রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৭. রোগীর শুশ্রূষা ও মাইয়্যেতের প্রতি কর্তব্য
হাদীস নং: ৯২৮
রোগীর শুশ্রূষা ও মাইয়্যেতের প্রতি কর্তব্য
পরিচ্ছেদ:১২ মায়্যিতের জানাযা পড়া, তার সাথে যাওয়া এবং তার দাফনে উপস্থিত থাকা। লাশের সঙ্গে নারীদের না যাওয়া
জানাযায় অংশগ্রহণ ও দাফনে উপস্থিত থাকার ফযীলত
হাদীছ নং: ৯২৮
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মায়্যিতের কাছে উপস্থিত থাকে এবং জানাযার নামায আদায় করে, তার জন্য রয়েছে এক কীরাত পরিমাণ ছাওয়াব। আর যে ব্যক্তি তাকে দাফন করা পর্যন্ত উপস্থিত থাকে, তার জন্য রয়েছে দুই কীরাত। জিজ্ঞেস করা হল, দুই কীরাত কী? তিনি বললেন, বড় বড় দুটি পাহাড়ের সমান। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৩২৫; সহীহ মুসলিম: ৯৪৫; জামে তিরমিযী: ১০৪০; সুনানে আবু দাউদ: ৩১৬৮; সুনানে ইবন মাজাহ : ১৫৩৯; মুসনাদে আবূ দাঊদ তয়ালিসী: ২৭০৪; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৬২৭০; মুসনাদে আহমাদ: ১১৬১৫; সুনানে নাসাঈ : ১৯৯৪; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৬১৮৮)
হাদীছ নং: ৯২৮
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মায়্যিতের কাছে উপস্থিত থাকে এবং জানাযার নামায আদায় করে, তার জন্য রয়েছে এক কীরাত পরিমাণ ছাওয়াব। আর যে ব্যক্তি তাকে দাফন করা পর্যন্ত উপস্থিত থাকে, তার জন্য রয়েছে দুই কীরাত। জিজ্ঞেস করা হল, দুই কীরাত কী? তিনি বললেন, বড় বড় দুটি পাহাড়ের সমান। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৩২৫; সহীহ মুসলিম: ৯৪৫; জামে তিরমিযী: ১০৪০; সুনানে আবু দাউদ: ৩১৬৮; সুনানে ইবন মাজাহ : ১৫৩৯; মুসনাদে আবূ দাঊদ তয়ালিসী: ২৭০৪; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৬২৭০; মুসনাদে আহমাদ: ১১৬১৫; সুনানে নাসাঈ : ১৯৯৪; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৬১৮৮)
كتاب عيادة المريض وتشييع الميت والصلاة عليه وحضور دفنه والمكث عند قبره بعد دفنه
باب الصلاة عَلَى الميت وتشييعه وحضور دفنه، وكراهة اتباع النساء الجنائز
928 - عن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ شَهِدَ الجَنَازَةَ حَتَّى يُصَلَّى عَلَيْهَا، فَلَهُ قِيراطٌ، وَمَنْ شَهِدَهَا حَتَّى تُدْفَنَ، فَلَهُ قِيرَاطَانِ» قِيلَ: وَمَا القِيرَاطانِ؟ قَالَ: «مِثْلُ الجَبَلَيْنِ العَظِيمَيْنِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করা, মায়্যিতের সঙ্গে কবর পর্যন্ত যাওয়া এবং দাফনকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করার বিশাল ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করলে এক কীরাত পরিমাণ ছাওয়াব পাওয়া যায়। দাফন শেষ হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করলে ছাওয়াব পাওয়া যায় দুই কীরাত পরিমাণ। এক বর্ণনায় আছে-
وَمَنِ اتَّبَعَ جَنَازَةً حَتَّى يُقْضَى دَفْنُهَا كُتِبَ لَهُ ثَلَاثَةُ قَرَارِيطَ
'যে ব্যক্তি মায়্যিতের সঙ্গে চলে এবং যতক্ষণ যাবৎ না তার জানাযা শেষ হয় তার সঙ্গে থাকে, তার জন্য তিন কীরাত (পরিমাণ ছাওয়াব) লেখা হয়’। (তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৯২৯২; মাকারিমুল আখলাক : ১০১)
