রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৬১০
অধ্যায় : ৭১ মুমিনদের প্রতি বিনয় ও নম্রতাপূর্ণ আচরণ।
পার্থিব যে-কোনও উন্নতির পর অধঃপতনের অনিবার্যতা
হাদীছ নং: ৬১০
হযরত আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘আদবা নামক উটনীটিকে ছাড়িয়ে যাওয়া যেত না অথবা (বর্ণনাকারী বলেছেন) ছাড়িয়ে যাওয়া প্রায় যেতই না। একবার এক বেদুঈন তার উঠতি বয়সী এক উটে চড়ে আসল এবং তা সেটিকে ছাড়িয়ে গেল। এটা মুসলিমদের জন্য কষ্টদায়ক হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বুঝতে পারলেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর অমোঘ নীতি হল দুনিয়ার যে বস্তুই উপরে উঠে যায়, তিনি অবশ্যই সেটিকে নামিয়ে দেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ২৮৭২; সুনানে আবূ দাউদ: ৪৮০২; মুসনাদুল বাযযার: ৬৫৭৫; সুনানে নাসাঈ: ৩৫৮৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৯০৩; সুনান দারা কুতনী: ৪৮২৯)
হাদীছ নং: ৬১০
হযরত আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘আদবা নামক উটনীটিকে ছাড়িয়ে যাওয়া যেত না অথবা (বর্ণনাকারী বলেছেন) ছাড়িয়ে যাওয়া প্রায় যেতই না। একবার এক বেদুঈন তার উঠতি বয়সী এক উটে চড়ে আসল এবং তা সেটিকে ছাড়িয়ে গেল। এটা মুসলিমদের জন্য কষ্টদায়ক হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বুঝতে পারলেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর অমোঘ নীতি হল দুনিয়ার যে বস্তুই উপরে উঠে যায়, তিনি অবশ্যই সেটিকে নামিয়ে দেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ২৮৭২; সুনানে আবূ দাউদ: ৪৮০২; মুসনাদুল বাযযার: ৬৫৭৫; সুনানে নাসাঈ: ৩৫৮৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৯০৩; সুনান দারা কুতনী: ৪৮২৯)
71 - باب التواضع وخفض الجناح للمؤمنين
610 - وعن أنس - رضي الله عنه - قَالَ: كَانَتْ ناقةُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - العضْبَاءُ لاَ تُسْبَقُ، أَوْ لاَ تَكَادُ تُسْبَقُ، فَجَاءَ أعْرَابيٌّ عَلَى قَعودٍ لَهُ، فَسَبَقَهَا، فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ حَتَّى عَرَفَهُ، فَقَالَ: «حَقٌّ عَلَى اللهِ أَنْ لاَ يَرْتَفِعَ شَيْءٌ مِنَ الدُّنْيَا إِلاَّ وَضَعَهُ». رواه البخاري. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
قعُوْدٌ (ক‘ঊদ) বলা হয় আরোহণের উপযুক্ত হয়ে ওঠা উটকে। সাধারণত ২ বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত বয়সী উটের জন্য এ শব্দ ব্যবহার হয়। এ বয়সী উটনীকে বলা হয় قلُوْصٌ (কলূস)। ছয় বছরে পড়লে সে উটকে جَمَلٌ (জামাল) বলা হয়।
الْعَضبَاءُ (আল-আদবা) অর্থ কাটা বা ছেঁড়া কানের উটনী। এক শিং ভাঙ্গা উটনীকেও আদবা বলে। কারও কারও মতে যে উটনীর শিং গোড়া থেকে ভাঙ্গা, তাকে আদবা বলা হয়। তবে এ শব্দ দিয়ে উটনীর নামও রাখা হয়, যদিও তার কান কাটা না হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটনীকে আদবা বলা হতো। কিন্তু সেটির কান কাটা বা ছেঁড়া ছিল বলে জানা যায় না। কারও কারও মতে যে উটনীর সামনের পা খাটো, তাকে আদবা বলা হয়।