রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৫৩
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
অর্থ দিয়ে হলেও অন্যকে দীনের প্রতি আকৃষ্ট করা এবং আত্মসম্মান রক্ষা করার চেষ্টা
হাদীছ নং: ৫৫৩
হযরত উমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কিছু লোকের মধ্যে) মাল বণ্টন করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এদের চেয়ে তো অন্যরা এ মালের বেশি হকদার ছিল? তিনি বললেন, তারা আমাকে এখতিয়ার দিয়েছে যে, আমার কাছে পীড়াপীড়ি করে চাইতে থাকবে, ফলে আমি তাদেরকে (তারা যা চায়) তা দেব। অথবা আমাকে কৃপণ ঠাওরাবে। অথচ আমি কৃপণ নই। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ১০৫৬; মুসনাদে আহমাদ: ১২৭; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক : ৫৬৩)
হাদীছ নং: ৫৫৩
হযরত উমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কিছু লোকের মধ্যে) মাল বণ্টন করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এদের চেয়ে তো অন্যরা এ মালের বেশি হকদার ছিল? তিনি বললেন, তারা আমাকে এখতিয়ার দিয়েছে যে, আমার কাছে পীড়াপীড়ি করে চাইতে থাকবে, ফলে আমি তাদেরকে (তারা যা চায়) তা দেব। অথবা আমাকে কৃপণ ঠাওরাবে। অথচ আমি কৃপণ নই। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ১০৫৬; মুসনাদে আহমাদ: ১২৭; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক : ৫৬৩)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
553 - وعن عمر - رضي الله عنه - قَالَ: قسم رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَسْمًا، فَقُلْتُ: يَا رسولَ الله، لَغَيْرُ هؤلاَءِ كَانُوا أحَقَّ بِهِ مِنْهُمْ؟ فَقَالَ: «إنَّهُمْ خَيرُونِي أنْ يَسألُوني بالفُحْشِ، أَوْ يُبَخِّلُونِي، وَلَسْتُ بِبَاخِلٍ». رواه مسلم. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটির বর্ণনায় হযরত উমর রাযি. বলছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোকের মধ্যে গনীমতের মাল বা অন্য কোনওরকমের মাল বণ্টন করেছিলেন আর তাতে তিনি কতককে দিয়েছিলেন এবং কতককে দেননি। তাঁর কাছে মনে হয়েছিল, তিনি যাদেরকে দেননি তারাই পাওয়ার বেশি হকদার ছিল। হয়তো তারা আগে ইসলাম গ্রহণ করেছিল কিংবা দীনদারিতে তারা অগ্রগামী ছিল। তিনি ভেবেছিলেন দীনের দিক থেকে যারা অগ্রসর, অর্থবণ্টনেও তারা অগ্রাধিকার রাখে। তিনি তাঁর এ ধারণার বিষয়টা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেই ফেললেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যাদেরকে দেননি তারাই তো পাওয়ার বেশি হকদার ছিল! এই বলে তিনি মূলত জানতে চেয়েছিলেন কেন তাদেরকে না দিয়ে অন্যদেরকে দেওয়া হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথার উত্তরে বললেন-
