রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৪২
ক্ষমা প্রদর্শন করা ও অজ্ঞজনদের আচরণ উপেক্ষা করা
العفو এর আভিধানিক অর্থ মুছে ফেলা, মিটিয়ে দেওয়া। পারিভাষিক অর্থ অপরাধ উপেক্ষা করা, অপরাধের শাস্তি না দেওয়া।
الإعراض এর আভিধানিক অর্থ পাশ কাটানো, উপেক্ষা করা। পরিভাষায় অন্যের দুর্ব্যবহারকে উপেক্ষা করা ও তা গায়ে না মাখানোকে الإِعْرَاضُ বলা হয়।
দু'টি শব্দ দ্বারাই মূলত একই বিষয় বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ কেউ যদি কষ্ট দেয় বা দুর্ব্যবহার করে, তবে সেজন্য ক্ষুব্ধ না হয়ে এবং কোনওরূপ প্রতিশোধ না নিয়ে তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা ও ক্ষমা করে দেওয়া। এটি একটি মহৎ গুণ।
হাসান বসরী রহ. বলেন, ক্ষমাশীলতা মুমিনের শ্রেষ্ঠতম গুণ।
হযরত উমর ইবন আব্দুল আযীয রহ. বলেন, আল্লাহ তা'আলার কাছে তিনটি জিনিস সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়। শক্তি-সামর্থ্য থাকা অবস্থায় ক্ষমা করা, চেষ্টা-মেহনতে মধ্যপন্থা ও ইবাদতে কোমলতা।
ফুযায়ল ইবন ইয়ায রহ. বলেন, কেউ যদি তোমার কাছে কারও বিরুদ্ধে নালিশ নিয়ে আসে, তবে তুমি তাকে বলবে, হে ভাই! তুমি তাকে ক্ষমা করো। কেননা ক্ষমাশীলতা তাকওয়ার বেশি নিকটবর্তী।
ক্ষমাশীলতার কথা উঠলেই হযরত ইয়ূসুফ আলাইহিস সালামের কথা চলে আসে। তাঁর ভাইয়েরা তাঁর সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল? তারা তাঁকে কুয়ায় ফেলেই ক্ষান্ত হয়নি; তাকে গোলাম হিসেবে বিক্রিও করে দিয়েছিল, যদ্দরুন তাঁকে নারীদের চক্রান্তের শিকার হতে হয়েছিল। ভোগ করতে হয়েছিল দীর্ঘ কারাবাস। এতদসত্ত্বেও তিনি ভাইদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগস্বরূপ একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। সর্বোচ্চ উদারতার সঙ্গে বলে দিয়েছিলেন-
لَا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হবে না। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সকল দয়ালু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইয়ূসুফ (১২), আয়াত ৯২)
ইসলাম এ গুণ অবলম্বনের প্রতি বিপুল উৎসাহ দান করেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত ক্ষমাশীল ছিলেন। হাদীছ ও সীরাতের গ্রন্থসমূহে তাঁর ক্ষমাশীলতার বহু ঘটনা বর্ণিত আছে। সাহাবায়ে কেরামকেও তিনি এ গুণের উপর গড়ে তুলেছিলেন। তারা প্রত্যেকেই অসাধারণ ক্ষমাশীল ছিলেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদিন বাজারে খাদ্যশস্য ক্রয় করেন। তারপর দাম পরিশোধ করতে গিয়ে দেখেন নিজ পাগড়ির যেখানে দিরহাম রেখেছিলেন সেখানে তা নেই। তিনি বললেন, আমি যখন এখানে বসেছি, তখনও তো দিরহামগুলো আমার সঙ্গে ছিল। লোকেরা অনেক খোঁজাখুঁজি করল। কিন্তু পাওয়া গেল না। শেষে তারা বলতে লাগল, হে আল্লাহ! যেই চোর দিরহামগুলো নিয়েছে তার হাত কেটে দাও। হে আল্লাহ! তাকে এই করো, ওই করো ইত্যাদি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'ঊদ রাযি. বললেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি সেগুলো নিয়ে গেছে, সে যদি অভাবগ্রস্ত হয় তবে তাকে ওই দিরহামে বরকত দাও। আর যদি সে ধৃষ্টতার সঙ্গে অপরাধ করতেই তা নিয়ে থাকে, তবে এটাকেই তার সর্বশেষ অপরাধে পরিণত করো (অর্থাৎ তুমি তাকে হেফাজত করো, যাতে এরপর সে আর কোনও অপরাধ না করে)।
ক্ষমাশীলতার কল্যাণ বহুবিধ। এর দ্বারা পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। ক্ষমা করার দ্বারা মনের ভার লাঘব হয়। মানসিক শান্তি লাভের একটি বড় উপায় অন্যকে ক্ষমা করা। যে ব্যক্তি অন্যকে যত বেশি ক্ষমা করতে পারে, সে ততো বেশি স্বস্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারে। বলা হয়ে থাকে, ক্ষমা করা ব্যক্তির নিজ সত্তার যাকাত। অন্যের উপর ক্রোধ মিটিয়ে যে সুখ পাওয়া যায়, ক্ষমাশীলতার সুখ তারচে' অনেক বেশি। কেননা ক্ষমাশীলতার সুখের সঙ্গে মানুষের প্রশংসা যুক্ত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে অন্যের উপর রাগ মেটানোর দ্বারা যে আরাম পাওয়া যায়, তার সঙ্গে যুক্ত হয় লোকনিন্দা ও মনের অনুতাপ।
সময়ে বরকতলাভ ও জীবনকে কর্মময় করে তোলার পক্ষে ক্ষমাশীলতা অনেক বেশি সহায়ক। কেননা মনের ঝাল মেটানো ও প্রতিশোধ গ্রহণের পেছনে পড়লে বিপুল সময় বৃথা নষ্ট হয়। ক্ষমা করার দ্বারা সে সময়টা বেঁচে যায় এবং তা অনেক ভালো ভালো কাজে লাগানো সম্ভব হয়। তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তি প্রতিশোধ গ্রহণের ধান্দা ছেড়ে ক্ষমাশীলতাকেই বেছে নিয়ে থাকে।
ক্ষমা করার দ্বারা অতি সহজে মানুষের মন জয় করা যায়। মানুষের কাছে ক্ষমাশীল ব্যক্তি বিশেষ সমাদর লাভ করে। ব্যক্তির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এ গুণটি অনেক বেশি সহায়ক। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
وَمَا زَادَ اللَّهُ عَبْدًا بِعَفْو، إِلَّا عِزَّا
‘আল্লাহ তা'আলা ক্ষমাশীলতা দ্বারা বান্দার কেবল সম্মানই বৃদ্ধি করেন।(সহীহ মুসলিম: ২৫৮৮)
হযরত আবুদ দারদা রাযি.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, (প্রতিশোধ নেওয়ার) ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি ক্ষমা করে। সুতরাং তোমরা ক্ষমা করো, আল্লাহ তা'আলা তোমাদের মর্যাদাবান করবেন।
সবচে' বড় কথা, অন্যকে ক্ষমা করার দ্বারা আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা লাভ করা যায় এবং এটা জান্নাত লাভেরও একটি বড় উপায়। সুতরাং কুরআন ও হাদীছ আমাদেরকে ক্ষমাশীলতা অর্জনের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে এবং এর অশেষ ফযীলতও তুলে ধরেছে। এ অধ্যায়ের আয়াত ও হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।
‘ক্ষমা প্রদর্শন করা…’ সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
অর্থ: তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করো এবং (মানুষকে) সৎকাজের আদেশ দাও আর অজ্ঞদের অগ্রাহ্য করো।(সূরা আ'রাফ (৭), আয়াত ১৯৯)
ব্যাখ্যা
এটি ৭৪ নং অধ্যায়ের ২য় আয়াতরূপে উদ্ধৃত হয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
দুই নং আয়াত
فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيلَ
অর্থ: সুতরাং (হে নবী! তাদের আচার-আচরণকে) উপেক্ষা করো সৌন্দর্যমণ্ডিত উপেক্ষায়।(সূরা হিজর (১৫), আয়াত ৮৫)
ব্যাখ্যা
الصفح এর অর্থ উপেক্ষা করা, অভিযোগ করা হতে বিরত থাকা। ইমাম রাগিব রহ. বলেন, এটা ক্ষমার চেয়েও উচ্চস্তরের। এ কারণেই ইরশাদ হয়েছে-
فَاعْفُوا وَاصْفَحُوا
‘সুতরাং তোমরা ক্ষমা করো ও উপেক্ষা করো।(সূরা বাকারা (২), আয়াত ১০৯)
অর্থাৎ প্রথমে ক্ষমার আদেশ করা হয়েছে, তারপর আরও উচ্চস্তরের আখলাক দেখাতে বলা হয়েছে। আর তা হল অভিযোগ করা হতে বিরত থাকা। অনেক সময় মানুষ ক্ষমা করে ঠিকই, কিন্তু অভিযোগ তুলতে ছাড়ে না। এ আয়াত বলছে, ক্ষমা তো করবেই, সেইসঙ্গে অভিযোগ করা হতেও বিরত থাকবে। হযরত ইয়ূসুফ আলাইহিস সালাম এরূপ উচ্চস্তরের আখলাকই তাঁর ভাইদের সঙ্গে দেখিয়েছিলেন। তারা যখন নিজেদের দোষ স্বীকার করেছিল এবং অনুতপ্ত হয়ে বলেছিল-
تَاللَّهِ لَقَدْ آثَرَكَ اللَّهُ عَلَيْنَا وَإِنْ كُنَّا لَخَاطِئِينَ
‘আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাদের উপর তোমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং আমরা নিশ্চয়ই অপরাধী ছিলাম।(সূরা ইয়ূসুফ (১২), আয়াত ৯১)