সম্ভবত তিন কাজের জন্য তিন কীরাত। এক হল মায়্যিতের কাছে যাওয়া, দ্বিতীয় তার জানাযায় শরীক হওয়া এবং তৃতীয় হল কবর পর্যন্ত তাকে বিদায় জানানো। মায়্যিতকে গোসল করানো, কাফন পরানো ও দাফনের কাজে অংশগ্রহণ করার ছাওয়াব এর অতিরিক্ত। হাদীছে 'কীরাত'-এর অর্থ করা হয়েছে বড় পাহাড়। এর দ্বারা বোঝা যায় কীরাত দ্বারা মূল উদ্দেশ্য পরিমাণের বিশালতা বোঝানো। সাধারণত বিশালতা বোঝানোর জন্য পাহাড়ের উদাহরণ দেওয়া হয়ে থাকে। বলা হয়, পাহাড়ের মতো বড়। পাহাড়ের মধ্যেও ছোট বড় আছে। হাদীছে ছাওয়াবের পরিমাণকে সাধারণ পাহাড়ের সঙ্গে নয়; বরং বড় বড় পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। মদীনা মুনাওয়ারায় বড় পাহাড় হল উহুদ। তাই হাদীছে বলা হয়েছে, কীরাত হল উহুদ পাহাড় পরিমাণ।
হাদীছটি দ্বারা বোঝা যায় মায়্যিত সংক্রান্ত প্রতিটি আমলই অনেক মূল্যবান। তা দ্বারা বিপুল ছাওয়াব অর্জন করা যায়। কেউ মারা গেলে তার লাশের পাশে হাজির হওয়া একটি বড় আমল। তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা আরেকটি বড় আমল। জানাযার পর মায়্যিতের সঙ্গে যাওয়া এবং দাফন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কবরের কাছে অবস্থান করা আরেকটি বড় আমল। এর প্রত্যেকটি আমল দ্বারা বিপুল পরিমাণ ছাওয়াব পাওয়া যায়। তাই মুসলিমমাত্রেরই উচিত গুরুত্বের সঙ্গে এসব আমলে অংশগ্রহণ করা।
বলাবাহুল্য, এ বিপুল ছাওয়াব পাওয়ার জন্য ঈমান শর্ত। সেইসঙ্গে নিয়তও খালেস হতে হবে। উদ্দেশ্য থাকতে হবে ছাওয়াব হাসিল করা। তাই দ্বিতীয় হাদীছটিতে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে-
مَنِ اتَّبَعَ جَنَازَة مُسْلِمٍ إِيْمَانًا وَاحتِسَابًا (যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে কোনও মুসলিম ব্যক্তির লাশের সঙ্গে চলে)। বস্তুত যে-কোনও সৎকর্মই আল্লাহ তা'আলার কাছে কবুল হয় কেবল তখনই, যখন আমলকারী ঈমানওয়ালা হয় এবং তার নিয়ত খালেস হয়। অর্থাৎ মানুষকে দেখানো ও দল ভারী করা তার উদ্দেশ্য না হয়।
প্রকৃতপক্ষে জানাযায় অংশগ্রহণ করা ঈমানেরও দাবি। এটা মুসলিম ব্যক্তির হক। এর দ্বারা মায়্যিতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়। এ সহমর্মিতা প্রকাশ করাটা জরুরি। কেননা কেউ মারা গেলে পরিবারের লোকজন শোকার্ত হয়ে পড়ে। তাদের মন ভেঙে যায়। মানসিকভাবে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা তাদের বড় প্রয়োজন। তাদের পক্ষে অন্যের সাহায্য ছাড়া মায়্যিতের দাফন-কাফন ও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে যায়। তাই আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর উচিত নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া। কেউ মায়্যিতকে গোসল করাবে, কেউ কাফনের বন্দোবস্ত করবে, কেউ কবর খুঁড়বে, কেউ আসবাবপত্র কেনাকাটা করবে এবং কেউ পরিবারের লোকজনকে সঙ্গ দেবে ও সান্ত্বনা যোগাবে। এভাবে সবাই মিলে পরিবারটির পাশে দাঁড়ালে তারা মানসিক শক্তি পাবে। তারা বুঝতে পারবে লোকজন তাদের সঙ্গে আছে। ফলে সহজেই তারা শোক কাটিয়ে উঠতে পারবে। ইসলাম মহানুভবতার দীন। মানবিকতার