রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৩৫
আল্লাহর কাছে আশাবাদী থাকা
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি হদের উপযুক্ত অপরাধ করেছি। সুতরাং আমার উপর হদ্দ কার্যকর করুন। এদিকে নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেল। সেই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে নামায পড়ল। নামায আদায় করার পর সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি হদের উপযুক্ত অপরাধ করে ফেলেছি। আপনি আমার উপর আল্লাহর বিধান কার্যকর করুন। তিনি বললেন, তুমি কি আমাদের সঙ্গে নামাজে উপস্থিত ছিলে? সে বলল, হাঁ। তিনি বললেন, তোমাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে - বুখারী ও মুসলিম।
51 - باب الرجاء
435 - وعن أنس - رضي الله عنه - قَالَ: جاء رجل إِلَى النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: يَا رَسُول الله، أَصَبْتُ حَدًّا، فَأَقِمْهُ عَلَيَّ، وَحَضَرَتِ الصَّلاةُ، فَصَلَّى مَعَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - فَلَمَّا قَضَى الصَّلاةَ، قَالَ: يَا رَسُول الله، إنِّي أصَبْتُ حَدًّا فَأقِمْ فيَّ كِتَابَ الله. قَالَ: «هَلْ حَضَرْتَ مَعَنَا الصَّلاةَ»؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: «قَدْ غُفِرَ لَكَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وقوله: «أصَبْتُ حَدًّا» مَعنَاهُ: مَعْصِيَةً تُوجِبُ التَّعْزيرَ، وَلَيْسَ المُرَادُ الحدّ الشَّرعيَّ الحَقِيقيَّ كَحَدِّ الزِّنَا وَالخمر وَغَيرِهِمَا، فإنَّ هذِهِ الحُدودَ لا تَسْقُطُ بالصَّلاةِ، وَلاَ يَجُوزُ للإمَامِ تَرْكُهَا.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে যে সাহাবীর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, তিনি এতটাই অস্থির হয়ে পড়েছিলেন যে, নিজ অপরাধকে হদ্দের উপযুক্ত গণ্য করে ফেলেন। হদ্দ বলা হয় শরী'আত প্রদত্ত সুনির্দিষ্ট শাস্তি, যেমন চুরির ক্ষেত্রে হাত কাটা, ব্যভিচারের ক্ষেত্রে বিবাহিত হলে পাথর মেরে হত্যা করা, অবিবাহিত হলে একশ দোররা মারা। অথচ তিনি এ পর্যায়ের পাপ করেননি।

ইমাম নববী রহ. বলেন, اصبت حدا (আমি হদ্দের উপযুক্ত অপরাধ করেছি)-এর অর্থ এমন অপরাধ, যে কারণে তা'যীর (বিচারকের বিবেচনা অনুযায়ী উপযুক্ত শাস্তি) আরোপিত হয়। এর দ্বারা প্রকৃত শরী'আতী হদ্দ (সুনির্দিষ্ট শাস্তি) বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। যেমন ব্যভিচারের শাস্তি মদপানের শাস্তি ইত্যাদি। কেননা এসকল শাস্তি নামায দ্বারা রহিত হয় না এবং ইমামের জন্য তা মওকুফ করাও জায়েয হয় না।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু তার উপর হদ্দ জারি করেননি; বরং তাকে এই বলে আশ্বস্ত করেছেন যে, নামায পড়ার দ্বারা আল্লাহ তা'আলা তার গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন, তাই বোঝা যাচ্ছে তার দ্বারা চূড়ান্ত পর্যায়ের গুনাহ হয়নি। তিনি তার কৃত গুনাহকে প্রকৃত অবস্থার চেয়েও কঠিনরূপে দেখেছেন নিজ অনুশোচনার তীব্রতা ও আল্লাহভীতির গভীরতার কারণে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. গুনাহ সগীরা হোক বা কবীরা, কোনওটাতেই জড়ানো উচিত নয়। কেননা আল্লাহ তা ঘৃণা করেন। আর এ কারণেই নিজ দয়ায় তিনি তা মোচনের ব্যবস্থা করেছেন।

খ. যে-কোনও পাপকর্ম হয়ে যাওয়ার পর নিশ্চিন্তে বসে থাকতে নেই। আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার আশায় অতিদ্রুত লজ্জা ও অনুতাপের সঙ্গে তাওবা করে ফেলা চাই।

গ. পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ে যত্নবান থাকা চাই। কেননা এ নামায আমাদের পাপমোচনের ব্যবস্থাও বটে।

ঘ. এ হাদীছ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তির ব্যাপারে আমাদের আশান্বিত করে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)