রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৩. আহার-পানীয় গ্রহণের আদব
হাদীস নং: ৭৭৩
পরিচ্ছেদ : ১৭ সোনা-রুপার পাত্র ছাড়া সর্বপ্রকার পবিত্র পাত্রে পান করার বৈধতা, পাত্র বা হাত ছাড়া নদী বা অন্য কোনও জলাশয় থেকে সরাসরি মুখ দিয়ে পানি পান করার বৈধতা এবং পানাহার করা, পবিত্রতা অর্জন করা ও যে-কোনওরকম কাজে সোনা-রুপার পাত্র ব্যবহার করার নিষিদ্ধতা
হাদীছ নং: ৭৭৩
হযরত আনাস রাযি. বলেন, একবার নামাযের ওয়াক্ত চলে আসল। যাদের বাড়ি কাছে ছিল তারা তাদের বাড়িতে চলে গেল। কিছুসংখ্যক লোক রয়ে গেল। এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একটি পাথরের বাটি আনা হল। বাটিটি এমন ছোট ছিল যে, তাতে তাঁর হাত বিছিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। সেই বাটির পানি দিয়ে উপস্থিত লোকদের সকলে ওযু করল। তারা (শিষ্যগণ হযরত আনাস রাযি.-কে) জিজ্ঞেস করল, তখন আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, ৮০ জন বা তার কিছু বেশি। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৯৫; সহীহ মুসলিম: ২২৭৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩১৭২৪: বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১১৭)
বুখারী-মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির একটি পাত্র আনতে বললেন। একটি প্রশস্ত ও অগভীর পাত্র আনা হল। তাতে সামান্য কিছু পানি ছিল। তাতে তিনি নিজ আঙ্গুলগুলো রাখলেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, আমি বিস্ময়ে লক্ষ করছিলাম তাঁর আঙ্গুলসমূহের মাঝখান থেকে ঝর্ণার মতো পানি বের হচ্ছে। আমি অনুমান করে দেখলাম যারা ওযু করেছে তাদের সংখ্যা হবে ৭০ থেকে ৮০ জনের মতো।(সহীহ বুখারী: ২০০; সহীহ মুসলিম: ২২৭৯; সুনানে দারিমী ২৮; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৩৩২৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা ১২৪; সহীহ ইবনে হিব্বান ৬৫৪৬; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১১৯; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৫৭)
হযরত আনাস রাযি. বলেন, একবার নামাযের ওয়াক্ত চলে আসল। যাদের বাড়ি কাছে ছিল তারা তাদের বাড়িতে চলে গেল। কিছুসংখ্যক লোক রয়ে গেল। এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একটি পাথরের বাটি আনা হল। বাটিটি এমন ছোট ছিল যে, তাতে তাঁর হাত বিছিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। সেই বাটির পানি দিয়ে উপস্থিত লোকদের সকলে ওযু করল। তারা (শিষ্যগণ হযরত আনাস রাযি.-কে) জিজ্ঞেস করল, তখন আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, ৮০ জন বা তার কিছু বেশি। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৯৫; সহীহ মুসলিম: ২২৭৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩১৭২৪: বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১১৭)
বুখারী-মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির একটি পাত্র আনতে বললেন। একটি প্রশস্ত ও অগভীর পাত্র আনা হল। তাতে সামান্য কিছু পানি ছিল। তাতে তিনি নিজ আঙ্গুলগুলো রাখলেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, আমি বিস্ময়ে লক্ষ করছিলাম তাঁর আঙ্গুলসমূহের মাঝখান থেকে ঝর্ণার মতো পানি বের হচ্ছে। আমি অনুমান করে দেখলাম যারা ওযু করেছে তাদের সংখ্যা হবে ৭০ থেকে ৮০ জনের মতো।(সহীহ বুখারী: ২০০; সহীহ মুসলিম: ২২৭৯; সুনানে দারিমী ২৮; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৩৩২৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা ১২৪; সহীহ ইবনে হিব্বান ৬৫৪৬; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১১৯; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৫৭)
باب جواز الشرب من جميع الأواني الطاهرة غير الذهب والفضة وجواز الكرع - وَهُوَ الشرب بالفم من النهر وغيره بغير إناء ولا يد - وتحريم استعمال إناء الذهب والفضة في الشرب والأكل والطهارة وسائر وجوه الاستعمال
773 - وعن أنس - رضي الله عنه - قَالَ: حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فقامَ مَن كَانَ قَريبَ الدَّارِ إِلَى أهْلِهِ، وبَقِيَ قَوْمٌ، فأُتِيَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - بِمَخْضَبٍ مِنْ حِجَارَةٍ، فَصَغُرَ المخْضَبُ أَنْ يَبْسُطَ فِيهِ كَفَّهُ، فَتَوَضَّأَ القَوْمُ كُلُّهُمْ. قالوا: كَمْ كُنْتُمْ؟ قَالَ: ثَمَانِينَ وزيادة. متفق عَلَيْهِ، (1) هذه رواية البخاري.
وفي رواية لَهُ ولمسلم: أنَّ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - دَعَا بإناءٍ مِنْ ماءٍ، فَأُتِيَ بقَدَحٍ رَحْرَاحٍ (2) فِيهِ شَيْءٌ مِنْ ماءٍ، فَوَضَعَ أصابعَهُ فِيهِ. قَالَ أنسٌ: فَجَعلْتُ أنْظُرُ إِلَى الماءِ يَنْبُعُ مِنْ بَيْن أصَابِعِهِ، فَحَزَرْتُ مَنْ تَوضَّأ مَا بَيْنَ السَّبْعِينَ إِلَى الثَّمَانينَ.
وفي رواية لَهُ ولمسلم: أنَّ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - دَعَا بإناءٍ مِنْ ماءٍ، فَأُتِيَ بقَدَحٍ رَحْرَاحٍ (2) فِيهِ شَيْءٌ مِنْ ماءٍ، فَوَضَعَ أصابعَهُ فِيهِ. قَالَ أنسٌ: فَجَعلْتُ أنْظُرُ إِلَى الماءِ يَنْبُعُ مِنْ بَيْن أصَابِعِهِ، فَحَزَرْتُ مَنْ تَوضَّأ مَا بَيْنَ السَّبْعِينَ إِلَى الثَّمَانينَ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীছটির বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে, যাদের বাড়ি মসজিদের কাছে ছিল তারা ওযু করার জন্য বাড়িতে চলে গেলেন। এটাই আদব। বাড়ি মসজিদের কাছে হলে মসজিদের পানির উপর চাপ কমানোর জন্য কিংবা ভিড় কমানোর জন্য নিজ নিজ বাড়িতে চলে যাওয়া চাই। হাঁ, বাড়ি দূর হলে ভিন্ন কথা। এ ঘটনায় উপস্থিত সাহাবীদের অনেকের বাড়ি দূরে ছিল। তারা থেকে গেলেন। তাদের সংখ্যা প্রায় ৮০ জন। মসজিদে পানির অভাব। বরং পানি নেই-ই। বর্তমানকালের মতো তখন মসজিদে পানির স্থায়ী ব্যবস্থা ছিল না। তাহলে তাদের ওযূর ব্যবস্থা কী হবে? এরূপ সংকটমুহূর্তে আল্লাহ আল্লাহ তা'আলা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে অনেক অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ করেছেন। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। একটা পাথরের বাটি আনা হল। সেটি খুব ছোট। তাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত বিছানো যাচ্ছে না। পরের বর্ণনায় আছে, তিনি তাতে নিজ আঙ্গুল রাখলেন আর আঙ্গুলের ফাঁক থেকে ঝর্ণার মতো পানি বের হতে থাকল। পাত্রে পানি ছিল সামান্যই। কিন্তু আঙ্গুলের ফাঁক থেকে পানি বের হতে থাকায় উপস্থিত সকল সাহাবী ওযু করতে পারলেন। তাদের সংখ্যা ছিল ৭০/৮০ জনের মতো।
আল্লাহ তা'আলা নবীদের সত্যতার প্রমাণস্বরূপ অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। তবে দুনিয়া যেহেতু আসবাব-উপকরণের জগৎ, তাই অলৌকিক ঘটনা বা মু'জিযায়ও কিছু না কিছু আসবাব-উপকরণ লাগে। যেমন এ ঘটনায় পাত্রে সামান্য পানি ছিল। একদম শূন্যপাত্র ছিল না। তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত রেখেছেন। তারপর আঙ্গুলের ফাঁক থেকে পানি বের হয়েছে। এমন নয় যে, হাত