রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৬১৯
অধ্যায়: ৭২ অহংকার ও আত্মমুগ্ধতা হারাম হওয়ার ঘোষণা
একাধারে অহংকার দেখাতে থাকার কুফল
হাদীছ নং: ৬১৯

হযরত সালামা ইবনুল আকওয়া‘ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, লোকে আত্মগৌরব দেখাতে থাকে। পরিশেষে গৌরবকারীদের মধ্যে তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে তাদের যে পরিণাম ভোগ করতে হয়, এরূপ লোকেরও সেই পরিণামই ভোগ করতে হয়। -তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী: ২০০০; শারহুস সুন্নাহ: ৩৫৮৯; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৬২৫৪)
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান হাদীছ।
72 - باب تحريم الكبر والإعجاب
619 - وعن سَلَمةَ بنِ الأكْوَعِ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَزَالُ الرَّجُلُ يَذْهَبُ بِنَفْسِهِ حَتَّى يُكْتَبَ في الجبَّارِين، فَيُصيبَهُ مَا أصَابَهُمْ». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن».
«يَذْهَبُ بِنَفْسِهِ» أيْ: يَرْتَفِعُ وَيَتَكبَّرُ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

لَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَذْهَبُ بِنَفْسِهِ – এ বাক্যটির আক্ষরিক অর্থ দু'রকম হতে পারে। এক অর্থ এরকম- লোকে নিজেকে নিয়ে যেতে থাকে। এ অর্থ হবে যদি بنَفْسِهِ -এর ب হরফটিকে تعدية (তা'দিয়াহ) ধরা হয়। অর্থাৎ যা দ্বারা অকর্মক ক্রিয়াপদকে সকর্মক ক্রিয়াপদে পরিণত করা হয়। বোঝানো উদ্দেশ্য- কথাবার্তা ও আচার-আচরণে নিজেকে উপরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে, ভাব দেখাতে থাকে যে, সে অনেক বড় কিছু এবং সে অন্যদের তুলনায় উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন।

দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে- মন যে আত্মগৌরব বোধ করে ও অন্যের সামনে নিজ বড়ত্ব জাহির করতে চায়, সে ব্যাপারে লোকে তার সঙ্গী হয় ও তার অনুগমন করতে থাকে। এ অর্থ হবে তখন, যখন 'ب' হরফটিকে مصاحبة (মুসাহাবা)-রূপে গণ্য করা হবে। উভয় অর্থ হিসেবেই বোঝানো উদ্দেশ্য অহংকার ও আত্মগৌরব করতে থাকা। তাই এর অর্থ করা হয়েছে- লোকে আত্মগৌরব দেখাতে থাকে।

حَتَّى يُكْتَبَ فِي الْجبَّارِينَ (পরিশেষে গৌরবকারীদের মধ্যে তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়)। অর্থাৎ তাকে তাদের মধ্যে গণ্য করা হয়। সাব্যস্ত করা হয় যে, সেও একজন অহংকারী।

فَيُصِيبُهُ مَا أَصَابَهُمْ (ফলে তাদের যে পরিণাম ভোগ করতে হয়, এরূপ লোকেরও সেই পরিণামই ভোগ করতে হয়)। অর্থাৎ তাদেরকে যে শাস্তি দেওয়া হয়, অনুরূপ শাস্তি তাকেও ভোগ করতে হয়। অহংকারীদের পরকালীন যে শাস্তি নির্ধারিত আছে তা তো আছেই, দুনিয়ায়ও তাদের এক রকম শাস্তি দিয়ে দেওয়া হয়। সে সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
كَذَلِكَ يَطْبَعُ اللَّهُ عَلَى كُلِّ قَلْبِ مُتَكَبِّرٍ جَبَّارٍ (35)
‘এভাবেই আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী, স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তির অন্তরে মোহর করে দেন।(সূরা গাফির (৪০), আয়াত ৩৫)

যার অন্তরে মোহর করে দেওয়া হয়, তার ভালো কিছু গ্রহণ করার তাওফীক হয় না। অন্যদিকে সে কোনও মন্দ কাজও পরিহার করতে পারে না। এটা এক ভয়ানক শাস্তি। দুনিয়ায় অহংকারী ব্যক্তির অন্য কোনও শাস্তি যদি নাও হয়, তবুও শাস্তি হিসেবে এটাই যথেষ্ট। আল্লাহ তা'আলা এ কঠিন পরিণতি থেকে আমাদের হেফাজত করুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. অহংকার দেখানো কঠিন পাপ। এটা অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

খ. একাধারে অহংকার দেখাতে থাকা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাই কখনও কোনও বিষয়ে অহংকারের প্রকাশ হয়ে গেলে যাতে তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে না পারে, সে বিষয়ে খুব সতর্ক থাকা দরকার।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৬১৯ | মুসলিম বাংলা