রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৭. রোগীর শুশ্রূষা ও মাইয়্যেতের প্রতি কর্তব্য
হাদীস নং: ৯৩৯
পরিচ্ছেদ:১৪ জানাযার নামাযে কী পড়া হবে
জানাযার নামাযের তাকবীর চারটি
হাদীছ নং: ৯৩৯
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আবূ আওফা রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত যে, তিনি তার কন্যার জানাযায় চারবার তাকবীর দেন। চতুর্থ তাকবীরের পর দুই তাকবীরের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ দাঁড়িয়ে তার জন্য ইস্তিগফার ও দু'আ করেন। তারপর বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি চারবার তাকবীর দেন। তারপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। আমরা মনে করলাম তিনি বুঝি পঞ্চমবার তাকবীর বলবেন। তারপর তিনি তার ডান ও বামদিকে সালাম ফেরালেন। তিনি জানাযা শেষ করলে আমরা তাকে বললাম, এটা কী করলেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেমন করতে দেখেছি, তারচে' বেশি কিছু করি না। অথবা তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন। -হাকিম
(হাকিম, আল-মুস্তাদরাক: ১৩৩০; সুনানে ইবন মাজাহ: ১৫০৩; মুসনাদুল হুমায়দী: ৭৩৫: মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৬৪০৪; মুসনাদে আহমাদ: ১৯১৪০; তাবারানী, আল মু'জামুস সগীর: ২৬৮; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার: ২৮৩৮; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ৬৯৮৮)
হাদীছ নং: ৯৩৯
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আবূ আওফা রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত যে, তিনি তার কন্যার জানাযায় চারবার তাকবীর দেন। চতুর্থ তাকবীরের পর দুই তাকবীরের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ দাঁড়িয়ে তার জন্য ইস্তিগফার ও দু'আ করেন। তারপর বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি চারবার তাকবীর দেন। তারপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। আমরা মনে করলাম তিনি বুঝি পঞ্চমবার তাকবীর বলবেন। তারপর তিনি তার ডান ও বামদিকে সালাম ফেরালেন। তিনি জানাযা শেষ করলে আমরা তাকে বললাম, এটা কী করলেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেমন করতে দেখেছি, তারচে' বেশি কিছু করি না। অথবা তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন। -হাকিম
(হাকিম, আল-মুস্তাদরাক: ১৩৩০; সুনানে ইবন মাজাহ: ১৫০৩; মুসনাদুল হুমায়দী: ৭৩৫: মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৬৪০৪; মুসনাদে আহমাদ: ১৯১৪০; তাবারানী, আল মু'জামুস সগীর: ২৬৮; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার: ২৮৩৮; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ৬৯৮৮)
باب مَا يقرأ في صلاة الجنازة
939 - وعن عبدِ الله بنِ أبي أَوْفى رضي الله عنهما: أنَّهُ كَبَّرَ عَلَى جَنَازَةِ ابْنَةٍ لَهُ أرْبَعَ تَكْبِيرَاتٍ، فَقَامَ بَعْدَ الرَّابِعَةِ كَقَدْرِ مَا بَيْنَ التَّكْبِيرَتَيْنِ يَسْتَغْفِرُ لَهَا وَيَدْعُو، ثُمَّ قَالَ: كَانَ رسول اللهِ - صلى الله عليه وسلم - يَصْنَعُ هكَذَا.
وفي رواية: كَبَّرَ أرْبَعًا فَمَكَثَ سَاعَةً حَتَّى ظَنَنْتُ أنَّهُ سَيُكَبِّرُ خَمْسًا، ثُمَّ سَلَّمَ عَنْ يَمينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ. فَلَمَّا انْصَرَفَ قُلْنَا لَهُ: مَا هَذَا؟ فَقَالَ: إنِّي لاَ أزيدُكُمْ عَلَى مَا رأيْتُ رسولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - يَصْنَعُ، أَوْ: هكَذَا صَنَعَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم. رواه الحاكم، (1) وقال: «حديث صحيح».
وفي رواية: كَبَّرَ أرْبَعًا فَمَكَثَ سَاعَةً حَتَّى ظَنَنْتُ أنَّهُ سَيُكَبِّرُ خَمْسًا، ثُمَّ سَلَّمَ عَنْ يَمينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ. فَلَمَّا انْصَرَفَ قُلْنَا لَهُ: مَا هَذَا؟ فَقَالَ: إنِّي لاَ أزيدُكُمْ عَلَى مَا رأيْتُ رسولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - يَصْنَعُ، أَوْ: هكَذَا صَنَعَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم. رواه الحاكم، (1) وقال: «حديث صحيح».
