রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৩. আহার-পানীয় গ্রহণের আদব

হাদীস নং: ৭৩৭
পরিচ্ছেদ : ৩ রোযা অবস্থায় দাওয়াতের খাবারে যদি উপস্থিত হয় আর রোযা ভাঙতে না চায়, তবে যা বলবে
হাদীছ নং: ৭৩৭
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কাউকে যখন দাওয়াত করা হয়, সে যেন তা গ্রহণ করে। সে রোযাদার হলে দাওয়াতদাতার জন্য দু'আ করবে। আর যদি রোযাদার না হয়, তবে আহার করবে। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১৪২৯; সুনানে আবূ দাউদ: ২৪৬০; জামে তিরমিযী: ৭৮০; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৩২৫৭; সুনানে ইবন মাজাহ ১৭৫০; মুসনাদে আহমাদ: ৭৭৩৬; মুসনাদুল বাযযার: ৯৮৪৪; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৬০৩৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৫২৮)
باب مَا يقوله من حضر الطعام وهو صائم إِذَا لَمْ يفطر
737 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «إِذَا دُعِيَ أحَدُكُمْ فَلْيُجِبْ، فَإنْ كَانَ صَائِمًا فَلْيُصَلِّ، وَإنْ كَانَ مُفْطِرًا فَلْيَطْعَمْ». رواه مسلم. (1)
قَالَ العلماءُ: معنى «فَلْيُصَلِّ»: فَلْيَدْعُ، ومعنى «فَلْيطْعَمْ»: فَلْيَأْكُلْ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছটিতে তিনটি বাক্য। প্রথম বাক্য হল- إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ فَلْيُجِبْ (তোমাদের কাউকে যখন দাওয়াত করা হয়, সে যেন তা গ্রহণ করে)। কেউ দাওয়াত করলে এ হাদীছে তা কবুল করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। বোঝা গেল কবুল করাটা কর্তব্য। অপর এক হাদীছে দাওয়াত কবুল করাকে মুসলিম ভাইয়ের হক বলা হয়েছে। কাজেই বিশেষ ওজর না থাকলে দাওয়াত কবুল করা জরুরি, যদি না সে দাওয়াত কোনও রসমি বা বেদ'আতী অনুষ্ঠানের হয়। সেরকমের দাওয়াত কবুল করা কিছুতেই উচিত নয়। যেমন চল্লিশার দাওয়াত, জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী ও বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানের দাওয়াত। দাওয়াত যদি কোনও সুন্নতী অনুষ্ঠানের হয়, যেমন ওলীমার দাওয়াত, কিন্তু তা শরী'আতসম্মতভাবে করা না হয়; বরং তা বিভিন্ন গুনাহের সমষ্টি হয়ে যায়, তবে তাও কবুল করা উচিত নয়। যেমন বর্তমানকালে ওলীমার অনুষ্ঠানে গানবাদ্য, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাসহ নানারকম নাজায়েয কাজকর্ম হয়ে থাকে। এসবের সংশোধন করতে না পারলে এ অনুষ্ঠানে যোগদান করা কিছুতেই উচিত নয়।

দ্বিতীয় বাক্য হল- فَإِنْ كَانَ صَائِمًا فَلْيُصَلِّ (সে রোযাদার হলে দাওয়াতদাতার জন্য দু'আ করবে)। অর্থাৎ তার ও তার পরিবারের জন্য মাগফিরাত ও বরকতের দু'আ করবে আর বলে দেবে, আমি রোযাদার। যেমন এক হাদীছে আছে-
إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ إِلَى طَعَامٍ، وَهُوَ صَائِمٌ، فَلْيَقُلْ : إِنِّي صَائِمٌ
‘তোমাদের কেউ যদি রোযাদার হয় আর এ অবস্থায় তাকে কোনও খাওয়ায় দাওয়াত করা হয়, তবে সে যেন বলে দেয় আমি রোযাদার।’ (সহীহ মুসলিম: ১১৫০; সুনানে আবু দাউদ: ২৪৬১; জামে তিরমিযী: ৭৮১; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৩২৫৬; সুনানে ইবন মাজাহ: ১৭৫০; মুসনাদে আহমাদ: ৭৩০২; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৭৪৮৩; মুসনাদুল হুমায়দী: ১০৪২; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৯৪৩৯)