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি উটনীকে الْقَصْوَاء (আল- কাসওয়া) বলা হতো। অনেকেরই মতে আল-কাসওয়া ও আল-আদবা একই উটনীর দুই নাম। কেউ কেউ আলাদা উটনীও বলেছেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ উটনীটি খুবই দ্রুতগামী ছিল। অন্য কারও উট বা উটনী এটিকে পেছনে ফেলতে পারত না। কিন্তু একবার ব্যতিক্রম হল। জনৈক ব্যক্তির উট তাঁর উটনীকে পেছনে ফেলে সামনে চলে গেল। এ দৃশ্য দেখে সাহাবায়ে কেরাম মনে কষ্ট পেলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটনীকে অন্য কারও উট হারিয়ে দেবে, এটা তারা মানতে পারছিলেন না। তাই তারা আক্ষেপ করে বলতে লাগলেন- سُبقَتِ الْعَضبَاءُ؟ (আদবা হেরে গেল)?(সহীহ বুখারী: ৬৫০১) প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মনোবেদনা বুঝতে পারলেন। তাই তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বললেন-
حَقٌّ عَلَى اللهِ أَنْ لَا يَرْتَفعَ شَيْءٌ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا وَضَعَهُ (আল্লাহর অমোঘ নীতি হল দুনিয়ার যে বস্তুই উপরে উঠে যায়, তিনি অবশ্যই সেটিকে নামিয়ে দেন)। অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং এরূপ আকর্ষণীয় ও মোহনীয় যা-কিছুই আছে, তা যখন বেশি বেড়ে যায়, তখন এক পর্যায়ে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তা দমিয়ে দেন। কাজেই তোমরা এর বাড় ও অগ্রগামিতা দেখে চমকে যেয়ো না। একসময় এর অবশ্যই পতন ঘটবে। বরং তোমরা কারও পার্থিব চমকের দিকে তাকিয়োই না। এর কোনও স্থায়িত্ব নেই। ফুলে-ফেঁপে একটা পর্যায়ে পৌঁছার পর তার ক্ষয় শুরু হবেই। ইবন বাত্তাল রহ. বলেন, এ হাদীছটিতে আল্লাহর কাছে দুনিয়ার তুচ্ছতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে কেউ যেন দুনিয়াবী কোনও বিষয় নিয়ে অহংকার ও অহমিকায় লিপ্ত না হয়। মানুষের কর্তব্য বিনয় অবলম্বন করা ও অহমিকা পরিত্যাগ করা। আরও জানানো হয়েছে যে, দুনিয়ার যাবতীয় বিষয় ত্রুটিপূর্ণ। এর কোনওকিছুই পরিপূর্ণ নয়।
হাদীছটি দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিনয় সম্পর্কেও ধারণা লাভ হয়। তাঁর উটনী পিছিয়ে পড়ায় সাহাবায়ে কেরামের খারাপ লাগলেও তাঁর একটু খারাপ লাগেনি। তিনি বরং সেদিকে ভ্রুক্ষেপই করেননি। যখন বুঝতে পারলেন এজন্য সাহাবায়ে কেরাম মনে কষ্ট পেয়েছেন, তখন তাদের সান্ত্বনা দিলেন এবং সতর্ক করলেন যে, পার্থিব যে-কোনও উন্নতি ক্ষণস্থায়ী। একদিন তার অবনতি হবেই। তাই এসবের দিকে ভ্রুক্ষেপ করো না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পার্থিব কোনও দিক থেকে এগিয়ে থাকলে তা দিয়ে অহমিকা দেখাতে নেই।
খ. পার্থিব উন্নতি ও অগ্রগতি লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত নয়।
গ. গৌরব ও অহংকারের পরিণতি ধ্বংস ও অরাজকতা।
ঘ. দুনিয়ার কোনও বিষয়ই পরিপূর্ণও নয়, স্থায়ীও নয়।
ঙ. অন্যের উন্নতি ও অগ্রগতি দেখে হিনম্মন্যতায় ভুগতে নেই।