হাদীসের ব্যাখ্যা:
জানাযার নামাযে চারটি তাকবীর। প্রসিদ্ধ বর্ণনাসমূহ অনুযায়ী প্রথম তাকবীরের পর ছানা পড়তে হয়, দ্বিতীয় তাকবীরের পর দরূদ শরীফ, তৃতীয় তাকবীরের পর দু'আ এবং চতুর্থ তাকবীরের পর সালাম। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আবূ আওফা রাযি. চার তাকবীরের সঙ্গেই জানাযার নামায পড়েছেন। তবে আলোচ্য বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে তিনি চতুর্থ তাকবীরের পর দুই তাকবীরের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ দেরি করেছেন এবং তখন মায়্যিতের জন্য ইস্তিগফার ও দু'আ করেছেন। তারপর তিনি জানান যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এরকম করতেন।
লক্ষণীয়, বর্ণনাটির দ্বিতীয় সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চতুর্থ তাকবীরের পর দেরি করলে উপস্থিত মুসল্লীদের কাছে তা অভিনব মনে হয়েছে। তাদের ধারণা হয়েছিল বুঝি বা তিনি আরও একবার তাকবীর দেবেন এবং পাঁচ তাকবীরে জানাযা পড়বেন। তারা বিষয়টি প্রকাশই করে ফেলেন। জানাযার নামায শেষ হওয়ার পর জিজ্ঞেসই করে বসেন যে, আপনি এটা কী করলেন? অর্থাৎ প্রচলিত নিয়ম তো হল চতুর্থ তাকবীরের পর দেরি না করে সালাম ফিরিয়ে ফেলা। আপনি তো দেরি করলেন? অতিরিক্ত এ কাজটি কেন করলেন? তিনি উত্তর দিলেন যে, আমি অতিরিক্ত কিছু করিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেমন করতে দেখেছি তেমনই করেছি।
বোঝা গেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো কখনও চতুর্থ তাকবীরের পরও ইস্তিগফার ও দু'আ পড়েছেন। তাই কোনও কোনও ইমামের মতে চতুর্থ তাকবীরের পরও মায়্যিতের জন্য দু'আ করার অবকাশ আছে। তবে যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাধারণ নিয়ম ছিল কেবল তৃতীয় তাকবীরের পরই দু'আ পড়া এবং চতুর্থ তাকবীরের পর দেরি না করে সালাম ফিরিয়ে দেওয়া, তাই উত্তম এটাই। হানাফী ইমামগণ এ মতকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
প্রকাশ থাকে যে, হানাফী মাযহাব অনুযায়ী জানাযার নামাযও ডান ও বাম উভয়দিকে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে শেষ করতে হয়। যদিও কোনও কোনও মাযহাবে জানাযার নামাযে সালাম মাত্র একবার এবং তা ডান দিকে। বিভিন্ন হাদীছে তারও প্রমাণ আছে। আলোচ্য হাদীছটিতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আবূ আওফা রাযি. দু'দিকেই সালাম ফিরিয়েছেন। তাছাড়া হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন-
'এমন তিনটি কাজ রয়েছে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন, কিন্তু লোকে তা ছেড়ে দিয়েছে। তার মধ্যে একটি হল জানাযার নামাযের সালাম অন্যান্য নামাযের সালামের মতোই’। (বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৬৯৮৯)
অর্থাৎ অন্যান্য নামাযে যেমন দু'দিকে সালাম ফেরানো হয়, জানাযাও সেরকম দুই সালামের মাধ্যমে শেষ করতে হয়। ইমাম তিরমিযী রহ.-এর বর্ণনামতে ইমাম সুফয়ান ছাওরী রহ., ইমাম আবু হানীফা রহ., ইমাম শাফি'ঈ রহ.-সহ সালাফের একদল আলেমের মত এরকমই। তবে হাদীছে যেহেতু উভয়রকম বার্ণনাই আছে, তাই এ নিয়ে বিতর্ক করা উচিত নয়। যে মত অনুযায়ী আমল করা হোক তাই সুন্নতসম্মত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জানাযার তাকবীর চারটি।
