রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৭৪
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায় : ৬৫ মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং লম্বা-চওড়া আশা না রাখা
অসিয়তনামা সঙ্গে রাখার গুরুত্ব
হাদীছ নং: ৫৭৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন কোনও মুসলিম ব্যক্তিরই নিজের কাছে লিখিত অসিয়তপত্র রাখা ছাড়া দু’রাতও কাটানো উচিত নয়, যার কাছে অসিয়ত করার মতো কিছু আছে। -বুখারী ও মুসলিম। এটা বুখারীর ভাষা।
(সহীহ বুখারী: ২৭৩৮; সহীহ মুসলিম: ১৬২৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ২৭০০; সুনানে আবু দাউদ: ২৮৬২; জামে' তিরমিযী: ৯৯৬; সুনানে নাসাঈ ৩৬১৫; মুআত্তা মালিক: ২৮১৮; মুসনাদে আহমাদ: ৪৪৬৯; সহীহ ইবন হিব্বান ৬০২৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১২৫৮৮)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, তিন রাত কাটানো।
ইবন উমর রাযি. বলেন, আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি, তখন থেকে আমার এমন এক রাতও কাটেনি, যখন আমার কাছে আমার অসিয়তপত্র ছিল না।
হাদীছ নং: ৫৭৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন কোনও মুসলিম ব্যক্তিরই নিজের কাছে লিখিত অসিয়তপত্র রাখা ছাড়া দু’রাতও কাটানো উচিত নয়, যার কাছে অসিয়ত করার মতো কিছু আছে। -বুখারী ও মুসলিম। এটা বুখারীর ভাষা।
(সহীহ বুখারী: ২৭৩৮; সহীহ মুসলিম: ১৬২৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ২৭০০; সুনানে আবু দাউদ: ২৮৬২; জামে' তিরমিযী: ৯৯৬; সুনানে নাসাঈ ৩৬১৫; মুআত্তা মালিক: ২৮১৮; মুসনাদে আহমাদ: ৪৪৬৯; সহীহ ইবন হিব্বান ৬০২৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১২৫৮৮)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, তিন রাত কাটানো।
ইবন উমর রাযি. বলেন, আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি, তখন থেকে আমার এমন এক রাতও কাটেনি, যখন আমার কাছে আমার অসিয়তপত্র ছিল না।
مقدمة الامام النووي
65 - باب ذكر الموت وقصر الأمل
574 - وعنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ، لَهُ شَيْءٌ يُوصِي فِيهِ، يَبيتُ لَيْلَتَيْنِ إِلاَّ وَوَصِيَّتُهُ مَكْتُوبَةٌ عِنْدَهُ». متفقٌ عَلَيْهِ، هَذَا لفظ البخاري. (1)
وفي روايةٍ لمسلمٍ: «يَبِيتُ ثَلاَثَ لَيَالٍ» قَالَ ابن عمر: مَا مَرَّتْ عَلَيَّ لَيْلَةٌ مُنْذُ سَمِعْتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ ذَلِكَ إِلاَّ وَعِنْدِي وَصِيَّتِي.
وفي روايةٍ لمسلمٍ: «يَبِيتُ ثَلاَثَ لَيَالٍ» قَالَ ابن عمر: مَا مَرَّتْ عَلَيَّ لَيْلَةٌ مُنْذُ سَمِعْتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ ذَلِكَ إِلاَّ وَعِنْدِي وَصِيَّتِي.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটি অন্তরে মৃত্যুচিন্তা জাগ্রত রাখা ও মৃত্যুর প্রস্তুতিস্বরূপ অসিয়তনামা লিখে রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে-
مَا حَقٌّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ (কোনও মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয়)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়, যার বিশ্বাস এ জীবন স্থায়ী নয়, এর পর মৃত্যু আছে, মৃত্যুর পর দীর্ঘকাল কবরে অবস্থান করার রয়েছে, তারপর আখিরাতে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং সেখানে ইহজীবনের যাবতীয় কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে, তার ইসলামের দাবি সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। তার কিছুতেই উচিত নয়...