দীন। প্রতিটি মানবিক ক্ষেত্রে তার রয়েছে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা। যে-কারও মৃত্যু তার পরিবারের জন্য সর্বাপেক্ষা বেশি মর্মান্তিক হয়ে থাকে। তাই এ অবস্থায় অন্যদের কাছে মানবিক আচরণ পাওয়া এ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। প্রত্যেক মুসলিম যাতে মায়্যিতের পরিবারের সে হক আদায় করে, ইসলাম তাতে বিশেষ তাগিদ করেছে ও গভীর উৎসাহ যুগিয়েছে। মুমিন ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা বেশি উৎসাহ বোধ করে আখিরাতের প্রতিদান ও ছাওয়াবের ওয়াদা দ্বারা। আলোচ্য হাদীছটিতে সে ওয়াদাই করা হয়েছে। পাহাড় পরিমাণ ছাওয়াব সহজ কথা তো নয়। কিন্তু যে আমল দ্বারা সে ছাওয়াব পাওয়া যায় তা অতি সহজ। সহজ আমল দ্বারা এ বিপুল ছাওয়াব অর্জনে আমরা কি উৎসাহী হব না? আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
উল্লেখ্য, সকলের জন্য এর প্রতিটি কাজকে অপরিহার্য করা হয়নি। এমনিতে দাফন-কাফনের কাজ ফরযে কেফায়া বটে, অর্থাৎ কিছু সংখ্যক লোক এসব কাজ সম্পাদন করলেই সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়, কিন্তু ছাওয়াব অর্জনের পথ সকলের জন্যই উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। যার যেমন সুবিধা সে তেমনি এ ছাওয়াবের কাজে অংশগ্রহণ করবে। যার পক্ষে সম্ভব সে মায়্যিতের বাড়ি হাজির হওয়া, জানাযার নামায পড়া ও দাফন-কাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সঙ্গে থাকা, সবগুলোই করবে। তাতে সে সবগুলো কাজের ছাওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি কেবল জানাযা পড়তে পারে, সে এটাই করবে। যার দেরি হয়ে যায়, জানাযায় শরীক হতে পারে না, সে পারলে দাফনে শরীক হবে। যে-কোনও একটি করলেও অন্তত এক কীরাত পরিমাণ ছাওয়াব পাবে। তাই সবগুলো কাজ না পারলে অন্ততপক্ষে যেটি করা সম্ভব সেটি অবশ্যই করা উচিত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহর কাছে সৎকর্ম কবুল হওয়ার জন্য ঈমান ও সহীহ নিয়ত থাকা শর্ত।
খ. জানাযার নামায পড়া ও মায়্যিতকে কবর পর্যন্ত পৌছিয়ে দেওয়া অনেক বড় ছাওয়াবের কাজ। এর দ্বারা মায়্যিতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতাও প্রকাশ পায়।
গ. জানাযার নামায পড়া ও মায়্যিতকে বিদায় জানানোর ছাওয়াব প্রকৃতপক্ষে অনেক বড়। তার বিশালত্ব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। বড় পাহাড়ের উদাহরণ কেবলই একটা দৃষ্টান্ত।
ঘ. জানাযার নামায ও মায়্যিতকে বিদায় জানানোর কাজে উৎসাহদান যেমন এসব কাজে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার রহমত, তেমনি এটা মায়্যিতের প্রতিও রহমত বটে। জানাযার নামাযে অংশগ্রহণকারী বেশি হলে তার জন্য দু'আকারী ও তার পক্ষে সুপারিশকারীও বেশি হয়। এটা তার নাজাতলাভে সহায়ক।
ঙ. মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার কাছে বিশেষ মর্যাদাবান। তাই সকলকে তার জানাযা ও দাফন-কাফনে অংশগ্রহণে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
وَمَنِ اتَّبَعَ جَنَازَةً حَتَّى يُقْضَى دَفْنُهَا كُتِبَ لَهُ ثَلَاثَةُ قَرَارِيطَ
