রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৭. রোগীর শুশ্রূষা ও মাইয়্যেতের প্রতি কর্তব্য

হাদীস নং: ৯২২
পরিচ্ছেদ:৯ মায়্যিতের কাছে যা বলবে এবং যার কেউ মারা যায় তাকে যা বলতে হবে
প্রিয় ব্যক্তির বিয়োগবেদনায় সবরের পুরস্কার
হাদীছ নং: ৯২২

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমার মুমিন বান্দার জন্যে আমার কাছে জান্নাত ছাড়া কোনও প্রতিদান নেই, যখন আমি দুনিয়াবাসীদের মধ্যে তার প্রিয়বস্তু কেড়ে নিই আর সে তার প্রতিদান আশা করে। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৬৪২৪; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৯৩৯৫; ইবনুল মুবারক, আয-যুহ্‌দ ওয়ার- রাকাইক, ২ খণ্ড, ২৭ পৃষ্ঠা; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৫৪৭)
باب ما يقال عند الميت وَمَا يقوله من مات له ميت
922 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «يقولُ اللهُ تَعَالَى: مَا لِعَبْدِي المُؤمِن عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أهْل الدُّنْيَا، ثُمَّ احْتَسَبَهُ إِلاَّ الجَنَّةَ». رواه البخاري. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে জানানো হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা যখন তাঁর বান্দার কোনও প্রিয়জনকে তুলে নেন অর্থাৎ তার মৃত্যু দান করেন, তখন বান্দার পক্ষে তা মোটেই অমঙ্গলজনক হয় না; বরং এর ভেতরও প্রভূত কল্যাণ নিহিত থাকে। এ হাদীছে একটি অভাবনীয় কল্যাণের কথা এই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বান্দা যদি সবর করে এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে ছাওয়াবের আশা রাখে, তবে তার প্রিয়জনকে নিয়ে যাওয়ার প্রতিদান হিসেবে তাকে জান্নাত দান করা হয়। আল্লাহু আকবার, বান্দার পক্ষে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে। আল্লাহর দেওয়া সন্তান আল্লাহ যখন ইচ্ছা নিয়ে যেতেই পারেন। এতে বান্দার কোনও আপত্তি চলে না। বরং তা মেনে নেওয়াই তার কর্তব্য। মেনে না নিলে সে অবশ্যই শাস্তিযোগ্য হবে। কিন্তু মেনে নিলে পুরস্কারযোগ্য হওয়ার কথা না। তা সত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলা পুরস্কারস্বরূপ জান্নাত দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। এটা কেবলই তাঁর রহমত, কেবলই তাঁর দয়া। এটা আমাদের ভালোভাবে চিন্তা করা উচিত। চিন্তা করা হয় না বলে দুর্বলচিত্ত বান্দা অনেক সময়ই অধৈর্য হয়ে পড়ে। তার পুত্র বা কন্যার মৃত্যুতে সে সবর করতে পারে না। অনেক সময় একে নিজের জন্যে আল্লাহ তা'আলার অসন্তুষ্টির প্রকাশ মনে করে। অন্যেও ভাবে তার উপর আল্লাহ তা'আলা বুঝি নারাজ হয়েছেন। এরূপ ধারণা নিতান্তই ভুল। এটা তো আল্লাহর পরীক্ষা।

আল্লাহ তা'আলা মুমিন বান্দাকে এভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। সে পরীক্ষায় সবর করলে পুরস্কার দেওয়ার ওয়াদাও করেছেন। কুরআন মাজীদেও ইরশাদ হয়েছে-
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ (155) الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (156) أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ (157)
'আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব (কখনও) কিছুটা ভয়ভীতি দ্বারা, (কখনও) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনও) জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদেরকে, যারা (এরূপ অবস্থায়) সবরের পরিচয় দেয়। যারা তাদের কোনও মুসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে, 'আমরা সকলে আল্লাহরই এবং আমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ করুণা ও দয়া রয়েছে এবং এরাই আছে হিদায়াতের উপর’। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৫-১৫৭)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ছেলেমেয়ের মৃত্যুতে আমাদেরকে অবশ্যই সবর করতে হবে। সবর করলে তার বিনিময়ে আখিরাতে জান্নাত লাভের ওয়াদা রয়েছে।

খ. সন্তান ছাড়াও অন্য কোনও প্রিয়বস্তু যদি হাতছাড়া হয়ে যায়, তাতেও সবরের পরিচয় দিতে হবে। দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কারলাভের ওয়াদা সে ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

গ. জান-মালসহ যে-কোনও ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হলে তাকে অমঙ্গল মনে করা উচিত নয়। কোনও না কোনও দিক থেকে তা অবশ্যই কল্যাণজনক। সর্বাপেক্ষা বড় কল্যাণ তো এই যে, তাতে সবর করলে আখিরাতের প্রতিদান লাভ হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)