রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৬০
অধ্যায়ঃ ৫৫ দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্তির ফযীলত, অল্পেতুষ্টির প্রতি উৎসাহদান ও দারিদ্র্যের মাহাত্ম্য।
মৃত ব্যক্তি যা সঙ্গে নিয়ে যায়
হাদীছ নং : ৪৬০
আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মায়্যিতের পেছনে পেছনে যায় তিনটি জিনিস- তার পরিবার-পরিজন, তার সম্পদ ও তার আমল। তারপর দু'টি ফিরে আসে, থেকে যায় একটি। ফিরে আসে তার পরিবার-পরিজন ও সম্পদ, আর থেকে যায় কেবল তার আমল - বুখারী ও মুসলিম।
হাদীছ নং : ৪৬০
আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মায়্যিতের পেছনে পেছনে যায় তিনটি জিনিস- তার পরিবার-পরিজন, তার সম্পদ ও তার আমল। তারপর দু'টি ফিরে আসে, থেকে যায় একটি। ফিরে আসে তার পরিবার-পরিজন ও সম্পদ, আর থেকে যায় কেবল তার আমল - বুখারী ও মুসলিম।
55 - باب فضل الزهد في الدنيا والحث على التقلل منها وفضل الفقر
460 - وعنه، عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلاَثَةٌ: أهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ: فَيَرْجِعُ اثْنَانِ، وَيَبْقَى وَاحِدٌ: يَرْجِعُ أهْلُهُ وَمَالُهُ وَيبْقَى عَمَلُهُ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
মৃত্যুর পর মানুষের ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজন কিছুই কবরে যায় না। সে তার কবরে নিয়ে যায় কেবল তার আমল। ভালো ও মন্দ সব আমলই। আমল ভালো হলে কবরে তা উপকারে আসে। নেক আমল সুন্দর আকৃতিবিশিষ্ট ব্যক্তির বেশে নিঃসঙ্গ কবরে তাকে সঙ্গ দেয়। এমনিভাবে নেক আমলের বদৌলতে কবরে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দেওয়া হয় এবং জান্নাতের সঙ্গে কবরের দরজা খুলে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে আমল মন্দ হলে কবরে দুর্বিষহ শাস্তি ভোগ করতে হয়।
ধন-সম্পদ যেহেতু কবরে যায় না, তাই ধন-সম্পদের মোহে পড়ে কবর ও আখিরাতের জীবন বরবাদ করা উচিত নয়। তা বরবাদ হয় অন্যায় পথে হালাল-হারাম নির্বিচারে সম্পদ কুড়ানোর দ্বারা। এমনিভাবে খরচের বেলায় যদি শরী'আতের নির্দেশনা পালন না করা হয় এবং যাকাত-ফিতরাসহ সম্পদের অন্যান্য হক যদি আদায় করা না হয়, তাতেও আখিরাত বরবাদ হয়। এক হাদীছে আছে
من آتاه الله مالا، فلم يؤد زكاته، مثل له ماله يوم القيامة شجاعا أقرع، له زبيبتان يطوقه يوم القيامة، ثم يأخذ بلهزمتيه يعني بشدقيه، ثم يقول: أنا مالك أنا كنزك، ثم تلا: «لا يحسبن الذين يبخلون»
'যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা'আলা সম্পদ দিয়েছেন কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে লম্বা দাঁতবিশিষ্ট বা কালো দাঁতবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি বানিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার গলায় পেঁচিয়ে ধরবে এবং তার চোয়াল কামড়ে ধরবে। তারপর বলবে আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার ধনভাণ্ডার । এই বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াত পাঠ করেন
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
(আল্লাহপ্রদত্ত অনুগ্রহে (সম্পদে) যারা কৃপণতা করে, তারা যেন কিছুতেই মনে না করে, এটা তাদের জন্য ভালো কিছু। বরং এটা তাদের পক্ষে অতি মন্দ। যে সম্পদের ভেতর তারা কৃপণতা করে, কিয়ামতের দিন তাকে তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে – সূরা আলে ‘ইমরান, আয়াত ১৮০)।
এমনিভাবে কারও ছেলে-মেয়ে ও পরিবার-পরিজনও তার সঙ্গে কবরে যাবে না। তাই তাদের খাতিরে নিজ পরকাল ধ্বংস করা বুদ্ধির কাজ নয়। যদি তাদেরকে দীনদাররূপে গড়ে তোলা না হয়, তাদের খেয়াল-খুশিমত চলতে দেওয়া হয় এবং তাদের দীনী হক আদায়ে অবহেলা করা হয়, তাতে কেবল তাদেরই ক্ষতি হয় না;নিজেরও দীন-দুনিয়া বরবাদ হয়। এরূপ ছেলে-মেয়ে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলার দরবারে এই বলে ফরিয়াদ জানাবে যে
رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا
হে আমাদের প্রতিপালক! প্রকৃতপক্ষে আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও আমাদের গুরুজনদের আনুগত্য করেছিলাম, তারাই আমাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করেছে। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের প্রতি লানত করুন, মহা লানত।
সঙ্গে যেহেতু যাবে কেবল আমল এবং কবর ও হাশরে কেবল নেক আমলই উপকারে আসবে, তাই প্রত্যেকের উচিত বেশি বেশি নেক আমলে মনোযোগী হওয়া। নামায-রোযার পাশাপাশি হালাল পথে উপার্জন করা ও হালাল পথে খরচ করা এবং অর্থ-সম্পদ দ্বারা আল্লাহর মাখলূকের সেবা করাও অনেক বড় নেক আমল। সন্তানকে দীনদাররূপে গড়ে তোলা পিতা-মাতার জন্য সদাকায়ে জারিয়াস্বরূপ, যা কবরে ও হাশরে প্রভূত উপকারে আসবে।