তখন তিনি তাদের বলেছিলেন-
لَا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হবে না। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সকল দয়ালু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দয়ালু।(সূরা ইয়ূসুফ (১২), আয়াত ৯২)
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও মক্কাবিজয়ের দিন মক্কাবাসীদের প্রতি এরূপ মহানুভবতাই দেখিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন-
أَقَوْلُ كَمَا قَالَ أَخِي يُوسُفُ: لَا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
‘আমার ভাই ইয়ূসুফ যেমন বলেছিলেন, আমিও তেমনি তোমাদের বলছি- আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হবে না। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সকল দয়ালু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দয়ালু।' (-সূরা ইয়ূসুফ: ৯২)
(বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৮২৭৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৫৮৮; আল-আযরাকী, আখবারু মাক্কাহ, ২ খণ্ড, ১২১ পৃষ্ঠা; ইবনু শাব্বাহ, তারীখুল মাদীনাহ, ২ খণ্ড, ৭২৩ পৃষ্ঠা; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ১১২৩৪; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওম ওয়াল লায়লাহ ৩১৮)
আলোচ্য আয়াতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে- فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيْلَ 'সুতরাং (হে নবী! তাদের আচার-আচরণকে) উপেক্ষা করো সৌন্দর্যমণ্ডিত উপেক্ষায়'। অর্থাৎ তারা আপনার যে বিরুদ্ধাচরণ করে, নানাভাবে কষ্ট-ক্লেশ দেয়, আপনি তা উপেক্ষা করুন এবং উত্তমরূপে তা উপেক্ষা করুন। অর্থাৎ তাদেরকে ক্ষমা তো করবেনই, সেইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হতে বিরত থাকবেন। যেন তাদের সঙ্গে আপনার কিছু হয়ইনি- এরূপ ভাব দেখাবেন।
উল্লেখ্য, এ আদেশের সম্পর্ক ব্যক্তিগত বিষয়ের সঙ্গে। দীনের দাওয়াতদাতার ব্যক্তিগত কষ্ট-ক্লেশের দিকে তাকালে চলে না। মানুষ তাদের সঙ্গে অপ্রীতিকর যা-কিছুই আচরণ করে, তা উপেক্ষা করা একান্ত জরুরি। অন্যথায় মনের ভেতর ক্ষোভ ও বিদ্বেষ জমা হতে থাকবে। যাদেরকে দীনের দাওয়াত দেওয়া হবে, তাদের প্রতি অন্তরে ক্ষোভ জমা থাকলে দাওয়াতের কাজ আন্তরিকতার সঙ্গে দেওয়া হবে না। ফলে এরূপ দাওয়াতের ভালো সুফলও পাওয়া যাবে না। তাই যথাসম্ভব ব্যক্তিগত বিষয়ে সহনশীল। ও ক্ষমাপ্রবণ হওয়া জরুরি।
আয়াতের আদেশ যদিও সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাঁর মাধ্যমে উম্মতও এ আদেশের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কাজেই ব্যক্তিগত বিষয়ে তাদেরকেও এ আয়াতের হুকুম মেনে চলতে হবে।
আয়াতটির শিক্ষা
মানুষের দোষত্রুটি ক্ষমা করা ও তাদের অপ্রীতিকর আচরণ উপেক্ষা করা একটি মহৎ গুণ। জীবনের সকল ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই এ গুণের চর্চা করতে হবে।
তিন নং আয়াত
وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا أَلَا تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ
অর্থ: তারা যেন ক্ষমা করে ও ঔদার্য প্রদর্শন করে। তোমরা কি কামনা কর না আল্লাহ তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করুন?(সূরা নূর (২৪), আয়াত ২২)
ব্যাখ্যা
এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক আয়াত। ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ.-সহ অনেক মনীষীর মতে এ আয়াতটি কুরআন মাজীদের সর্বাপেক্ষা বেশি আশা সঞ্চারী। বলা হয়েছে, তোমরা কি চাও না আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন? অর্থাৎ নিশ্চয়ই তা চাও। যদি তা চাওই, তবে তোমরাও অন্যদের ক্ষমা করো এবং তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি উপেক্ষা করো। যদি তা কর, তবে আল্লাহ তা'আলাও তোমাদের ক্ষমা করবেন।
উল্লেখ্য, এ আয়াত নাযিল হয়েছে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-কে লক্ষ্য করে। তিনি বিশেষ এক কারণে তাঁর স্নেহভাজন আত্মীয় মিসতাহ রাযি.-এর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং শপথ করেছিলেন তাকে আর কখনও সাহায্য-সহযোগিতা করবেন না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াতটি নাযিল হয় এবং তাঁকে ক্ষমাশীল হতে উৎসাহ দেওয়া হয়। আয়াতটি নাযিল হতেই আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. বলে ওঠেন, হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি চাই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। অতঃপর তিনি হযরত মিসতাহ রাযি.-কে ক্ষমা করে দেন এবং আগের মতো তাঁর সাহায্য-সহযোগিতা শুরু করে দেন।
এ আয়াতটি আমাদেরকে আল্লাহ তা'আলার কাছে মাগফিরাতলাভের একটি উত্তম পথ দেখিয়ে দিয়েছে। এমন অনেকই হয়ে থাকে যে, আমরা অন্যের দ্বারা কষ্ট-ক্লেশ পাই এবং তা অন্তরের মধ্যে পুষে রাখি। সহজে ক্ষমা করি না। এতে করে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট তো হয়ই; বরং হিংসা-বিদ্বেষ বাড়তে থাকে। তাতে দুনিয়ার শান্তি নষ্ট এবং আখিরাতেরও অশেষ ক্ষতি। সে ক্ষতি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় ক্ষমাশীলতার চর্চা করা। আমরা যদি অন্যকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত হই, তবে দুনিয়ার লাভ তো এই যে, এর মাধ্যমে হিংসা-বিদ্বেষ ঘুচে পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দ্বারা জীবন বড় শান্তিপূর্ণ হয়। আর আখিরাতের লাভ তো এই যে, আমরা যে যত বেশি অন্যকে ক্ষমা করতে পারব, আল্লাহ তা'আলার কাছেও ততো বেশি ক্ষমা পেয়ে যাব। আল্লাহ তা'আলা যদি পাপরাশি ক্ষমা করে দেন, তবে আখিরাতে জাহান্নাম থেকে নাজাত পাব এবং জান্নাতে স্থান লাভ করব। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে উদার ও ক্ষমাশীল হওয়ার তাওফীক দান করুন।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. অন্যের প্রতি ক্ষমাপ্রদর্শন ও উদার আচরণ ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক শিক্ষা। প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য নিজ জীবনে এ শিক্ষা বাস্তবায়ন করা।
খ. অন্যকে ক্ষমা করা আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভ করার মোক্ষম উপায়। সুতরাং নিজ গুনাহের মাগফিরাত লাভের আশায় আমরা অবশ্যই অন্যকে বেশি বেশি ক্ষমা করব।
চার নং আয়াত
وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ: এবং যারা মানুষকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত। আল্লাহ এরূপ পুণ্যবানদেরকে ভালোবাসেন।(সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ১৩৪)
ব্যাখ্যা
এটি ৭৩ নং অধ্যায়ের ২য় আয়াতরূপে উদ্ধৃত হয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
পাঁচ নং আয়াত
وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
অর্থ: প্রকৃতপক্ষে যে সবর অবলম্বন করে ও ক্ষমা প্রদর্শন করে, তো এটা অবশ্যই অত্যন্ত হিম্মতের কাজ।(সূরা শূরা (৪২), আয়াত ৪৩)
ব্যাখ্যা
এটি ৭৪ নং অধ্যায়ের ৪র্থ আয়াতরূপে উদ্ধৃত হয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
العفو এর আভিধানিক অর্থ মুছে ফেলা, মিটিয়ে দেওয়া। পারিভাষিক অর্থ অপরাধ উপেক্ষা করা, অপরাধের শাস্তি না দেওয়া।
