রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৬৭
অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
শাসকের আনুগত্য করার গুরুত্ব ও ফিতনা-ফাসাদকালে মানুষের করণীয়
হাদীছ নং: ৬৬৭

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। তখন আমরা এক স্থানে যাত্রাবিরতি দিলাম। আমাদের কেউ তার তাঁবু ঠিক করছিল, কেউ তিরন্দাযী করছিল এবং কেউ তার পশুর যত্ন নিচ্ছিল। হঠাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোষক ঘোষণা করল, নামায উপস্থিত। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সমবেত হলাম। তিনি বললেন, আমার পূর্বে যে-কেউ নবী হয়ে এসেছিলেন, তাঁর অবশ্যকর্তব্য ছিল আপন উম্মতকে নিজ জ্ঞান অনুযায়ী কল্যাণের পথ দেখানো এবং তাদেরকে আপন জ্ঞান অনুযায়ী অনিষ্ট সম্পর্কে সতর্ক করা। তোমরা এই যে উম্মত, এর নিরাপত্তা রাখা হয়েছে শুরুভাগে, এর শেষদিকে আঘাত হানবে বালা-মসিবত এবং এমনসব বিষয়, যাতে তোমরা আপত্তি জানাবে। আর আসবে এমনসব ফিতনা, যার কতক কতককে হালকা করে দেবে। এবং আসবে এমন ফিতনা, যখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, এটা আমাকে ধ্বংস করে দেবে। তারপর সে ফিতনা দূর হয়ে যাবে। এবং ফিতনা, যখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার মৃত্যু কেন এমন অবস্থায় আসে, যখন সে আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস রাখে। আর সে যেন মানুষের সঙ্গে এমন ব্যবহার করে, যেমন ব্যবহার তার সঙ্গে করা হোক বলে সে কামনা করে। যে ব্যক্তি কোনও ইমামের আনুগত্য করার শপথ করেছে, তারপর সে তার হাতে হাত রেখেছে এবং অন্তরের ভালোবাসা প্রদান করেছে, সে যেন নিজ সাধ্যমতো তার আনুগত্য করে। যদি অন্য কেউ এসে তার সঙ্গে বিবাদ করে, তবে তোমরা সে অপর ব্যক্তির গর্দান উড়িয়ে দেবে। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ১৮৪৪; সুনানে নাসাঈ : ৪১৯১; মুসনাদে আহমাদ: ৬৫০৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৩৭১০৯; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৯৫৬; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৫৯৬১)
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
667 - وعن عبدِ اللهِ بن عمرو رضي الله عنهما، قَالَ: كنا مَعَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - في سَفَرٍ، فَنَزَلْنَا مَنْزِلًا، فَمِنَّا مَنْ يُصْلِحُ خِبَاءهُ، وَمِنّا مَنْ يَنْتَضِلُ، وَمِنَّا مَنْ هُوَ فِي جَشَرِهِ، إذْ نَادَى مُنَادِي رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم: الصَّلاةَ جَامِعَةً (1). فَاجْتَمَعْنَا إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: «إنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبيٌّ قَبْلِي إِلاَّ كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ، وَيُنْذِرَهُم شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ. وَإنَّ أُمَّتَكُمْ هذِهِ جُعِلَ عَافِيَتُهَا في أوَّلِهَا، وَسَيُصيبُ آخِرَهَا بَلاَءٌ وَأمُورٌ تُنْكِرُونَهَا، وَتَجِيءُ فِتنَةٌ يُرَقِّقُ بَعْضُهَا بَعْضًا، وَتَجِيءُ الفتنَةُ فَيقُولُ المُؤْمِنُ: هذه مُهلكتي، ثُمَّ تنكشفُ، وتجيء الفتنةُ فيقولُ المؤمنُ: هذِهِ هذِهِ. فَمَنْ أحَبَّ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنِ النَّارِ، ويُدْخَلَ الجَنَّةَ، فَلْتَأتِهِ منيَّتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنَ باللهِ واليَوْمِ الآخِرِ، وَلْيَأتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِي يُحِبُّ أَنْ يُؤتَى إِلَيْهِ. وَمَنْ بَايَعَ إمَامًا فَأعْطَاهُ صَفْقَةَ يَدِهِ، وَثَمَرَةَ قَلْبِهِ، فَلْيُطِعْهُ إن استَطَاعَ، فإنْ جَاءَ آخَرُ يُنَازِعُهُ فَاضْرِبُوا عُنْقَ الآخَرِ». رواه مسلم. (2)
قَوْله: «يَنْتَضِلُ» أيْ: يُسَابِقُ بالرَّمْي بالنَّبل والنُّشَّاب. وَ «الجَشَرُ»: بفتح الجيم والشين المعجمة وبالراء، وهي: الدَّوابُّ الَّتي تَرْعَى وَتَبِيتُ مَكَانَهَا. وَقَوْلُه: «يُرَقِّقُ بَعْضُهَا بَعْضًا» أيْ: يُصَيِّرُ بَعْضُهَا بَعْضًا رقيقًا: أيْ خَفِيفًا لِعِظَمِ مَا بَعْدَهُ، فالثَّانِي يُرَقّقُ الأَوَّلَ. وقيل مَعنَاهُ يُشَوِّقُ بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ بتحسينهَا وَتَسويلِهَا، وقيل: يُشبِهُ بَعْضُها بَعضًا.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে শেষ যমানায় যখন কঠিন ফিতনা-ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, তখনকার করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে নির্দেশনা দিয়েছিলেন কোনও এক সফরে। সে সফরে কোনও এক স্থানে যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়েছিল। ফলে একেকজন একেক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কেউ তাঁবু খাটানোর কাজ করছিল। কেউ অন্যের সঙ্গে মিলে তিরন্দাযির প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। আবার কেউ চারণভূমিতে পশু চরানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় কোনও এক নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেল। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোষক ঘোষণা করল-
الصَّلَاةَ جَامِعَة (নামায উপস্থিত)। অর্থাৎ নামাযের সময় হয়ে গেছে। তোমরা নামায আদায়ের জন্য জমায়েত হও। সম্ভবত তখনও পর্যন্ত নামাযে ডাকার জন্য আযানের বিধান দেওয়া হয়নি। তাই এ শব্দে ডাকা হয়েছিল। আযানের বিধান দেওয়া হয়েছে হিজরী ২য় সনে। এর পূর্ব পর্যন্ত নামাযে ডাকার জন্য الصَّلَاةَ جَامِعَةً শব্দ ব্যবহার করা হত।

