রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৭২
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
শাসককে লাঞ্ছনা করার পরিণতি
হাদীছ নং: ৬৭২

হযরত আবূ বাকরা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ক্ষমতাসীনকে অপদস্থ করবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে অপদস্থ করবেন। -তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী: ২২২৪; মুসনাদে আবূ দাউদ তয়ালিসী: ৯২৮; মুসনাদুল বাযযার: ৩৬৭০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ১৬৬৫৯; শু'আবুল ঈমান: ৬৯৮৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৪৬২)

ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান হাদীছ।
مقدمة الامام النووي
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
672 - وعن أَبي بكرة - رضي الله عنه - قَالَ: سَمِعْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «مَنْ أهانَ السُّلطَانَ أَهَانَهُ الله». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن».
وفي الباب أحاديث كثيرة في الصحيح. وَقَدْ سبق بعضها في أبواب.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাসকের অবাধ্যতা করার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, কেউ শাসককে অপমান ও অপদস্থ করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে অপদস্থ করবেন। শাসককে অপদস্থ করার অর্থ তার আদেশ-নিষেধ না মানা, তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, তার সমালোচনা করা, তার কাজকর্ম নিয়ে উপহাস করা ইত্যাদি। এসব করা কিছুতেই সমীচীন নয়। কেননা মুসলিম শাসক জনগণের জন্য আল্লাহ তা'আলার ছায়াস্বরূপ। ছায়া দ্বারা যেমন মানুষ রোদের তাপ থেকে রক্ষা পায়, তেমনি শাসকের দ্বারাও মানুষ তাদের জান-মালের নিরাপত্তা লাভ করে। শাসক মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়। ফলে মানুষ নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে এবং নির্বিঘ্নে আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকতে পারে। শাসক জনগণের রক্ষক ও পাহারাদারস্বরূপ। পাহারাদার না থাকলে যেমন বকরির পাল হিংস্র পশুর খোরাক হয়ে যায়, তেমনি রাষ্ট্রের কোনও শাসক না থাকলে সর্বত্র নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ে, প্রত্যেকে গায়ের জোরে অন্যের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, ফলে চারদিকে মারামারি হানাহানি শুরু হয়ে যায় আর এভাবে মানুষের দীন-দুনিয়া সব বরবাদ হয়ে যায়। সুতরাং মানুষের জন্য শাসক আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় রহমত। তার বিরোধিতা ও অবাধ্যতা করার দ্বারা মানুষ সে রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। যেখানে রহমত থাকে না, সেখানে গজব ছাড়া আর কী থাকতে পারে? কাজেই যার বিরোধিতার দরুন গজবের এ পরিস্থিতি দেখা দিল, এর খেসারতও তো তাকেই সবার আগে দিতে হবে। শাসকের আনুগত্য করা ছিল আল্লাহরই হুকুম। সে হুকুম অমান্য করে যখন সে আল্লাহরও অবাধ্য হয়ে গেছে, তখন তাকে শাস্তি তো পেতেই হবে। এর জন্য আখিরাতে যে শাস্তি বরাদ্দ আছে তা তো আছেই, দুনিয়ায়ও তার জন্য রয়েছে কঠিন লাঞ্ছনা। যে শাসকের সে বিরোধিতা করেছে, হয়তো সে তারই কোপানলে পড়বে, নয়তো পরবর্তীতে যে শাসক আসবে, সেও তাকে সন্দেহের চোখে দেখবে। এভাবে তার দুনিয়ার জীবন সংকীর্ণ হয়ে পড়বে। কাজেই শাসক যদি ন্যায়পরায়ণ হয়, তবে তো বিরোধিতা করার প্রশ্নই আসে না। এমনকি যদি জালেমও হয়, তবুও সর্বাত্মক ক্ষতি থেকে বাঁচার লক্ষ্যে কিংবা মন্দের ভালো মেনে নেওয়ার নীতিতে তার বিরোধিতা করা হতে বিরত থাকাই শ্রেয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

শরী'আতসম্মত কারণ ছাড়া কোনও অবস্থায়ই শাসকের বিরোধিতা করতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান