রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৯১
অধ্যায়: ৬৮ পরহেযগারী অবলম্বন ও সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলি পরিহার
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুধভাইবোনের সম্পর্ক থাকার সন্দেহ দেখা দিলে
হাদীছ নং: ৫৯১

হযরত উকবা ইবনুল হারিছ রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি আবু ইহাব ইবন আযীযের এক কন্যাকে বিবাহ করেন। তারপর জনৈকা মহিলা তাঁর কাছে এসে বলল, আমি উকবাকে এবং সে যাকে বিবাহ করেছে তাকে দুধ পান করিয়েছি। উকবা তাকে বললেন, আমি জানি না যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন এবং আপনি আমাকে তা জানানওনি। তারপর তিনি সওয়ার হয়ে মদীনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট চলে গেলেন এবং তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কীভাবে (তুমি তাকে রাখবে), অথচ বলা হয়েছে (সে তোমার দুধবোন)? সুতরাং উকবা তাকে পরিত্যাগ করলেন এবং সে অন্য এক স্বামীর বিবাহে আবদ্ধ হলো। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৮৮; সহীহ ইবন হিব্বান: ৪২১৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৪৫৭৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২২৮৬; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১৫৪৩৫; সুনানে দারিমী: ২৩০১)
68 - باب الورع وترك الشبهات
591 - وعن أَبي سِرْوَعَةَ - بكسر السين المهملة وفتحها - عُقبَةَ بنِ الحارِثِ - رضي الله عنه: أنَّهُ تَزَوَّجَ ابنَةً لأبي إهَابِ بن عزيزٍ، فَأتَتْهُ امْرَأةٌ، فَقَالَتْ: إنّي قَدْ أرضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي قَدْ تَزَوَّجَ بِهَا. فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ: مَا أَعْلَمُ أنَّك أرضَعْتِنِي وَلاَ أخْبَرْتِني، فَرَكِبَ إِلَى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - ِ بِالمَدِينَةِ، فَسَأَلَهُ: فَقَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «كَيْفَ وَقَد قِيلَ؟» فَفَارَقَهَا عُقْبَةُ وَنَكَحَتْ زَوْجًا غَيْرَهُ. رواه البخاري. (1)
«إهَابٌ» بكسر الهمزة وَ «عَزيزٌ» بفتح العين وبزاي مكررة.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি তাকওয়া-পরহেযগারী সম্পর্কিত। কোনও কাজ সুস্পষ্ট হারাম না হলেও যদি হারাম হওয়ার আভাসমাত্রও থাকে, তবে মুত্তাকী-পরহেযগার ব্যক্তির উচিত তা থেকে বিরত থাকা। হযরত উকবা ইবনুল হারিছ রাযি. যে মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন, তিনি যে তাঁর দুধবোন তা প্রমাণিত হয়নি। একজন স্ত্রীলোকের কথায় তা প্রমাণিত হয়ও না। এর জন্য দু'জন সাক্ষী দরকার। কিন্তু এ ঘটনায় দেখা যাচ্ছে একজন মহিলা এসে দাবি করেছেন যে, আমি উকবাকে এবং সে যাকে বিবাহ করেছে তাকে দুধপান করিয়েছি। তিনি বলতে চাচ্ছিলেন যে, তারা দু'জন দুধভাইবোন। এ কারণে তাদের মধ্যে বিবাহ হতে পারে না। কিন্তু সে স্ত্রীলোকটি তার দাবির পক্ষে কোনও সাক্ষী পেশ করতে পারেনি। তাই তাদের দু'জনের দুধভাইবোন হওয়া প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু যেহেতু স্ত্রীলোকটি এরকম এক দাবি করে বসেছেন, তাই হযরত উকবা রাযি.-এর অন্তরে খটকা দেখা দিয়েছে যে, তিনি যাকে বিবাহ করেছেন তাকে স্ত্রীরূপে রাখবেন না ছেড়ে দেবেন। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও পর্যন্ত বেঁচে আছেন, তাই এ বিষয়ে নিজে নিজে ফয়সালা না নিয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরামর্শ নেওয়া জরুরি মনে করলেন। সুতরাং অবিলম্বে মক্কা মুকাররামা থেকে মদীনা মুনাউওয়ারার সফর করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্ত্রীলোকটির দাবির কথা তাঁকে শোনালেন এবং এ অবস্থায় তাঁর কী করণীয় তা জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
كَيْفَ؟ وَقَدْ قِيلَ ‘কীভাবে (তুমি তাকে রাখবে), অথচ বলা হয়েছে (সে তোমার দুধবোন)'? অর্থাৎ এ অবস্থায় স্ত্রীরূপে তাকে রেখে দিলে তোমার দাম্পত্য জীবন সুখকর হবে না। তোমাদের অন্তরে সবসময় একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব লেগে থাকবে যে, বাস্তবিকই তোমরা দুধভাইবোন কি না। ফলে স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে তোমরা পরস্পর ঘনিষ্ঠ হতে পারবে না। তাছাড়া লোকেও এ নিয়ে কানাঘুষা করবে। নানাজনে নানা কথা বলবে। তাতে সামাজিকভাবে তুমি হেয় হয়ে যাবে। তোমার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে। যে কাজে মর্যাদাহানী হয়, তা থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। কাজেই তোমার বিবাহিতাকে স্ত্রীরূপে রেখে দেওয়াটা হারাম না হলেও তাকওয়া-পরহেযগারী ও মার্জিত রুচির পরিপন্থী অবশ্যই। সুতরাং তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। তাতে তোমারও মান-সম্মান রক্ষা পাবে এবং তোমার স্ত্রীরও। তারপর তোমরা প্রত্যেকে নতুন বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ হলে সুখের ও স্বস্তিকর জীবন উপভোগ করতে পারবে।

হযরত উকবা রাযি. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ পরামর্শ গ্রহণ করলেন। তিনি তাঁর এ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিলেন। তারপর তিনি নিজেও নতুন বিবাহ করলেন এবং তার এ স্ত্রীও নতুন স্বামী গ্রহণ করলেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যে কাজ করার দ্বারা মানুষের পক্ষ থেকে অবৈধতায় লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ উঠতে পারে, তা থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।

খ. যে বিষয় জানা জরুরি, তা জানার জন্য যদি সফর করার দরকার হয় এবং তা করা সম্ভবও হয়, তবে অবশ্যই তা করতে হবে। ইমাম শা‘বী রহ. বলেন, কোনও ব্যক্তি যদি এমন একটি কথাও জানার জন্য শামের এক প্রান্ত থেকে ইয়ামানের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সফর করে, যে কথাটি তার পরবর্তী জীবনে উপকারে আসবে, তবে আমি মনে করি না তার সে সফর ব্যর্থ গেছে।

গ. দাম্পত্য জীবন যাতে সুখকর হয়, সে লক্ষ্যে বিবাহের আগেই বৈধ-অবৈধের বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া উচিত।

ঘ. বিবাহের পর যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুধভাইবোনের সম্পর্ক থাকার কোনও সন্দেহ দেখা দেয়, তবে নিশ্চিতভাবে তা প্রমাণিত না হলেও স্বস্তিকর জীবন উপভোগের উদ্দেশ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানোই শ্রেয়। এটা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পক্ষেই কল্যাণকর।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৫৯১ | মুসলিম বাংলা