الْعَضبَاءُ (আল-আদবা) অর্থ কাটা বা ছেঁড়া কানের উটনী। এক শিং ভাঙ্গা উটনীকেও আদবা বলে। কারও কারও মতে যে উটনীর শিং গোড়া থেকে ভাঙ্গা, তাকে আদবা বলা হয়। তবে এ শব্দ দিয়ে উটনীর নামও রাখা হয়, যদিও তার কান কাটা না হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটনীকে আদবা বলা হতো। কিন্তু সেটির কান কাটা বা ছেঁড়া ছিল বলে জানা যায় না। কারও কারও মতে যে উটনীর সামনের পা খাটো, তাকে আদবা বলা হয়।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি উটনীকে الْقَصْوَاء (আল- কাসওয়া) বলা হতো। অনেকেরই মতে আল-কাসওয়া ও আল-আদবা একই উটনীর দুই নাম। কেউ কেউ আলাদা উটনীও বলেছেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ উটনীটি খুবই দ্রুতগামী ছিল। অন্য কারও উট বা উটনী এটিকে পেছনে ফেলতে পারত না। কিন্তু একবার ব্যতিক্রম হল। জনৈক ব্যক্তির উট তাঁর উটনীকে পেছনে ফেলে সামনে চলে গেল। এ দৃশ্য দেখে সাহাবায়ে কেরাম মনে কষ্ট পেলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটনীকে অন্য কারও উট হারিয়ে দেবে, এটা তারা মানতে পারছিলেন না। তাই তারা আক্ষেপ করে বলতে লাগলেন- سُبقَتِ الْعَضبَاءُ؟ (আদবা হেরে গেল)?(সহীহ বুখারী: ৬৫০১) প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মনোবেদনা বুঝতে পারলেন। তাই তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বললেন-
حَقٌّ عَلَى اللهِ أَنْ لَا يَرْتَفعَ شَيْءٌ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا وَضَعَهُ (আল্লাহর অমোঘ নীতি হল দুনিয়ার যে বস্তুই উপরে উঠে যায়, তিনি অবশ্যই সেটিকে নামিয়ে দেন)। অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং এরূপ আকর্ষণীয় ও মোহনীয় যা-কিছুই আছে, তা যখন বেশি বেড়ে যায়, তখন এক পর্যায়ে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তা দমিয়ে দেন। কাজেই তোমরা এর বাড় ও অগ্রগামিতা দেখে চমকে যেয়ো না। একসময় এর অবশ্যই পতন ঘটবে। বরং তোমরা কারও পার্থিব চমকের দিকে তাকিয়োই না। এর কোনও স্থায়িত্ব নেই। ফুলে-ফেঁপে একটা পর্যায়ে পৌঁছার পর তার ক্ষয় শুরু হবেই। ইবন বাত্তাল রহ. বলেন, এ হাদীছটিতে আল্লাহর কাছে দুনিয়ার তুচ্ছতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে কেউ যেন দুনিয়াবী কোনও বিষয় নিয়ে অহংকার ও অহমিকায় লিপ্ত না হয়। মানুষের কর্তব্য বিনয় অবলম্বন করা ও অহমিকা পরিত্যাগ করা। আরও জানানো হয়েছে যে, দুনিয়ার যাবতীয় বিষয় ত্রুটিপূর্ণ। এর কোনওকিছুই পরিপূর্ণ নয়।
হাদীছটি দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিনয় সম্পর্কেও ধারণা লাভ হয়। তাঁর উটনী পিছিয়ে পড়ায় সাহাবায়ে কেরামের খারাপ লাগলেও তাঁর একটু খারাপ লাগেনি। তিনি বরং সেদিকে ভ্রুক্ষেপই করেননি। যখন বুঝতে পারলেন এজন্য সাহাবায়ে কেরাম মনে কষ্ট পেয়েছেন, তখন তাদের সান্ত্বনা দিলেন এবং সতর্ক করলেন যে, পার্থিব যে-কোনও উন্নতি ক্ষণস্থায়ী। একদিন তার অবনতি হবেই। তাই এসবের দিকে ভ্রুক্ষেপ করো না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পার্থিব কোনও দিক থেকে এগিয়ে থাকলে তা দিয়ে অহমিকা দেখাতে নেই।
খ. পার্থিব উন্নতি ও অগ্রগতি লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত নয়।
গ. গৌরব ও অহংকারের পরিণতি ধ্বংস ও অরাজকতা।
ঘ. দুনিয়ার কোনও বিষয়ই পরিপূর্ণও নয়, স্থায়ীও নয়।
ঙ. অন্যের উন্নতি ও অগ্রগতি দেখে হিনম্মন্যতায় ভুগতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
