রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৬. সালাম-মুসাফাহার আদব
হাদীস নং: ৮৭৮
সালাম-মুসাফাহার আদব
পরিচ্ছেদ:১২ হাঁচিদাতা আলহামদুলিল্লাহ বললে শ্রোতা কর্তৃক ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা আলহামদুলিল্লাহ না বললে ইয়ারহামুকাল্লাহ না বলা এবং হাঁচি দেওয়া ও হাই তোলা সংক্রান্ত অন্যান্য আদব
হাঁচির সঙ্গে সম্পৃক্ত দু'আসমূহ
হাদীছ নং: ৮৭৮
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে সে যেন বলে الْحَمْدُ لِلَّهِ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)। তার ভাই বা তার সঙ্গী যেন বলে يَرْحَمُكَ الله (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন)। সে যখন তাকে লক্ষ্য করে يَرْحَمُكَ الله বলবে, তখন যেন বলে يَهْدِيكُمُ الله وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (আল্লাহ তোমাদের হিদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা দুরস্ত করে দিন)। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ৬২২৪; সুনানে আবু দাউদ: ৫০৩৩; জামে তিরমিযী: ২৭৩৯; আল আদাবুল মুফরাদ: ৯২৭; সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৭১৫; মুসনাদে আহমাদ: ৯৭২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা : ২৫৯৯৭; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা: ৯৯৮৯; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫৯৯)
হাদীছ নং: ৮৭৮
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে সে যেন বলে الْحَمْدُ لِلَّهِ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)। তার ভাই বা তার সঙ্গী যেন বলে يَرْحَمُكَ الله (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন)। সে যখন তাকে লক্ষ্য করে يَرْحَمُكَ الله বলবে, তখন যেন বলে يَهْدِيكُمُ الله وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (আল্লাহ তোমাদের হিদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা দুরস্ত করে দিন)। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ৬২২৪; সুনানে আবু দাউদ: ৫০৩৩; জামে তিরমিযী: ২৭৩৯; আল আদাবুল মুফরাদ: ৯২৭; সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৭১৫; মুসনাদে আহমাদ: ৯৭২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা : ২৫৯৯৭; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা: ৯৯৮৯; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫৯৯)
كتاب السلام
باب استحباب تشميت العاطس إِذَا حمد الله تَعَالَى وكراهة تشميته إذا لَمْ يحمد الله تَعَالَى وبيان آداب التشميت والعطاس والتثاؤب
878 - وعنه، عن النبيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إِذَا عَطَسَ أحَدُكُمْ فَلْيَقُلْ: الحَمْدُ
للهِ، وَلْيَقُلْ لَهُ أخُوهُ أَوْ صَاحِبُهُ: يَرْحَمُكَ الله. فإذَا قَالَ لَهُ: يَرْحَمُكَ اللهُ، فَليَقُلْ: يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ». رواه البخاري. (1)
للهِ، وَلْيَقُلْ لَهُ أخُوهُ أَوْ صَاحِبُهُ: يَرْحَمُكَ الله. فإذَا قَالَ لَهُ: يَرْحَمُكَ اللهُ، فَليَقُلْ: يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ». رواه البخاري. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এই বিষয়ে তিনটি হাদীস দেখুন-
১. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে সে যেন বলে الْحَمْدُ لِلَّهِ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)। তার ভাই বা তার সঙ্গী যেন বলে يَرْحَمُكَ الله (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন)। সে যখন তাকে লক্ষ্য করে يَرْحَمُكَ الله বলবে, তখন যেন বলে يَهْدِيكُمُ الله وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (আল্লাহ তোমাদের হিদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা দুরস্ত করে দিন)।
২. হযরত আবূ মূসা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে, তখন তোমরা তার জবাবে ইয়াহামুকাল্লাহ বলো। সে যদি আলহামদুলিল্লাহ না বলে, তবে তোমরা ইয়ারহামুকাল্লাহ বলো না।
৩. হযরত আনাস রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে দুই ব্যক্তি হাঁচি দিল। তিনি তাদের একজনকে লক্ষ্য করে ইয়াহামুকাল্লাহ বললেন, অন্যজনকে লক্ষ্য করে তা বললেন না। যাকে লক্ষ্য করে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললেন না সে বলল, অমুকে হাঁচি দিল আর আপনি তাকে লক্ষ্য করে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললেন, অথচ আমি হাঁচি দিলে আপনি আমাকে লক্ষ্য করে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললেন না? তিনি বললেন, এ ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করেছে (আলহামদুলিল্লাহ বলেছে), কিন্তু তুমি আল্লাহর প্রশংসা করনি।
১ম হাদীছটিতে হাঁচি সম্পর্কে তিনটি দু'আ উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম হল الْحَمْدُ لِلَّهِ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)। হাঁচির মধ্যে বহু কল্যাণ আছে। তাই এটা আল্লাহর নি'আমত। আল্লাহর নি'আমত পাওয়ার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হাঁচি দেওয়ার পর হাঁচিদাতার الْحَمْدُ لِلَّهِ বলা উচিত। এটা সুন্নত।
হাঁচিদাতা যখন الْحَمْدُ لِلَّهِ বলবে, তখন যারা তা শুনবে তাদের কর্তব্য তার জন্য এই বলে দু'আ করা যে- يَرْحَمُكَ اللهُ (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন)। এটা বলা ওয়াজিব। উত্তম হল সকলেরই বলা। তবে যে-কোনও একজন বললে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।
শ্রোতা যখন يَرْحَمُكَ اللهُ বলে হাঁচিদাতার জন্য দু'আ করবে, তখন হাঁচিদাতারও তাদের জন্য দু'আ করা কর্তব্য। সে বলবে- يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (আল্লাহ তোমাদের হিদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা দুরস্ত করে দিন)। দু'আর বদলে দু'আ। হাঁচিদাতার পক্ষ থেকে এ দু'আ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতারও প্রকাশ।
হাঁচিদাতার الْحَمْدُ لِلَّهِ বলার জবাবে শ্রোতাদের يَرْحَمُكَ الله বলে দু'আ করাকে (তাশমীত) বলা হয়। تَشْمِیت এর মূল অর্থ কল্যাণ ও বরকতের দু'আ করা। يَرْحَمُكَ الله (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন) দ্বারা সেই দু'আ করা হয়। تشمِيتُ শব্দটির উৎপত্তি شماتة থেকে। এর অর্থ অন্যের বিপদে আনন্দিত হওয়া। تَشْمِیت অর্থ সেই আনন্দ প্রতিহত করা। যার প্রতি আল্লাহর রহমত হয় তার বিপদও কেটে যায়। ফলে শত্রুর আনন্দ ঘুচে যায়। যেহেতু এ দু'আটি পরিণামে শত্রুর আনন্দ ঘুচিয়ে দেয়, তাই একে تَشْمِیت নামে অভিহিত করা হয়েছে।
