্রহণের হেয়ত্ব জানা যাচ্ছে। তাই আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য দানশীলতার গুণ অর্জন করা।
খ. বিনা প্রয়োজনে অন্যের কাছে চাওয়া নেহাৎ মন্দ। সুতরাং নিজের যা-ই আছে তাতে সন্তুষ্ট থেকে অন্যের কাছে চাওয়া হতে বিরত থাকা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: