রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৭. রোগীর শুশ্রূষা ও মাইয়্যেতের প্রতি কর্তব্য

হাদীস নং: ৯২৭
পরিচ্ছেদ:১১ মায়্যিতের মধ্যে অপ্রীতিকর কিছু দেখলে তা প্রকাশ না করা
হাদীছ নং: ৯২৭

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত গোলাম আবু রাফে’ আসলাম রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনও মায়্যিতকে গোসল করায়, তারপর সে তার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তা'আলা তাকে চল্লিশবার ক্ষমা করেন। -হাকিম
(হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ১৩০৭; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর : ৯২৯)
باب الكف عن مَا يرى من الميت من مكروه
927 - وعن أَبي رافع أسلم مولى رسول الله - صلى الله عليه وسلم: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ غَسَّلَ مَيتًا فَكَتَمَ عَلَيْهِ، غَفَرَ اللهُ لَهُ أربَعِينَ مَرَّة». رواه الحاكم، (1) وقال: صحيح عَلَى شرط مسلم.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা মায়্যিতকে গোসল করায় কিংবা মায়্যিতকে দেখার সুযোগ হয়, তাদের জন্য এটি এক সতর্কবাণীও বটে। কেননা তাদের অনেকে মায়্যিতের শারীরিক দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে বেড়ায়। মৃত্যুযন্ত্রণায় অনেকের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায়। বাহ্যত সে দৃশ্য প্রীতিকর হয় না। এ কারণে অনেকে মায়্যিত সম্পর্কে কুধারণাও করে বসে। বাহ্যত যা দেখা যায়, তা দ্বারা যে মায়্যিতের ঈমান, আমলের অবস্থা নির্ণয় করা যায় না, এটা অনেকেই বোঝে না। ধরে নেয় তার ঈমান-আমলের অবস্থা ভালো নয় বলেই চেহারা এরকম হয়েছে। এ সবই ভুল। বান্দার প্রকৃত হাল আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাই এ জাতীয় বিষয় প্রচার করতে নেই; বরং গোপন রাখাই বাঞ্ছনীয়। হাদীছটিতে সে উৎসাহই দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে-
مَنْ غَسَّلَ ميتا فكتَمَ عَلَيْهِ، غَفَرَ اللَّهُ لَهُ أَرْبَعِينَ مَرَّةً (যে ব্যক্তি কোনও মায়্যিতকে গোসল করায়, তারপর সে তার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তা'আলা তাকে চল্লিশবার ক্ষমা করেন)। অর্থাৎ একবার একবার করে চল্লিশবার ক্ষমা করেন। প্রত্যেকবার কী পরিমাণ গুনাহ ক্ষমা করেন তা আল্লাহ তা'আলাই জানেন। তিনি সাত্তারুল 'উয়ুব। অতিশয় দোষগোপনকারী। অপর এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
من غَسَّلَ مَيّتًا، فَسَتَرَهُ سَتَرَهُ اللَّهُ مِنَ الذُّنُوبِ
'যে ব্যক্তি কোনও মায়্যিতকে গোসল করায়, তারপর তার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তা'আলা তার পাপরাশি গোপন রাখবেন’। (তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৮০৭৭)

বস্তুত যে ব্যক্তি কারও দোষ জানতে পারে, তার কর্তব্য তা গোপন রাখা। তার জন্য এটা আমানত। এ কথা জীবিত ও মৃত উভয়ের বেলায় প্রযোজ্য। মৃতব্যক্তির ক্ষেত্রে অধিকতর জরুরি। আর দোষ গোপন রাখা যখন আমানত, তখন প্রকাশ করাটা খেয়ানতের অন্তর্ভুক্ত বৈ কি। খেয়ানত করা কঠিন গুনাহ। এজন্যই যে-কারও দ্বারা মায়্যিতকে গোসল না করানোই ভালো। সর্বোত্তম হল মায়্যিতের নিকটজনেরাই তাকে গোসল করাবে। নিকটজনেরা না পারলে এমন কোনও ব্যক্তির উপর এ কাজ অর্পণ করা উচিত, যে একজন পরহেযগার ও আমানতদার লোকরূপে পরিচিত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মায়্যিতকে গোসল করানো অনেক বড় ছাওয়াবের কাজ।

খ. যে ব্যক্তি মায়্যিতকে গোসল করায়, তাকে অবশ্যই আমানতদার হতে হবে। মায়্যিতের কোনও খুঁত ও দোষ দেখতে পেলে তা কিছুতেই প্রকাশ করা চলবে না।

গ. পাপ থেকে ক্ষমা পাওয়ার একটা ভালো উপায় মায়্যিতের দোষ-খুঁত গোপন রাখা। তাই এ বিষয়ে আমাদেরকে খুব সচেতন হতে হবে।

ঘ. আল্লাহ তা'আলা বড় ক্ষমাশীল। তিনি অতি সহজ সহজ কাজের অছিলায়ও বান্দার পাপরাশি ক্ষমা করেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান