রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৩. আহার-পানীয় গ্রহণের আদব

হাদীস নং: ৭৭৬
পরিচ্ছেদ : ১৭ সোনা-রুপার পাত্র ছাড়া সর্বপ্রকার পবিত্র পাত্রে পান করার বৈধতা, পাত্র বা হাত ছাড়া নদী বা অন্য কোনও জলাশয় থেকে সরাসরি মুখ দিয়ে পানি পান করার বৈধতা এবং পানাহার করা, পবিত্রতা অর্জন করা ও যে-কোনওরকম কাজে সোনা-রুপার পাত্র ব্যবহার করার নিষিদ্ধতা
হাদীছ নং: ৭৭৬
হযরত হুযায়ফা রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হারীর ও দীবাজ ব্যবহার করতে এবং সোনা-রুপার পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, এগুলো ওদের জন্য দুনিয়ায় এবং তোমাদের জন্য আখিরাতে।-বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৫৬৩২; সহীহ মুসলিম: ২০৬৭; জামে' মা'মার ইবন রাশিদ: ১৯৯২৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৪৬৪৮; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা ৬৮৪২; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৪২০; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৪২৭৫; সুনানে দারিমী: ৪৭৯৬)
باب جواز الشرب من جميع الأواني الطاهرة غير الذهب والفضة وجواز الكرع - وَهُوَ الشرب بالفم من النهر وغيره بغير إناء ولا يد - وتحريم استعمال إناء الذهب والفضة في الشرب والأكل والطهارة وسائر وجوه الاستعمال
776 - وعن حذيفة - رضي الله عنه - قَالَ: إنَّ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - نَهَانَا عَن الحَرِير، وَالدِّيباجِ، والشُّربِ في آنِيَة الذَّهَب والفِضَّةِ، وقال: «هي لَهُمْ في الدُّنْيَا، وهِيَ لَكُمْ في الآخِرَةِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে নিষেধ করা হয়েছে اَلْحَرِيرُ ও اَلدِّيبَاجُ ব্যবহার করতে। الْحَرِيرُ (হারীর) অর্থ রেশম। বোঝানো উদ্দেশ্য রেশমি পোশাক। আর اَلدِّيبَاجُ (দীবাজ) অর্থ চিকন রেশমি কাপড়। মোটকথা সর্বপ্রকার রেশমি কাপড় পরিধান করাই পুরুষের জন্য হারাম ও নাজায়েয। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
مَنْ لَبِسَ الْحَرِيرَ فِي الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ فِي الْآخِرَةِ
‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমি পোশাক পরে, সে আখিরাতে তা পরতে পারবে না।’ (সহীহ বুখারী: ৫৮৩২; সহীহ মুসলিম: ২০৭৩; জামে তিরমিযী: ২৮১৭; সুনানে নাসাঈ: ৫৩০৪; সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৫৮৮; মুসনাদে আহমাদ: ১৮১; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ২৬৪৪৩; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৪৩৫; তবারানী, আল মুজামুল কাবীর: ৯৭৭৯)

তবে এ নিষেধাজ্ঞা কেবল পুরুষের জন্য। নারীর জন্য রেশমী পোশাক পরা জায়েয, যেমন তাদের জন্য স্বর্ণালংকারও জায়েয। হযরত উকবা ইবন আমির রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
الذَّهَبُ وَالْحَرِيرُ حِلٌّ لِإِنَاث أُمَّتِي وَحَرَامٌ عَلَى ذُكُورِهَا
‘সোনা ও রেশম আমার উম্মতের মহিলাদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম।’ (তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫১২৫; সুনানে নাসাঈ : ৫১৪৮; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা ৪২২০; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা ৯৩৮৭)

হযরত আলী রাযি. বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাম হাতে রেশম এবং ডান হাতে স্বর্ণ ধরলেন। তারপর দু'হাত তুলে বললেন-
إِنَّ هَذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِي، حِلٌّ لِإِنَاثهِمْ
‘এ দুটি আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম, মহিলাদের জন্য হালাল।’ (সুনানে ইবন মাজাহ ৩৫৯৫; সুনানে আবু দাউদ: ৪০৫৭; সুনানে নাসাঈ: ৫১৪৪; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫৪৩৪; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা: ২৪৬৫৯; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর: ১২৬; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা ৭৫৫৮; শুআবুল ঈমান: ৫৬৮১)

শায়খ আবু মুহাম্মাদ রহ. এ নিষেধাজ্ঞার হিকমত বর্ণনা করেন যে, সাজসজ্জার ব্যাপারে নারীদের সংযম কম। তাই এটা তাদের জন্য হালাল করে তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষত এ কারণেও যে, তাদের সাজসজ্জা হবে কেবল স্বামীদের জন্য। এর দ্বারা বোঝা যায় পুরুষদের জন্য বেশি সাজসজ্জা ও উপভোগের বস্তু ব্যবহার করা ভালো নয়। কেননা এটা নারীর বৈশিষ্ট্য। এক রেওয়ায়েতে স্বামীদের উদ্দেশ্যে স্ত্রীদের সাজসজ্জা করাকে জিহাদতুল্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। (শুআবুল ঈমান: ১১৫২)

হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোনা-রুপার পাত্রে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। এটা পুরুষ ও নারী কারও জন্যই জায়েয নয়। সোনা-রুপার অন্য কোনও পাত্রও ব্যবহারের অনুমতি নেই। যেমন এক বর্ণনায় আছে-
وَلَا تَأْكُلُوْا فِي صِحَافِهَا
‘এবং তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে আহার করো না।' (সহীহ মুসলিম: ২০৬৭; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা: ৬৫৯৭; সুনানে দারা কুতনী: ৪৭৯৫)

এক হাদীছে এ নিষেধাজ্ঞার কারণ বলা হয়েছে যে, জান্নাতে পানাহারের পাত্র হবে সোনা-রুপার। কাজেই এটা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই নিষেধ।

মোটকথা, সোনা-রুপার পাত্র ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম ও কঠিন পাপ। কাজেই ঈমানদারদেরকে অবশ্যই এর থেকে বিরত থাকতে হবে। এ জাতীয় বিলাসিতা ঈমানদারদের জন্য শোভা পায় না। এ নিষেধাজ্ঞা পানাহারের পাত্র ছাড়া অন্য আসবাবপত্রেও প্রযোজ্য, যেমন সুরমাদানি, কলম, চশমার ফ্রেম, আতরদানি ইত্যাদি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. পুরুষদের জন্য রেশমি পোশাক পরা জায়েয নয়।

খ. সোনা-রুপার কোনও পাত্র ব্যবহার করা নারী-পুরুষ কারও জন্যই জায়েয নয়।

গ. মুমিন নর-নারীর বিলাসিতা পরিহার করা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৭৭৬ | মুসলিম বাংলা