রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৭১
অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
শাসকের জুলুম-নিপীড়নে ধৈর্যধারণের নির্দেশ
হাদীছ নং: ৬৭১

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার আমীরের মধ্যে কোনও জিনিস অপসন্দ করে, সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি ক্ষমতাসীন থেকে এক বিঘত পরিমাণও বের হয়ে যায়, সে মারা যায় জাহিলিয়াতের মৃত্যুতে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭০৫৩; সহীহ মুসলিম: ১৮৪৯)
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
671 - وعن ابن عباسٍ رضي الله عنهما: أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ كَره مِنْ أمِيرِهِ شَيْئًا فَلْيَصْبِرْ، فَإنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ السُّلطَانِ شِبْرًا مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-
مَنْ كَرِهَ مِنْ أَمِيْرِهِ شَيْئًا فَلْيَصْبِرْ (যে ব্যক্তি তার আমীরের মধ্যে কোনও জিনিস অপসন্দ করে, সে যেন ধৈর্যধারণ করে)। অর্থাৎ আমীর যদি কারও উপর জুলুম করে বা তার উপর অন্যকে প্রাধান্য দেয় কিংবা শরী'আতবিরোধী অন্য কোনও কাজ করে আর সে কাজটি সুস্পষ্ট কুফরী কাজ না হয়, তবে তাতে ধৈর্য ধরবে। তাকে উৎখাতের চেষ্টা করবে না। তা করতে গেলে আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। হয়তো উম্মতের ঐক্য ভেঙ্গে পড়বে কিংবা ব্যাপক রক্তপাতের ঘটনা ঘটবে। তাই সে বড় ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য তুলনামূলক ছোট ক্ষতি মেনে নেবে। তবে হাঁ, বিদ্রোহ না করে যদি হিম্মতের সঙ্গে আমীরকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় এবং কল্যাণকামিতার সঙ্গে তার সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ হবে। যে ব্যক্তি তা করবে, সে অনেক বড় ছাওয়াবের অধিকারী হবে। এটা করতে গিয়ে যদি সে হত্যার শিকার হয়, তবে শহীদী মর্যাদা পাবে। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
أَفْضَلُ الْجِهَادِ : كَلِمَةُ حَقّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ
সর্বোত্তম জিহাদ জালেম শাসকের সামনে সত্য কথা বলা। (সুনানে নাসাঈ : ৪২০৯; মুসনাদুল হুমায়দী: ৭৬৯; মুসনাদু ইবনিল জা‘দ : ৩৩২৬; মুসনাদে আবু ইয়া‘লা : ১১০১; তাবারানী, আল মু‘জামুল কাবীর: ৮০৮১; হাকিম, আল মুস্তাদরাক : ৮৫৪৩; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৭১৭৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৪৭৪)

হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাসকের জুলুম-নিপীড়ন ও অপ্রীতিকর কাজে যে সবরের হুকুম দিয়েছেন, তা দ্বারাই আনুগত্য করার গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিষয়টিকে আরও জোরদার করার জন্য আনুগত্য না করার ক্ষতি যে কতটা ভয়ংকর, সেদিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেন-
فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ السُّلْطَانِ شِبْرًا مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً (কেননা যে ব্যক্তি ক্ষমতাসীন থেকে এক বিঘত পরিমাণও বের হয়ে যায়, সে মারা যায় জাহিলিয়াতের মৃত্যুতে)। অর্থাৎ যদি সামান্য পরিমাণও অবাধ্যতা করে আর এ অবস্থায় মারা যায়, তবে তার মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু বলে গণ্য হবে। জাহিলী যুগের আরবগণ কাউকে আমীর ও শাসক মানতে চাইত না। তারা এমন কোনও ক্ষমতাধরকে স্বীকার করত না, সর্বদা যার অনুগত হয়ে থাকতে হবে। সর্বপ্রথম ইসলামই তাদেরকে এক নেতার অধীনে ঐক্যবদ্ধ করে দেয় ও এক শাসনাধীন জীবনে অভ্যস্ত করে তোলে। সুতরাং ইসলামের অনুসারী হয়েও যদি কেউ নেতা ও শাসকের আনুগত্য অস্বীকার করে, তবে সে যেন ফের জাহিলী যুগে ফিরে গেল। সেদিকে লক্ষ্য করেই তার মৃত্যুকে জাহিলিয়াতের মৃত্যু বলা হয়েছে। এর দ্বারা তাকে কাফের বলা উদ্দেশ্য নয়। তবে হাঁ, ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান তথা ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার নির্দেশ অমান্য করার কারণে সে অবশ্যই ফাসেক ও পাপী বলে গণ্য হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. শাসকের দ্বারা কেউ ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কিংবা শাসককে কুফর ও শিরকের নিম্নস্তরের কোনও পাপকর্মে লিপ্ত দেখলেও তার কর্তব্য আনুগত্য বজায় রাখা।

খ. শরী'আতসম্মত কারণ ছাড়া শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েয নয়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৬৭১ | মুসলিম বাংলা