রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৮৪
আল্লাহর জন্য ভালোবাসার ফযীলত, এর প্রতি উৎসাহদান এবং কেউ কাউকে ভালোবাসলে তাকে সে সম্পর্কে অবহিত করা আর তাকে তা অবহিত করা হলে জবাবে সে যা বলবে।
কাউকে মহব্বত করলে তাকে তা জানানো
হাদীছ নং: ৩৮৪

হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বললেন, হে মু'আয! আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে ভালোবাসি । অতঃপর হে মু'আয! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি প্রত্যেক নামাযের পর অবশ্যই বলবে- اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ 'হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার যিকর, আপনার শোকর এবং উত্তমরূপে আপনার ইবাদত করতে সাহায্য করুন' – আবূ দাউদ ও নাসাঈ।
সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৫২২; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২১১৯; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৬৯০; সহীহ ইবনে খুজায়মা, হাদীছ নং ৭৫১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ২০২০; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ১১০; বায়হাকী, আস্ সুনানুস সগীর, হাদীছ নং ১৮
46 - باب فضل الحب في الله والحث عَلَيهِ وإعلام الرجل من يحبه، أنه يحبه، وماذا يقول لَهُ إِذَا أعلمه
384 - وعن معاذ - رضي الله عنه: أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - أخذ بيدهِ، وَقالَ: «يَا مُعَاذُ، وَاللهِ، إنِّي لأُحِبُّكَ، ثُمَّ أُوصِيكَ يَا مُعَاذُ، لاَ تَدَعَنَّ في دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ تَقُولُ: اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ». حديث صحيح، رواه أَبُو داود والنسائي بإسناد صحيح. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটির মূল বিষয় হলো, কেউ কাউকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসলে তাকে তা জানিয়ে দেওয়া চাই।
হাদীছে জানানো হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ আমল করেছেন। তিনি হযরত মুআয রাযি.-কে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। সেইসঙ্গে তিনি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ একটি দু'আও শিখিয়ে দেন। দু'আটি হচ্ছে-

اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ

(হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার যিকর, আপনার শোকর এবং উত্তমরূপে আপনার ইবাদত করতে সাহায্য করুন)।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে কুরআন তিলাওয়াতসহ আপনার সর্বপ্রকার যিকর ও স্মরণে মশগুল থাকতে সাহায্য করুন। আমাকে সাহায্য করুন আপনার প্রকাশ্য, গুপ্ত, দীনী ও দুনিয়াবী অসংখ্য-অগণিত নি'আমতের শোকর আদায় করতে। আর আমি যাতে নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাতসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগী পরিপূর্ণ নিয়ম-নীতি ও আদব-কায়দা সহকারে গভীর মনোযোগের সঙ্গে আদায় করতে পারি, সে ব্যাপারেও আমাকে সাহায্য করুন।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবী হযরত মু'আয রাযি.- কে প্রত্যেক ফরয নামাযের পর এ দু'আটি পড়তে উপদেশ দিয়েছেন। তাঁর অনুসরণে আমাদেরও এটি নিয়মিত পড়া উচিত।

ভালোবাসার ব্যক্তিকে ভালোবাসা সম্পর্কে অবহিত করা, এ নববী শিক্ষাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা জানা যায়, আল্লাহর জন্য পরস্পরে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা ঈমানের দাবি। এর দ্বারা ঈমান পরিপূর্ণতা পায়। তবে এক মুসলিমের অন্য মুসলিমকে ভালোবাসলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। সে ভালোবাসাকে স্থায়ী ও গভীর করার চেষ্টাও জরুরি। অন্যথায় যে-কোনও সময় সে সম্পর্ক ভেঙ্গেও যেতে পারে; বরং তার পরিবর্তে জন্ম নিতে পারে শত্রুতা, যা ঈমান-আমলের জন্য ধ্বংসাত্মক।

যেসব কাজ দ্বারা পারস্পরিক মহব্বত ও ভালোবাসা অধিকতর গভীর ও স্থায়ী হয়, তার একটি হচ্ছে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেওয়া। এতে করে যাকে ভালোবাসা হয় সে খুশি হয়। তাতে তার অন্তরেও ভালোবাসা জন্মায়। ভালোবাসা যখন উভয়দিক থেকেই হয়, তখন তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায় এবং তা সাধারণত স্থায়ী হয়।

হাদীছ থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যাকে ভালোবাসা হয় তাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেওয়া চাই।

খ. যাকে ভালোবাসার কথা জানানো হয়, তার উচিত সে ভালোবাসার মূল্যায়ন করা।

গ. ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধও যে ইসলামী শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এ হাদীছ দ্বারা তা উপলব্ধি করা যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৩৮৪ | মুসলিম বাংলা