রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৯২
অধ্যায়: ৬৮ পরহেযগারী অবলম্বন ও সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলি পরিহার
সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করার গুরুত্ব
হাদীছ নং: ৫৯২
হযরত হাসান ইবন আলী রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (তাঁর এই বাণী) স্মরণ রেখেছি যে, যা তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে তা বর্জন করে যা খটকা সৃষ্টি করে না তা অবলম্বন কর। -তিরমিযী
(জামে‘ তিরমিযী: ২৫২০: সুনানে নাসাঈ: ৫৭১১)
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ হাদীছ।
হাদীছ নং: ৫৯২
হযরত হাসান ইবন আলী রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (তাঁর এই বাণী) স্মরণ রেখেছি যে, যা তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে তা বর্জন করে যা খটকা সৃষ্টি করে না তা অবলম্বন কর। -তিরমিযী
(জামে‘ তিরমিযী: ২৫২০: সুনানে নাসাঈ: ৫৭১১)
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ হাদীছ।
68 - باب الورع وترك الشبهات
592 - وعن الحسن بن علي رضي الله عنهما، قَالَ: حَفِظتُ من رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «دَعْ مَا يَريبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن صحيح».
معناه: اتْرُكْ مَا تَشُكُّ فِيهِ، وَخُذْ مَا لاَ تَشُكُّ فِيهِ.
معناه: اتْرُكْ مَا تَشُكُّ فِيهِ، وَخُذْ مَا لاَ تَشُكُّ فِيهِ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে বলা হচ্ছে, কোনও বিষয়ে তোমার মনে যদি খটকা ও সন্দেহ দেখা দেয় যে, তা হালাল না হারাম, জায়েয না নাজায়েয, তখন সে বিষয়টি পরিত্যাগ করে যে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই তা অবলম্বন করো। তাতেই নাজাত ও মুক্তি। কেননা সন্দেহযুক্ত বিষয়টি বাস্তবিকপক্ষে হারাম ও নাজায়েযও হতে পারে। কাজেই তাতে লিপ্ত হলে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে-কোনও হারাম ও নাজায়েয কাজে লিপ্ত হওয়া মানেই নিজেকে ধ্বংস করা। বিভিন্ন হাদীছে নাজায়েয কাজকে 'মূবিকাত' ও 'মুহলিকাত' (ধ্বংসাত্মক) বলা হয়েছে। হারাম কাজে যেহেতু গুনাহ হয় আর গুনাহ মানুষকে জাহান্নামে নেয়, তাই হারাম কাজ ধ্বংসাত্মকই বটে। সেই ধ্বংস থেকে বাঁচার লক্ষ্যে সন্দেহযুক্ত কাজ পরিহার করা অবশ্যকর্তব্য। তাছাড়া সন্দেহযুক্ত কাজে লিপ্ত হলে সুস্পষ্ট হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার দুঃসাহস জন্মায়। তা ধীরে ধীরে হারাম কাজের দিকে নিয়ে যায়। কাজেই স্পষ্ট হারাম বিষয় থেকে বাঁচার জন্য জরুরি এমনসব কাজ থেকেও দূরে থাকা, যা হারাম বলে সন্দেহ হয়। অর্থাৎ করা হবে কেবল এমন কাজই, যা স্পষ্টভাবে হালাল ও বৈধ। আর যা হারাম তা থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে। আর যে কাজে সন্দেহ হয় তা হালাল না হারাম, তাও এই চিন্তায় পরিহার করা চাই যে, তা বাস্তবিকপক্ষে হারাম হলে তো অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আর বাস্তবিকপক্ষে হারাম না হলেও যেহেতু হারামের সন্দেহ আছে, তাই এরূপ কাজে লিপ্ত হলে ধীরে ধীরে হারামের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