সুতরাং ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজন কবরে যাবে না বলে হাদীছে এর প্রতি নিরুৎসাহ করা হয়েছে এমন নয়; বরং এর প্রতি সংশ্লিষ্টতা যাতে কবরে ও হাশরে ক্ষতির কারণ না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আমল সঙ্গে যাবে বলে এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে যে, অর্থোপার্জন ও সন্তান প্রতিপালনে শরী'আতের সীমারেখা মেনে চলা হলে এর প্রতি সংশ্লিষ্টতাও নেক আমলরূপে গণ্য হবে এবং অন্যান্য নেক আমলের মত এই নেক আমলও পরকালে উপকার বয়ে আনবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদসহ দুনিয়ার সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। এর জন্য আখিরাতের স্থায়ী জীবন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সতর্কতা জরুরি।
খ. কবর ও হাশরে কেবল সৎকর্মই উপকারে আসে। তাই পার্থিব জীবনের যাবতীয় সংশ্লিষ্টতা যাতে সৎকর্মরূপে হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে।
ধন-সম্পদ যেহেতু কবরে যায় না, তাই ধন-সম্পদের মোহে পড়ে কবর ও আখিরাতের জীবন বরবাদ করা উচিত নয়। তা বরবাদ হয় অন্যায় পথে হালাল-হারাম নির্বিচারে সম্পদ কুড়ানোর দ্বারা। এমনিভাবে খরচের বেলায় যদি শরী'আতের নির্দেশনা পালন না করা হয় এবং যাকাত-ফিতরাসহ সম্পদের অন্যান্য হক যদি আদায় করা না হয়, তাতেও আখিরাত বরবাদ হয়। এক হাদীছে আছে
من آتاه الله مالا، فلم يؤد زكاته، مثل له ماله يوم القيامة شجاعا أقرع، له زبيبتان يطوقه يوم القيامة، ثم يأخذ بلهزمتيه يعني بشدقيه، ثم يقول: أنا مالك أنا كنزك، ثم تلا: «لا يحسبن الذين يبخلون»
'যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা'আলা সম্পদ দিয়েছেন কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে লম্বা দাঁতবিশিষ্ট বা কালো দাঁতবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি বানিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার গলায় পেঁচিয়ে ধরবে এবং তার চোয়াল কামড়ে ধরবে। তারপর বলবে আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার ধনভাণ্ডার । এই বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াত পাঠ করেন
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
(আল্লাহপ্রদত্ত অনুগ্রহে (সম্পদে) যারা কৃপণতা করে, তারা যেন কিছুতেই মনে না করে, এটা তাদের জন্য ভালো কিছু। বরং এটা তাদের পক্ষে অতি মন্দ। যে সম্পদের ভেতর তারা কৃপণতা করে, কিয়ামতের দিন তাকে তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে – সূরা আলে ‘ইমরান, আয়াত ১৮০)।
এমনিভাবে কারও ছেলে-মেয়ে ও পরিবার-পরিজনও তার সঙ্গে কবরে যাবে না। তাই তাদের খাতিরে নিজ পরকাল ধ্বংস করা বুদ্ধির কাজ নয়। যদি তাদেরকে দীনদাররূপে গড়ে তোলা না হয়, তাদের খেয়াল-খুশিমত চলতে দেওয়া হয় এবং তাদের দীনী হক আদায়ে অবহেলা করা হয়, তাতে কেবল তাদেরই ক্ষতি হয় না;নিজেরও দীন-দুনিয়া বরবাদ হয়। এরূপ ছেলে-মেয়ে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলার দরবারে এই বলে ফরিয়াদ জানাবে যে
رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا
হে আমাদের প্রতিপালক! প্রকৃতপক্ষে আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও আমাদের গুরুজনদের আনুগত্য করেছিলাম, তারাই আমাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করেছে। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের প্রতি লানত করুন, মহা লানত।
সঙ্গে যেহেতু যাবে কেবল আমল এবং কবর ও হাশরে কেবল নেক আমলই উপকারে আসবে, তাই প্রত্যেকের উচিত বেশি বেশি নেক আমলে মনোযোগী হওয়া। নামায-রোযার পাশাপাশি হালাল পথে উপার্জন করা ও হালাল পথে খরচ করা এবং অর্থ-সম্পদ দ্বারা আল্লাহর মাখলূকের সেবা করাও অনেক বড় নেক আমল। সন্তানকে দীনদাররূপে গড়ে তোলা পিতা-মাতার জন্য সদাকায়ে জারিয়াস্বরূপ, যা কবরে ও হাশরে প্রভূত উপকারে আসবে।
সুতরাং ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজন কবরে যাবে না বলে হাদীছে এর প্রতি নিরুৎসাহ করা হয়েছে এমন নয়; বরং এর প্রতি সংশ্লিষ্টতা যাতে কবরে ও হাশরে ক্ষতির কারণ না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আমল সঙ্গে যাবে বলে এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে যে, অর্থোপার্জন ও সন্তান প্রতিপালনে শরী'আতের সীমারেখা মেনে চলা হলে এর প্রতি সংশ্লিষ্টতাও নেক আমলরূপে গণ্য হবে এবং অন্যান্য নেক আমলের মত এই নেক আমলও পরকালে উপকার বয়ে আনবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদসহ দুনিয়ার সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। এর জন্য আখিরাতের স্থায়ী জীবন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সতর্কতা জরুরি।
খ. কবর ও হাশরে কেবল সৎকর্মই উপকারে আসে। তাই পার্থিব জীবনের যাবতীয় সংশ্লিষ্টতা যাতে সৎকর্মরূপে হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