ডাক শুনে সাহাবীদের যে যেখানে ছিলেন সেখান থেকে চলে আসলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলকে নিয়ে নামায আদায় করলেন। তারপর তিনি সকলের সামনে একটি ভাষণ দিলেন। সে ভাষণে তিনি বললেন-
لَمْ يَكُنْ نَبِيٌّ قَبْلِي إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ ، وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ (আমার পূর্বে যে-কেউ নবী হয়ে এসেছিলেন, তাঁর অবশ্যকর্তব্য ছিল আপন উম্মতকে নিজ জ্ঞান অনুযায়ী কল্যাণের পথ দেখানো এবং তাদেরকে আপন জ্ঞান অনুযায়ী অনিষ্ট সম্পর্কে সতর্ক করা)। তিনি এ কথাটি বলেছেন তাঁর পরবর্তী কথায় ভূমিকাস্বরূপ। অর্থাৎ নবী পাঠানোর উদ্দেশ্যই হল মানুষকে কল্যাণের পথ দেখানো ও অকল্যাণ সম্পর্কে সতর্ক করা। মানুষের জন্য কোনটা কল্যাণকর ও কোনটা ক্ষতিকর তা মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন। তিনি নবীগণকে ওহীর মাধ্যমে যে সম্পর্কে অবহিত করেন। আর নবীগণ সেই জ্ঞানের আলোকে মানুষকে তা জানিয়ে দেন। এটা জানানো তাঁদের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব তাঁরা যথাযথভাবে পালন করেছেন। আমি সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁদের মতো একই দায়িত্ব দিয়ে আমাকেও পাঠানো হয়েছে। আমিও তোমাদের পক্ষে যা কল্যাণকর তা তোমাদের জানিয়ে দিই। আর যা তোমাদের পক্ষে ক্ষতিকর, সে সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করি। তোমাদের কর্তব্য সে মোতাবেক কাজ করা। তারপর তিনি ইরশাদ করেন-
وَإِنَّ أمتَكُمْ هَذِهِ جُعِلَ عَافِيَتُهَا فِي أَوَّلِهَا (তোমরা এই যে উম্মত, এর নিরাপত্তা রাখা হয়েছে শুরুভাগে)। অর্থাৎ মুহাম্মাদী উম্মত, যা কিনা কিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে। এর মধ্যে যারা প্রথমদিকের লোক, তারাই দীন সম্পর্কিত ফিতনা-ফাসাদ থেকে নিরাপদ থাকবে। তাদের পর যারা আসবে, তাদেরকে নানা ফিতনার সম্মুখীন হতে হবে। ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, 'শুরুভাগের উম্মত' বলে হযরত উছমান রাযি.-এর শাহাদাত পর্যন্ত প্রথম তিন খলীফার আমল বোঝানো হয়েছে। এটা ছিল ফিতনামুক্ত যমানা। এ সময় উম্মত ঐক্যবদ্ধ ছিল। নতুন কোনও দল-উপদলের সৃষ্টি হয়নি। দীনের মধ্যে কোনও ফেরকাবন্দী দেখা দেয়নি। উছমান রাযি.-এর শাহাদাতের পর ঐক্যে ফাটল ধরে। নতুন নতুন দল-উপদল সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় খারিজী ও রাফিজী সম্প্রদায়ের ফিতনা। তারপর একের পর এক ফিতনা বাড়তেই থাকে। মানুষ কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়ে যায়। প্রত্যেক কালেই কিছু না কিছু মানুষ সেসব ফিতনার শিকার হয় এবং নিজেদের দীন ও ঈমানের সমূহ ক্ষতি বয়ে আনে। অনেকে পুরোপুরি ঈমানহারা হয়ে যায়।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি বলেছিলেন সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ করে। এদিকে লক্ষ করলে বোঝা যায় তাদের মধ্যে যারা প্রথমদিকে থাকবেন তারা ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবেন। যারা তাদের পরে বেঁচে থাকবেন, তাদেরকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। বিষয়টি এরকমই হয়েছিল। প্রথম তিন খলীফার আমলে যারা ছিলেন, তারা নিরাপদই ছিলেন। তাদের পরে যারা বেঁচে ছিলেন, তাদেরকে কঠিন কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছিল। খারিজী, রাফিযী ও কাদরিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব এ সময়েই হয়েছিল। তারা সাহাবীদের বিরুদ্ধে ফাতওয়া জারি করেছিল। সাহাবীগণ তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছিলেন। তাদের হাতে বহু সাহাবী হতাহত হয়েছিলেন। সাহাবীগণ রক্ত দিয়ে ইসলামের হেফাজত করেছিলেন এবং দীনের সত্য-সঠিক আকীদা-বিশ্বাস ও শিক্ষামালা পরবর্তীদের কাছে পৌছে দিয়েছিলেন।