বোঝাই যাচ্ছে এরূপ কাজ পরিহার করা ফরয বা ওয়াজিব নয়; বরং কেবলই সতর্কতা অর্থাৎ মুস্তাহাব পর্যায়ের। কিন্তু মুস্তাহাব হলেও এ কারণে অবহেলা করা যায় না যে, তাতে লিপ্ত হওয়াটা বিপজ্জনক, যেহেতু হারামে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এ সতর্কতা অবলম্বন দ্বারা একদিক থেকে তো সরাসরি নিজ দীনদারীর হেফাজত হয়, যেহেতু এটা হারাম থেকে বাঁচার উপায়। দ্বিতীয়ত এর দ্বারা নিজ মান-সম্মানও রক্ষা হয়। কেননা সন্দেহযুক্ত কাজ করলে অন্যের মনে সন্দেহ জন্মাতে পারে- সে বুঝি হারাম কাজ করছে! এভাবে বেশি বেশি সন্দেহপূর্ণ কাজ করতে থাকলে ব্যাপকভাবেই মানুষ সন্দেহ করতে শুরু করবে। ফলে তার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। মানুষের দৃষ্টিতে আস্থাহীন হয়ে পড়াটা খুবই অসম্মানজনক। এর থেকে বাঁচা জরুরি। কেননা আত্মসম্মান রক্ষা করাও শরী'আতের হুকুম। সন্দেহপূর্ণ জিনিস থেকে বেঁচে থাকাও আত্মসম্মান রক্ষার একটা উপায়।
সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করা এ উম্মতের সালিহীন ও বুযুর্গানে দীনের বৈশিষ্ট্য। তারা কঠোরভাবে এ নীতি অবলম্বন করতেন। তারা প্রয়োজনে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি স্বীকার করতেন, তবুও সন্দেহযুক্ত মুনাফা স্পর্শ করতেন না। হিশাম ইবন হাসান রহ. বলেন, মুহাম্মাদ ইবন সীরীন রহ. এমন চল্লিশ হাজার দিরহাম পরিত্যাগ করেছিলেন, যা গ্রহণে তোমরা কোনও দোষ মনে কর না। ইমাম আবু হানীফা রহ. কাপড়ের ব্যবসা করতেন। একবার তাঁর এক বান্ডিল কাপড় ত্রিশ হাজার দিরহামে বিক্রি করা হয়। তাতে একটা কাপড় ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কর্মচারী ভুলে সে কথা ক্রেতাকে জানায়নি। এ কারণে তিনি ত্রিশ হাজার দিরহামের সবটাই সদাকা করে দেন। বুযুর্গানে দীনের এরকম শত শত ঘটনা বর্ণিত আছে।
বস্তুত মুত্তাকী হওয়ার প্রকৃষ্ট উপায় সন্দেহযুক্ত জিনিস পরিহার করা। এটা কঠিন কোনও কাজ নয়। ফুযায়ল ইবন ইয়ায বলেন, লোকে বলে পরহেযগারী কঠিন কাজ। তোমার কাছে যা সন্দেহযুক্ত তা পরিহার করে সন্দেহমুক্ত কাজ করো, তবেই পরহেযগার হয়ে যাবে। হাসান ইবন আবী সিনান বলেন, পরহেযগারীর চেয়ে সহজ কিছু নেই। যে বস্তুতে তোমার সন্দেহ লাগে তা পরিহার করো। এটাই পরহেযগারী।
এ হাদীছে সাধারণভাবে বলা হয়েছে- যে বিষয়ে তোমার মনে সন্দেহ দেখা দেয় তা পরিহার করো। কোন বিষয় তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। তা দেওয়া হয়নি এজন্য যে, সন্দেহ দেখা দিতে পারে ইবাদত-বন্দেগীতে, আর্থিক লেনদেনে এবং জীবনের যাবতীয় কাজকর্মে। শরী'আতের নির্দেশনা আছে মানবজীবনের যাবতীয় বিষয়ে। তার মধ্যে যেসব বিষয় সুস্পষ্ট হালাল ও বৈধ, তাতে মু'মিনের মনে কোনও সন্দেহ দেখা দেয় না। কাজেই নির্দ্বিধায় সে তা করবে। এমনিভাবে যা-কিছু হারাম ও নাজায়েয বলে স্পষ্ট বর্ণিত আছে, তাতেও মু'মিনের মনে সন্দেহ দেখা দিতে পাবে না। তাও সে অবশ্যই পরিহার করবে।