الإعراض এর আভিধানিক অর্থ পাশ কাটানো, উপেক্ষা করা। পরিভাষায় অন্যের দুর্ব্যবহারকে উপেক্ষা করা ও তা গায়ে না মাখানোকে الإِعْرَاضُ বলা হয়।
দু'টি শব্দ দ্বারাই মূলত একই বিষয় বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ কেউ যদি কষ্ট দেয় বা দুর্ব্যবহার করে, তবে সেজন্য ক্ষুব্ধ না হয়ে এবং কোনওরূপ প্রতিশোধ না নিয়ে তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা ও ক্ষমা করে দেওয়া। এটি একটি মহৎ গুণ।
হাসান বসরী রহ. বলেন, ক্ষমাশীলতা মুমিনের শ্রেষ্ঠতম গুণ।
হযরত উমর ইবন আব্দুল আযীয রহ. বলেন, আল্লাহ তা'আলার কাছে তিনটি জিনিস সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়। শক্তি-সামর্থ্য থাকা অবস্থায় ক্ষমা করা, চেষ্টা-মেহনতে মধ্যপন্থা ও ইবাদতে কোমলতা।
ফুযায়ল ইবন ইয়ায রহ. বলেন, কেউ যদি তোমার কাছে কারও বিরুদ্ধে নালিশ নিয়ে আসে, তবে তুমি তাকে বলবে, হে ভাই! তুমি তাকে ক্ষমা করো। কেননা ক্ষমাশীলতা তাকওয়ার বেশি নিকটবর্তী।
ক্ষমাশীলতার কথা উঠলেই হযরত ইয়ূসুফ আলাইহিস সালামের কথা চলে আসে। তাঁর ভাইয়েরা তাঁর সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল? তারা তাঁকে কুয়ায় ফেলেই ক্ষান্ত হয়নি; তাকে গোলাম হিসেবে বিক্রিও করে দিয়েছিল, যদ্দরুন তাঁকে নারীদের চক্রান্তের শিকার হতে হয়েছিল। ভোগ করতে হয়েছিল দীর্ঘ কারাবাস। এতদসত্ত্বেও তিনি ভাইদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগস্বরূপ একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। সর্বোচ্চ উদারতার সঙ্গে বলে দিয়েছিলেন-
لَا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হবে না। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সকল দয়ালু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইয়ূসুফ (১২), আয়াত ৯২)
ইসলাম এ গুণ অবলম্বনের প্রতি বিপুল উৎসাহ দান করেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত ক্ষমাশীল ছিলেন। হাদীছ ও সীরাতের গ্রন্থসমূহে তাঁর ক্ষমাশীলতার বহু ঘটনা বর্ণিত আছে। সাহাবায়ে কেরামকেও তিনি এ গুণের উপর গড়ে তুলেছিলেন। তারা প্রত্যেকেই অসাধারণ ক্ষমাশীল ছিলেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদিন বাজারে খাদ্যশস্য ক্রয় করেন। তারপর দাম পরিশোধ করতে গিয়ে দেখেন নিজ পাগড়ির যেখানে দিরহাম রেখেছিলেন সেখানে তা নেই। তিনি বললেন, আমি যখন এখানে বসেছি, তখনও তো দিরহামগুলো আমার সঙ্গে ছিল। লোকেরা অনেক খোঁজাখুঁজি করল। কিন্তু পাওয়া গেল না। শেষে তারা বলতে লাগল, হে আল্লাহ! যেই চোর দিরহামগুলো নিয়েছে তার হাত কেটে দাও। হে আল্লাহ! তাকে এই করো, ওই করো ইত্যাদি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'ঊদ রাযি. বললেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি সেগুলো নিয়ে গেছে, সে যদি অভাবগ্রস্ত হয় তবে তাকে ওই দিরহামে বরকত দাও। আর যদি সে ধৃষ্টতার সঙ্গে অপরাধ করতেই তা নিয়ে থাকে, তবে এটাকেই তার সর্বশেষ অপরাধে পরিণত করো (অর্থাৎ তুমি তাকে হেফাজত করো, যাতে এরপর সে আর কোনও অপরাধ না করে)।
ক্ষমাশীলতার কল্যাণ বহুবিধ। এর দ্বারা পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। ক্ষমা করার দ্বারা মনের ভার লাঘব হয়। মানসিক শান্তি লাভের একটি বড় উপায় অন্যকে ক্ষমা করা। যে ব্যক্তি অন্যকে যত বেশি ক্ষমা করতে পারে, সে ততো বেশি স্বস্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারে। বলা হয়ে থাকে, ক্ষমা করা ব্যক্তির নিজ সত্তার যাকাত। অন্যের উপর ক্রোধ মিটিয়ে যে সুখ পাওয়া যায়, ক্ষমাশীলতার সুখ তারচে' অনেক বেশি। কেননা ক্ষমাশীলতার সুখের সঙ্গে মানুষের প্রশংসা যুক্ত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে অন্যের উপর রাগ মেটানোর দ্বারা যে আরাম পাওয়া যায়, তার সঙ্গে যুক্ত হয় লোকনিন্দা ও মনের অনুতাপ।
সময়ে বরকতলাভ ও জীবনকে কর্মময় করে তোলার পক্ষে ক্ষমাশীলতা অনেক বেশি সহায়ক। কেননা মনের ঝাল মেটানো ও প্রতিশোধ গ্রহণের পেছনে পড়লে বিপুল সময় বৃথা নষ্ট হয়। ক্ষমা করার দ্বারা সে সময়টা বেঁচে যায় এবং তা অনেক ভালো ভালো কাজে লাগানো সম্ভব হয়। তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তি প্রতিশোধ গ্রহণের ধান্দা ছেড়ে ক্ষমাশীলতাকেই বেছে নিয়ে থাকে।
ক্ষমা করার দ্বারা অতি সহজে মানুষের মন জয় করা যায়। মানুষের কাছে ক্ষমাশীল ব্যক্তি বিশেষ সমাদর লাভ করে। ব্যক্তির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এ গুণটি অনেক বেশি সহায়ক। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
وَمَا زَادَ اللَّهُ عَبْدًا بِعَفْو، إِلَّا عِزَّا
‘আল্লাহ তা'আলা ক্ষমাশীলতা দ্বারা বান্দার কেবল সম্মানই বৃদ্ধি করেন।(সহীহ মুসলিম: ২৫৮৮)
হযরত আবুদ দারদা রাযি.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, (প্রতিশোধ নেওয়ার) ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি ক্ষমা করে। সুতরাং তোমরা ক্ষমা করো, আল্লাহ তা'আলা তোমাদের মর্যাদাবান করবেন।
সবচে' বড় কথা, অন্যকে ক্ষমা করার দ্বারা আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা লাভ করা যায় এবং এটা জান্নাত লাভেরও একটি বড় উপায়। সুতরাং কুরআন ও হাদীছ আমাদেরকে ক্ষমাশীলতা অর্জনের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে এবং এর অশেষ ফযীলতও তুলে ধরেছে। এ অধ্যায়ের আয়াত ও হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।
‘ক্ষমা প্রদর্শন করা…’ সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
অর্থ: তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করো এবং (মানুষকে) সৎকাজের আদেশ দাও আর অজ্ঞদের অগ্রাহ্য করো।(সূরা আ'রাফ (৭), আয়াত ১৯৯)
ব্যাখ্যা
এটি ৭৪ নং অধ্যায়ের ২য় আয়াতরূপে উদ্ধৃত হয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
দুই নং আয়াত
فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيلَ
অর্থ: সুতরাং (হে নবী! তাদের আচার-আচরণকে) উপেক্ষা করো সৌন্দর্যমণ্ডিত উপেক্ষায়।(সূরা হিজর (১৫), আয়াত ৮৫)
ব্যাখ্যা
الصفح এর অর্থ উপেক্ষা করা, অভিযোগ করা হতে বিরত থাকা। ইমাম রাগিব রহ. বলেন, এটা ক্ষমার চেয়েও উচ্চস্তরের। এ কারণেই ইরশাদ হয়েছে-
فَاعْفُوا وَاصْفَحُوا
‘সুতরাং তোমরা ক্ষমা করো ও উপেক্ষা করো।(সূরা বাকারা (২), আয়াত ১০৯)
অর্থাৎ প্রথমে ক্ষমার আদেশ করা হয়েছে, তারপর আরও উচ্চস্তরের আখলাক দেখাতে বলা হয়েছে। আর তা হল অভিযোগ করা হতে বিরত থাকা। অনেক সময় মানুষ ক্ষমা করে ঠিকই, কিন্তু অভিযোগ তুলতে ছাড়ে না। এ আয়াত বলছে, ক্ষমা তো করবেই, সেইসঙ্গে অভিযোগ করা হতেও বিরত থাকবে। হযরত ইয়ূসুফ আলাইহিস সালাম এরূপ উচ্চস্তরের আখলাকই তাঁর ভাইদের সঙ্গে দেখিয়েছিলেন। তারা যখন নিজেদের দোষ স্বীকার করেছিল এবং অনুতপ্ত হয়ে বলেছিল-
تَاللَّهِ لَقَدْ آثَرَكَ اللَّهُ عَلَيْنَا وَإِنْ كُنَّا لَخَاطِئِينَ
‘আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাদের উপর তোমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং আমরা নিশ্চয়ই অপরাধী ছিলাম।(সূরা ইয়ূসুফ (১২), আয়াত ৯১)
তখন তিনি তাদের বলেছিলেন-
لَا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হবে না। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সকল দয়ালু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দয়ালু।(সূরা ইয়ূসুফ (১২), আয়াত ৯২)