অপর এক হাদীছে রোযা ভেঙ্গে খাবারে অংশগ্রহণ করারও হুকুম আছে। একবার এক সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কয়েক সাহাবীকে দাওয়াত করলেন। তারা সে দাওয়াতে গেলেন। এক সাহাবী বললেন, আমি রোযাদার। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
أَخُوْكَ صَنَعَ طَعَامًا وَدَعَاكَ، أَفْطِرْ وَاقْضِ يَوْمًا مَكَانَهُ
‘তোমার ভাই খাবার তৈরি করেছে এবং তোমাকে দাওয়াত দিয়েছে। তুমি রোযা ভেঙ্গে ফেলো এবং এর পরিবর্তে অন্য একদিন রোযা রেখো।’ (বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৪৫৩৭; মুসনাদে আবূ দাউদ তয়ালিসী: ২৩১৭)

মোটকথা উদ্দেশ্য হল দাওয়াতদাতাকে খুশি করা। সে যাতে বুঝতে পারে- আমার প্রতি তার কোনও ঘৃণা বা বিদ্বেষ নেই। আমাকে সে ছোটও মনে করে না। যদি রোযার ওজর দেখানোতে সে খুশি হয়ে যায় আর মনে কোনও কষ্ট না নেয়, তবে রোযা ভাঙতে হবে না। হাঁ, তাকে অধিকতর খুশি করার জন্য চাইলে সে রোযা ভেঙ্গে খাওয়ায় শরীক হতে পারে। এ অবস্থায় অন্য একদিন রোযা কাযা করে নেবে।

তৃতীয় বাক্য হল- وَإِنْ كَانَ مُفْطِرًا فَلْيَطْعَمْ (আর যদি রোযাদার না হয়, তবে আহার করবে)। অর্থাৎ যদি খাওয়ার চাহিদা থাকে এবং পরিবেশিত খাবার তার তবিয়ত কবুলও করে, তবে খেয়ে নেবে। অন্যথায় খাবে না। ওজর পেশ করবে। যেমন অপর এক হাদীছে বলা হয়েছে-
إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ إِلَى طَعَامٍ ، فَلْيُجِبْ، فَإِنْ شَاءَ طَعِمَ، وَإِنْ شَاءَ تَرَكَ
‘তোমাদের কাউকে যখন কোনও খাবারে দাওয়াত করা হয়, সে যেন তা কবুল করে। তারপর চাইলে খাবে, না চাইলে না খাবে।’ (সহীহ মুসলিম : ১৪৩০; সুনানে আবূ দাউদ: ৩৭৪০; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৬৫৭৫; সুনানে ইবন মাজাহ: ১৭৫০; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৩০২৮)
অর্থাৎ দাওয়াত কবুল করাটা জরুরি। খাওয়া না খাওয়াটা নির্ভর করে চাহিদা থাকা না থাকা বা খাবার রুচিমতো হওয়া ও না হওয়ার উপর। মূল উদ্দেশ্য দাওয়াতদাতাকে খুশি করা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দাওয়াতদাতার বৈধ দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করতে নেই।

খ. রোযা অবস্থায় কারও দাওয়াত পেলে রোযার ওজর দেখানো যেতে পারে। আবার চাইলে রোযা ভেঙ্গে তার দাওয়াতে শরীকও হওয়া যাবে।

গ. রোযাদার না হলে এবং বিশেষ ওজর না থাকলে দাওয়াতের খাবারে অংশগ্রহণ করা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৭৩৭ | মুসলিম বাংলা