কারও মতে تَشْمِيْتُ এর উৎপত্তি شَوَامِتُ থেকে। شَوَامِتُ অর্থ হাত-পা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। সে হিসেবে تَشْمِیت অর্থ স্থিত ও প্রতিষ্ঠিত রাখা। يَرْحَمُكَ اللهُ বলার দ্বারা যে রহমতের দু'আ করা হয়, প্রকৃতপক্ষে তা দ্বারা হাঁচিদাতাকে দীনের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত রাখারই দু'আ করা হয়। তাই এ দু'আকে تَشْمِیت নাম দেওয়া হয়েছে।
তাশমীত করা হবে কেবল তখনই, যখন হাঁচিদাতা الْحَمْدُ لِلَّهِ বলবে। সে الْحَمْدُ لِلَّهِ না বললে তাশমীত করা হবে না। অর্থাৎ তার জন্য يَرْحَمُكَ الله বলে দু'আ করা হবে না, যেমনটা দ্বিতীয় হাদীছে বলা হয়েছে। কাজেই শ্রোতার পক্ষ থেকে يَرْحَمُكَ الله দু'আটি পাওয়ার আশা থাকলে হাঁচিদাতাকে অবশ্যই হাঁচি দেওয়ার পর الْحَمْدُلِلَّهِ বলতে হবে। অন্যথায় সে এই দু'আর হকদার হবে না। তৃতীয় হাদীছটিতে এরকমই একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। দু'জন সাহাবীর একজন হাঁচি দেওয়ার পর الْحَمْدُ لِلَّهِ বলেছেন, অপরজন বলেননি। তাতে দ্বিতীয়জন অনুযোগ করেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুকে হাঁচি দেওয়ার পর তো আপনি তাকে তাশমীত করেছেন, কিন্তু আমি হাঁচি দেওয়ার পর আপনি আমাকে তাশমীত করেননি! এর জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই কথাই বলেছেন যে, সে الْحَمْدُ لِلَّهِ বলেছিল কিন্তু তুমি বলনি। অর্থাৎ তুমি الْحَمْدُ لِلَّهِ না বলায় এই দু'আ পাওয়ার হকদার হওনি।
দেখা যাচ্ছে, الْحَمْدُ لِلَّهِ না বলার দরুন হাঁচিদাতা অনেক বড় একটি দু'আ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। তাই উম্মতের প্রতি দরদি আল্লাহওয়ালাগণ এরূপ ক্ষেত্রে হিকমত ও কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। যেমন ইমাম আওযা'ঈ রহ. সম্পর্কে বর্ণিত আছে, একবার তাঁর সম্মুখে এক ব্যক্তি হাঁচি দিল কিন্তু الْحَمْدُ لِلَّهِ বলল না। ইমাম আওযা'ঈ রহ-এর ইচ্ছা তার জন্য يَرْحَمُكَ اللهُ বলে দু'আ করবেন। কিন্তু কীভাবে করবেন? হাদীছে তো হাঁচিদাতা الْحَمْدُ لِلَّهِ না বললে يَرْحَمُكَ اللهُ বলতে নিষেধ আছে। তিনি একটি কৌশল করলেন। তিনি হাঁচিদাতাকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা বলো তো হাঁচি দিয়ে কী বলতে হয়? সে বলল الْحَمْدُ لِلَّهِ অমনি তিনি বললেন يَرْحَمُكَ اللَّهُ। আল্লাহু আকবার। উম্মতের কল্যাণসাধনের কী গভীর আকাঙ্ক্ষা আল্লাহওয়ালাদের অন্তরে বিরাজ করে। একইরকম ঘটনা ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ. সম্পর্কেও বর্ণিত আছে। এর মধ্যে নিজের জন্যও আল্লাহ তা'আলার যিকির করার একটা সুযোগ বের করে নেওয়ার চেষ্টা ছিল না কি!
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. হাঁচি আল্লাহ তা'আলার একটি নি'আমত। যে-কোনও নি'আমত লাভের পর শোকর আদায় করা জরুরি।
খ. হাঁচি দেওয়ার পর হাঁচিদাতার কর্তব্য الْحَمْدُ لِلَّهِ বলা।
গ. হাঁচিদাতা الْحَمْدُ لِلَّهِ বললে শ্রোতাকে অবশ্যই يَرْحَمُكَ اللهُ বলতে হবে।
ঘ. শ্রোতা يَرْحَمُكَ اللَّهُ বলে দু'আ করলে তার প্রতিদানস্বরূপ হাঁচিদাতার يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالْكُمْ বলা উচিত।
ঙ. কারও পক্ষ থেকে দীনী বা দুনিয়াবী কোনও উপকার লাভ করলে আপন সামর্থ্য অনুযায়ী তার প্রতিদান দেওয়া চাই।
চ. হাঁচিদাতা الْحَمْدُ لِلَّهِ না বললে শ্রোতার পক্ষ থেকে সে يَرْحَمُكَ اللهُ দু'আটি পাওয়ার হকদার হবে না।
১. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে সে যেন বলে الْحَمْدُ لِلَّهِ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)। তার ভাই বা তার সঙ্গী যেন বলে يَرْحَمُكَ الله (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন)। সে যখন তাকে লক্ষ্য করে يَرْحَمُكَ الله বলবে, তখন যেন বলে يَهْدِيكُمُ الله وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (আল্লাহ তোমাদের হিদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা দুরস্ত করে দিন)।
২. হযরত আবূ মূসা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে, তখন তোমরা তার জবাবে ইয়াহামুকাল্লাহ বলো। সে যদি আলহামদুলিল্লাহ না বলে, তবে তোমরা ইয়ারহামুকাল্লাহ বলো না।
৩. হযরত আনাস রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে দুই ব্যক্তি হাঁচি দিল। তিনি তাদের একজনকে লক্ষ্য করে ইয়াহামুকাল্লাহ বললেন, অন্যজনকে লক্ষ্য করে তা বললেন না। যাকে লক্ষ্য করে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললেন না সে বলল, অমুকে হাঁচি দিল আর আপনি তাকে লক্ষ্য করে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললেন, অথচ আমি হাঁচি দিলে আপনি আমাকে লক্ষ্য করে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললেন না? তিনি বললেন, এ ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করেছে (আলহামদুলিল্লাহ বলেছে), কিন্তু তুমি আল্লাহর প্রশংসা করনি।
১ম হাদীছটিতে হাঁচি সম্পর্কে তিনটি দু'আ উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম হল الْحَمْدُ لِلَّهِ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)। হাঁচির মধ্যে বহু কল্যাণ আছে। তাই এটা আল্লাহর নি'আমত। আল্লাহর নি'আমত পাওয়ার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হাঁচি দেওয়ার পর হাঁচিদাতার الْحَمْدُ لِلَّهِ বলা উচিত। এটা সুন্নত।
হাঁচিদাতা যখন الْحَمْدُ لِلَّهِ বলবে, তখন যারা তা শুনবে তাদের কর্তব্য তার জন্য এই বলে দু'আ করা যে- يَرْحَمُكَ اللهُ (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন)। এটা বলা ওয়াজিব। উত্তম হল সকলেরই বলা। তবে যে-কোনও একজন বললে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।
শ্রোতা যখন يَرْحَمُكَ اللهُ বলে হাঁচিদাতার জন্য দু'আ করবে, তখন হাঁচিদাতারও তাদের জন্য দু'আ করা কর্তব্য। সে বলবে- يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (আল্লাহ তোমাদের হিদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা দুরস্ত করে দিন)। দু'আর বদলে দু'আ। হাঁচিদাতার পক্ষ থেকে এ দু'আ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতারও প্রকাশ।
হাঁচিদাতার الْحَمْدُ لِلَّهِ বলার জবাবে শ্রোতাদের يَرْحَمُكَ الله বলে দু'আ করাকে (তাশমীত) বলা হয়। تَشْمِیت এর মূল অর্থ কল্যাণ ও বরকতের দু'আ করা। يَرْحَمُكَ الله (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন) দ্বারা সেই দু'আ করা হয়। تشمِيتُ শব্দটির উৎপত্তি شماتة থেকে। এর অর্থ অন্যের বিপদে আনন্দিত হওয়া। تَشْمِیت অর্থ সেই আনন্দ প্রতিহত করা। যার প্রতি আল্লাহর রহমত হয় তার বিপদও কেটে যায়। ফলে শত্রুর আনন্দ ঘুচে যায়। যেহেতু এ দু'আটি পরিণামে শত্রুর আনন্দ ঘুচিয়ে দেয়, তাই একে تَشْمِیت নামে অভিহিত করা হয়েছে।