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও মক্কাবিজয়ের দিন মক্কাবাসীদের প্রতি এরূপ মহানুভবতাই দেখিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন-
أَقَوْلُ كَمَا قَالَ أَخِي يُوسُفُ: لَا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
‘আমার ভাই ইয়ূসুফ যেমন বলেছিলেন, আমিও তেমনি তোমাদের বলছি- আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হবে না। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সকল দয়ালু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দয়ালু।' (-সূরা ইয়ূসুফ: ৯২)
(বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৮২৭৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৫৮৮; আল-আযরাকী, আখবারু মাক্কাহ, ২ খণ্ড, ১২১ পৃষ্ঠা; ইবনু শাব্বাহ, তারীখুল মাদীনাহ, ২ খণ্ড, ৭২৩ পৃষ্ঠা; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ১১২৩৪; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওম ওয়াল লায়লাহ ৩১৮)
আলোচ্য আয়াতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে- فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيْلَ 'সুতরাং (হে নবী! তাদের আচার-আচরণকে) উপেক্ষা করো সৌন্দর্যমণ্ডিত উপেক্ষায়'। অর্থাৎ তারা আপনার যে বিরুদ্ধাচরণ করে, নানাভাবে কষ্ট-ক্লেশ দেয়, আপনি তা উপেক্ষা করুন এবং উত্তমরূপে তা উপেক্ষা করুন। অর্থাৎ তাদেরকে ক্ষমা তো করবেনই, সেইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হতে বিরত থাকবেন। যেন তাদের সঙ্গে আপনার কিছু হয়ইনি- এরূপ ভাব দেখাবেন।
উল্লেখ্য, এ আদেশের সম্পর্ক ব্যক্তিগত বিষয়ের সঙ্গে। দীনের দাওয়াতদাতার ব্যক্তিগত কষ্ট-ক্লেশের দিকে তাকালে চলে না। মানুষ তাদের সঙ্গে অপ্রীতিকর যা-কিছুই আচরণ করে, তা উপেক্ষা করা একান্ত জরুরি। অন্যথায় মনের ভেতর ক্ষোভ ও বিদ্বেষ জমা হতে থাকবে। যাদেরকে দীনের দাওয়াত দেওয়া হবে, তাদের প্রতি অন্তরে ক্ষোভ জমা থাকলে দাওয়াতের কাজ আন্তরিকতার সঙ্গে দেওয়া হবে না। ফলে এরূপ দাওয়াতের ভালো সুফলও পাওয়া যাবে না। তাই যথাসম্ভব ব্যক্তিগত বিষয়ে সহনশীল। ও ক্ষমাপ্রবণ হওয়া জরুরি।
আয়াতের আদেশ যদিও সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাঁর মাধ্যমে উম্মতও এ আদেশের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কাজেই ব্যক্তিগত বিষয়ে তাদেরকেও এ আয়াতের হুকুম মেনে চলতে হবে।
আয়াতটির শিক্ষা
মানুষের দোষত্রুটি ক্ষমা করা ও তাদের অপ্রীতিকর আচরণ উপেক্ষা করা একটি মহৎ গুণ। জীবনের সকল ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই এ গুণের চর্চা করতে হবে।
তিন নং আয়াত
وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا أَلَا تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ
অর্থ: তারা যেন ক্ষমা করে ও ঔদার্য প্রদর্শন করে। তোমরা কি কামনা কর না আল্লাহ তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করুন?(সূরা নূর (২৪), আয়াত ২২)
ব্যাখ্যা
এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক আয়াত। ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ.-সহ অনেক মনীষীর মতে এ আয়াতটি কুরআন মাজীদের সর্বাপেক্ষা বেশি আশা সঞ্চারী। বলা হয়েছে, তোমরা কি চাও না আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন? অর্থাৎ নিশ্চয়ই তা চাও। যদি তা চাওই, তবে তোমরাও অন্যদের ক্ষমা করো এবং তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি উপেক্ষা করো। যদি তা কর, তবে আল্লাহ তা'আলাও তোমাদের ক্ষমা করবেন।
উল্লেখ্য, এ আয়াত নাযিল হয়েছে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-কে লক্ষ্য করে। তিনি বিশেষ এক কারণে তাঁর স্নেহভাজন আত্মীয় মিসতাহ রাযি.-এর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং শপথ করেছিলেন তাকে আর কখনও সাহায্য-সহযোগিতা করবেন না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াতটি নাযিল হয় এবং তাঁকে ক্ষমাশীল হতে উৎসাহ দেওয়া হয়। আয়াতটি নাযিল হতেই আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. বলে ওঠেন, হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি চাই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। অতঃপর তিনি হযরত মিসতাহ রাযি.-কে ক্ষমা করে দেন এবং আগের মতো তাঁর সাহায্য-সহযোগিতা শুরু করে দেন।
এ আয়াতটি আমাদেরকে আল্লাহ তা'আলার কাছে মাগফিরাতলাভের একটি উত্তম পথ দেখিয়ে দিয়েছে। এমন অনেকই হয়ে থাকে যে, আমরা অন্যের দ্বারা কষ্ট-ক্লেশ পাই এবং তা অন্তরের মধ্যে পুষে রাখি। সহজে ক্ষমা করি না। এতে করে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট তো হয়ই; বরং হিংসা-বিদ্বেষ বাড়তে থাকে। তাতে দুনিয়ার শান্তি নষ্ট এবং আখিরাতেরও অশেষ ক্ষতি। সে ক্ষতি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় ক্ষমাশীলতার চর্চা করা। আমরা যদি অন্যকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত হই, তবে দুনিয়ার লাভ তো এই যে, এর মাধ্যমে হিংসা-বিদ্বেষ ঘুচে পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দ্বারা জীবন বড় শান্তিপূর্ণ হয়। আর আখিরাতের লাভ তো এই যে, আমরা যে যত বেশি অন্যকে ক্ষমা করতে পারব, আল্লাহ তা'আলার কাছেও ততো বেশি ক্ষমা পেয়ে যাব। আল্লাহ তা'আলা যদি পাপরাশি ক্ষমা করে দেন, তবে আখিরাতে জাহান্নাম থেকে নাজাত পাব এবং জান্নাতে স্থান লাভ করব। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে উদার ও ক্ষমাশীল হওয়ার তাওফীক দান করুন।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. অন্যের প্রতি ক্ষমাপ্রদর্শন ও উদার আচরণ ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক শিক্ষা। প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য নিজ জীবনে এ শিক্ষা বাস্তবায়ন করা।
খ. অন্যকে ক্ষমা করা আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভ করার মোক্ষম উপায়। সুতরাং নিজ গুনাহের মাগফিরাত লাভের আশায় আমরা অবশ্যই অন্যকে বেশি বেশি ক্ষমা করব।
চার নং আয়াত
وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ: এবং যারা মানুষকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত। আল্লাহ এরূপ পুণ্যবানদেরকে ভালোবাসেন।(সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ১৩৪)
ব্যাখ্যা
এটি ৭৩ নং অধ্যায়ের ২য় আয়াতরূপে উদ্ধৃত হয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
পাঁচ নং আয়াত
وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
অর্থ: প্রকৃতপক্ষে যে সবর অবলম্বন করে ও ক্ষমা প্রদর্শন করে, তো এটা অবশ্যই অত্যন্ত হিম্মতের কাজ।(সূরা শূরা (৪২), আয়াত ৪৩)
ব্যাখ্যা
এটি ৭৪ নং অধ্যায়ের ৪র্থ আয়াতরূপে উদ্ধৃত হয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
তায়েফে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিস্ময়কর ক্ষমাপ্রদর্শন
হাদীছ নং: ৬৪২
হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আপনার উপর কি উহুদের দিন অপেক্ষাও বেশি কঠিন কোনও দিন এসেছে? তিনি বললেন, আমি তোমার কওমের কাছ থেকে আকাবার দিন যে আচরণের সম্মুখীন হয়েছি, তা ছিল সারা জীবন আমি যেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা কঠিন। আমি সেদিন নিজেকে আব্দু ইয়ালীল ইবন আব্দু কুলালের পুত্রের সামনে পেশ করেছিলাম। কিন্তু আমি যা চেয়েছিলাম সে তাতে সাড়া দিল না। আমি দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে ফিরে চললাম। যখন কারনুছ-ছা'আলিব নামক স্থানে পৌঁছি, কেবল তখনই আমি চৈতন্যপ্রাপ্ত হই। আমি উপরদিকে মাথা তুলতেই দেখলাম একখণ্ড মেঘ আমার উপর ছায়া বিস্তার করে আছে। তাকিয়ে দেখলাম তার মধ্যে জিবরীল আলাইহিস সালাম রয়েছেন। তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, আল্লাহ তা'আলা আপনার সঙ্গে আপনার কওমের কথা এবং তারা আপনাকে যে জবাব দিয়েছে তা শুনেছেন। তিনি আপনার কাছে পাহাড়-পর্বতের ফিরিশতাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আপনি তাকে তাদের সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছা হয় আদেশ করতে পারেন। তখন পাহাড়ের ফিরিশতা আমারে ডেকে সালাম দিল। তারপর বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার সম্প্রদায় আপনাকে যে কথা বলেছে, আল্লাহ তা'আলা তা শুনেছেন। আমি পাহাড়-পর্বতের (দায়িত্বে নিয়োজিত) ফিরিশতা। আমার প্রতিপালক আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন, যাতে আপনি আপনার ইচ্ছামতো আমাকে হুকুম করেন। আপনি যদি চান, তাদের দু'দিক থেকে বড় পাহাড়দু'টি পরস্পর মিলিয়ে দেব (যাতে তারা মাঝখানে পড়ে পিষ্ট হয়ে যায়)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি বরং আশা করি আল্লাহ এদের ঔরস থেকে এমন লোকের আবির্ভাব ঘটাবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কোনও কিছুকে শরীক করবে না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৩২৩১; সহীহ মুসলিম: ১৭৯৫; মুসনাদুল বাযযার: ১০৩; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৭৬৫৯; সহীহ ইবনে হিব্বান ৬৫৬১; আল-আজুররী, আশ-শারী'আহ: ১০০২: বায়হাকী, আল-আসমা ওয়াস-সিফাত: ৩৮৪; শারহুস সুন্নাহ: ৩৭৪৮; আল-ফাকিহী, আখবারু মাক্কাহ: ২৫৭৮)
হাদীছ নং: ৬৪২
হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আপনার উপর কি উহুদের দিন অপেক্ষাও বেশি কঠিন কোনও দিন এসেছে? তিনি বললেন, আমি তোমার কওমের কাছ থেকে আকাবার দিন যে আচরণের সম্মুখীন হয়েছি, তা ছিল সারা জীবন আমি যেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা কঠিন। আমি সেদিন নিজেকে আব্দু ইয়ালীল ইবন আব্দু কুলালের পুত্রের সামনে পেশ করেছিলাম। কিন্তু আমি যা চেয়েছিলাম সে তাতে সাড়া দিল না। আমি দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে ফিরে চললাম। যখন কারনুছ-ছা'আলিব নামক স্থানে পৌঁছি, কেবল তখনই আমি চৈতন্যপ্রাপ্ত হই। আমি উপরদিকে মাথা তুলতেই দেখলাম একখণ্ড মেঘ আমার উপর ছায়া বিস্তার করে আছে। তাকিয়ে দেখলাম তার মধ্যে জিবরীল আলাইহিস সালাম রয়েছেন। তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, আল্লাহ তা'আলা আপনার সঙ্গে আপনার কওমের কথা এবং তারা আপনাকে যে জবাব দিয়েছে তা শুনেছেন। তিনি আপনার কাছে পাহাড়-পর্বতের ফিরিশতাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আপনি তাকে তাদের সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছা হয় আদেশ করতে পারেন। তখন পাহাড়ের ফিরিশতা আমারে ডেকে সালাম দিল। তারপর বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার সম্প্রদায় আপনাকে যে কথা বলেছে, আল্লাহ তা'আলা তা শুনেছেন। আমি পাহাড়-পর্বতের (দায়িত্বে নিয়োজিত) ফিরিশতা। আমার প্রতিপালক আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন, যাতে আপনি আপনার ইচ্ছামতো আমাকে হুকুম করেন। আপনি যদি চান, তাদের দু'দিক থেকে বড় পাহাড়দু'টি পরস্পর মিলিয়ে দেব (যাতে তারা মাঝখানে পড়ে পিষ্ট হয়ে যায়)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি বরং আশা করি আল্লাহ এদের ঔরস থেকে এমন লোকের আবির্ভাব ঘটাবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কোনও কিছুকে শরীক করবে না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৩২৩১; সহীহ মুসলিম: ১৭৯৫; মুসনাদুল বাযযার: ১০৩; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৭৬৫৯; সহীহ ইবনে হিব্বান ৬৫৬১; আল-আজুররী, আশ-শারী'আহ: ১০০২: বায়হাকী, আল-আসমা ওয়াস-সিফাত: ৩৮৪; শারহুস সুন্নাহ: ৩৭৪৮; আল-ফাকিহী, আখবারু মাক্কাহ: ২৫৭৮)
75 - باب العفو والإعراض عن الجاهلين
قَالَ الله تَعَالَى: {خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلينَ} [الأعراف: 199]، وقال تَعَالَى: {فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيلَ} [الحجر: 85]، وقال تَعَالَى: {وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا ألاَ [ص:209] تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللهُ لَكُمْ} [النور: 22]، وقال تَعَالَى: {وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنينَ} [آل عمران: 134]، وقال تَعَالَى: {وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الأُمُورِ} [الشورى: 43] والآيات في الباب كثيرة معلومة.
قَالَ الله تَعَالَى: {خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلينَ} [الأعراف: 199]، وقال تَعَالَى: {فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيلَ} [الحجر: 85]، وقال تَعَالَى: {وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا ألاَ [ص:209] تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللهُ لَكُمْ} [النور: 22]، وقال تَعَالَى: {وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنينَ} [آل عمران: 134]، وقال تَعَالَى: {وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الأُمُورِ} [الشورى: 43] والآيات في الباب كثيرة معلومة.
642 - وعن عائشة رضي الله عنها: أنها قالت للنبي - صلى الله عليه وسلم: هَلْ أتَى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ أشَدَّ مِنْ يَوْمِ أُحُدٍ؟ قَالَ: «لَقَدْ لَقِيتُ مِنْ قَوْمِكِ، وَكَانَ أشَدُّ مَا لَقيتُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْعَقَبَةِ، إذْ عَرَضْتُ نَفْسِي عَلَى ابْنِ عَبْدِ يَالِيْلَ بْنِ عَبْدِ كُلاَلٍ، فَلَمْ يُجِبْني إِلَى مَا أرَدْتُ، فَانْطَلَقْتُ وَأنا مَهْمُومٌ عَلَى وَجْهِي، فَلَمْ أسْتَفِقْ إِلاَّ وأنَا بِقَرْنِ الثَّعَالِبِ (1)، فَرَفَعْتُ رَأْسِي، وَإِذَا أنَا بِسَحَابَةٍ قَدْ أظَلَّتْنِي، فَنَظَرْتُ فَإذَا فِيهَا جِبريلُ - عليه السلام - فَنَادَاني، فَقَالَ: إنَّ الله تَعَالَى قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ، وَمَا رَدُّوا عَلَيْكَ، وَقَد بَعَثَ إلَيْكَ مَلَكَ الجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بمَا شِئْتَ فِيهِمْ. فَنَادَانِي مَلَكُ الجِبَالِ، فَسَلَّمَ عَلَيَّ، ثُمَّ قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إنَّ اللهَ قَدْ سَمِع قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ، وَأنا مَلَكُ الجِبال، وَقَدْ بَعَثَنِي رَبِّي إلَيْكَ لِتَأْمُرَنِي بِأَمْرِكَ، فَمَا شِئْتَ، إنْ شئْتَ أطْبَقْتُ عَلَيْهِمُ الأَخْشَبَيْنِ». فَقَالَ النبي - صلى الله عليه وسلم: «بَلْ أرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللهُ مِنْ أصْلاَبِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا». متفقٌ عَلَيْهِ. (2)
«الأخْشَبَان»: الجَبَلان المُحيطان بمكَّة. وَالأخشبُ: هُوَ الجبل الغليظ.