কারও কারও মতে 'প্রথমদিকের উম্মাহ' বলে সাহাবা ও তাবি'ঈনের যুগ বোঝানো হয়েছে আর 'শেষদিকের উম্মাহ' বলে বোঝানো হয়েছে তাদের পরবর্তী যুগের মুসলিমদেরকে। কোনও কোনও হাদীছ দ্বারা এর সমর্থন মেলে। যেমন এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
خَيْرُ أُمَّتِي الْقَرْنُ الَّذِيْنَ يَلُوْنِي ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ
আমার উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল আমার সঙ্গে মিলিত প্রজন্ম। তারপর তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এবং তারপর তাদের পরবর্তী প্রজন্ম। (সহীহ মুসলিম : ২৫৩৩; শারহুস সুন্নাহ: ৩৮৫৭; মুসনাদে আবূ দাউদ তয়ালিসী: ৮৯২; মুসনাদে আহমাদ: ৭১২৩; জামে' তিরমিযী: ২২২২; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার : ৬১২১)

অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّينَ عَضُّوا عليها بالنَّواجِذِ
তোমরা আঁকড়ে ধরো আমার সুন্নাহ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাহ। তোমরা মাড়ির দাঁত দিয়ে তা কামড়ে ধরো। (সুনানে আবূ দাউদ: ৪৬০৭; সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ২০৩৩৮; শু'আবুল ঈমান : ৮১০৯; মুসনাদুল বাযযার: ৪২০১; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার: ৪৯৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৬২২; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩২৯)