إنَّهُمْ خَيَّرُونِي أَنْ يَسْأَلُونِي بالفُحْشِ، أَوْ يُبَخِّلُونِي، فَلَسْتُ ببَاخِلٍ ‘তারা আমাকে এখতিয়ার দিয়েছে যে, আমার কাছে পীড়াপীড়ি করে চাইতে থাকবে, ফলে আমি তাদেরকে (তারা যা চায়) তা দেব। অথবা আমাকে কৃপণ ঠাওরাবে। অথচ আমি কৃপণ নই'। এ এখতিয়ার দেওয়াটা যে কথার মাধ্যমে হয়েছিল তা নয়; বরং তাদের অবস্থা দ্বারা বোঝা যাচ্ছিল যে, তারা চায়, পীড়াপীড়ি করে চাইতে থাকবে, যাতে এক পর্যায়ে আমি দিতে বাধ্য হয়ে যাই। আর যদি না দিই, তবে তারা আমাকে কৃপণ বলবে। অথচ আমি তো কৃপণ নই। অর্থাৎ এস্থলে উভয়সংকট রয়েছে। তাদের পীড়াপীড়ির কারণে যদি তাদেরকে দেওয়া হয়, তবে অন্যদের উপর তাদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আবার না দিলে তারা আমার ইজ্জতের উপর আঘাত করবে; আমাকে কৃপণ ঠাওরাবে। আমি এ দুই সংকটের মধ্যে প্রথমটাই বেছে নিলাম। আমি অন্যদেরকে না দিয়ে তাদেরকেই দিলাম। এতে আশা করা যায় তারা সন্তুষ্ট হবে এবং ক্রমে দীনদারিতে পরিপক্ক হয়ে উঠবে। অন্ততপক্ষে এটা তো হবেই যে, এর দ্বারা আমি দ্বিতীয় সংকট থেকে বেঁচে যাব। তারা আমাকে কৃপণ ঠাওরাতে পারবে না। কৃপণতা একটি মন্দ গুণ। সাধারণ কোনও ভদ্রলোকের জন্যও মানায় না। এ অবস্থায় একজন নবীর জন্য তা কীভাবে মানাতে পারে, যখন তিনি সায়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীনও বটে!
যার দীনদারিতে দুর্বলতা আছে, অর্থ-সম্পদ দিয়ে তাকে সাহায্য করার একটা বিশেষ হিকমত হল দীনের প্রতি তাকে আগ্রহী করে তোলা। নয়তো আশঙ্কা থাকে, তার দুর্বলতা আরও বাড়তে থাকবে এবং এক পর্যায়ে সে পুরোপুরিই বিপথগামী হয়ে যাবে। অপর এক ঘটনায় বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে অর্থসাহায্য করেছিলেন। কিন্তু বিশিষ্ট এক সাহাবীকে কিছুই দেননি। সেখানে হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. উপস্থিত ছিলেন। তিনি এ বিষয়ে কৌতূহল প্রকাশ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন-
يَا سَعْدُ إِنِّي لَأُعْطِي الرَّجُلَ ، وَغَيْرُهُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْهُ، خَشْيَةَ أَنْ يَكُبَّهُ اللَّهُ فِي النَّارِ
‘হে সা'দ! আমি কোনও ব্যক্তিকে দিই। অথচ তার তুলনায় অপর ব্যক্তি আমার কাছে বেশি প্রিয়। তাকে দিই এ ভয়ে, না জানি আল্লাহ তাকে উল্টোমুখো করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন।’(সহীহ বুখারী: ২৭; সহীহ মুসলিম: ১৩১)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অর্থসাহায্যের ক্ষেত্রে সর্বদা দীনদারিতে অগ্রগামিতা বিবেচনা করা জরুরি নয়। বরং দীনদারিতে পিছিয়ে থাকা ব্যক্তিকেও দীনের প্রতি আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে অর্থসাহায্যে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।
খ. মান্যজনের কোনও কাজে মনে প্রশ্ন দেখা দিলে তা তার কাছে প্রকাশ করা চাই, যাতে সে প্রশ্নের নিরসন হয়ে যায়।
গ. কারও কাছে কোনওকিছু পীড়াপীড়ি করে চাইতে নেই।
ঘ. কৃপণতা একটি মন্দ খাসলাত। এর থেকে নিজেকে রক্ষা করা বাঞ্ছনীয়।
ঙ. কারও পক্ষ থেকে সম্মানহানির আশঙ্কা থাকলে টাকা-পয়সা দিয়েও তার মনোরঞ্জন করা যেতে পারে।
إنَّهُمْ خَيَّرُونِي أَنْ يَسْأَلُونِي بالفُحْشِ، أَوْ يُبَخِّلُونِي، فَلَسْتُ ببَاخِلٍ ‘তারা আমাকে এখতিয়ার দিয়েছে যে, আমার কাছে পীড়াপীড়ি করে চাইতে থাকবে, ফলে আমি তাদেরকে (তারা যা চায়) তা দেব। অথবা আমাকে কৃপণ ঠাওরাবে। অথচ আমি কৃপণ নই'। এ এখতিয়ার দেওয়াটা যে কথার মাধ্যমে হয়েছিল তা নয়; বরং তাদের অবস্থা দ্বারা বোঝা যাচ্ছিল যে, তারা চায়, পীড়াপীড়ি করে চাইতে থাকবে, যাতে এক পর্যায়ে আমি দিতে বাধ্য হয়ে যাই। আর যদি না দিই, তবে তারা আমাকে কৃপণ বলবে। অথচ আমি তো কৃপণ নই। অর্থাৎ এস্থলে উভয়সংকট রয়েছে। তাদের পীড়াপীড়ির কারণে যদি তাদেরকে দেওয়া হয়, তবে অন্যদের উপর তাদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আবার না দিলে তারা আমার ইজ্জতের উপর আঘাত করবে; আমাকে কৃপণ ঠাওরাবে। আমি এ দুই সংকটের মধ্যে প্রথমটাই বেছে নিলাম। আমি অন্যদেরকে না দিয়ে তাদেরকেই দিলাম। এতে আশা করা যায় তারা সন্তুষ্ট হবে এবং ক্রমে দীনদারিতে পরিপক্ক হয়ে উঠবে। অন্ততপক্ষে এটা তো হবেই যে, এর দ্বারা আমি দ্বিতীয় সংকট থেকে বেঁচে যাব। তারা আমাকে কৃপণ ঠাওরাতে পারবে না। কৃপণতা একটি মন্দ গুণ। সাধারণ কোনও ভদ্রলোকের জন্যও মানায় না। এ অবস্থায় একজন নবীর জন্য তা কীভাবে মানাতে পারে, যখন তিনি সায়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীনও বটে!
যার দীনদারিতে দুর্বলতা আছে, অর্থ-সম্পদ দিয়ে তাকে সাহায্য করার একটা বিশেষ হিকমত হল দীনের প্রতি তাকে আগ্রহী করে তোলা। নয়তো আশঙ্কা থাকে, তার দুর্বলতা আরও বাড়তে থাকবে এবং এক পর্যায়ে সে পুরোপুরিই বিপথগামী হয়ে যাবে। অপর এক ঘটনায় বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে অর্থসাহায্য করেছিলেন। কিন্তু বিশিষ্ট এক সাহাবীকে কিছুই দেননি। সেখানে হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. উপস্থিত ছিলেন। তিনি এ বিষয়ে কৌতূহল প্রকাশ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন-
يَا سَعْدُ إِنِّي لَأُعْطِي الرَّجُلَ ، وَغَيْرُهُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْهُ، خَشْيَةَ أَنْ يَكُبَّهُ اللَّهُ فِي النَّارِ
‘হে সা'দ! আমি কোনও ব্যক্তিকে দিই। অথচ তার তুলনায় অপর ব্যক্তি আমার কাছে বেশি প্রিয়। তাকে দিই এ ভয়ে, না জানি আল্লাহ তাকে উল্টোমুখো করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন।’(সহীহ বুখারী: ২৭; সহীহ মুসলিম: ১৩১)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অর্থসাহায্যের ক্ষেত্রে সর্বদা দীনদারিতে অগ্রগামিতা বিবেচনা করা জরুরি নয়। বরং দীনদারিতে পিছিয়ে থাকা ব্যক্তিকেও দীনের প্রতি আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে অর্থসাহায্যে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।
খ. মান্যজনের কোনও কাজে মনে প্রশ্ন দেখা দিলে তা তার কাছে প্রকাশ করা চাই, যাতে সে প্রশ্নের নিরসন হয়ে যায়।
গ. কারও কাছে কোনওকিছু পীড়াপীড়ি করে চাইতে নেই।
ঘ. কৃপণতা একটি মন্দ খাসলাত। এর থেকে নিজেকে রক্ষা করা বাঞ্ছনীয়।
ঙ. কারও পক্ষ থেকে সম্মানহানির আশঙ্কা থাকলে টাকা-পয়সা দিয়েও তার মনোরঞ্জন করা যেতে পারে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)