«الأخْشَبَان»: الجَبَلان المُحيطان بمكَّة. وَالأخشبُ: هُوَ الجبل الغليظ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
উহুদের যুদ্ধে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। তাঁর পবিত্র চেহারা জখম হয়ে গিয়েছিল। তাঁর একটা দাঁতও শহীদ হয়ে গিয়েছিল। শিরস্ত্রাণ ভেঙে মাথায় বসে গিয়েছিল। শিরস্ত্রাণের একটা আংটা তাঁর চোয়ালে বিঁধে গিয়েছিল। আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রাযি. দাঁত দিয়ে কামড়ে সেটি বের করতে গেলে তাতে তাঁর নিজের দু'টি দাঁত ভেঙে গিয়েছিল। শত্রুরা তাঁর গায়ে পাথর মেরেছিল। পাথরের আঘাতে পাঁজরে মারাত্মক চোট লেগেছিল। তিনি একটা গর্তে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি এমন মারাত্মকভাবে আহত ও রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিলেন যে, কাফেররা ধরে নিয়েছিল তিনি শহীদ হয়ে গিয়েছেন। তারা এ কথা প্রচারও করে দিয়েছিল। মোটকথা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতগুলো যুদ্ধ করেছেন, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি আহত হয়েছিলেন উহুদের যুদ্ধেই। এ যুদ্ধের মতো এতটা কষ্ট আর কোনও যুদ্ধে তিনি পাননি। সে কারণেই আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, উহুদের যুদ্ধের চেয়ে বেশি কষ্ট তিনি আর কখনও পেয়েছিলেন কি না। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফের ঘটনা উল্লেখ করে জানান যে, জীবনে সর্বাপেক্ষা বেশি কষ্ট তিনি পেয়েছিলেন তায়েফবাসীর হাতেই।
তায়েফের ঘটনা
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতপ্রাপ্তির ১০ম বছরে দুনিয়ায় তাঁর সর্বাপেক্ষা বড় আনুকূল্যদাতা তাঁর শ্রদ্ধেয় চাচা আবূ তালিবের ইন্তিকাল হয়ে যায়। এর মাত্র তিন দিনের মাথায় চিরবিদায় গ্রহণ করেন তাঁর সবচে' ঘনিষ্ঠজন ও সবচে' বড় সহমর্মী আম্মাজান খাদীজা রাযি.। এ কারণে বছরটির নামই হয়ে যায় 'আমুল হুযন' বা শোকের বছর। তাদের ইন্তিকালে বাহ্যিকভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড় অসহায় হয়ে পড়েন। মুশরিকগণ তাঁকে নির্যাতন করার অবাধ সুযোগ পেয়ে যায়। তাঁর পক্ষে মক্কা মুকাররামায় অবস্থান দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। সবদিকে কেমন নৈরাশ্যকর পরিস্থিতি। এ অবস্থায় তাঁর দাওয়াতী কার্যক্রমের জন্য কোনও উপযুক্ত ক্ষেত্রের প্রয়োজন দেখা দেয়।
কুরায়শের পর মক্কা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের মধ্যে সবচে' বড় ও শক্তিমান গোষ্ঠী ছিল বনূ ছাকীফ। তারা তায়েফে বাস করত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জনপদকেই নিজ দাওয়াতের ময়দানরূপে চিন্তা করলেন। তিনি ভাবলেন এখানকার লোক তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিতে পারে এবং তারা আল্লাহর দীনের সাহায্যকারী হতে পারে। সুতরাং নবুওয়াতের দশম বছর ২৬ বা ২৭ শাউওয়াল তিনি হযরত যায়দ ইবন হারিছা রাযি.-কে সঙ্গে নিয়ে তায়েফের উদ্দেশে যাত্রা করলেন।
তায়েফে আবদে ইয়ালীল, মাসউদ ও হাবীব- এই তিন ব্যক্তি খুবই গণ্যমান্য ছিল। তারা ছিল তিন ভাই এবং আমর ইবন উমায়র ইবন আওফের পুত্র। তাদের একজন কুরায়শের শাখাগোত্র বনূ জুমাহের এক কন্যাকে বিবাহ করেছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের তিনজনের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকলেন এবং তাঁর দীনের সাহায্য করার আহ্বান জানালেন। কিন্তু তারা তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করল না। উল্টো তাঁর মুখের উপর যাচ্ছেতাই বলে মন্তব্য করল।
তাদের একজন বলল, আল্লাহ যদি তোমাকে রাসূল করে পাঠিয়ে থাকেন, তবে আমি কা'বার গিলাফের অমর্যাদা করব।
দ্বিতীয়জন বলল, তোমাকে ছাড়া আল্লাহ বুঝি আর কাউকে রাসূল করে পাঠানোর মতো পাননি?
তৃতীয়জন বলল, তোমার সঙ্গে আমি কোনও কথাই বলব না। কারণ তুমি যদি নিজ দাবি অনুযায়ী সত্যিই রাসূল হয়ে থাক, তবে তোমার কথা প্রত্যাখ্যান করা আমার জন্য বিপজ্জনক হবে। আর তুমি যদি মিথ্যুক হয়ে থাক, তবে তো তোমার সঙ্গে আমার কথা বলাই অনুচিত।
তারপর তারা তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা শুরু করে দিল। তাদের দৃষ্টিতে তিনি নবী হওয়ারই উপযুক্ত নন। নবী তো হবে মক্কা বা তায়েফের মোড়ল শ্রেণির কোনও ব্যক্তি। কুরআন মাজীদে তাদের মন্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে-
لَوْلَا نُزِّلَ هَذَا الْقُرْآنُ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ
এ কুরআন দুই জনপদের কোনও বড় ব্যক্তির উপর নাযিল করা হল না কেন? (সূরা যুখরুফ (৪৩), আয়াত ৩১)
তারা তাঁকে যাচ্ছেতাই বলে ব্যঙ্গ করেই ক্ষান্ত হল না। উপরন্তু তারা তাদের গোলাম, বালক ও উচ্ছৃঙ্খল লোকদের তাঁর পেছনে লেলিয়ে দিল। তারা তাঁর পেছনে হল্লা-চিল্লা করতে লাগল। পরম আনন্দের সঙ্গে তাঁকে উত্যক্ত করতে থাকল। এভাবে রাস্তায় তাঁর পেছনে বহু লোক জড়ো হয়ে গেল। ভিড়ের ভেতর থেকে অনেকে তাঁর উপর পাথরও নিক্ষেপ করল। তিনি একমাত্র সঙ্গী যায়দ রাযি.-কে নিয়ে সামনের দিকে চলছিলেন আর পেছন দিক থেকে দুর্বৃত্তের দল তাঁর উপর বৃষ্টির মতো পাথর ছুঁড়ে যাচ্ছিল। এভাবে তিনি প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন। তাঁর পায়ের গোছা মারাত্মকভাবে জখম হয়ে যায়। তা থেকে অঝোরধারায় রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে। সঙ্গী যায়দ রাযি.-ও মারাত্মকভাবে ক্ষত-বিক্ষত হন। তাঁর মাথা ও চোখ ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। তাঁর গোটা শরীর রক্তাক্ত।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড় আশা নিয়ে তায়েফে এসেছিলেন। কিন্তু অচিরেই সে আশা দুরাশায় পরিণত হল। তিনি তায়েফবাসীকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনওকিছুতেই তারা কর্ণপাত করল না। শেষে বললেন, তোমরা যখন আমার দাওয়াত গ্রহণই করলে না, তখন অন্ততপক্ষে এতটুকু তো করো যে, তোমরা আমার কথা অন্য কারও কাছে প্রকাশ করবে না। তিনি ভাবছিলেন, মক্কাবাসী এ পরিণতির কথা শুনলে খুব উস্কানি পাবে। তারা মক্কার মুসলিমদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। কিন্তু পাষণ্ডের দল তাঁর কোনও কথাই শুনতে নারাজ। তারা সাফ বলে দিল, হে মুহাম্মাদ! তুমি আমাদের শহর থেকে বের হয়ে যাও। যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যাও। এখানে থাকতে পারবে না।
তিনি দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সামনে চলতে থাকলেন। এরই মধ্যে রাস্তার পাশে একটি বাগান দেখতে পেলেন। উতবা ও শায়বা নামক কুরায়শী দুই ভাইয়ের ছিল এ বাগানটি। তিনি উপায়ান্তর না দেখে সেই বাগানে আশ্রয় নিলেন। একটি আঙ্গুর গাছের ছায়ায় গিয়ে তিনি বসলেন। তারপর একটু শান্ত হয়ে আল্লাহর কাছে দু'আ করলেন-
اللَّهُمَّ إِلَيْكَ أَشْكُو ضَعْفَ قُوَّتِيْ وَقِلَّةَ حِيْلَتِي وَهَوَانِي عَلَى النَّاسِ، يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ، أَنْتَ رَبُّ الْمُسْتَضْعَفِينَ وَأَنْتَ رَبِّي إِلَى مَنْ تَكِلنِي، إِلَى بَعِيدٍ يَتَجَهَّمُنِي، أَوْ إِلَى عَدُو مَلكْتَهُ أَمْرِي ، إِنْ لَمْ يَكُنْ بِكَ عَلَيَّ غَضَبٌ فَلَا أبَالِي، وَلَكِنَّ عَافِيَتَكَ هِيَ أَوْسَعُ لِي ، أَعُوْذُ بِنُوْرِ وَجْهِكَ الْكَرِيمُ الَّذِي أَشْرَقَتْ لَهُ الظُّلُمَاتُ، وَصَلحَ عَلَيْهِ أَمْرُ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ مِنْ أَنْ تُنْزِلَ بِيْ غَضَبَكَ أَوْ يَحِلَّ عَلَيَّ سَخَطُكَ، لَكَ الْعُتْبَى حَتَّى تَرْضَى وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِكَ
‘হে আল্লাহ! আমার শক্তির দুর্বলতা, সম্বলহীনতা এবং মানুষের কাছে আমার নগণ্যতা ও তুচ্ছতার জন্য আমি আপনারই কাছে ফরিয়াদ করছি। হে শ্রেষ্ঠ দয়ালু! আপনি দুর্বলদের প্রতিপালক। আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি আমাকে কার হাতে সমর্পণ করছেন? আমার প্রতি যে নিষ্ঠুর আচরণ করে, সেই অনাত্মীয়ের হাতে? নাকি সেই শত্রুর হাতে, যাকে আমার উপর কর্তৃত্ব দান করেছেন? আমার প্রতি আপনার অসন্তুষ্টি না থাকলে আমি কোনওকিছুর তোয়াক্কা করি না। তবে আপনার দেওয়া নিরাপত্তাই আমার পক্ষে শ্রেষ্ঠ অবলম্বন। আমার প্রতি আপনার ক্রোধবর্ষণ কিংবা আপনার অসন্তুষ্টির অবতরণ থেকে আমি আপনার চেহারার ওই নূরের আশ্রয় গ্রহণ করছি, যা দ্বারা সকল অন্ধকার আলোকিত হয়ে যায়, যার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় বিষয়ের সুরাহা হয়ে যায়। আপনার সন্তুষ্টিই আমার একমাত্র কামনা, যাতে আপনি খুশি হয়ে যান। আপনার সাহায্য ছাড়া আর কোনও উপায়ে শক্তি ও সামর্থ্য লাভ হতে পারে না।'
আল্লাহ তা'আলা তাঁর এ কাতর ডাকে সাড়া দিলেন। পাহাড়-পর্বতের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতার কাছে তাঁর ফরমান পৌঁছে গেল। ফিরিশতা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আরয করল, আপনি হুকুম করলে এক্ষণই আখশাবায়ন (মক্কার দু'দিকের দুই পাহাড়)-কে পরস্পর মিশিয়ে দেব, পাহাড়গুলোর মধ্যে পড়ে সমস্ত কাফের পিষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বললেন, না, হয়তো তাদের পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে ঈমানদার সন্তান জন্ম নেবে, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে।
এদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তায়েফবাসীগণ যে নির্মম আচরণ করেছিল, বাগানটির মালিক উতবা ও শায়বা তা লক্ষ করেছিল। তাদের মনে দয়া লাগল। তাদের ছিল এক খ্রিষ্টান গোলাম। তার নাম আদ্দাস। তারা তাদের সেই গোলামের হাতে কিছু আঙ্গুর দিয়ে বলল, এগুলো নিয়ে ওই লোকটিকে খেতে দাও।
সে তা নিয়ে গেল এবং তাঁকে খেতে বলল। তিনি বিসমিল্লাহ বলে খেতে শুরু করলেন। গোলামটি অবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকাল। সে বলল, আল্লাহর কসম! এ দেশের মানুষ তো এ বাক্য কখনও বলে না! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তবে তুমি কোন দেশের লোক হে আদ্দাস? সে বলল, আমি নীনাওয়ার অধিবাসী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা! তুমি তাহলে নেককার বান্দা ইয়ূনুস ইবন মাত্তার এলাকার লোক? সে বলল, ইয়ূনুস ইবন মাত্তা সম্পর্কে আপনি কী করে জানেন? তিনি বললেন, ইয়ূনুস তো আমার ভাই। তিনি নবী ছিলেন। আমিও একজন নবী। এ কথা শোনামাত্র আদ্দাস মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথায় ও হাতে-পায়ে চুমু খেল। তারপর সে ইসলাম গ্রহণ করল।
দূর থেকে উতবা ও শায়বা এ দৃশ্য দেখছিল। তারা খুব বিস্মিত হল। আদ্দাস তাদের কাছে ফিরে আসলে তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি ওই লোকটির মাথায় ও হাতে-পায়ে চুমু খেলে কেন? সে বলল, এ সময় দুনিয়ায় তাঁরচে' উত্তম কোনও লোক নেই। তিনি আমাকে এমন কথা বলেছেন, যা নবী ছাড়া কেউ বলতে পারে না। বস্তুত তিনি আল্লাহর একজন নবী। তার মুখে এ কথা শুনে তারা তাকে ধমক দিল এবং বলল, সাবধান! সে তোমাকে ধর্মান্তরিত না করে ফেলে! আসলে তোমার ধর্মই তার ধর্ম অপেক্ষা উত্তম।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফে ১০ দিন অবস্থান করেছিলেন। তারপর তিনি মক্কায় ফিরে আসেন। তিনি ফিরিশতার কাছে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, তা সত্যে পরিণত হয়েছিল। হিজরী ৮ম সনে মক্কাবিজয়ের পর তায়েফ ও হুনায়নের যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধেও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জয়লাভ করেন। তারপর তায়েফের সমস্ত মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে জুলুম-নিপীড়নের সম্মুখীন হওয়া অনিবার্য। দীনের দা'ঈকে সেজন্য প্রস্তুত থাকতেই হবে।
খ. দীন প্রচারের কাজে ধৈর্য হারানোর কোনও সুযোগ নেই।
গ. দীনের জন্য যে কুরবানী দেওয়া হয়, তা কখনও বৃথা যায় না।
ঘ. বিশ্বপরিচালনায় আল্লাহ তা'আলা একেক কাজের জন্য একেক ধরনের ফিরিশতা নিয়োজিত করে রেখেছেন।
ঙ. দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যারা বাধা দেয়, কালে তারাও হতে পারে দীনের সেবক। তাই অভিশাপ না দিয়ে দা'ঈর কর্তব্য তাদের সুপথে ফিরে আসার জন্য আশাবাদী থাকা এবং সেজন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করা।
তায়েফের ঘটনা
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতপ্রাপ্তির ১০ম বছরে দুনিয়ায় তাঁর সর্বাপেক্ষা বড় আনুকূল্যদাতা তাঁর শ্রদ্ধেয় চাচা আবূ তালিবের ইন্তিকাল হয়ে যায়। এর মাত্র তিন দিনের মাথায় চিরবিদায় গ্রহণ করেন তাঁর সবচে' ঘনিষ্ঠজন ও সবচে' বড় সহমর্মী আম্মাজান খাদীজা রাযি.। এ কারণে বছরটির নামই হয়ে যায় 'আমুল হুযন' বা শোকের বছর। তাদের ইন্তিকালে বাহ্যিকভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড় অসহায় হয়ে পড়েন। মুশরিকগণ তাঁকে নির্যাতন করার অবাধ সুযোগ পেয়ে যায়। তাঁর পক্ষে মক্কা মুকাররামায় অবস্থান দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। সবদিকে কেমন নৈরাশ্যকর পরিস্থিতি। এ অবস্থায় তাঁর দাওয়াতী কার্যক্রমের জন্য কোনও উপযুক্ত ক্ষেত্রের প্রয়োজন দেখা দেয়।
কুরায়শের পর মক্কা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের মধ্যে সবচে' বড় ও শক্তিমান গোষ্ঠী ছিল বনূ ছাকীফ। তারা তায়েফে বাস করত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জনপদকেই নিজ দাওয়াতের ময়দানরূপে চিন্তা করলেন। তিনি ভাবলেন এখানকার লোক তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিতে পারে এবং তারা আল্লাহর দীনের সাহায্যকারী হতে পারে। সুতরাং নবুওয়াতের দশম বছর ২৬ বা ২৭ শাউওয়াল তিনি হযরত যায়দ ইবন হারিছা রাযি.-কে সঙ্গে নিয়ে তায়েফের উদ্দেশে যাত্রা করলেন।
তায়েফে আবদে ইয়ালীল, মাসউদ ও হাবীব- এই তিন ব্যক্তি খুবই গণ্যমান্য ছিল। তারা ছিল তিন ভাই এবং আমর ইবন উমায়র ইবন আওফের পুত্র। তাদের একজন কুরায়শের শাখাগোত্র বনূ জুমাহের এক কন্যাকে বিবাহ করেছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের তিনজনের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকলেন এবং তাঁর দীনের সাহায্য করার আহ্বান জানালেন। কিন্তু তারা তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করল না। উল্টো তাঁর মুখের উপর যাচ্ছেতাই বলে মন্তব্য করল।
তাদের একজন বলল, আল্লাহ যদি তোমাকে রাসূল করে পাঠিয়ে থাকেন, তবে আমি কা'বার গিলাফের অমর্যাদা করব।
দ্বিতীয়জন বলল, তোমাকে ছাড়া আল্লাহ বুঝি আর কাউকে রাসূল করে পাঠানোর মতো পাননি?