হাঁ, কিছু কিছু জিনিস এমন আছে, যা হালাল না হারাম সে বিষয়ে শরী'আতের বক্তব্য সুস্পষ্ট নয়। সে বিষয়ে পরস্পরবিরোধী যুক্তি আছে। তাই কেউ কেউ তাকে হালাল মনে করেন, কেউ মনে করেন হারাম। এ কারণেই সে সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি হয় যে, তা আসলে হালাল না হারাম। এরূপ বিষয়েই পরহেযগারীর দাবি তা পরিহার করা। মু'মিন সম্পর্কে এ ধারণা করা যায় না যে, সে হালাল কাজকে হারাম গণ্য করবে। আবার এ ধারণাও করা যায় না যে, সে হারামকে হালাল মনে করে তাতে লিপ্ত হবে। ব্যস এ দুই ক্ষেত্রে তো সে পুরোপুরিভাবে শরী'আতের উপর প্রতিষ্ঠিত। বাকি থাকল সন্দেহযুক্ত জিনিস। সে যদি তা পরিহার করে চলে, তবে পরিপূর্ণরূপে দীনদার হয়ে গেল। শরী'আত মু'মিনকে সেই পরিপূর্ণতায় পৌঁছাতে চায় বলেই তাকে এরূপ বিষয় পরিহার করতে বলা হয়েছে। এজন্যই বলা হয়, পরহেযগারীর সবটাই সন্দেহপূর্ণ বিষয় পরিহার করার মধ্যে নিহিত। উলামায়ে কেরাম বলেন, এ হাদীছ দীনের এক প্রধান স্তম্ভ ও পরহেযগারীর ভিত্তি। এরই উপর ইয়াকীনের বুনিয়াদ স্থাপিত। এটাই সবরকম সংশয়-সন্দেহের জুলুম থেকে হৃদয়-মনকে বাঁচানোর দাওয়াই।
প্রকাশ থাকে যে, এ হাদীছে ওইসকল সন্দেহযুক্ত বিষয়ে লিপ্ত হতে নিষেধ করা হয়েছে, যাতে সন্দেহ সৃষ্টির যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। সুতরাং অকারণ সন্দেহ এর আওতায় পড়বে না। বরং শরী'আত অকারণ সন্দেহকে পাত্তা দিতেই নিষেধ করেছে। তাই ওযু করে নামাযে দাঁড়ানোর পর ওযু ভাঙল কি ভাঙল না অহেতুকভাবে এই সন্দেহ দেখা দিলে সে সন্দেহকে গুরুত্ব দিতে নেই; বরং মনে করতে হবে ওটা শয়তানের ওয়াসওয়াসা। কোনও পানিতে নাপাকী পড়তে দেখা না গেলে অহেতুক সে পানি সম্পর্কে নাপাক হওয়ার সন্দেহ করা ঠিক নয়। কোনও মুসলিম ব্যক্তি পশু জবাই করার পর সে বিসমিল্লাহ বলেছে কি বলেনি, এ সন্দেহের পেছনে পড়াও উচিত নয়। এসব অমূলক সন্দেহ। একে গুরুত্ব দিলে শয়তান প্রশ্রয় পায়। এতে করে সে সবরকম ইবাদত-বন্দেগীতেই সন্দেহ সৃষ্টির সুযোগ নেয়। এ কৌশলে শয়তান যার উপর সওয়ার হয়, এক পর্যায়ে ইবাদত-বন্দেগীতে তার বিরক্তি ধরে যায়। না'ঊযুবিল্লাহি মিন যালিক। কাজেই এ পর্যায়ে পৌঁছার আগে শুরু থেকেই অমূলক সন্দেহ পরিহার করা কর্তব্য।
উল্লেখ্য, এ হাদীছটি ৫৫ ক্রমিক নম্বর হাদীসে গত হয়েছে। সেখানে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার দ্বারা প্রকৃত তাকওয়া-পরহেযগারী অর্জিত হয়।
খ. যা সুস্পষ্ট হারাম ও নাজায়েয, তা থেকে বাঁচার প্রকৃষ্ট উপায় সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করা।
গ. সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের পক্ষে মনের সাক্ষ্যও গুরুত্বপূর্ণ।