এসব হাদীছ প্রমাণ করে সাহাবা, তাবি'ঈন ও তাবে-তাবি'ঈনের যুগ শ্রেষ্ঠতম যুগ। এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ একমত। মোটামুটিভাবে সাহাবায়ে কেরামের যুগ ধরা হয় হিজরী ১ম শতাব্দীকে। তার পরবর্তী ৭০/৮০ বছর হল তাবি'ঈদের যুগ। তার পরবর্তী ৫০ বছর তাবে-তাবি'ঈদের যুগ। এভাবে হিজরী ২২০/২৩০ পর্যন্ত ছিল শ্রেষ্ঠ তিন যুগ।

এরপর দেখা দেয় নানারকম ফিতনা-ফাসাদ। বিশেষত মু'তাযিলা সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন দার্শনিক মতাদর্শের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এসব সম্প্রদায় তাদের ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস প্রচার করতে থাকে। একসময় রাষ্ট্রশক্তি তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। হক্কানী উলামা তাদের মতবাদ খণ্ডন করতে গেলে তারা রাষ্ট্রশক্তির রোষানলে পড়ে। তাদেরকে কঠির জুলুম-নিপীড়নের শিকার হতে হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে থাকে। নিত্য-নতুন ফেরকা ও ভ্রান্ত মতাদর্শ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। এক ফিতনার অবসান ঘটে, তো নতুন আরেক ফিতনা দাঁড়িয়ে যায়। এভাবে আমাদের এ যুগ পর্যন্ত চলে আসছে। প্রত্যেক যুগেই যারা নবী কারীম সাল্লাল্লায় আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহ আঁকড়ে ধরেছে, তারাই সত্যের পথে প্রতিষ্ঠিত থেকেছে। আর যারা সে আদর্শ থেকে সরে গেছে, তারা সত্য-সঠিক দীন থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং হয়েছে গোমরাহীর শিকার। এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরবর্তী যুগ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন-
وَسَيُصِيبُ آخِرَهَا بَلَاءٌ وَأَمُوْرٌ تُنْكِرُونَهَا (এর শেষদিকে আঘাত হানবে বালা-মসিবত এবং এমনসব বিষয়, যাতে তোমরা আপত্তি জানাবে)। বালা-মসিবত দ্বারা দীনী বালা-মসিবত বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এমন এমন মতাদর্শের উদ্ভব ঘটবে, যা মানুষের পক্ষে কঠিন মসিবত হয়ে দেখা দেবে। অনেক মানুষ সেসব মতাদর্শের শিকার হয়ে নিজেদের আকীদা-বিশ্বাস ও ঈমান-আমল বরবাদ করে ফেলবে। যারা তা গ্রহণ করবে না, তারাও কঠিন পরীক্ষায় পড়ে যাবে। বালা (بَلَاءٌ) শব্দটির আক্ষরিক অর্থও পরীক্ষা। যখন কোনও ভ্রান্ত মতাদর্শ সামনে এসে পড়ে, তখন তা মুসলিমসাধারণের জন্য পরীক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যারা তা গ্রহণ করে নেয়, তারা পরীক্ষায় ফেল করে। আর যারা গ্রহণ করে না, তারা নতুন আরেক পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। তা হল শক্তিমানদের জুলুম-নিপীড়ন। সে জুলুম-নিপীড়নের সামনে সকলের টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অনেকে বিভিন্ন কৌশলে প্রাণ রক্ষা করে। আর যারা ইস্পাতকঠিন মনোবলের অধিকারী, তারা সত্যের সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গ করে, কিন্তু কোনও অবস্থায়ই ভ্রান্ত মতাদর্শের সঙ্গে আপস করতে প্রস্তুত হয় না। যুগে যুগে বহু আল্লাহপ্রেমিক ও আপসহীন সংগ্রামী পুরুষ এভাবে প্রাণোৎসর্গ করে আমাদের জন্য সাহসিক পথচলার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে জান্নাতের উঁচু মাকামে অভিষিক্ত করুন।

