রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৯৫
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়ঃ ৫৬ অনাহারে থাকা, কৃচ্ছতাপূর্ণ জীবনযাপন করা, অল্প পানাহার, অল্প পোশাক ও অল্প ভোগে পরিতুষ্ট থাকা এবং চাহিদা ত্যাগের ফযীলত।
কেমন হতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুটি
হাদীছ নং : ৪৯৫

হযরত সাহল ইবন সা'দ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন নবুওয়াত দান করেন, তখন থেকে তিনি কখনও মিহি আটার রুটি দেখেননি। পরিশেষে এ অবস্থায়ই আল্লাহ তা'আলা তাঁকে তুলে নিয়ে যান। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কি আপনাদের কাছে চালনি ছিল? তিনি বললেন, আল্লাহ তা'আলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন নবুওয়াত দান করেন, তখন থেকে তিনি কখনও চালনি দেখেননি। পরিশেষে এ অবস্থায়ই আল্লাহ তা'আলা তাঁকে তুলে নেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, তাহলে আপনারা আচালা (চালা হয়নি এমন) যব কিভাবে খেতেন? তিনি বললেন, আমরা তা পিষতাম, তারপর ফুঁ দিতাম। তাতে যা উড়ে যাওয়ার তা যেত। তারপর যা বাকি থাকত তা পানিতে মিশিয়ে খেতাম - বুখারী।
مقدمة الامام النووي
56 - باب فضل الجوع وخشونة العيش والاقتصار على القليل من المأكول والمشروب والملبوس وغيرها من حظوظ النفس وترك الشهوات
495 - وعن سهلِ بن سعد - رضي الله عنه - قَالَ: مَا رَأى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - النَّقِيَّ مِنْ حِين ابْتَعَثَهُ الله تَعَالَى حَتَّى قَبضَهُ الله تَعَالَى. فقِيلَ لَهُ: هَلْ كَانَ لَكُمْ في عَهدِ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مَنَاخِلُ؟ قَالَ: مَا رَأى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مُنْخُلًا مِنْ حِينَ ابْتَعَثَهُ اللهُ تَعَالَى حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ تَعَالَى، فَقِيلَ لَهُ: كَيْفَ كُنْتُمْ تَأكُلُونَ الشَّعِيرَ غَيْرَ مَنْخُولٍ؟ قَالَ: كُنَّا نَطحَنُهُ وَنَنْفُخُهُ، فيَطيرُ مَا طَارَ، وَمَا بَقِيَ ثَرَّيْنَاهُ. رواه البخاري. (1) [ص:171]
قَوْله: «النَّقِيّ» هُوَ بفتح النون وكسر القاف وتشديد الياءِ: وَهُوَ الخُبْزُ الحُوَّارَى، وَهُوَ: الدَّرْمَكُ. قَوْله: «ثَرَّيْنَاهُ» هُوَ بثاء مثلثة، ثُمَّ راء مشددة، ثُمَّ يَاءٍ مُثَنَّاة من تَحْت ثُمَّ نون، أيْ: بَللْنَاهُ وَعَجَنَّاهُ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে হযরত সাহল ইবন সা'দ রাযি. আমাদের জানাচ্ছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত লাভের পর থেকে ওফাত পর্যন্ত কখনও মিহি আটার রুটি দেখেননি। নবুওয়াত লাভের আগে হয়তো দেখে থাকবেন। কেননা তখন তিনি একাধিকবার শাম এলাকায় সফর করেছেন। তখন শাম ছিল রোমানদের অধীন। তারা মিহি আটার রুটি খাওয়াতে অভ্যস্ত ছিল। কাজেই ওই এলাকায় যখন তিনি একাধিকবার গিয়েছেন, তখন ওখানে প্রচলিত খাবার-দাবারও তাঁর চোখে পড়ারই কথা।

হযরত সাহল রাযি. আরও বলছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত লাভের পর থেকে কখনও চালনি দেখেননি। তার মানে তিনি যে আটার রুটি খেতেন তা কখনও চালা হতো না। সাধারণত যবের রুটিই খেতেন। যব ভাঙানোর পর তার দানা গমের আটার মতো মিহি হয় না। সঙ্গে মোটা মোটা ভূসি থেকে যায়। ভুসিসহ সে আটা খাওয়া অনেক কঠিন। তাই প্রশ্ন জাগে, যদি না-ই চালা হয় তবে ভুসিসহ যবের আটা কিভাবে খাওয়া সম্ভব হতো? হযরত সাহল রাযি.-কে সে প্রশ্ন করাও হল। তিনি উত্তরে বললেন-
(আমরা তা পিষতাম, তারপর ফুঁ দিতাম। তাতে যা উড়ে যাওয়ার তা উড়ে যেত। তারপর যা বাকি থাকত তা পানিতে মিশিয়ে খেতাম)। বোঝাই যাচ্ছে চালনি দ্বারা চাললে যেমন সবটা ভূসি আলাদা হয়ে যায়, ফুঁ দেওয়ার দ্বারা তা কখনওই হতো না। আটার সঙ্গে অনেক ভুসি থেকেই যেত। সেই ভুসিযুক্ত যবের আটাই তাঁরা খেতেন। আজ কেউ তা খাবে না। খেলে তা হজমও হবে না। কিন্তু তাঁদের হজম হতো। তাঁরা কষ্টসহিষ্ণুতায় অভ্যস্ত ছিলেন। তাঁদের পক্ষে এসব সম্ভব ছিল। সম্ভব ছিল বলেই যে-কোনও পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পারতেন। অতি অল্প সময়ের ভেতর রোম, পারস্য, আফ্রিকা, স্পেন জয় করে ফেলার পেছনে সন্দেহ নেই এ কষ্টসহিষ্ণুতারও একটা ভূমিকা ছিল। আজ যে আমাদের দ্বারা তেমন কিছুই হয় না, বিলাসপ্রিয়তাও তার একটা কারণ বৈকি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

পানাহারে কষ্টসহিষ্ণুতা ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের শান। আমাদেরও তা রপ্ত করা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৪৯৫ | মুসলিম বাংলা