ঘ. শরী'আতের দৃষ্টিতে কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক তা জানার জন্য অবশ্যই উলামায়ে কেরামের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
বোঝাই যাচ্ছে এরূপ কাজ পরিহার করা ফরয বা ওয়াজিব নয়; বরং কেবলই সতর্কতা অর্থাৎ মুস্তাহাব পর্যায়ের। কিন্তু মুস্তাহাব হলেও এ কারণে অবহেলা করা যায় না যে, তাতে লিপ্ত হওয়াটা বিপজ্জনক, যেহেতু হারামে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এ সতর্কতা অবলম্বন দ্বারা একদিক থেকে তো সরাসরি নিজ দীনদারীর হেফাজত হয়, যেহেতু এটা হারাম থেকে বাঁচার উপায়। দ্বিতীয়ত এর দ্বারা নিজ মান-সম্মানও রক্ষা হয়। কেননা সন্দেহযুক্ত কাজ করলে অন্যের মনে সন্দেহ জন্মাতে পারে- সে বুঝি হারাম কাজ করছে! এভাবে বেশি বেশি সন্দেহপূর্ণ কাজ করতে থাকলে ব্যাপকভাবেই মানুষ সন্দেহ করতে শুরু করবে। ফলে তার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। মানুষের দৃষ্টিতে আস্থাহীন হয়ে পড়াটা খুবই অসম্মানজনক। এর থেকে বাঁচা জরুরি। কেননা আত্মসম্মান রক্ষা করাও শরী'আতের হুকুম। সন্দেহপূর্ণ জিনিস থেকে বেঁচে থাকাও আত্মসম্মান রক্ষার একটা উপায়।
সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করা এ উম্মতের সালিহীন ও বুযুর্গানে দীনের বৈশিষ্ট্য। তারা কঠোরভাবে এ নীতি অবলম্বন করতেন। তারা প্রয়োজনে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি স্বীকার করতেন, তবুও সন্দেহযুক্ত মুনাফা স্পর্শ করতেন না। হিশাম ইবন হাসান রহ. বলেন, মুহাম্মাদ ইবন সীরীন রহ. এমন চল্লিশ হাজার দিরহাম পরিত্যাগ করেছিলেন, যা গ্রহণে তোমরা কোনও দোষ মনে কর না। ইমাম আবু হানীফা রহ. কাপড়ের ব্যবসা করতেন। একবার তাঁর এক বান্ডিল কাপড় ত্রিশ হাজার দিরহামে বিক্রি করা হয়। তাতে একটা কাপড় ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কর্মচারী ভুলে সে কথা ক্রেতাকে জানায়নি। এ কারণে তিনি ত্রিশ হাজার দিরহামের সবটাই সদাকা করে দেন। বুযুর্গানে দীনের এরকম শত শত ঘটনা বর্ণিত আছে।
বস্তুত মুত্তাকী হওয়ার প্রকৃষ্ট উপায় সন্দেহযুক্ত জিনিস পরিহার করা। এটা কঠিন কোনও কাজ নয়। ফুযায়ল ইবন ইয়ায বলেন, লোকে বলে পরহেযগারী কঠিন কাজ। তোমার কাছে যা সন্দেহযুক্ত তা পরিহার করে সন্দেহমুক্ত কাজ করো, তবেই পরহেযগার হয়ে যাবে। হাসান ইবন আবী সিনান বলেন, পরহেযগারীর চেয়ে সহজ কিছু নেই। যে বস্তুতে তোমার সন্দেহ লাগে তা পরিহার করো। এটাই পরহেযগারী।
এ হাদীছে সাধারণভাবে বলা হয়েছে- যে বিষয়ে তোমার মনে সন্দেহ দেখা দেয় তা পরিহার করো। কোন বিষয় তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। তা দেওয়া হয়নি এজন্য যে, সন্দেহ দেখা দিতে পারে ইবাদত-বন্দেগীতে, আর্থিক লেনদেনে এবং জীবনের যাবতীয় কাজকর্মে। শরী'আতের নির্দেশনা আছে মানবজীবনের যাবতীয় বিষয়ে। তার মধ্যে যেসব বিষয় সুস্পষ্ট হালাল ও বৈধ, তাতে মু'মিনের মনে কোনও সন্দেহ দেখা দেয় না। কাজেই নির্দ্বিধায় সে তা করবে। এমনিভাবে যা-কিছু হারাম ও নাজায়েয বলে স্পষ্ট বর্ণিত আছে, তাতেও মু'মিনের মনে সন্দেহ দেখা দিতে পাবে না। তাও সে অবশ্যই পরিহার করবে।