وَأَمُوْرٌ تُنْكِرُونَهَا (এবং এমনসব বিষয়, যাতে তোমরা আপত্তি জানাবে)। অর্থাৎ নানারকম শরী'আতবিরোধী বিষয় প্রকাশ পাবে। মানুষ নিত্যনতুন বিদ'আতের সৃষ্টি করবে। দীনের নামে দীনবিরোধী কার্যকলাপ করবে। তখন যাদের দীনের প্রকৃত জ্ঞান থাকবে, তারা সেসব কাজে আপত্তি জানাবে। তারা তার প্রতিবাদ করবে। বোঝা গেল দীনের সত্যিকারের জ্ঞান চর্চাকারী মানুষ সবসময়ই কিছু না কিছু থাকবে। সেইসঙ্গে দীনের প্রকৃত জ্ঞানীদের কর্তব্য শরী'আতবিরোধী কার্যকলাপের দীনের নামে বেদীনী কর্মকাণ্ড দেখতে পেলে মানুষকে সে সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া যে, তা আদৌ দীন নয়; বরং তা শিরক বা বিদ'আতী কাজ।

তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন- তারপর নবী وَتَجِيءُ فِتْنَةٌ يُرَقّقُ بَعْضُهَا بَعْضًا (আর আসবে এমন সব ফিতনা, যার কতক কতককে হালকা করে দিবে। অর্থাৎ একের পর এক কঠিন থেকে কঠিনতর ফিতনা-ফাসাদ দেখা দেবে। প্রথম যখন কোনও ফিতনা দেখা দেবে, তখন সেটিকে অনেক কঠিন মনে হবে। তারপর তারচে' আরও বড় ফিতনা দেখা দেবে। তখন সেটির সামনে আগের ফিতনাটি ছোট ও হালকা মনে হবে। এভাবে প্রত্যেক পরবর্তী ফিতনা পূর্ববর্তী ফিতনার তুলনায় বেশি ভয়াবহ হবে। ফলে প্রত্যেক পরের ফিতনা সম্পর্কে লোকে ভাববে যে, এর তুলনায় তো আগের ফিতনাটি ছোট ও হালকা ছিল। কেউ বলেন, এর অর্থ ফিতনা যখন শুরু হবে, তখন এক ফিতনা আরেক ফিতনা টেনে নিয়ে আসবে। ফলে ফিতনা কখনও বন্ধ হবে না। একের পর এক আসতেই থাকবে। যেমন কোনও কোনও হাদীছে আছে, সাগরের ঢেউয়ের মতো এক ফিতনার পেছনে আরেক ফিতনা আসতে থাকবে। কারও মতে এর অর্থ এক ফিতনার সঙ্গে আরেক ফিতনার মিল থাকবে।

وَتَجِيءُ الْفِتْنَةُ فَيَقُوْلُ الْمُؤْمِنُ: هَذِهِ مُهْلِكَتِي (এবং আসবে এমন ফিতনা, যখন মুমিন বলবে, এটা আমাকে ধ্বংস করে দেবে)। অর্থাৎ সে ফিতনা এমন ভয়ংকর হবে, দেখে মুমিন ব্যক্তি আতঙ্কবোধ করবে। সে মনে করবে এ ফিতনা আমার দীন ও ঈমান ধ্বংস করে দেবে। এর দ্বারা ইঙ্গিত হয় যারা প্রকৃত মুমিন তারা সর্বদা নিজেদের ঈমান সম্পর্কে সচেতন থাকে। ঈমানবিধ্বংসী কোনও ফিতনা দেখা দিলে তাদের ভয় হয় না জানি তার থাবায় নিজেদের ঈমান খোয়া যায়। এরূপ ভয় থাকা ভালো। তাতে ঈমানরক্ষার ফিকির ও চেষ্টা থাকে এবং সেজন্য আল্লাহ তা'আলার দিকে মন ঝোঁকে ও তাঁর আশ্রয় গ্রহণ করা হয়।

