রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৪০২
আল্লাহর ভয়
হাশরের ময়দানে সূর্য কাছাকাছি চলে আসা
হাদীছ নং: ৪০২

হযরত মিকদাদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সূর্যকে মাখলুকের এত কাছাকাছি নিয়ে আসা হবে যে, তা তাদের থেকে মাত্র এক মীলের ব্যবধানে থাকবে। হযরত মিকদাদ রাযি. থেকে বর্ণনাকারী সুলায়ম ইবন আমির বলেন, আল্লাহর কসম! আমি জানি না ‘মীল’ দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে— ভূমির দূরত্ব (মাইল), নাকি চোখে সুরমা লাগানোর শলাকা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর মানুষ তাদের আমল অনুপাতে ঘামের মধ্যে থাকবে। তাদের মধ্যে কেউ থাকবে তার দু'পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত, কেউ থাকবে হাঁটু পর্যন্ত, কেউ কোমর পর্যন্ত এবং কেউ এমন হবে যে, ঘাম তার মুখ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এই বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ মুখের দিকে ইঙ্গিত করলেন -মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৮৬৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৪২১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৭৩৩০; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৬০২; শুআবুল ঈমান, হাদীছ ন ২৫৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪১৬)
50 - باب الخوف
402 - وعن المقداد - رضي الله عنه - قَالَ: سمِعْتُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «تُدْنَى الشَّمْسُ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنَ الخَلْقِ حَتَّى تَكُونَ مِنْهُمْ كَمِقْدَارِ مِيلٍ». قَالَ سُلَيْم بنُ عامِر الراوي عن المقداد: فَوَاللهِ مَا أَدْرِي مَا يَعني بِالمِيلِ، أمَسَافَةَ الأرضِ أَمِ المِيلَ الَّذِي تُكْتَحَلُ بِهِ [ص:145] العَيْنُ؟ قَالَ: «فَيكُونُ النَّاسُ عَلَى قَدْرِ أَعْمَالِهِمْ في العَرَقِ، فَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى كَعْبَيْهِ، ومنهم مَن يكُون إِلَى رُكبتَيه، ومنهم مَنْ يَكُونُ إِلَى حِقْوَيْهِ (1)، وَمِنْهُمْ مَنْ يُلْجِمُهُ العَرَقُ إلْجَامًا». قَالَ: وَأَشَارَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - بيدهِ إِلَى فِيهِ. رواه مسلم. (2)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে মূলত দু'টি বিষয় জানানো হয়েছে।
ক. হাশরের ময়দানে সূর্য মানুষের খুব কাছাকাছি চলে আসবে।
খ. হাশরের ময়দানে মানুষের শরীরের ঘাম এতবেশি পরিমাণে জমা হয়ে যাবে যে, তার মধ্যে আমল অনুপাতে একেকজনের শরীর একেক পরিমাণ ডুবে যাবে।

দু'টো বিষয়ই জানানোর উদ্দেশ্য সেদিনের বিভীষিকা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, যাতে উম্মত এখনই সাবধান হয়ে যায় এবং সেদিন যাতে আল্লাহ তাআলার রহমতের ছায়া পাওয়া যায়, সে উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ পালনের মধ্য দিয়ে ইহজীবন কাটায়।

উল্লেখ্য, ঘামের মধ্যে ডোবার বিষয়টি সকলের জন্য নয়। নবী-রাসূলদের জন্য তো নয়ই। তাছাড়া এমন অনেক লোকও থাকবে, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা তাঁর আরশের ছায়ায় জায়গা দেবেন। তাদেরও ঘামের মধ্যে থাকার প্রশ্ন আসে না। ঘামের মধ্যে ডুববে এক তো কাফেরগণ, দ্বিতীয়ত ওই সকল মুমিন, যারা বিভিন্ন পাপকর্মে লিপ্ত থেকে তাওবা ছাড়াই মারা যাবে। তাওবা কবুলের বিভিন্ন শর্ত আছে, যা 'তাওবা' অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে। কাজেই যারা বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত, তাদের হুঁশিয়ার হওয়া দরকার। তাদের উচিত অবিলম্বে যথাযথ শর্তপূরণের সঙ্গে খালেস তাওবা করে নেওয়া, যাতে হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাআলা নিজ দয়ায় তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করেন।

প্রকাশ থাকে যে, হাশরের ময়দান অদৃশ্য জগতের অংশ। সে জগৎ সম্পর্কে পুরোপুরি জানা যাবে তখনই, যখন সে জগতে যাওয়া হবে। তার আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতটুকু জানিয়েছেন অতটুকুতে ক্ষান্ত থাকাই কর্তব্য। তার বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে যাওয়া সমীচীন নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

হাশর-ময়দানের পরিস্থিতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। সে ভয়ে ভীত থেকে শরীআত মোতাবেক জীবনযাপন করা কর্তব্য, যাতে সেদিন আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় পাওয়া যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)