খ. চতুর্থ তাকবীরের পরও মায়্যিতের জন্য দু'আ ও ইস্তিগফার করার অবকাশ আছে। তবে উত্তম হল কেবল তৃতীয় তাকবীরের পর দু'আ-ইস্তিগফার করা।
গ. প্রচলিত নিয়মের ব্যতিক্রম কোনও আমল কেউ করলে সে বিষয়ে প্রশ্ন করে মনের খটকা দূর করে নেওয়া উচিত।
ঘ. অন্যান্য নামাযের মতো জানাযার নামাযেও সালাম দু'টি।
লক্ষণীয়, বর্ণনাটির দ্বিতীয় সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চতুর্থ তাকবীরের পর দেরি করলে উপস্থিত মুসল্লীদের কাছে তা অভিনব মনে হয়েছে। তাদের ধারণা হয়েছিল বুঝি বা তিনি আরও একবার তাকবীর দেবেন এবং পাঁচ তাকবীরে জানাযা পড়বেন। তারা বিষয়টি প্রকাশই করে ফেলেন। জানাযার নামায শেষ হওয়ার পর জিজ্ঞেসই করে বসেন যে, আপনি এটা কী করলেন? অর্থাৎ প্রচলিত নিয়ম তো হল চতুর্থ তাকবীরের পর দেরি না করে সালাম ফিরিয়ে ফেলা। আপনি তো দেরি করলেন? অতিরিক্ত এ কাজটি কেন করলেন? তিনি উত্তর দিলেন যে, আমি অতিরিক্ত কিছু করিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেমন করতে দেখেছি তেমনই করেছি।
বোঝা গেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো কখনও চতুর্থ তাকবীরের পরও ইস্তিগফার ও দু'আ পড়েছেন। তাই কোনও কোনও ইমামের মতে চতুর্থ তাকবীরের পরও মায়্যিতের জন্য দু'আ করার অবকাশ আছে। তবে যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাধারণ নিয়ম ছিল কেবল তৃতীয় তাকবীরের পরই দু'আ পড়া এবং চতুর্থ তাকবীরের পর দেরি না করে সালাম ফিরিয়ে দেওয়া, তাই উত্তম এটাই। হানাফী ইমামগণ এ মতকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
প্রকাশ থাকে যে, হানাফী মাযহাব অনুযায়ী জানাযার নামাযও ডান ও বাম উভয়দিকে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে শেষ করতে হয়। যদিও কোনও কোনও মাযহাবে জানাযার নামাযে সালাম মাত্র একবার এবং তা ডান দিকে। বিভিন্ন হাদীছে তারও প্রমাণ আছে। আলোচ্য হাদীছটিতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আবূ আওফা রাযি. দু'দিকেই সালাম ফিরিয়েছেন। তাছাড়া হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন-
'এমন তিনটি কাজ রয়েছে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন, কিন্তু লোকে তা ছেড়ে দিয়েছে। তার মধ্যে একটি হল জানাযার নামাযের সালাম অন্যান্য নামাযের সালামের মতোই’। (বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৬৯৮৯)
অর্থাৎ অন্যান্য নামাযে যেমন দু'দিকে সালাম ফেরানো হয়, জানাযাও সেরকম দুই সালামের মাধ্যমে শেষ করতে হয়। ইমাম তিরমিযী রহ.-এর বর্ণনামতে ইমাম সুফয়ান ছাওরী রহ., ইমাম আবু হানীফা রহ., ইমাম শাফি'ঈ রহ.-সহ সালাফের একদল আলেমের মত এরকমই। তবে হাদীছে যেহেতু উভয়রকম বার্ণনাই আছে, তাই এ নিয়ে বিতর্ক করা উচিত নয়। যে মত অনুযায়ী আমল করা হোক তাই সুন্নতসম্মত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জানাযার তাকবীর চারটি।
খ. চতুর্থ তাকবীরের পরও মায়্যিতের জন্য দু'আ ও ইস্তিগফার করার অবকাশ আছে। তবে উত্তম হল কেবল তৃতীয় তাকবীরের পর দু'আ-ইস্তিগফার করা।
গ. প্রচলিত নিয়মের ব্যতিক্রম কোনও আমল কেউ করলে সে বিষয়ে প্রশ্ন করে মনের খটকা দূর করে নেওয়া উচিত।
ঘ. অন্যান্য নামাযের মতো জানাযার নামাযেও সালাম দু'টি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