ثُمَّ تَنكَشِفُ ، وَتَجِيءُ الْفِتْنَةُ فَيَقُوْلُ الْمُؤْمِنُ : هَذِهِ هَذِهِ (তারপর সে ফিতনা দূর হয়ে যাবে। এবং আসবে আরেক ফিতনা, তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, এটাই এটাই)। অর্থাৎ এটাই সেই ভয়ংকর ফিতনা, যা আমাকে ধ্বংস করবে। অর্থাৎ প্রথম ফিতনার তুলনায় পরের ফিতনা বেশি কঠিন হবে। ফলে সেটি যখন দেখা দেবে, তখন সে যেন নিশ্চিত হয়ে যাবে যে, এ ফিতনাই আমার ঈমান ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মূলত এটা আগের কথারই ব্যাখ্যা, যাতে বলা হয়েছে এক ফিতনা আরেক ফিতনাকে হালকা করে দেবে।

مَنْ أَحَبُّ أَنْ يُزحْزَحَ عَنِ النَّارِ وَيُدْخَلَ الْجَنَّةَ ، فَلْتَأْتِهِ مَنِيتهُ وَهُوَ يُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ (সুতরাং যার কামনা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার মৃত্যু যেন এমন অবস্থায় আসে, যখন সে আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস রাখে)। অর্থাৎ সে যেন সর্বদা ঈমানের অবস্থায় থাকে। ঈমানের অবস্থায় থাকার জন্য সর্বদা পাপকর্ম থেকে দূরে থাকা ও সৎকর্মে নিয়োজিত থাকা জরুরি। সৎকর্ম ঈমানকে মজবুত করে আর পাপকর্ম ঈমানকে দুর্বল করে দেয়। অনেক সময় পাপকর্ম ঈমান ধ্বংসেরও কারণ হয়ে যায়। কার কখন মৃত্যু আসবে তা কেউ জানে না। তাই প্রত্যেকের উচিত সর্বদা নিজ ঈমানের ব্যাপারে সচেতন থাকা এক আল্লাহ তা'আলার অনুগত বান্দারূপে জীবনযাপন করা। তবেই আশা রাখা যায় ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করা যাবে। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ (102)
হে মুমিনগণ! অন্তরে আল্লাহকে সেইভাবে ভয় করো, যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত। (সাবধান! অন্য কোনও অবস্থায় যেন) তোমাদের মৃত্যু (না আসে, বরং) এই অবস্থায়ই যেন আসে যে, তোমরা মুসলিম। (সূরা আলে 'ইমরান (৩), আয়াত ১০২)

وَلْيَأْتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِي يُحِبُّ أَنْ يُؤْتَى إِلَيْهِ ( আর সে যেন মানুষের সঙ্গে এমন ব্যবহার করে, যেমন ব্যবহার তার সঙ্গে করা হোক বলে সে কামনা করে)। প্রত্যেকেই চায় লোকে তাকে সম্মান করুক, তাকে ভালোবাসুক ও তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুক। অন্যের কাছে এ-ই যখন প্রত্যেকের চাওয়া, তখন অন্যের প্রতিও প্রত্যেকের এরকম আচরণই করা উচিত। সে অন্যকে সম্মান করবে, কাউকে অসম্মান করবে না। অন্যকে ভালোবাসবে, কারও সঙ্গে শত্রুতা করবে না। অন্যের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে, কারও সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করবে না। এক হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ
‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্যে তা পসন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পসন্দ করে। (সহীহ বুখারী: ১৩; সহীহ মুসলিম: ৪৫; জামে তিরমিযী: ২৫১৫; সুনানে নাসাঈ: ৫০১৬)

আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার বিষয়েও এ কথাটি প্রযোজ্য। প্রত্যেকে চিন্তা করবে সে নিজে যদি শাসক হত, তবে মানুষের কাছে তার কামনা কী থাকত। নিশ্চয়ই তার কামনা থাকত মানুষ যেন তার পুরোপুরি আনুগত্য করে। কেউ যেন তার বিরোধিতা না করে বা বিদ্রোহে লিপ্ত না হয়। সুতরাং তারও কর্তব্য হবে শাসক ও আমীরের পরিপূর্ণ আনুগত্য করা।