'যে ব্যক্তি মায়্যিতের সঙ্গে চলে এবং যতক্ষণ যাবৎ না তার জানাযা শেষ হয় তার সঙ্গে থাকে, তার জন্য তিন কীরাত (পরিমাণ ছাওয়াব) লেখা হয়’। (তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৯২৯২; মাকারিমুল আখলাক : ১০১)
সম্ভবত তিন কাজের জন্য তিন কীরাত। এক হল মায়্যিতের কাছে যাওয়া, দ্বিতীয় তার জানাযায় শরীক হওয়া এবং তৃতীয় হল কবর পর্যন্ত তাকে বিদায় জানানো। মায়্যিতকে গোসল করানো, কাফন পরানো ও দাফনের কাজে অংশগ্রহণ করার ছাওয়াব এর অতিরিক্ত। হাদীছে 'কীরাত'-এর অর্থ করা হয়েছে বড় পাহাড়। এর দ্বারা বোঝা যায় কীরাত দ্বারা মূল উদ্দেশ্য পরিমাণের বিশালতা বোঝানো। সাধারণত বিশালতা বোঝানোর জন্য পাহাড়ের উদাহরণ দেওয়া হয়ে থাকে। বলা হয়, পাহাড়ের মতো বড়। পাহাড়ের মধ্যেও ছোট বড় আছে। হাদীছে ছাওয়াবের পরিমাণকে সাধারণ পাহাড়ের সঙ্গে নয়; বরং বড় বড় পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। মদীনা মুনাওয়ারায় বড় পাহাড় হল উহুদ। তাই হাদীছে বলা হয়েছে, কীরাত হল উহুদ পাহাড় পরিমাণ।
হাদীছটি দ্বারা বোঝা যায় মায়্যিত সংক্রান্ত প্রতিটি আমলই অনেক মূল্যবান। তা দ্বারা বিপুল ছাওয়াব অর্জন করা যায়। কেউ মারা গেলে তার লাশের পাশে হাজির হওয়া একটি বড় আমল। তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা আরেকটি বড় আমল। জানাযার পর মায়্যিতের সঙ্গে যাওয়া এবং দাফন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কবরের কাছে অবস্থান করা আরেকটি বড় আমল। এর প্রত্যেকটি আমল দ্বারা বিপুল পরিমাণ ছাওয়াব পাওয়া যায়। তাই মুসলিমমাত্রেরই উচিত গুরুত্বের সঙ্গে এসব আমলে অংশগ্রহণ করা।
বলাবাহুল্য, এ বিপুল ছাওয়াব পাওয়ার জন্য ঈমান শর্ত। সেইসঙ্গে নিয়তও খালেস হতে হবে। উদ্দেশ্য থাকতে হবে ছাওয়াব হাসিল করা। তাই দ্বিতীয় হাদীছটিতে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে-
مَنِ اتَّبَعَ جَنَازَة مُسْلِمٍ إِيْمَانًا وَاحتِسَابًا (যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে কোনও মুসলিম ব্যক্তির লাশের সঙ্গে চলে)। বস্তুত যে-কোনও সৎকর্মই আল্লাহ তা'আলার কাছে কবুল হয় কেবল তখনই, যখন আমলকারী ঈমানওয়ালা হয় এবং তার নিয়ত খালেস হয়। অর্থাৎ মানুষকে দেখানো ও দল ভারী করা তার উদ্দেশ্য না হয়।
প্রকৃতপক্ষে জানাযায় অংশগ্রহণ করা ঈমানেরও দাবি। এটা মুসলিম ব্যক্তির হক। এর দ্বারা মায়্যিতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়। এ সহমর্মিতা প্রকাশ করাটা জরুরি। কেননা কেউ মারা গেলে পরিবারের লোকজন শোকার্ত হয়ে পড়ে। তাদের মন ভেঙে যায়। মানসিকভাবে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা তাদের বড় প্রয়োজন। তাদের পক্ষে অন্যের সাহায্য ছাড়া মায়্যিতের দাফন-কাফন ও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে যায়। তাই আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর উচিত নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া। কেউ মায়্যিতকে গোসল করাবে, কেউ কাফনের বন্দোবস্ত করবে, কেউ কবর খুঁড়বে, কেউ আসবাবপত্র কেনাকাটা করবে এবং কেউ পরিবারের লোকজনকে সঙ্গ দেবে ও সান্ত্বনা যোগাবে। এভাবে সবাই মিলে পরিবারটির পাশে দাঁড়ালে তারা মানসিক