কারও মতে تَشْمِيْتُ এর উৎপত্তি شَوَامِتُ থেকে। شَوَامِتُ অর্থ হাত-পা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। সে হিসেবে تَشْمِیت অর্থ স্থিত ও প্রতিষ্ঠিত রাখা। يَرْحَمُكَ اللهُ বলার দ্বারা যে রহমতের দু'আ করা হয়, প্রকৃতপক্ষে তা দ্বারা হাঁচিদাতাকে দীনের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত রাখারই দু'আ করা হয়। তাই এ দু'আকে تَشْمِیت নাম দেওয়া হয়েছে।
তাশমীত করা হবে কেবল তখনই, যখন হাঁচিদাতা الْحَمْدُ لِلَّهِ বলবে। সে الْحَمْدُ لِلَّهِ না বললে তাশমীত করা হবে না। অর্থাৎ তার জন্য يَرْحَمُكَ الله বলে দু'আ করা হবে না, যেমনটা দ্বিতীয় হাদীছে বলা হয়েছে। কাজেই শ্রোতার পক্ষ থেকে يَرْحَمُكَ الله দু'আটি পাওয়ার আশা থাকলে হাঁচিদাতাকে অবশ্যই হাঁচি দেওয়ার পর الْحَمْدُلِلَّهِ বলতে হবে। অন্যথায় সে এই দু'আর হকদার হবে না। তৃতীয় হাদীছটিতে এরকমই একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। দু'জন সাহাবীর একজন হাঁচি দেওয়ার পর الْحَمْدُ لِلَّهِ বলেছেন, অপরজন বলেননি। তাতে দ্বিতীয়জন অনুযোগ করেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুকে হাঁচি দেওয়ার পর তো আপনি তাকে তাশমীত করেছেন, কিন্তু আমি হাঁচি দেওয়ার পর আপনি আমাকে তাশমীত করেননি! এর জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই কথাই বলেছেন যে, সে الْحَمْدُ لِلَّهِ বলেছিল কিন্তু তুমি বলনি। অর্থাৎ তুমি الْحَمْدُ لِلَّهِ না বলায় এই দু'আ পাওয়ার হকদার হওনি।
দেখা যাচ্ছে, الْحَمْدُ لِلَّهِ না বলার দরুন হাঁচিদাতা অনেক বড় একটি দু'আ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। তাই উম্মতের প্রতি দরদি আল্লাহওয়ালাগণ এরূপ ক্ষেত্রে হিকমত ও কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। যেমন ইমাম আওযা'ঈ রহ. সম্পর্কে বর্ণিত আছে, একবার তাঁর সম্মুখে এক ব্যক্তি হাঁচি দিল কিন্তু الْحَمْدُ لِلَّهِ বলল না। ইমাম আওযা'ঈ রহ-এর ইচ্ছা তার জন্য يَرْحَمُكَ اللهُ বলে দু'আ করবেন। কিন্তু কীভাবে করবেন? হাদীছে তো হাঁচিদাতা الْحَمْدُ لِلَّهِ না বললে يَرْحَمُكَ اللهُ বলতে নিষেধ আছে। তিনি একটি কৌশল করলেন। তিনি হাঁচিদাতাকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা বলো তো হাঁচি দিয়ে কী বলতে হয়? সে বলল الْحَمْدُ لِلَّهِ অমনি তিনি বললেন يَرْحَمُكَ اللَّهُ। আল্লাহু আকবার। উম্মতের কল্যাণসাধনের কী গভীর আকাঙ্ক্ষা আল্লাহওয়ালাদের অন্তরে বিরাজ করে। একইরকম ঘটনা ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ. সম্পর্কেও বর্ণিত আছে। এর মধ্যে নিজের জন্যও আল্লাহ তা'আলার যিকির করার একটা সুযোগ বের করে নেওয়ার চেষ্টা ছিল না কি!
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. হাঁচি আল্লাহ তা'আলার একটি নি'আমত। যে-কোনও নি'আমত লাভের পর শোকর আদায় করা জরুরি।
খ. হাঁচি দেওয়ার পর হাঁচিদাতার কর্তব্য الْحَمْدُ لِلَّهِ বলা।
গ. হাঁচিদাতা الْحَمْدُ لِلَّهِ বললে শ্রোতাকে অবশ্যই يَرْحَمُكَ اللهُ বলতে হবে।
ঘ. শ্রোতা يَرْحَمُكَ اللَّهُ বলে দু'আ করলে তার প্রতিদানস্বরূপ হাঁচিদাতার يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالْكُمْ বলা উচিত।
ঙ. কারও পক্ষ থেকে দীনী বা দুনিয়াবী কোনও উপকার লাভ করলে আপন সামর্থ্য অনুযায়ী তার প্রতিদান দেওয়া চাই।
চ. হাঁচিদাতা الْحَمْدُ لِلَّهِ না বললে শ্রোতার পক্ষ থেকে সে يَرْحَمُكَ اللهُ দু'আটি পাওয়ার হকদার হবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)