তৃতীয়জন বলল, তোমার সঙ্গে আমি কোনও কথাই বলব না। কারণ তুমি যদি নিজ দাবি অনুযায়ী সত্যিই রাসূল হয়ে থাক, তবে তোমার কথা প্রত্যাখ্যান করা আমার জন্য বিপজ্জনক হবে। আর তুমি যদি মিথ্যুক হয়ে থাক, তবে তো তোমার সঙ্গে আমার কথা বলাই অনুচিত।
তারপর তারা তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা শুরু করে দিল। তাদের দৃষ্টিতে তিনি নবী হওয়ারই উপযুক্ত নন। নবী তো হবে মক্কা বা তায়েফের মোড়ল শ্রেণির কোনও ব্যক্তি। কুরআন মাজীদে তাদের মন্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে-
لَوْلَا نُزِّلَ هَذَا الْقُرْآنُ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ
এ কুরআন দুই জনপদের কোনও বড় ব্যক্তির উপর নাযিল করা হল না কেন? (সূরা যুখরুফ (৪৩), আয়াত ৩১)
তারা তাঁকে যাচ্ছেতাই বলে ব্যঙ্গ করেই ক্ষান্ত হল না। উপরন্তু তারা তাদের গোলাম, বালক ও উচ্ছৃঙ্খল লোকদের তাঁর পেছনে লেলিয়ে দিল। তারা তাঁর পেছনে হল্লা-চিল্লা করতে লাগল। পরম আনন্দের সঙ্গে তাঁকে উত্যক্ত করতে থাকল। এভাবে রাস্তায় তাঁর পেছনে বহু লোক জড়ো হয়ে গেল। ভিড়ের ভেতর থেকে অনেকে তাঁর উপর পাথরও নিক্ষেপ করল। তিনি একমাত্র সঙ্গী যায়দ রাযি.-কে নিয়ে সামনের দিকে চলছিলেন আর পেছন দিক থেকে দুর্বৃত্তের দল তাঁর উপর বৃষ্টির মতো পাথর ছুঁড়ে যাচ্ছিল। এভাবে তিনি প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন। তাঁর পায়ের গোছা মারাত্মকভাবে জখম হয়ে যায়। তা থেকে অঝোরধারায় রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে। সঙ্গী যায়দ রাযি.-ও মারাত্মকভাবে ক্ষত-বিক্ষত হন। তাঁর মাথা ও চোখ ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। তাঁর গোটা শরীর রক্তাক্ত।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড় আশা নিয়ে তায়েফে এসেছিলেন। কিন্তু অচিরেই সে আশা দুরাশায় পরিণত হল। তিনি তায়েফবাসীকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনওকিছুতেই তারা কর্ণপাত করল না। শেষে বললেন, তোমরা যখন আমার দাওয়াত গ্রহণই করলে না, তখন অন্ততপক্ষে এতটুকু তো করো যে, তোমরা আমার কথা অন্য কারও কাছে প্রকাশ করবে না। তিনি ভাবছিলেন, মক্কাবাসী এ পরিণতির কথা শুনলে খুব উস্কানি পাবে। তারা মক্কার মুসলিমদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। কিন্তু পাষণ্ডের দল তাঁর কোনও কথাই শুনতে নারাজ। তারা সাফ বলে দিল, হে মুহাম্মাদ! তুমি আমাদের শহর থেকে বের হয়ে যাও। যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যাও। এখানে থাকতে পারবে না।
তিনি দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সামনে চলতে থাকলেন। এরই মধ্যে রাস্তার পাশে একটি বাগান দেখতে পেলেন। উতবা ও শায়বা নামক কুরায়শী দুই ভাইয়ের ছিল এ বাগানটি। তিনি উপায়ান্তর না দেখে সেই বাগানে আশ্রয় নিলেন। একটি আঙ্গুর গাছের ছায়ায় গিয়ে তিনি বসলেন। তারপর একটু শান্ত হয়ে আল্লাহর কাছে দু'আ করলেন-
اللَّهُمَّ إِلَيْكَ أَشْكُو ضَعْفَ قُوَّتِيْ وَقِلَّةَ حِيْلَتِي وَهَوَانِي عَلَى النَّاسِ، يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ، أَنْتَ رَبُّ الْمُسْتَضْعَفِينَ وَأَنْتَ رَبِّي إِلَى مَنْ تَكِلنِي، إِلَى بَعِيدٍ يَتَجَهَّمُنِي، أَوْ إِلَى عَدُو مَلكْتَهُ أَمْرِي ، إِنْ لَمْ يَكُنْ بِكَ عَلَيَّ غَضَبٌ فَلَا أبَالِي، وَلَكِنَّ عَافِيَتَكَ هِيَ أَوْسَعُ لِي ، أَعُوْذُ بِنُوْرِ وَجْهِكَ الْكَرِيمُ الَّذِي أَشْرَقَتْ لَهُ الظُّلُمَاتُ، وَصَلحَ عَلَيْهِ أَمْرُ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ مِنْ أَنْ تُنْزِلَ بِيْ غَضَبَكَ أَوْ يَحِلَّ عَلَيَّ سَخَطُكَ، لَكَ الْعُتْبَى حَتَّى تَرْضَى وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِكَ
‘হে আল্লাহ! আমার শক্তির দুর্বলতা, সম্বলহীনতা এবং মানুষের কাছে আমার নগণ্যতা ও তুচ্ছতার জন্য আমি আপনারই কাছে ফরিয়াদ করছি। হে শ্রেষ্ঠ দয়ালু! আপনি দুর্বলদের প্রতিপালক। আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি আমাকে কার হাতে সমর্পণ করছেন? আমার প্রতি যে নিষ্ঠুর আচরণ করে, সেই অনাত্মীয়ের হাতে? নাকি সেই শত্রুর হাতে, যাকে আমার উপর কর্তৃত্ব দান করেছেন? আমার প্রতি আপনার অসন্তুষ্টি না থাকলে আমি কোনওকিছুর তোয়াক্কা করি না। তবে আপনার দেওয়া নিরাপত্তাই আমার পক্ষে শ্রেষ্ঠ অবলম্বন। আমার প্রতি আপনার ক্রোধবর্ষণ কিংবা আপনার অসন্তুষ্টির অবতরণ থেকে আমি আপনার চেহারার ওই নূরের আশ্রয় গ্রহণ করছি, যা দ্বারা সকল অন্ধকার আলোকিত হয়ে যায়, যার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় বিষয়ের সুরাহা হয়ে যায়। আপনার সন্তুষ্টিই আমার একমাত্র কামনা, যাতে আপনি খুশি হয়ে যান। আপনার সাহায্য ছাড়া আর কোনও উপায়ে শক্তি ও সামর্থ্য লাভ হতে পারে না।'
আল্লাহ তা'আলা তাঁর এ কাতর ডাকে সাড়া দিলেন। পাহাড়-পর্বতের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতার কাছে তাঁর ফরমান পৌঁছে গেল। ফিরিশতা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আরয করল, আপনি হুকুম করলে এক্ষণই আখশাবায়ন (মক্কার দু'দিকের দুই পাহাড়)-কে পরস্পর মিশিয়ে দেব, পাহাড়গুলোর মধ্যে পড়ে সমস্ত কাফের পিষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বললেন, না, হয়তো তাদের পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে ঈমানদার সন্তান জন্ম নেবে, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে।
এদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তায়েফবাসীগণ যে নির্মম আচরণ করেছিল, বাগানটির মালিক উতবা ও শায়বা তা লক্ষ করেছিল। তাদের মনে দয়া লাগল। তাদের ছিল এক খ্রিষ্টান গোলাম। তার নাম আদ্দাস। তারা তাদের সেই গোলামের হাতে কিছু আঙ্গুর দিয়ে বলল, এগুলো নিয়ে ওই লোকটিকে খেতে দাও।
সে তা নিয়ে গেল এবং তাঁকে খেতে বলল। তিনি বিসমিল্লাহ বলে খেতে শুরু করলেন। গোলামটি অবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকাল। সে বলল, আল্লাহর কসম! এ দেশের মানুষ তো এ বাক্য কখনও বলে না! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তবে তুমি কোন দেশের লোক হে আদ্দাস? সে বলল, আমি নীনাওয়ার অধিবাসী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা! তুমি তাহলে নেককার বান্দা ইয়ূনুস ইবন মাত্তার এলাকার লোক? সে বলল, ইয়ূনুস ইবন মাত্তা সম্পর্কে আপনি কী করে জানেন? তিনি বললেন, ইয়ূনুস তো আমার ভাই। তিনি নবী ছিলেন। আমিও একজন নবী। এ কথা শোনামাত্র আদ্দাস মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথায় ও হাতে-পায়ে চুমু খেল। তারপর সে ইসলাম গ্রহণ করল।
দূর থেকে উতবা ও শায়বা এ দৃশ্য দেখছিল। তারা খুব বিস্মিত হল। আদ্দাস তাদের কাছে ফিরে আসলে তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি ওই লোকটির মাথায় ও হাতে-পায়ে চুমু খেলে কেন? সে বলল, এ সময় দুনিয়ায় তাঁরচে' উত্তম কোনও লোক নেই। তিনি আমাকে এমন কথা বলেছেন, যা নবী ছাড়া কেউ বলতে পারে না। বস্তুত তিনি আল্লাহর একজন নবী। তার মুখে এ কথা শুনে তারা তাকে ধমক দিল এবং বলল, সাবধান! সে তোমাকে ধর্মান্তরিত না করে ফেলে! আসলে তোমার ধর্মই তার ধর্ম অপেক্ষা উত্তম।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফে ১০ দিন অবস্থান করেছিলেন। তারপর তিনি মক্কায় ফিরে আসেন। তিনি ফিরিশতার কাছে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, তা সত্যে পরিণত হয়েছিল। হিজরী ৮ম সনে মক্কাবিজয়ের পর তায়েফ ও হুনায়নের যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধেও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জয়লাভ করেন। তারপর তায়েফের সমস্ত মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে জুলুম-নিপীড়নের সম্মুখীন হওয়া অনিবার্য। দীনের দা'ঈকে সেজন্য প্রস্তুত থাকতেই হবে।
খ. দীন প্রচারের কাজে ধৈর্য হারানোর কোনও সুযোগ নেই।
গ. দীনের জন্য যে কুরবানী দেওয়া হয়, তা কখনও বৃথা যায় না।
ঘ. বিশ্বপরিচালনায় আল্লাহ তা'আলা একেক কাজের জন্য একেক ধরনের ফিরিশতা নিয়োজিত করে রেখেছেন।
ঙ. দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যারা বাধা দেয়, কালে তারাও হতে পারে দীনের সেবক। তাই অভিশাপ না দিয়ে দা'ঈর কর্তব্য তাদের সুপথে ফিরে আসার জন্য আশাবাদী থাকা এবং সেজন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