لَهُ شيءٌ يُوصِي فِيهِ (যার কাছে অসিয়ত করার মতো কিছু আছে)। অর্থাৎ যার কাছে এমন অর্থ-সম্পদ আছে, যে সম্পর্কে চাইলে সে অসিয়ত করতে পারে। তার সম্পদ এত কম নয় যে, তাতে অসিয়ত করা যাবে না, তা করতে গেলে ওয়ারিছদের জন্য কিছু থাকবে না। এরূপ ব্যক্তির কী করণীয়, সে সম্পর্কে সামনে বলা হচ্ছে-
(সেই মুসলিম ব্যক্তির) নিজের কাছে লিখিত অসিয়তপত্র রাখা ছাড়া দু'রাতও কাটানো (উচিত নয়)'। কোন কোন বর্ণনায় আছে তিন রাত্রের কথা। কোন কোন বর্ণনায় আছে দু'রাত্রের কথা। দু'-তিন রাত দ্বারা মূলত অল্পকাল বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সেই মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা এবং সে প্রস্তুতি হিসেবে সর্বদা নিজের কাছে তার সম্পদ সম্পর্কে অসিয়তনামা লিখে রাখা। অসিয়তনামা ছাড়া সে অল্পকালও কাটাবে না। কেননা মৃত্যু তো যে-কোনও সময়ই এসে যেতে পারে। যদি হঠাৎ করে মৃত্যু এসে যায় আর অসিয়তনামা লেখা না থাকে, তবে ওয়ারিছগণ তার সম্পদ নিজেদের মধ্যে ভাগ-ভাটোয়ারা করে নেবে। হয়তো এমন কোনও সৎকর্মে তার কোনও অংশ খরচ করবে না, যা আখিরাতে তার কাজে আসবে। এমনও হতে পারে যে, সে হয়তো তার সম্পদের অংশবিশেষে অসিয়ত করেছিল, কিন্তু কোনও সাক্ষী নেই। ফলে তার মৃত্যুর পর সে অসিয়ত কার্যকর করা হবে না। যদি লেখা থাকত, তবে কার্যকর করা হতো। সে ক্ষেত্রে লেখাটা সাক্ষীরই বিকল্প বলে গণ্য হতো। তাছাড়া সাক্ষী থাকলেও লিখিত অসিয়তের বাড়তি ফায়দা আছে। তা মৃত্যুর স্মারকরূপে কাজ করে। যখনই অসিয়তনামায় নজর পড়বে, তখনই মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে।
উল্লেখ্য, যদি আল্লাহ তা'আলার বা বান্দার কোনও হক আদায় করা বাকি থাকে, তবে সে হক আদায় সম্পর্কে অসিয়ত করা ফরয ও অবশ্যকর্তব্য। অন্যথায় তা ফরয নয়। তা সত্ত্বেও প্রয়োজনের বেশি সম্পদ থাকলে অসিয়ত করা ভালো, যাতে সে অসিয়ত অনুযায়ী সম্পদের একটা অংশ ভালো কাজে ব্যয় করা হয় এবং মৃত্যুর পর তার আমলনামায় ছাওয়াব লেখা জারি থাকে। সে অসিয়ত লিখে রাখার দ্বারা যেহেতু মৃত্যুর কথাও স্মরণ হয়, তাই এর বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে। সে কারণেই এ হাদীছে এটাকে মুসলিম ব্যক্তির অবশ্যকর্তব্যরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-উপদেশ পালনের ক্ষেত্রে খুবই অগ্রগামী ছিলেন। যেসব কাজ ফরয নয়; বরং নফল পর্যায়ের, সেসব কাজও তিনি সর্বদা গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন। এ হাদীছটিতে যেহেতু অসিয়তনামা সঙ্গে রাখার প্রতি উৎসাহ দান করা হয়েছে, তাই তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এর উপর আমলে যত্নবান থেকেছেন। একটি রাতও তিনি অসিয়তনামা সঙ্গে রাখা ছাড়া কাটাননি। বস্তুত সব সাহাবীই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-উপদেশ মানার ক্ষেত্রে এরকম যত্নবান থাকতেন। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আদর্শ অনুসরণ করা। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেওয়াই যথেষ্ট নয়; ইসলামের দাবি পূরণেও তৎপর থাকতে হবে।
খ. মৃত্যুর দিনক্ষণ কারও জানা নেই। যে-কোনও সময়ই তা হাজির হয়ে যেতে পারে। তাই প্রত্যেকের সর্বক্ষণ এর জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।
গ. অসিয়তপত্র মৃত্যুর এক উত্তম স্মারক। তাই প্রত্যেক মুসলিমের অসিয়তনামা সঙ্গে রাখা দরকার।
ঘ. প্রয়োজনের বেশি সম্পদ থাকলে তার সবটা ওয়ারিছদের জন্য না রেখে অংশবিশেষ কোনও দীনী খাতে খরচ করার জন্য অসিয়ত করে যাওয়া উচিত।
مَا حَقٌّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ (কোনও মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয়)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়, যার বিশ্বাস এ জীবন স্থায়ী নয়, এর পর মৃত্যু আছে, মৃত্যুর পর দীর্ঘকাল কবরে অবস্থান করার রয়েছে, তারপর আখিরাতে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং সেখানে ইহজীবনের যাবতীয় কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে, তার ইসলামের দাবি সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। তার কিছুতেই উচিত নয়...
