রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৪৫
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ৭৫ ক্ষমা প্রদর্শন করা ও অজ্ঞজনদের আচরণ উপেক্ষা করা
আঘাতকারীকে ক্ষমা করা এবং তার জন্য মাগফিরাত ও হিদায়াতের দু'আ করা
হাদীছ নং: ৬৪৫

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. বলেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পাচ্ছি, তিনি আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের মধ্যকার কোনও একজন নবী সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন। তাঁকে তাঁর সম্প্রদায় মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেছিল আর তিনি চেহারা থেকে রক্ত মুছছিলেন আর বলছিলেন, হে আল্লাহ! আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করুন। এরা তো জানে না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৩৪৭৭; সহীহ মুসলিম: ১৭৯২; মুসনাদে আহমাদ: ৪১০৫; সুনানে ইবন মাজাহ : ৪০২৫; মুসনাদুল বাযযার: ১৬৮৬; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৫২০৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩৭৪৯)
مقدمة الامام النووي
75 - باب العفو والإعراض عن الجاهلين
645 - وعن ابن مسعود - رضي الله عنه - قَالَ: كأني أنظر إِلَى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يَحْكِي نَبِيًّا مِنَ الأنبياءِ، صَلَوَاتُ اللهِ وَسَلامُه عَلَيْهِمْ، ضَرَبَهُ قَوْمُهُ فَأدْمَوْهُ، وَهُوَ يَمْسَحُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِهِ، ويقول: «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِقَوْمِي؛ فَإنَّهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পূর্ববর্তী কোনও নবীর দাওয়াতী কার্যক্রমের বর্ণনা দিতে গিয়ে জানাচ্ছেন, তাঁর কওম তাঁর উপর কী রকম জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছিল এবং তাতে সেই নবী কেমন ধৈর্যধারণ করেছিলেন। এ কথা জানানোর উদ্দেশ্য উম্মতকে অবহিত করা যে, সত্যের পথে দাওয়াত দিতে গেলে যে জুলুম-নিপীড়নের সম্মুখীন হতে হয় তা নতুন কিছু নয়। আবহমান কাল থেকে এটা চলে এসেছে। কাজেই দাওয়াতদাতাকে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গেই আপন কাজ চালিয়ে যেতে হবে। দাওয়াতদাতার কর্তব্য অপেক্ষায় থাকা এবং দু'আ জারি রাখা। মনে আশা রাখতে হবে যে, আল্লাহ চাহে তো একদিন না একদিন তারা সাড়া দেবেই।

বস্তুত কওমের দুর্ব্যবহারে ধৈর্যধারণ করাটাও এক জিহাদ। নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। আল্লাহর পথে দাওয়াতদাতাদের এ জিহাদেও অবিচল থাকা জরুরি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাচ্ছেন-
ضَرَبَهُ قَوْمُهُ فَأَدْمَوْهُ، وَهُوَ يَمْسَحُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِهِ (তাকে তার সম্প্রদায় মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেছিল আর তিনি চেহারা থেকে রক্ত মুছছিলেন)। অর্থাৎ তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে এমন নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে মেরেছিল যে, তাঁর সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করে ফেলেছিল। চেহারা ও মাথাও বাদ দেয়নি, যে কারণে তাঁর চেহারা থেকেও রক্ত ঝরছিল। এর দ্বারা বোঝা যায় সেই নবী তাদের আক্রমণের মুখে পলায়ন করেননি। পলায়ন করলে আঘাত লাগত পেছন দিকে। তিনি অটল-অবিচল দাঁড়িয়ে থেকেছিলেন। ফলে তাঁর চেহারাও ক্ষত-বিক্ষত হয়। উহুদের যুদ্ধে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও শত্রুদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে অবিচল ছিলেন। আপন স্থান থেকে এক কদমও নড়েননি। ফলে তাদের অস্ত্রের আঘাতে তাঁরও চেহারা ও মাথা জখম হয়ে গিয়েছিল। তিনিও তখন কাফেরদের বদদু'আ করেননি; বরং সেই নবীর মতোই চেহারা থেকে রক্ত মুছছিলেন। আর বলছিলেন-
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِقَوْمِي؛ فَإِنَّهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ (হে আল্লাহ! আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করুন। এরা তো জানে না)। অর্থাৎ তারা নবীর উচ্চমর্যাদা সম্পর্কে জানে না। তা জানলে এরূপ আচরণ করত না। বরং তাঁকে সম্মান করত ও তাঁর প্রতি ঈমান আনত। এভাবেই নবীগণ দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে অসামান্য ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে থাকেন। তাঁরা তাঁদের উপর আঘাতকারীকে কেবল ক্ষমা করেই ক্ষান্ত হন না; বরং আল্লাহ তা'আলার কাছে তাদের মাগফিরাত ও হিদায়াতের জন্য দু'আও করে থাকেন। এর ভেতর ইসলামের দা'ঈ ও প্রচারকদের জন্য ধৈর্য, সহনশীলতা ও মহানুভবতার শিক্ষা রয়েছে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. অবিশ্বাসীদের পক্ষ থেকে দীনের দাওয়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং দাওয়াতদাতাদের উপর জুলুম-নির্যাতন চালানোর বিষয়টি নতুন কিছু নয়। তাই এরূপ পরিস্থিতিতে হতাশ না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে আপন কাজে অবিচল থাকাই দা'ঈর কর্তব্য।

খ. সত্যিকারের দা'ঈ জুলুম-নিপীড়নের কারণে কাফেরদের বদদু'আ দেয় না; বরং তাদের প্রতি ক্ষমাপ্রদর্শন করে এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে তাদের জন্য হিদায়াত ও মাগফিরাতের দু'আ করে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)