শক্তি পাবে। তারা বুঝতে পারবে লোকজন তাদের সঙ্গে আছে। ফলে সহজেই তারা শোক কাটিয়ে উঠতে পারবে। ইসলাম মহানুভবতার দীন। মানবিকতার দীন। প্রতিটি মানবিক ক্ষেত্রে তার রয়েছে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা। যে-কারও মৃত্যু তার পরিবারের জন্য সর্বাপেক্ষা বেশি মর্মান্তিক হয়ে থাকে। তাই এ অবস্থায় অন্যদের কাছে মানবিক আচরণ পাওয়া এ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। প্রত্যেক মুসলিম যাতে মায়্যিতের পরিবারের সে হক আদায় করে, ইসলাম তাতে বিশেষ তাগিদ করেছে ও গভীর উৎসাহ যুগিয়েছে। মুমিন ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা বেশি উৎসাহ বোধ করে আখিরাতের প্রতিদান ও ছাওয়াবের ওয়াদা দ্বারা। আলোচ্য হাদীছটিতে সে ওয়াদাই করা হয়েছে। পাহাড় পরিমাণ ছাওয়াব সহজ কথা তো নয়। কিন্তু যে আমল দ্বারা সে ছাওয়াব পাওয়া যায় তা অতি সহজ। সহজ আমল দ্বারা এ বিপুল ছাওয়াব অর্জনে আমরা কি উৎসাহী হব না? আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
উল্লেখ্য, সকলের জন্য এর প্রতিটি কাজকে অপরিহার্য করা হয়নি। এমনিতে দাফন-কাফনের কাজ ফরযে কেফায়া বটে, অর্থাৎ কিছু সংখ্যক লোক এসব কাজ সম্পাদন করলেই সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়, কিন্তু ছাওয়াব অর্জনের পথ সকলের জন্যই উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। যার যেমন সুবিধা সে তেমনি এ ছাওয়াবের কাজে অংশগ্রহণ করবে। যার পক্ষে সম্ভব সে মায়্যিতের বাড়ি হাজির হওয়া, জানাযার নামায পড়া ও দাফন-কাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সঙ্গে থাকা, সবগুলোই করবে। তাতে সে সবগুলো কাজের ছাওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি কেবল জানাযা পড়তে পারে, সে এটাই করবে। যার দেরি হয়ে যায়, জানাযায় শরীক হতে পারে না, সে পারলে দাফনে শরীক হবে। যে-কোনও একটি করলেও অন্তত এক কীরাত পরিমাণ ছাওয়াব পাবে। তাই সবগুলো কাজ না পারলে অন্ততপক্ষে যেটি করা সম্ভব সেটি অবশ্যই করা উচিত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহর কাছে সৎকর্ম কবুল হওয়ার জন্য ঈমান ও সহীহ নিয়ত থাকা শর্ত।
খ. জানাযার নামায পড়া ও মায়্যিতকে কবর পর্যন্ত পৌছিয়ে দেওয়া অনেক বড় ছাওয়াবের কাজ। এর দ্বারা মায়্যিতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতাও প্রকাশ পায়।
গ. জানাযার নামায পড়া ও মায়্যিতকে বিদায় জানানোর ছাওয়াব প্রকৃতপক্ষে অনেক বড়। তার বিশালত্ব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। বড় পাহাড়ের উদাহরণ কেবলই একটা দৃষ্টান্ত।
ঘ. জানাযার নামায ও মায়্যিতকে বিদায় জানানোর কাজে উৎসাহদান যেমন এসব কাজে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার রহমত, তেমনি এটা মায়্যিতের প্রতিও রহমত বটে। জানাযার নামাযে অংশগ্রহণকারী বেশি হলে তার জন্য দু'আকারী ও তার পক্ষে সুপারিশকারীও বেশি হয়। এটা তার নাজাতলাভে সহায়ক।
ঙ. মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার কাছে বিশেষ মর্যাদাবান। তাই সকলকে তার জানাযা ও দাফন-কাফনে অংশগ্রহণে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)