রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৯২
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়ঃ ৫৬ অনাহারে থাকা, কৃচ্ছতাপূর্ণ জীবনযাপন করা, অল্প পানাহার, অল্প পোশাক ও অল্প ভোগে পরিতুষ্ট থাকা এবং চাহিদা ত্যাগের ফযীলত।
নবী-জীবনে খাদ্যাভাব ও হযরত আবূ হুরায়রা রাযি.-এর একটি ঘটনা
হাদীছ নং : ৪৯২

আবু সাঈদ মাকবুরী রহ. থেকে বর্ণিত যে, হযরত আবু হুরায়রা রাযি. একদা একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদের সামনে একটি ভুনা ছাগল রাখা ছিল। তারা তাঁকে আহ্বান জানাল। কিন্তু তিনি খেতে অস্বীকার করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, অথচ তিনি কখনও পেট ভরে যবের রুটিও খেতে পারেননি - বুখারী ।
مقدمة الامام النووي
56 - باب فضل الجوع وخشونة العيش والاقتصار على القليل من المأكول والمشروب والملبوس وغيرها من حظوظ النفس وترك الشهوات
492 - وعن أَبي سعيد المقبُريِّ، عن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أَنَّهُ مَرَّ بِقَومٍ بَيْنَ أيدِيهمْ شَاةٌ مَصْلِيَّةٌ، فَدَعَوْهُ فَأبَى أَنْ يأْكُلَ. وقال: خرج رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مِنَ الدُّنْيَا وَلَمْ يَشْبَعْ مِنْ خُبْزِ الشَّعيرِ. رواه البخاري. (1)
«مَصْلِيَّةٌ» بفتح الميم: أيْ مَشْوِيَّةٌ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. ভুনা ছাগল খেতে অস্বীকার করেছেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা মনে পড়ে যাওয়ায়। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. নিজেও নিতান্ত গরীব ছিলেন। মসজিদে নববীর সুফ্ফায় অবস্থান করতেন। কোনও খাবার আসলে খেতেন, নয়তো অভুক্তই থাকতেন। তিনি দেখেছেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিবারাত্র কেমন অনাহারে অর্ধাহারে কাটত। সব সাহাবীই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আশেক ছিলেন। প্রাণের চেয়েও বেশি তাঁকে ভালোবাসতেন। আমৃত্যু সে ভালোবাসা বুকে লালন করেছেন। তাঁদের পরবর্তী জীবনে সচ্ছলতা আসলেও বিলাসিতায় তাঁরা গা ভাসাননি।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. তো সেই আশেকদেরই একজন। কাজেই তাঁকে যখন ভুনা ছাগল খেতে আহ্বান জানানো হল, তাঁর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদ্যাভাবের কথা মনে পড়ে গেল। কোন আশেকের পক্ষে তার মা'শুকের খাদ্যকষ্টের কথা ভোলা সম্ভব? সম্ভব কি সে কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও কোনও আয়েশী খাবারের স্বাদ গ্রহণ করা? সুতরাং হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. তা খেতে অস্বীকার করলেন। আর তার কারণ বর্ণনা করলেন যে- (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, অথচ তিনি কখনও পেট ভরে যবের রুটিও খেতে পারেননি)। যবের রুটি অতি সাধারণ খাবার। গমের রুটির মত তা মসৃণ হয় না। সেই সাধারণ খাবারও যখন তিনি পেট ভরে খেয়ে যেতে পারেননি, তখন আমি আবূ হুরায়রার পক্ষে কিভাবে আজ ভুনা গোশত খাওয়া সম্ভব?

প্রকাশ থাকে যে, আস্ত ছাগল ভুনা করে খাওয়া নাজায়েয নয়। নাজায়েয হলে হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. নিজে না খেয়েই ক্ষান্ত হতেন না; বরং তাদেরও নিষেধ করতেন। তাঁর নিজের না খাওয়াটা ছিল কেবলই নবীপ্রেমের অভিব্যক্তি। নাজায়েয ছিল এরকম নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সচ্ছল ব্যক্তির জন্য উপাদেয় ও দামি খাবার খাওয়াতে কোনও দোষ নেই।

খ. খাবার খাওয়ার সময় কোনও আগুন্তুকের দেখা পেলে তাকে শরীক হতে অনুরোধ জানানো চাই।

গ. বিশেষ কারণে দাওয়াত গ্রহণ না করার অবকাশ আছে।

ঘ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কখনও পেট ভরে না খাওয়ার ভেতর অভাবগ্রস্তের জন্য সান্ত্বনা ও সচ্ছলদের জন্য শোকরগুযারীর শিক্ষা রয়েছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৪৯২ | মুসলিম বাংলা