রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৬৩
নেককার লোকদের সঙ্গে সাক্ষাত করা, তাদের মজলিসে বসা, তাদের সাহচর্য গ্রহণ করা, তাদেরকে ভালোবাসা, তাদের সাক্ষাত প্রার্থনা করা, তাদের কাছে দু'আ চাওয়া এবং মর্যাদাপূর্ণ স্থানসমূহের যিয়ারত করা।
ভালো সঙ্গী ও মন্দ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত
হাদীছ নং : ৩৬৩

হযরত আবূ মূসা আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, উত্তম সঙ্গী ও মন্দ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হলো মিশক ব্যবসায়ী ও হাপর চালনাকারী (কামার) এর মত। মিশক ব্যবসায়ী হয় তোমাকে এমনি কিছুটা দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে তা কিনবে কিংবা তুমি তার কাছ থেকে সুঘ্রাণ পাবে। আর হাপর চালনাকারী হয় তোমার কাপড় পুড়ে ফেলবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে –বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৫৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬২৮; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৮২৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৯৬২৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪৮১৯; মুসনাদে আবূ ইয়ালা, হাদীছ নং ৭২৭০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫৬১; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১১২৬
45 - باب زيارة أهل الخير ومجالستهم وصحبتهم ومحبتهم وطلب زيارتهم والدعاء منهم وزيارة المواضع الفاضلة
363 - وعن أَبي موسى الأشعري - رضي الله عنه - أن النبي - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إِنَّمَا مَثلُ الجَلِيسِ الصَّالِحِ وَجَلِيسِ السُّوءِ، كَحَامِلِ المِسْكِ، وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ: إمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ، وَإمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ ريحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الكِيرِ: إمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا مُنْتِنَةً». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
(يُحْذِيكَ): يُعْطِيكَ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে সৎসঙ্গীকে আতরওয়ালার সঙ্গে এবং অসৎসঙ্গীকে কামারের সঙ্গে তুলনা করে বোঝানো হচ্ছে মানুষের জীবনে ভালোমন্দ সঙ্গীর কিছু না কিছু প্রভাব পড়েই। তা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়। কাজেই প্রত্যেকের কর্তব্য ভালো সঙ্গী গ্রহণ করা, ভালো লোকের সঙ্গে উঠাবসা করা ও উত্তম সাহচর্য গ্রহণে সচেষ্ট থাকা। সৎ সঙ্গ দ্বারা মন্দ লোকও ভালো হয়ে যায়। আবার মন্দ লোকের সঙ্গে চলাফেরার কারণে ভালো লোকও নষ্ট হয়ে যায়। তাই বিজ্ঞজনেরা বলেন, সর্বদা সৎলোকের সাহচর্যে থাকা চাই। আওলিয়া ও বুযুর্গানে দীনের সাহচর্য গ্রহণকারী কখনও তাদের কল্যাণ ও বরকত থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয় না। হযরত আলী রাযি. বলেন, পাপিষ্ঠের সঙ্গে চলবে না। সে তার মন্দ কাজকে তোমার কাছে আকর্ষণীয় করে দেখাবে। তার একান্ত কামনা থাকবে তুমিও যেন তার মত হয়ে যাও।

বুযুর্গ ব্যক্তিগণ বলে থাকেন, সাবধান! মন্দ লোকের সঙ্গে উঠাবসা করো না। কেননা তোমার স্বভাব-প্রকৃতি তোমার অজ্ঞাতসারেই তাদের খাসলাত থেকে চুরি করবে। এক সঙ্গীর উপর অন্য সঙ্গীর আছর কেবল কথা ও কাজ দ্বারাই নয়, চোখের দৃষ্টি দ্বারাও পড়ে থাকে এবং তা পড়ে থাকে কিছুক্ষণ পাশাপাশি থাকার দ্বারাও। হাসিখুশি লোকের দিকে তাকালে মনের মধ্যে খুশির হাওয়া বয়ে যায়। আবার বিষণ্ন ও দুঃখীর দিকে তাকালে মনে বিষাদ ছড়িয়ে যায়। সঙ্গ-সংস্পর্শের এ প্রভাব কেবল মানুষের বেলায়ই নয়; পশু পক্ষী, গাছপালা ও আলো-বাতাসের মধ্যেও তা লক্ষ করা যায়। এটা তো একটা চাক্ষুষ বিষয় যে, ময়লা-আবর্জনার স্পর্শে জলবায়ু দূষিত হয়ে যায়। পুষ্পোদ্যানের উপর দিয়ে বয়ে চলা বাতাস সুরভিত হয়ে ওঠে।

যাহোক এ হাদীছ মূলত মন্দ সাহচর্য পরিহার করে ভালো সাহচর্য অবলম্বনের উৎসাহ যোগায়। ভালো সাহচর্য বলতে এমন ব্যক্তির সাহচর্য গ্রহণ করা, যার সাহচর্য দ্বারা অন্তরে আল্লাহভীতি সঞ্চার হয়, জ্ঞান বৃদ্ধি হয়, আমল-আখলাকে পরিবর্তন আসে। সাহাবায়ে কেরাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেমন ব্যক্তির সাহচর্য গ্রহণ আমাদের পক্ষে ভালো? উত্তরে তিনি ইরশাদ করেন-

من ذكركم الله رؤيته، وزاد في علمكم منطقه، وذكركم بالآخرة عمله

'যার দিকে তাকালে সে তাকানো তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যার কথা তোমাদের ইলম বৃদ্ধি করে এবং যার আমল তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়।২৩৮
যাদের সঙ্গে চলাফেরার দ্বারা নিজ আমল-আখলাকে উন্নতির সম্ভাবনা নেই; বরং ক্ষতির আশঙ্কা আছে, তাদেরকে এড়িয়ে চলাই ভালো। বরং ক্ষতিকর সাথী-সঙ্গী অপেক্ষা একা চলাই উত্তম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

الوحدة خير من جليس السوء، والجليس الصالح خير من الوحدة

‘মন্দ সঙ্গী-সাথী অপেক্ষা একাকিত্বই শ্রেয়। আর একাকিত্ব অপেক্ষা সৎসঙ্গী উত্তম।২৩৯

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সুহবাত ও সাহচর্যের অবশ্যই আছর আছে। তাই সাহচর্য অবলম্বনে সতর্কতা জরুরি।

খ. নিজের দীন ও ঈমান এবং আমল ও আখলাকের হেফাজতকল্পে প্রত্যেকের কর্তব্য কিছু সময়ের জন্য হলেও আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্যে কাটানো এবং সর্বদা সৎলোকের সঙ্গে চলাফেরা করা।

গ. কিছুতেই মন্দ লোকের সঙ্গে উঠাবসা করা উচিত নয়।

ঘ. নিজ বক্তব্যের পক্ষে উপযুক্ত দৃষ্টান্ত দিতে পারলে তাতে বক্তব্যের বিষয়বস্তু অধিকতর পরিস্ফুট হয়।

২৩৮. মুসনাদ আবূ ইয়া'লা মাওসিলী, হাদীছ নং ২৪৩৭; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯০০০; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ৭৩৫

২৩৯. বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৬৩৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪৮১৯; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ৭৫৩
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৩৬৩ | মুসলিম বাংলা