হাঁ, কিছু কিছু জিনিস এমন আছে, যা হালাল না হারাম সে বিষয়ে শরী'আতের বক্তব্য সুস্পষ্ট নয়। সে বিষয়ে পরস্পরবিরোধী যুক্তি আছে। তাই কেউ কেউ তাকে হালাল মনে করেন, কেউ মনে করেন হারাম। এ কারণেই সে সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি হয় যে, তা আসলে হালাল না হারাম। এরূপ বিষয়েই পরহেযগারীর দাবি তা পরিহার করা। মু'মিন সম্পর্কে এ ধারণা করা যায় না যে, সে হালাল কাজকে হারাম গণ্য করবে। আবার এ ধারণাও করা যায় না যে, সে হারামকে হালাল মনে করে তাতে লিপ্ত হবে। ব্যস এ দুই ক্ষেত্রে তো সে পুরোপুরিভাবে শরী'আতের উপর প্রতিষ্ঠিত। বাকি থাকল সন্দেহযুক্ত জিনিস। সে যদি তা পরিহার করে চলে, তবে পরিপূর্ণরূপে দীনদার হয়ে গেল। শরী'আত মু'মিনকে সেই পরিপূর্ণতায় পৌঁছাতে চায় বলেই তাকে এরূপ বিষয় পরিহার করতে বলা হয়েছে। এজন্যই বলা হয়, পরহেযগারীর সবটাই সন্দেহপূর্ণ বিষয় পরিহার করার মধ্যে নিহিত। উলামায়ে কেরাম বলেন, এ হাদীছ দীনের এক প্রধান স্তম্ভ ও পরহেযগারীর ভিত্তি। এরই উপর ইয়াকীনের বুনিয়াদ স্থাপিত। এটাই সবরকম সংশয়-সন্দেহের জুলুম থেকে হৃদয়-মনকে বাঁচানোর দাওয়াই।
প্রকাশ থাকে যে, এ হাদীছে ওইসকল সন্দেহযুক্ত বিষয়ে লিপ্ত হতে নিষেধ করা হয়েছে, যাতে সন্দেহ সৃষ্টির যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। সুতরাং অকারণ সন্দেহ এর আওতায় পড়বে না। বরং শরী'আত অকারণ সন্দেহকে পাত্তা দিতেই নিষেধ করেছে। তাই ওযু করে নামাযে দাঁড়ানোর পর ওযু ভাঙল কি ভাঙল না অহেতুকভাবে এই সন্দেহ দেখা দিলে সে সন্দেহকে গুরুত্ব দিতে নেই; বরং মনে করতে হবে ওটা শয়তানের ওয়াসওয়াসা। কোনও পানিতে নাপাকী পড়তে দেখা না গেলে অহেতুক সে পানি সম্পর্কে নাপাক হওয়ার সন্দেহ করা ঠিক নয়। কোনও মুসলিম ব্যক্তি পশু জবাই করার পর সে বিসমিল্লাহ বলেছে কি বলেনি, এ সন্দেহের পেছনে পড়াও উচিত নয়। এসব অমূলক সন্দেহ। একে গুরুত্ব দিলে শয়তান প্রশ্রয় পায়। এতে করে সে সবরকম ইবাদত-বন্দেগীতেই সন্দেহ সৃষ্টির সুযোগ নেয়। এ কৌশলে শয়তান যার উপর সওয়ার হয়, এক পর্যায়ে ইবাদত-বন্দেগীতে তার বিরক্তি ধরে যায়। না'ঊযুবিল্লাহি মিন যালিক। কাজেই এ পর্যায়ে পৌঁছার আগে শুরু থেকেই অমূলক সন্দেহ পরিহার করা কর্তব্য।
উল্লেখ্য, এ হাদীছটি ৫৫ ক্রমিক নম্বর হাদীসে গত হয়েছে। সেখানে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার দ্বারা প্রকৃত তাকওয়া-পরহেযগারী অর্জিত হয়।
খ. যা সুস্পষ্ট হারাম ও নাজায়েয, তা থেকে বাঁচার প্রকৃষ্ট উপায় সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করা।
গ. সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের পক্ষে মনের সাক্ষ্যও গুরুত্বপূর্ণ।
ঘ. শরী'আতের দৃষ্টিতে কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক তা জানার জন্য অবশ্যই উলামায়ে কেরামের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