وَمَنْ بَايَعَ إِمَامًا فَأَعْطَاهُ صَفْقَةَ يَدِهِ، وَثَمَرَةَ قَلْبِهِ، فَلْيُطِعْهُ إِنِ اسْتَطَاعَ (যে ব্যক্তি কোনও ইমামের আনুগত্য করার শপথ করেছে, তারপর সে তার হাতে হাত রেখেছে এবং অন্তরের ভালোবাসা প্রদান করেছে, সে যেন নিজ সাধ্যমতো তার আনুগত্য করে)। এর দ্বারা বোঝা গেল, ইমাম ও শাসকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের পূর্ণাঙ্গ রূপ হল তার হাতে হাত রাখা। কেবল মুখে আনুগত্য প্রকাশ করলাম বলাই যথেষ্ট নয়।
ثَمَرَةَ قَلْبِهِ -এর আক্ষরিক অর্থ মনের ফল ও ফসল। বোঝানো উদ্দেশ্য নিষ্ঠা, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা। অর্থাৎ আনুগত্যের অঙ্গীকার করা হবে নিষ্ঠা, ভালোবাসা ও আন্তরিকতার সঙ্গে। ধোঁকা দেওয়া উদ্দেশ্য থাকবে না। এজন্যই হাতে হাত রাখার পাশাপাশি মনের ভালোবাসা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কথাটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তরিক ভালোবাসার সঙ্গে আনুগত্য প্রকাশ করা হলে অন্তরে সে আনুগত্যের মর্যাদা থাকে। তখন সে আনুগত্য রক্ষার চেষ্টাও থাকে। সেইসঙ্গে থাকে শাসকের সহযোগিতা ও তার প্রতি কল্যাণকামিতার মনোভাবও। ইসলাম শাসক নিয়োগের বিধান যেহেতু মানুষের কল্যাণার্থেই দিয়েছে, তাই সে যাতে অবাধে মানুষের কল্যাণসাধনে নিয়োজিত থাকতে পারে, সে লক্ষ্যে সকলের কর্তব্য তার প্রতি সহযোগিতার মনোভাব বজায় রাখা। অন্তরে ভালোবাসা থাকলেই তা সম্ভব।

فَإِنْ جَاءَ آخَرُ يُنَازِعُهُ فَاضْرِبُوا عُنْقَ الْآخَرِ (যদি অন্য কেউ এসে তার সঙ্গে বিবাদ করে, তবে তোমরা সে অপর ব্যক্তির গর্দান উড়িয়ে দেবে)। অর্থাৎ কেউ যদি বিদ্রোহ করে এবং শাসককে ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়ে নিজে তার আসনে বসতে চায়, তবে তোমরা সে বিদ্রোহীর সমর্থন করবে না; বরং বর্তমানে যে ক্ষমতায় আছে তাকেই সমর্থন করবে এবং তার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। বিদ্রোহী ব্যক্তিকে যদি সহজে নিবৃত্ত করা যায় তবে তো ভালো, অন্যথায় প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেবে, তার সঙ্গে যুদ্ধ করবে। তাতে যদি তাকে হত্যা করারও প্রয়োজন হয়, তাতেও দ্বিধা করবে না। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে এরূপ করাই বাঞ্ছনীয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নবী-রাসূলগণ মানুষকে কল্যাণের পথ দেখান এবং ক্ষতি ও অনিষ্ট সম্পর্কে সতর্ক করেন।

খ. এ উম্মতের মধ্যে সাহাবীগণের মর্যাদা অন্য সকলের উপরে।

গ. যারা দীনের সঠিক জ্ঞান রাখেন, তারা দীনবিরোধী কার্যকলাপে আপত্তি করে থাকেন। তা করা তাদের কর্তব্য।

ঘ. যখনই কোনও ফিতনা-ফাসাদ দেখা দেয়, তখন মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য নিজ ঈমান সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং কোনওভাবেই যাতে তা নষ্ট হতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা।

ঙ. আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতলাভের জন্য ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করা শর্ত।

চ. প্রকৃত মুমিন ব্যক্তি নিজের জন্য যা ভালোবাসে, অন্যের জন্যও তা ভালোবাসে।

ছ. ইমাম ও শাসকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের পর শরী'আতসম্মত কারণ ছাড়া সে আনুগত্য প্রত্যাহার করা জায়েয নয়।

জ. অবৈধভাবে কেউ বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তার সমর্থন করা জায়েয নয়। সকলের কর্তব্য বৈধ শাসকের পক্ষে থেকে সে বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৬৬৭ | মুসলিম বাংলা