রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৬৬
অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
সর্বাবস্থায় শাসকের আনুগত্য করার বাধ্য-বাধকতা
হাদীছ নং: ৬৬৬

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইছি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমার কর্তব্য শাসকের আদেশ শোনা ও মানা তোমার সংকটে-সচ্ছলতায়, তোমার সন্তষ্টিকালে ও অসন্তুষ্টিকালে এবং তোমার উপর অন্যরে প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায়ও। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১৮৩৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: ৩৭২৫৮; মুসনাদুল বাযযার: ৩৭৩৫; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৫৬২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ১৯৬)
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
666 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «عَلَيْكَ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ في عُسْرِكَ وَيُسْرِكَ، وَمَنْشَطِكَ وَمَكْرَهِكَ، وَأثَرَةٍ عَلَيْكَ». رواه مسلم. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার অপরিহার্যতা তুলে ধরা হয়েছে। শাসক যদি কোনও আদেশ করে, তবে তা পালন করা এবং যদি কোনও কাজ করতে নিষেধ করে, তবে তা থেকে বিরত থাকা একান্ত কর্তব্য। এটা জরুরি সর্বাবস্থায়, যদি না কোনও গুনাহের বিষয় হয়। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত, গুনাহের কাজে কারও আনুগত্য করা যায় না। গুনাহর কাজ ছাড়া অন্য যে-কোনও বিষয়ে শাসকের হুকুম মানা যে জরুরি, তা ব্যক্ত করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
عَلَيْكَ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِي عُسْرِكَ وَيُسْرِكَ (তোমার কর্তব্য শাসকের আদেশ শোনা ও মানা তোমার সংকটে-সচ্ছলতায়)। অর্থাৎ তুমি গরীব অবস্থায় থাক বা ধনী অবস্থায়, শাসক যদি তোমাকে কোনও আদেশ করে আর সে আদেশ তোমার অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নাও হয়, তবুও তোমাকে তার আদেশ মানতে হবে। এমন হতে পারে যে, গরীব থাকার কারণে তার সে আদেশ তোমার পক্ষে মানা কষ্টকর, কিন্তু সমষ্টিগত শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে সে কষ্ট স্বীকার করে হলেও তোমার কর্তব্য হবে আদেশটি মেনে নেওয়া। এমনিভাবে তুমি যদি ধনী হও আর শাসক এমন কোনও আদেশ করে, বা মানতে গেলে তুমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে কর, তবুও আর্থিক সে ক্ষতি স্বীকার করে তোমাকে সে আদেশমতো কাজ করতে হবে। তাতে ব্যক্তিগতভাবে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং অন্যদের মতো তার কল্যাণ তুমিও ভোগ করতে পারবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন- وَمَنْشَطِكَ وَمَكْرَهِكَ (তোমার সন্তষ্টিকালে ও অসন্তষ্টিকালে)। অর্থাৎ সে আদেশকালে মানসিকভাবে তুমি খুশি ও আনন্দিত থাক বা কোনও কারণে অখুশি ও অপ্রসন্ন থাক, সর্বাবস্থায় আদেশ মানা জরুরি। এমনিভাবে আদেশটি তোমার মনঃপূত হোক বা নাই হোক, তোমার মর্জি-মেজাযের অনুকূলে হোক বা প্রতিকূলে হোক, যদি না তা শরী'আতবিরোধী হয়, অবশ্যই তোমাকে তা মানতে হবে। তিনি আরও বলেন-
وَأَثَرَةٍ عَلَيْكَ (এবং তোমার উপর অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায়ও)। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোনও সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি তোমার উপর অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, অথচ তার চেয়ে তুমিই সে সুবিধার বেশি হকদার, তবুও তুমি আনুগত্য রক্ষা করে চলবে। তোমাকে কেন বঞ্চিত করা হল, সে দুঃখে বা কষ্টে তুমি আনুগত্য প্রত্যাহার করবে না। এমনিভাবে সরকারি কোনও পদের জন্য যদি তুমি বেশি উপযুক্ত হও, তা সত্ত্বেও তোমাকে বঞ্চিত করে অন্য কাউকে সে পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, তবুও তুমি শাসকের অবাধ্যতা করবে না। কেননা এ সবই ব্যক্তিগত বিষয় এবং এর ক্ষতি ব্যক্তি পর্যায়ে সীমিত। কিন্তু অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ করা হলে তাতে যে ফিতনা-ফাসাদ ও নৈরাজ্য দেখা দেয়, তার ক্ষতি সর্বব্যাপী। সকলকেই তার ভোগান্তি পোহাতে হয়। এমনকি তা দীনের জন্যও ক্ষতিকর। নৈরাজ্য ও অশান্তি দেখা দিলে দীনী কর্মকাণ্ডও বাধাগ্রস্ত হয়। তাই যতদূর সম্ভব শাসকের প্রতি আনুগত্য রক্ষা করা কর্তব্য।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. শাসকের আদেশ-নিষেধ পালন দ্বারা কেউ ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তার কর্তব্য শাসকের প্রতি আনুগত্য রক্ষা করা।

খ. শাসকের আদেশ-নিষেধ নিজ মর্জি-মেজায ও রুচি-প্রকৃতির বিপরীত হলেও তা পালন করতে হবে, যদি না তা কোনও গুনাহের বিষয় হয়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৬৬৬ | মুসলিম বাংলা