لَهُ شيءٌ يُوصِي فِيهِ (যার কাছে অসিয়ত করার মতো কিছু আছে)। অর্থাৎ যার কাছে এমন অর্থ-সম্পদ আছে, যে সম্পর্কে চাইলে সে অসিয়ত করতে পারে। তার সম্পদ এত কম নয় যে, তাতে অসিয়ত করা যাবে না, তা করতে গেলে ওয়ারিছদের জন্য কিছু থাকবে না। এরূপ ব্যক্তির কী করণীয়, সে সম্পর্কে সামনে বলা হচ্ছে-
(সেই মুসলিম ব্যক্তির) নিজের কাছে লিখিত অসিয়তপত্র রাখা ছাড়া দু'রাতও কাটানো (উচিত নয়)'। কোন কোন বর্ণনায় আছে তিন রাত্রের কথা। কোন কোন বর্ণনায় আছে দু'রাত্রের কথা। দু'-তিন রাত দ্বারা মূলত অল্পকাল বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সেই মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা এবং সে প্রস্তুতি হিসেবে সর্বদা নিজের কাছে তার সম্পদ সম্পর্কে অসিয়তনামা লিখে রাখা। অসিয়তনামা ছাড়া সে অল্পকালও কাটাবে না। কেননা মৃত্যু তো যে-কোনও সময়ই এসে যেতে পারে। যদি হঠাৎ করে মৃত্যু এসে যায় আর অসিয়তনামা লেখা না থাকে, তবে ওয়ারিছগণ তার সম্পদ নিজেদের মধ্যে ভাগ-ভাটোয়ারা করে নেবে। হয়তো এমন কোনও সৎকর্মে তার কোনও অংশ খরচ করবে না, যা আখিরাতে তার কাজে আসবে। এমনও হতে পারে যে, সে হয়তো তার সম্পদের অংশবিশেষে অসিয়ত করেছিল, কিন্তু কোনও সাক্ষী নেই। ফলে তার মৃত্যুর পর সে অসিয়ত কার্যকর করা হবে না। যদি লেখা থাকত, তবে কার্যকর করা হতো। সে ক্ষেত্রে লেখাটা সাক্ষীরই বিকল্প বলে গণ্য হতো। তাছাড়া সাক্ষী থাকলেও লিখিত অসিয়তের বাড়তি ফায়দা আছে। তা মৃত্যুর স্মারকরূপে কাজ করে। যখনই অসিয়তনামায় নজর পড়বে, তখনই মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে।
উল্লেখ্য, যদি আল্লাহ তা'আলার বা বান্দার কোনও হক আদায় করা বাকি থাকে, তবে সে হক আদায় সম্পর্কে অসিয়ত করা ফরয ও অবশ্যকর্তব্য। অন্যথায় তা ফরয নয়। তা সত্ত্বেও প্রয়োজনের বেশি সম্পদ থাকলে অসিয়ত করা ভালো, যাতে সে অসিয়ত অনুযায়ী সম্পদের একটা অংশ ভালো কাজে ব্যয় করা হয় এবং মৃত্যুর পর তার আমলনামায় ছাওয়াব লেখা জারি থাকে। সে অসিয়ত লিখে রাখার দ্বারা যেহেতু মৃত্যুর কথাও স্মরণ হয়, তাই এর বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে। সে কারণেই এ হাদীছে এটাকে মুসলিম ব্যক্তির অবশ্যকর্তব্যরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-উপদেশ পালনের ক্ষেত্রে খুবই অগ্রগামী ছিলেন। যেসব কাজ ফরয নয়; বরং নফল পর্যায়ের, সেসব কাজও তিনি সর্বদা গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন। এ হাদীছটিতে যেহেতু অসিয়তনামা সঙ্গে রাখার প্রতি উৎসাহ দান করা হয়েছে, তাই তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এর উপর আমলে যত্নবান থেকেছেন। একটি রাতও তিনি অসিয়তনামা সঙ্গে রাখা ছাড়া কাটাননি। বস্তুত সব সাহাবীই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ-উপদেশ মানার ক্ষেত্রে এরকম যত্নবান থাকতেন। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আদর্শ অনুসরণ করা। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেওয়াই যথেষ্ট নয়; ইসলামের দাবি পূরণেও তৎপর থাকতে হবে।
খ. মৃত্যুর দিনক্ষণ কারও জানা নেই। যে-কোনও সময়ই তা হাজির হয়ে যেতে পারে। তাই প্রত্যেকের সর্বক্ষণ এর জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।
গ. অসিয়তপত্র মৃত্যুর এক উত্তম স্মারক। তাই প্রত্যেক মুসলিমের অসিয়তনামা সঙ্গে রাখা দরকার।
ঘ. প্রয়োজনের বেশি সম্পদ থাকলে তার সবটা ওয়ারিছদের জন্য না রেখে অংশবিশেষ কোনও দীনী খাতে খরচ করার জন্য অসিয়ত করে যাওয়া উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)