রাখা ছাড়াই সেই পানি বেড়ে গেছে কিংবা শূন্যপাত্র পানিতে ভরে গেছে। তবে এই যে উপকরণের ব্যবহার করতে হয়েছে আর তা সত্ত্বেও এটা মু'জিযা, এটা এ কারণে যে, নবী ছাড়া অন্য কারও দ্বারা এই সামান্য উপকরণ দ্বারা এমন কিছু ঘটানো সম্ভব নয়। হাঁ, জাদু, তেলেসমাতি দ্বারা অনেককিছুই করা হয়ে থাকে। কিন্তু জাদুকরের জাদু ও নবীর মু'জিযার মধ্যে পার্থক্য এমনই সুস্পষ্ট যে, যে-কারও দ্বারা তা ধরা সম্ভব। তাই জাদুকরের জাদুতে কেউ বিভ্রান্ত হয় না। পক্ষান্তরে নবীর মু'জিযা দেখে মানুষ সত্যের পরিচয় পায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নামাযের সময় হওয়ার আগে ওযু করা জরুরি নয়।
খ. নামাযের সময় হয়ে গেলে পানির সন্ধান করা জরুরি।
গ. কারও কাছে পানি থাকলে তা দ্বারা অন্যদের সেবা করার সুযোগ নেওয়া উচিত।
ঘ. যার বাড়ি মসজিদের কাছে, তার জন্য বাড়ি থেকেই ওযু করে আসা উত্তম।
৪. ওযূতে পাথরের পাত্র ব্যবহার করা জায়েয। অন্যান্য প্রয়োজনেও তা ব্যবহার করা যাবে।
চ. নবীদের মু'জিযা সত্য।
আল্লাহ তা'আলা নবীদের সত্যতার প্রমাণস্বরূপ অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। তবে দুনিয়া যেহেতু আসবাব-উপকরণের জগৎ, তাই অলৌকিক ঘটনা বা মু'জিযায়ও কিছু না কিছু আসবাব-উপকরণ লাগে। যেমন এ ঘটনায় পাত্রে সামান্য পানি ছিল। একদম শূন্যপাত্র ছিল না। তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত রেখেছেন। তারপর আঙ্গুলের ফাঁক থেকে পানি বের হয়েছে। এমন নয় যে, হাত রাখা ছাড়াই সেই পানি বেড়ে গেছে কিংবা শূন্যপাত্র পানিতে ভরে গেছে। তবে এই যে উপকরণের ব্যবহার করতে হয়েছে আর তা সত্ত্বেও এটা মু'জিযা, এটা এ কারণে যে, নবী ছাড়া অন্য কারও দ্বারা এই সামান্য উপকরণ দ্বারা এমন কিছু ঘটানো সম্ভব নয়। হাঁ, জাদু, তেলেসমাতি দ্বারা অনেককিছুই করা হয়ে থাকে। কিন্তু জাদুকরের জাদু ও নবীর মু'জিযার মধ্যে পার্থক্য এমনই সুস্পষ্ট যে, যে-কারও দ্বারা তা ধরা সম্ভব। তাই জাদুকরের জাদুতে কেউ বিভ্রান্ত হয় না। পক্ষান্তরে নবীর মু'জিযা দেখে মানুষ সত্যের পরিচয় পায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নামাযের সময় হওয়ার আগে ওযু করা জরুরি নয়।
খ. নামাযের সময় হয়ে গেলে পানির সন্ধান করা জরুরি।
গ. কারও কাছে পানি থাকলে তা দ্বারা অন্যদের সেবা করার সুযোগ নেওয়া উচিত।
ঘ. যার বাড়ি মসজিদের কাছে, তার জন্য বাড়ি থেকেই ওযু করে আসা উত্তম।
৪. ওযূতে পাথরের পাত্র ব্যবহার করা জায়েয। অন্যান্য প্রয়োজনেও তা ব্যবহার করা যাবে।
চ. নবীদের মু'জিযা সত্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
